
ও দাদী , তাড়াতাড়ি এদিক আসো, একজন তোমার খোঁজ করে।
শেফালীর ডাকে ঘুরে তাকায় হাওয়া বেগম। কোমরে তার ভেজা কাপড়ের ডালি। ঝরঝর করে পানি পড়ছে সেই ডালির ভেজা কাপড়গুলো থেকে। শরীরে আগের মতো বল নেই। কাপড় কাচতে যায় বটে হাওয়া বেগম, কিন্তু কাপড় কেচে ঠিকমত চিপে পানি নিঙড়াতে পারে না। ছেলের বউ মানা করে, বাড়ির কলেই কাপড় কাচবে সে। কিন্তু হাওয়া বেগম শোনে না, তার পুকুরে কাপড় কাচতে যাওয়া চাই-ই চাই। কাপড় কাচতে গিয়ে গোসলটাও সেরে নেয় সে। পাড়ার দু’চারজন বউ ঝি, যারা এখনও তার মতো রোজ আসে পুকুরে, তাদের সাথে সুখ দুঃখের গল্প করে মনটাও তো হালকা হয়! তাই সে ছেলের বউয়ের মানা শোনে না। রোজই পুকুরে যায়। যাবে না কেন? পাড়া প্রতিবেশীর চেয়ে আপন তো তার আর কেউ নেই! অবশ্য তাদের মতো দুশমনও আর কেউ নেই। ওই একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনি আর পাড়া প্রতিবেশী, সুখে দুখে তাদের ছাড়া চলে? চলে না, অন্তত হাওয়া বেগমের চলে না। ওরা না থাকলে আজ তার ভিক্ষে করা ছাড়া গতি ছিলো না। সেই কতবছর আগে, যখন একরাতে আচমকা হারিয়ে ফেললো স্বামীকে, ছোট্ট ছেলেটাকে বুকে আঁকড়ে ধরে কপাল চাপড়ে কাঁদছিলো সে তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে, তখন এই প্রতিবেশীরা পাশে না দাঁড়ালে, সাহায্য না করলে, বাঁচতে পারতো কি হাওয়া বেগম?
কই, জলদি আসো, অচেনা লোকে তোমারে খুঁজবার ধরছে!
কোমরে ডালির ভারে একদিকে কাত হয়েই জোরে পা চালানোর চেষ্টা করে হাওয়া বেগম। ডিসেম্বরের এই শীতের শুরুতেই তার পা ফেটে চৌচির। তাছাড়া ডালি থেকে গড়িয়ে আসা পানি আর তার পরনের ভেজা কাপড় থেকে চুঁয়ে পড়া পানির সাথে পথের ধুলো কাদার মতো আটকে গেছে পায়ে। ফাটলে ব্যথাও বেশ। তাই জোরে হাঁটতে চেয়েও পারছে না সে। বললো, আইতাছি তো!
শেফালী এগিয়ে এসে কাপড়ের ডালিটা কেড়ে নিয়ে বলে— এঁহ্, শরীরে নাই আঁট, এই বুইড়াকালে ক্যান যে কাপড় কাচতে যাও বুঝি না! তুমি পুকুরে গিয়া কাপড় না কাচলে কি দুনিয়া অচল হইয়া যাইবো? যত্তসব!
এমন ভালোবাসার বকুনি রোজই শুনতে হয় তাকে। কোনও কাজ করতে দেখলে অনেকেই কেড়ে নেয় হাত থেকে। এই যেমন নাতনি শেফালী কেড়ে নিলো। এদের ভালোবাসায় যখন তখন চোখ ভিজে যায়। ছেলে-বউও এমনই পাগল, সারাক্ষণ আগলে আগলে রাখতে চায় মা’কে।
ছেলে তো বলে, জীবনে তুমি ম্যালা কষ্ট করছো মা, এখন যখন আল্লাহর দয়ায় সুখের দিন আইছে, একটা ভালো রোজগারের উপায় হইছে আমার, তোমারে আর কষ্ট করতে দিমু না। খালি খাইবা আর ঘুমাইবা।
ছেলের কথা শুনে মনে মনে হাসে হাওয়া বেগম। কী যে কয় পোলা, তার ঠিক নাই! সারাক্ষণ শুইয়া বইসা থাকলে শরীর অচল হইয়া যাইবো না? বয়স হইছে তো কি হইছে, একটু আধটু কাজ-কর্ম না করলে খিল ধইরা যাইবো না শরীরে? সেই যৌবন বয়সে স্বামী হারানের পর থাইকা যে হাওয়া বেগম এ্যার তার বাড়িতে কাম কইরা পোলারে বড় করছে, সে কি বইসা থাকবার পারে?
হাঁটতে হাঁটতে কী চিন্তা করবার ধরছো দাদী? লোকটারে দাঁড়া করায় রাখছি বাড়ির সামনে। কান্ধে একখান বড় ব্যাগ, হাতে ক্যামেরা, বিরাট ভদ্দরলোক বইলাই মনে হয় তারে। না জানি কী দরকারে আইছে! জলদি চলো!
এমন ভদ্দরলোক তার খোঁজে আইছে ক্যান? ভাবনায় পড়ে হাওয়া বেগম। শেফালির কাছে শুনে প্রথমে ভেবেছিলো তার বাপের গাঁয়ের কেউ হবে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, বাপ-মা কেউই নেই এ দুনিয়ায়। ভাইয়েরাও প্রায় ভুলেই গেছে। ভাইদের ছেলেপুলেরা তো চেনেই না তাকে! তবু বচ্ছর দুই বচ্ছরে ভাইয়েরা লোক পাঠায়, নতুন ধান উঠলে আতপচাল আর আটা নিয়ে। ভাইয়েরা আসে না কখনও। বিধবা গরিব বোনের বাড়িতে আসতে তাদের সম্মানে বাধে। বড় গেরস্তবাড়ির ছেলে যে তারা!
একটাই বোন ছিল, যতদিন ছিল মাঝে মাঝে আসতো, খোঁজখবর করতো। তাকেও আল্লাহ্ তুলে নিলো দুনিয়া থেকে।
কিন্তু… কোন ভদ্দরলোক আইলো তার খোঁজে? তার কাছে সেই ভদ্দরলোকের কী দরকারই বা থাকবার পারে! চাষাভুষা মানুষ তারা, ভদ্দরলোকের সাথে জীবনে কোনদিন তো আলাপ পরিচয় আছিলো না,
তেমন কারও মুখ তো মনে আনবার পারতাছেই না হাওয়া বেগম! তাইলে?
বিড়বিড় করে একথা সেকথা আওড়াতে আওড়াতে হঠাৎই যেন বয়সের দোষে ঝাপসা হয়ে আসা তার দুই চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মুখের ভাঁজগুলো কিছুটা যেন টানটান হয়ে ওঠে হঠাৎই। মৃদু হাসি ফোটে তার ফোকলা মুখে।
সেই দেখে শেফালি রসিকতা করে, কী গো দাদী, দাদাজানের কথা মনে আসে বুঝি? শুনছি তো সবার মুখে, সে নাকি তোমারে খুব পেরেম করতো!
চুপ থাক ছেঁড়ি, খুব পাকনা হইছোস, না?
বলে বটে হাওয়া বেগম, তার মনে কিন্তু ঠিকই ঢেউ খেলে যায় সেইসব দিনের কথা। এই বয়সেও বোঝা যায়, যৌবনকালে বুড়ির আগুনধরা রূপ ছিল। সেই রূপেই তো পাগল হইছিলো দুলালের বাপ!
কইন্যার রূপ দেখে পাগল হলেই তো হয় না, মা-বাপ মরা ওই গরিব ছেলের সাথে কেনই বা মেয়ের বিয়ে দেবে হাওয়ার বাপ? যে হাওয়া কিনা দেখতে পরির মতো আর কী তার গুণ! মাত্র তেরো বছর বয়সেই রান্না-বান্না, সেলাই ফোঁড়াই সবেতেই ফাস কেলাস।
কিন্তু দুলালের বাপ তো নাছোড়বান্দা। গরিব হতে পারে, কিংবা তার বাপ জমিজমা কিছুই রেখে যেতে না পারুক, সে নিজে তো ইনকাম করে! বাজারে কাপড়ের দোকান থেকে তো ভালোই আয় হয় তার। সংসারে আর তো কেউ নাই, দুইটা পেট চলবে না? ভালোভাবেই চলে যাবে। যদি সংসার বাড়ে কখনও, খোদার দয়ায় ব্যবসাও বাড়বে। পাড়ার মুরুব্বিদের বুঝিয়ে হাওয়া বেগমের বাপকে রাজি করানোর দায়িত্ব দেয় সে। মুরুব্বিদের কথা ফেলতে পারেনি হাওয়ার বাপ।
বিয়ের পর হাওয়া বেগমের সে কী সুখ! লোকটা যে কী ভালোবাসতো তাকে! ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো, যতদিন বেঁচেছিলো ভালোবাসাতেই ভরিয়ে রেখেছিলো বউকে। তবে বিয়ের পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সংসার বাড়লো না তাদের। কোনদিন কি বাড়বে না? এই কষ্ট বুকে নিয়ে যখন দিন পার করছে তারা মিয়াবিবি, তখন একদিন হঠাৎ করেই হাওয়া বেগমের মনে হয়, সবকিছু কেমন যেন অন্যরকম। শরীরটা তার কেমন যে লাগে, বোঝাতে পারে না কাউকে। খেতে পারে না, রাতে শুয়ে ঘুমাতে পারে না। বড় কাহিল কাহিল লাগে তার। স্বামীকে বলায় চিন্তার রেখা ফুটে ওঠে তার কপালে। গফুর কবিরাজের কাছে বউকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে হাজেরা খালা সব শুনে বলে, “চিন্তার কিছু নাই রে, আল্লাহ্ মুখ তুইলা চাইছে এতদিনে। পোলার মা হইবো তোর বউ।”
এই না শুনে লোকটা যে কী খুশি হয়েছিলো! বউকে কী খাওয়াবে, কেমন করে যত্ন নিলে বউ একটু আরামে থাকবে, এসব চিন্তায় তার যেন পাগল হওয়ার জোগাড়। পাড়া-পড়শীরা তো হেসেই বাঁচে না।
একসময় মায়ের রূপ নিয়ে কোল আলো করে ছেলে এলো। মিয়াবিবি মিলে ছেলের নাম রাখলো দুলাল। সেই দুলাল এখন কত বুঝদার! মা’কে একটুও কষ্ট দিতে চায় না। এমন করে আগলে রাখে, যেন হাওয়া বেগম বুড়াকালে বাপকে ফিরে পেয়েছে। ছেলের বউটাও তেমনই ভালো। আর নাতি-নাতনি? তাদের দেখে তো বুকটা খুশিতে ভরে ওঠে। এত সুখও খোদা লিখেছিলো তার কপালে!
দাদী, ওই দেখো, লোকটা দাঁড়ায়া রইছে এখনও বাড়ির সামনে।
শেফালির কথায় চোখ সরু করে দেখার চেষ্টা করে হাওয়া বেগম। অস্পষ্ট, তবুও বুঝতে পারে, শেফালির কথাই ঠিক, ভদ্দরলোকই দেখা যায় লোকটারে! একটু যেন ভয় পেয়ে যায় হাওয়া বেগম। আবার কোন ভদ্দরলোক আইলো, আবার কি সর্বনাশ যে হইবো তার জীবনে কে জানে!
এক ভদ্দরলোক যে রাইতে তার বাড়িতে আশ্রয় নিছিলো, সেই রাইতেই তো……
নাহ, আর ভাববার চায় না হাওয়া বেগম… আর কোনও সর্বনাশ চায় না সে তার জীবনে। এখন খুব সুখে আছে সে। বাঁচবো আর কয় দিন? এই সুখ নিয়াই সে চোখ বুঁজবার চায়।
বয়স হয়েছে হাওয়া বেগমের, তাতে কী? মনে মনে সব হিসাব তার ঠিক আছে। সেই যে সেই রাতে দুলালের বাপের সাথে এক ভদ্দরলোক এলো বাড়িতে, তার সাথে ছিল একটা বড় বস্তা। সেই বস্তা দুলালের বাপের সাথে ধরাধরি করে এনে রেখেছিল পশ্চিম ভিটার খড়ির ঘরে। চ্যালা কাঠ আর বিচালি দিয়ে কেন যেন আড়াল করতে চেয়েছিলো তারা ওই বস্তা।
হাওয়া বেগমের প্রশ্নের উত্তরে স্বামীর জবাব ছিলো, দ্যাশ স্বাধীন করনের লাইগা যুদ্ধ বাধছে না, মুক্তিযুদ্ধ! আমার সাথে যে ভদ্দরলোক আইছে, সে হইলো একজন মুক্তিযোদ্ধা। নিজের জানডারে বাজি রাইখা তারা যুদ্ধ করে রে বউ, বড় মায়া লাগে তাগো দেইখা। কে জানে কোন মায়ের পোলা? বাঁচবো না মরবো আল্লাহই জানে! মরলে যে কোন মায়ের বুক খালি হইবো! আমিও তাগো লগে যুদ্ধে যাইতে চাইছিলাম। কিন্তু আমারে তারা নেয় নাই। কইলো, বাড়িতেই থাকো তুমি, দরকারমতো আমাগেরে সাহায্য করলেই চলবো।
স্বামীর কথা শুনে আতকে উঠেছিলো হাওয়া বেগম। যুদ্ধে যাইতে চাইছিলা তুমি? আমারে না জানাইয়াই?
এইডা তুমি কি কইলা? আমারে, পোলারে কার ভরসায় রাইখা যাইতা? যুদ্ধে গিয়া যদি কিছু হইয়া যাইতো তোমার, কি নিয়া বাঁচতাম আমি!
বলে ছেলেকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলো সে।
ধুর, গেলে তো তোমারে জানাইয়াই জাইতাম! যাওয়া তো হয় নাই। এখন এত কান্নাকাটি না কইরা যা কই মন দিয়া শুনো। খড়ির ঘরে যে বস্তাডা রাখছি, তার মইধ্যে কি আছে জানো?
চোখ মুঝে অবাক হয়ে হাওয়া বেগম স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চেয়েছিলো, কী আছে?
তাকে আরও অবাক করে দিয়ে দুলালের বাপ জানিয়েছিলো, বস্তায় অস্ত্র আছে, যুদ্ধের অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়েই খতম করা হবে পাক বাহিনীকে। দেশ স্বাধীন হবে। স্বাধীন দেশের মানুষ বলে জানবে পুরো দুনিয়া বাংলাদেশের মানুষকে।
দ্যাশ স্বাধীন হইবো এইডা একটা স্বপন গো বউ, বড় সুখের সেই স্বপন! দেইখো, আর দেরি নাই, জলদিই স্বাধীন হইবো দ্যাশ। তয় ওই বস্তাডার কথা আর এই ভদ্দরলোক যে আমাগো বাড়িতে রাইত কাটাইছে, তা য্যান কেউ জানবার না পারে! জানলেই সর্বনাশ।
স্বামীর এসব কথা শুনে অজানা আশঙ্কায় একহাতে দেড় বছরের ছেলেকে আরও জোরে বুকের সাথে চেপে ধরেছিলো হাওয়া বেগম। স্বামীকেও জড়িয়ে ধরেছিলো আরেক হাতে। ধীরে ধীরে গভীর হয়ে এসেছিলো রাত। আশঙ্কা আর স্বপ্ন নিয়ে দ্বন্দ্বের দোলায় দুলতে দুলতে একটু বোধহয় ঘুমও নেমেছিলো ওদের দু’চোখ জুড়ে। কিন্তু হঠাৎ কি যে হলো, ঘরের এককোণে আঁচ কমিয়ে রাখা হারিকেনের আবছা আলোটা দপদপ করে উঠলো। তেল ফুরিয়ে গেলো বুঝি! আর ঠিক তখনই ওদের ঘরের নড়বড়ে কাঠের দরজাটায় কে যেন আঘাত করতে লাগলো জোরে জোরে। আচমকা শব্দে ধড়মড় করে উঠে পড়েছিলো ওরা। উঠেই দুলালের বাপ হারিকেনের আলোটা বাড়িয়ে দিলো ঘরের কোণায় গিয়ে। একটা জোর ধাক্কায় দরজার দুটো পাল্লাই খুলে পড়লো ঘরের ভেতরে। অচেনা কয়েকজন মানুষ তখন ভাঙা দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতরে। গামছায় মুখ ঢেকে আছে তারা। দুলালের বাপের সাথে আসা ভদ্দরলোকটার হাত বেঁধে ধরে আছে একজন। গামছাঢাকা মুখ নেড়ে দুলালের বাপকে একজন বললো, খুব শখ হইছে না দ্যাশ স্বাধীন করোনের? আইজ তোগো সেই শখ মিটাইয়া দিমু, চল আমাগো লগে!
গলার স্বর কেমন যেন চেনা চেনা লোকটার! হাওয়া বেগম ধন্ধে পড়ে গেছিলো। এত চেনা লোক…. এত চেনা মানুষ ক্যান তাগো এমন সর্বনাশ করবো?
দুলালের বাপ বাধা দেয়নি। হাওয়া বেগমের মনে হচ্ছিলো সে যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো ওই মুখঢাকা লোকগুলোর সাথে। যেতে যেতে একবার শুধু ফিরে তাকিয়ে বলেছিলো, দ্যাশ স্বাধীন হইবো বউ, চিন্তা কইরো না, পোলারে মানুষ কইরো!
মানুষ তো করেছে হাওয়া বেগম, কিন্তু এই সমাজে একা মেয়ে মানুষের জীবন চালানো যে কত কষ্ট, তা জানে শুধু হাওয়া বেগম আর উপরওয়ালা । আজ, এই আটচল্লিশ বছর পর, যখন কষ্টের দিনগুলো পার হয়ে গেছে, তখনও তো একদিনের জন্যও ভুলতে পারে না সে সেই দিনগুলোকে। যতদিন বেঁচে থাকবে, সেইসব কষ্টের স্মৃতি তাড়া করে ফিরবে তাকে। তাড়া করে ফিরবে এক অজানা আশঙ্কা।
হাওয়া বেগমের চোখ ভিজে আসে। ভেজা কাপড়ে ভেজা চোখে এক বৃদ্ধা অজানা শঙ্কায় তাকায় এক অচেনা ভদ্দরলোকের দিকে।
লোকটি বলে ওঠে,
আপনি হাওয়া বেগম? আমি ঢাকা থেকে এসেছি। আমরা খোঁজ পেয়েছি আপনার স্বামী নাকি মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন! তাঁকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হবে। আর আপনার মুখ থেকে আমরা শুনতে চাই তাঁর কথা। তিনি তো আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা!
হাওয়া বেগম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই আছে লোকটার দিকে, যেন তার কথা একবিন্দুও মাথায় ঢুকছে না। তার স্বামী যে মুক্তিযোদ্ধা, সেইটা এত বছর পর জানবার পারলো ক্যান উনারা? এই প্রশ্নটা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে অনবরত। তবে ঘুরপাক খেতে থাকা প্রশ্নের কোনও উত্তর আর আশা করে না সে। দুখের দিন তার শেষ। সেই আটচল্লিশ বছর আগে যেমন ছিলো, আজও তেমনই আছে তার স্বামী… তার স্বামীর স্বপ্ন, হাওয়া বেগমের স্মৃতিতে। এখনও জেগে আছে দুলালের বাপ তার বউয়ের বুকের ভেতরে। সেখানে সে অমর।
৩৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
নাম না জানা কত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ এখনো আমাদের অগোচরে রয়ে গিয়েছে তার সঠিক তথ্য আমরা জানিনা। দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে এদেশকে স্বাধীনতা এনে দেয়া সকল বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের পরিবার এখনো যে দুঃখ দুর্দশায় জীবন যাপন করছে যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
সুন্দর একটি লেখা পড়লাম।
রেহানা বীথি
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
গল্পের ছলে জানা হলো
মুক্তিযুদ্ধের বীরক্ত গাথাঁ
ভালো লাগলো বিজয়ী শুভেচ্ছা
রেহানা বীথি
বিজয়ের শুভেচ্ছা আপনাকেও।
ইঞ্জা
আহা কত নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধা যে স্মৃতির অতলে হারিয়ে গেলো তার খবর কে রাখে, বিজয়ের ৪৮ বৎসর পর কেন জানা হলো, এতদিন কই ছিলো তারা, সমাজের মুখের উপর জোর থাপড় যেন পড়লো।
চমৎকার লিখেছেন আপু, ধন্যবাদ।
রেহানা বীথি
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ,
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা আপু
প্রদীপ চক্রবর্তী
বিজয়ের মাসে।
আমার অনেক অজানা কিছু জানলাম।
খুবি ভালো লাগলো দিদি।
বেশ লিখলেন।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ।
ইসিয়াক
মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথাঁ ভালো লাগলো ।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
নাম না জানা অনেক অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম এদেশের মাটির সাথে মিশে গেছে। আর যাঁরা বেঁচে আছে তাঁদের মধ্যেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার খেতাব অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। অনেক মুক্তিযুদ্ধের দেখা যায় পত্রপত্রিকার পাতায় পাতায়। জানা যায় তাঁদের কষ্টের জীবনকাহিনী। অথচ তাঁদের ত্যাগের মধ্যদিয়েই এদেশ স্বাধীন হয়ে ছিল। কিন্তু তা আমরা আর তাঁদের খবর রাখি না। এখন আমরা শুধু লিস্টে নাম থাকা কিছু মুক্তিযুদ্ধেরই সবকিছু দিয়ে যাচ্ছি। আবার আছে কিছু সম্ভ্রমহানি মা-বোন। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময় মূল্যবান সম্ভ্রম হারিয়ে লোকলজ্জার ভয়ে মাথা নত করে মুখ ঢেকে চুপচাপ থেকেছে। ওইসব মা-বোনদের-ই-বা ক’জন খবর রাখে? যাঁরা সাহস করে মুখ ফুটিয়ে বলতে পেরেছে, সেসব মা-বোনই পেয়েছে রাষ্ট্রীয় খেতাব বা টাইটেল। পাচ্ছে সরকারি সুযোগ সুবিধা। আর সবাই হয়েছে নীরব বঞ্চিত।
আপনার এই লেখা পড়ে আমার অনেককিছু নতুন করে মনে পড়ে গেল দিদি।
রেহানা বীথি
আপনার মন্তব্যটি যথাযথ দাদা।
ভালো থাকবেন সবসময়।
এস.জেড বাবু
যেতে যেতে একবার শুধু ফিরে তাকিয়ে বলেছিলো, দ্যাশ স্বাধীন হইবো বউ, চিন্তা কইরো না, পোলারে মানুষ কইরো!
কি আত্মবিশ্বাস – অবাক লাগে-
আসলে মানুষ কি আছে দেশে ?
মানুষের হাতে কি ক্ষমতা আছে ?
থাকলে এমন স্বাধীনতার নায়কদের / তাদের সংসারের আজও এমন করুন দশা কেন জানতে ইচ্ছে করে।
জনপ্রতি ১টাকা করে চাঁদা তুলা হলে ষোল কোটি টাকা হয়-
কতজন মুক্তিযাদ্ধার সংসারে অন্নের সুন্দর সংস্থান করা যায় ভাববার বিষয়।
কথা হচ্ছে কাজটা করবে কে ?
যারা সাড়ে সাত হাজার সরকারী টাকায় বালিশ কিনে তারা ?
মানুষ চাই দেশে-
এমন মানুষ, যাদের হাতে সংস্কারের ক্ষমতা থাকবে।
আক্ষরিক ভাবে না হলেও- অধিকার বঞ্চিতরা আজও “পরাধীন”
সুন্দর লিখেছেন।
সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
রেহানা বীথি
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সকল শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
এস.জেড বাবু
আপনাকেও বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা আপু
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পটা পড়ে যা বলতে চেয়েছিলাম, নিতাই দাদা আগেই লিখে দিয়েছে। এমন একটি গল্প দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ বিথী আপু।
শুভ কামনা 🌹🌹
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন আপু।
অনেক ভালোবাসা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এমন হাজারো গল্প – আমাদের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ধন্যবাদ আপনাকে
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন, ভালোবাসা দিলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভালোবাসা নিলাম। ধন্যবাদ আপু
ছাইরাছ হেলাল
এত দিন পর কেন জানল, এ কথার উত্তর হওয়া বেগমের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকবে।
কিন্তু উত্তর সে জানতে পারবে না, স্মৃতির অমরত্বটুকুই তার এক মাত্র ভরসা।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
নুরহোসেন
একদিন ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়বো মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে খুঁজে গল্প শুনতে….
হৃদয়স্পর্শী ঘটনাবলী ভাল লাগলো।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
এরকম হাজারও মুক্তিযোদ্ধারা আড়াল ঝরে গেছেন নাম না জানার কারণে।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন আপু।
জিসান শা ইকরাম
তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তালিকার বাইরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেশী। যারা একটি স্বপ্ন নিয়ে ৭১ এ বিভিন্ন ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
৭৫ এর আগস্টের পট পরিবর্তনে সব কিছু উল্টো দিকে এগিয়েছে।
৪৮ বছর পর হলেও বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুটা হলেও মূল্যায়ন হচ্ছে, এটিই প্রাপ্তি।
গল্পটি খুবই ভাল লেগেছে।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন, বিজয়ের শুভেচ্ছা।
কামাল উদ্দিন
অসাধারণ লিখেছেন আপু। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে হাজারো ঘটনার খন্ড চিত্র ফুটে উঠেছে আপনার লিখায়। অত্যন্ত সাবলীল লেখায় ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম। সেই সাথে জানিয়ে গেলাম বিজয়ের শুভেচ্ছা।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
বিজয়ের শুভেচ্ছা জানবেন, ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
আপনিও ভালো থাকুন, সব সময়
সঞ্জয় মালাকার
দিদি গল্পের ছলে জানা হলো
মুক্তিযুদ্ধের বীরক্ত গাথাঁ
চমৎকার লিখেছেন, বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেন।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ দাদা।
মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
মনির হোসেন মমি
আমাদের ব্যার্থতা এখানেই।স্বাধীনের ৪৮ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাকেই খুজঁছি। চমৎকার গল্প।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন।