
২০১৩! ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে মাগুরা যাচ্ছি। মাইক্রোতে করে ভোর চারটায় রওনা হয়ে পৌঁছিলাম বিকেল চারটায়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে, পেটপুরে খেয়ে রওনা হলাম সন্ধ্যে ছ’টায়। তখন জানুয়ারি মাস। প্রচণ্ড ঠান্ডা।আমরা সবাই জড়োসরো হয়ে ঝিমাতে ঝিমাতে যাচ্ছি। ঘ্যাঁস শব্দ করে গাড়ি থামলো। এমন জায়গায় গাড়ি নষ্ট হলো।আশেপাশে খেজুর আর তালগাছ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছেনা। ড্রাইভার বলে, কেউ নামিয়েন না; চলনবিল এলাকা। সর্বহারাদের উৎপাত আছে।
মনে মনে বলি, ঐ ব্যাটা কারে ভয় দেখাস। আমার বাথরুম, খিদা দুটাই লাগছে। বললাম, তুমি গাড়ি ঠিক করো আমি বাথরুম সারি।
আপা, এখানে বাথরুম কই পাবেন?
তুমি তোমার কাজ করো।
হাঁটতে হাঁটতে দেখি , আলো জ্বলছে। ভাবলাম, একটা কাজ হবে।
এক্সকিউজ মি ! আছেন কেউ?
একজন লোক এলো, বলুন।
এখানে কি ওয়াসরুম আছে?
শুধু ওয়াস কেনো? আপনি খাবারও পাবেন।
এ তো দেখি, মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। ভেতরে ঢুকে দেখি শুনশান নিরবতা। ভাবলাম এতো রাতে মানুষ আসবো কই থেকে?
ওয়াসরুম থেকে এসে , বললাম: কি খাবার আছে?
ম্যাডাম, আজ অফার আছে!
যেমন?
আজ প্ল্যানচেট করে আত্মা ডাকা হবে তাকে,আপনি যার সাথে ডিনার করতে চান! যেমন , নজরুল, মেরিলিন মনেরো অথবা রবার্ট ব্রুচ।
দারুণ তো ?
নজরুল ইসলাম কে আনেন!
ওকে , ম্যাডাম। আর খাবার?
পরোটা, কাবাব আর রায়তা।
পনেরো মিনিট লাগবে!
আচ্ছা!!!!
এমন সময় তিনজন লোক এলো । ঘর অন্ধকার করে আত্মা ডাকা শুরু করলো। আমি তো ভাবলাম ভুয়া। কিন্তু ,না! ঠিকই হাজির, কবি নজরুল।
একটা স্বল্প আলোর বাতি জ্বালানো হলো। লম্বা চুল নিয়ে আমার সামনে বসে, জাতীয় কবি !গান বাজছে, “চমকে চমকে ধীরু ভীরু পায়, পল্লী বালিকা বন পথে যায়!”
আমি প্রথমে কথা বললাম। কেমন আছেন?
বুড়ো হয়ে গেছি, কেমন আর থাকবো?
আপনার ‘ লিচু চোর ‘ কবিতাটা আবৃত্তি করে আমি প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম। কেমনে লিখেছিলেন? আচ্ছা আপনিও কি কখনো ওভাবে লিচু চুরি করেছিলেন?
হুম, না করলে লিখলাম কিভাবে?
তাঁর স্মিত হাসি আর কোঁকড়ানো চুল কিন্তু মুখটা বলি রেখায় পরিপূর্ণ । জানেন, আমাদের পাড়ার লুসি আপা আপনার “কারার ঐ লৌহ কপাট” গানটার সঙ্গে যা নাচতো, পুরা পাড়া কাঁপতো, ওনার নাচের ছন্দে।
উনি বললেন,”তোমার মনে অনেক প্রশ্ন ,তাইনা! জানো, একটা প্রশ্ন উদয় হলে, ওটার উত্তরের জন্য কতো তত্ত্ব তালাশ করতে হয়। তবে,সবসময় সত্য আর সুন্দরের পূজারি হবে।
আমি তো হা করে ওনার কথা শুনছি। উনি বললেন, খাও। খাবার তো ঠাণ্ডা হচ্ছে।
কি আর করা লক্ষ্মি মেয়ের মতো খাওয়া শুরু করলাম। মনে হচ্ছে অমর্ত্যলোকে সবকিছু ঘটছে।
হঠাৎ গাড়ির হর্ণ। আমার মতো কবিও ব্যতিব্যস্ত । কে আসলো?
মনে হয় ,আমাদের গাড়ি।
কবি বললেন, মনে রাখবে, সবকিছুর থেকে দেশ বড়! দেশের কথা ভাববে। যেমন ভাবো মায়ের কথা!
ওয়েটার তাগাদা দিচ্ছে । আমি বিল দিয়ে বাহিরে এলাম। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে।
ম্যাডাম, এখানে এতোক্ষণ কি করলেন?
কেনো? খেলাম!
ও কেমন জানি ভীত চোখে আমার দিকে তাকালো। আরে এইটা তো ভাঙ্গাচোড়া বাড়ি!
আমিও ফিরে দেখি ,তাইতো! জীর্ণ শীর্ণ একটা বাড়ি !
আর বকলাম না! চুপচাপ গাড়িতে বসলাম। এফ এম রেডিও তে বাজছে,”মোর প্রিয়া হবে, এসো রাণী; দেবো খোঁপায় তারার ফুল!”
৩৬টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
আপু খুব মনোযোগ সহকারে পড়লাম। গল্পতো গল্পই। তবে এভাবে আমাদের সামনে মূলো ঝুলিয়ে রাখবেন তা কিন্তু ঠিক নয়। কবিকে সাথে নিয়ে খেলেন অথচ আমরা জানলামই না। যতক্ষন পড়েছি ততক্ষন গল্পের ভিতরই ছিলাম।
আরজু মুক্তা
এর পরেরবার মিস হবেনা! সবাইকে নিয়েই ভোজন।
শুভকামনা
নিতাই বাবু
আপনার লেখা গল্প পড়ে আমিও জাতীয় কবিকে স্বপ্নে দেখতে লাগলাম। জিজ্ঞেস করলাম আপনার কথা। কবি বললে, উনি লেখা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে তাই বেশি দেখাসাক্ষাৎ হয় না। জিজ্ঞেস করলা, আবার কবে দেখা হতে পারে? কবি বললেন, আবার যদি কখনো বঙ্গোপসাগরের কিনারায় যাওয়া হয়, তখন হয়তো মুক্তা খুঁজে নিবো। কবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার জিজ্ঞাসার ইতি টানলাম।
আরজু মুক্তা
খাইছে আমারে! বাড়ির পাশেই বঙ্গোপসাগর।
লেখালিখি চলছে। আপনিও নিয়মিত লিখুন।
কবির সাথে দেখা হলে, ছাকাম জানাইয়েন।
খুরশীদা খুশী
বেশ মজার তবে মূল্যবান কিছু কথাও ছিলো।শুভকামনা রইলো ভালো থাকু।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলো বলে আমিও অনুপ্রাণিত।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা।
জাহিদ হাসান শিশির
ওহ মজার গল্প।
আরজু মুক্তা
মজার তো হতেই হবে হুজুরের মতো অমৎকার।
ধন্যবাদ।
জাহিদ হাসান শিশির
আমি জীবনে কখনো ভুত দেখিনি। হ
আরজু মুক্তা
আপনি পূর্ববর্তী লিখাগুলো পড়লে ভুত,জ্বীন, পরি সব পাবেন। লিখাটার নাম ছিলো,”এক দুপুরে”
তয় ভয় পাইলে আমি আপনার সাথে নাই।
জাহিদ হাসান শিশির
আমি অত ভীতু না।
ইঞ্জা
প্রথমে ভেবেছিলাম বেশ ভূতুড়ে হবে, পরে পড়ে দেখি সব ফকফকা কিন্তু লেখাটি বেশ হয়েছে আপু। 😄
আরজু মুক্তা
আয়নার মতো ফকফকাই দেখলেন!
হায় কপাল! কি গল্প লিখলাম! ন বুঝে!
শুভকামনা।
ইঞ্জা
না আপু গল্প ভালো হয়েছে কিন্তু ভয় পাইনি। 😂
ছাইরাছ হেলাল
ধুর!! ভয় দেখাতে পারেন-নি,
কঠিন ভুত চাই, গা ছমছমে!
আরজু মুক্তা
এরপর আসিতেছে…… গা ছমছম।
আমার যেনো ফির দোষ না হয়।
রেহানা বীথি
বাহ্, জাতীয় কবির সাথে কথোপকথন, কী সৌভাগ্য আপনার!!
দারুণ লাগলো গল্প
আরজু মুক্তা
জি আপি। একদিন চলেন।
হুম সৌভাগ্যবতী।
শুভকামনা
তৌহিদ
আরেব্বাস! একেবারে নজরুলকে আনলো সামনে! ভালো লাগলো লেখাটি তবে প্লানচেট জিনিশটা ঠিক বিশ্বাস হয়না আমার। আর হ্যা একা একাই খেলেন! একবার আমাদেরকেও দাওয়াত দিন আপু।
তবে ড্রাইভারের কথা চিন্তা করে হাসি পাচ্ছে। বেচারা কি মুখ করেছিলো সে সময়!
আরজু মুক্তা
একদম নজরুল।
আর পরেরবার আপনাকে সাথে নিবো, কথা দিলাম।
ড্রাইভারের মুখ, সে আর বলতে! পান্ডুবর্ণ।।
হা হা! বেচারা।
শাহরিন
ঘটনা টি কি সত্যি??
আরজু মুক্তা
না আপি। বানানো।
শুভকামনা
বন্যা লিপি
অসাধারন কল্পরাজ্যে নিবাস আপনার!! বাপরে!! ভাবা যায়না……
আরজু মুক্তা
ওয়াও!! ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা অহর্নিশি।
জাহিদ হাসান শিশির
গ্রামে ঘুরতে গিয়ে লোকজনের মুখে একটা পেত্নীর কথা শুনেছি। লোকে বলেছে সেই পেত্নী বিভিন্ন জনের রুপ ধরে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। আমার এক চাচ্চুও দেখেছে। এই পেত্নীটা গত দশ বছর ধরে গ্রামের মানুষকে উৎপাত করছে। সেই গল্প লিখবো । পড়বেন আশা করি।
আরজু মুক্তা
সেই আশায় নাকে সরিষার তেল দিয়ে রইলাম।
জাহিদ হাসান শিশির
এখন তো কাঠাঁলের মৌসুম না। সরিষার তেল মুছে ফেলুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভূত শুনে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম।
যাই হোক গল্পটা বেশ মজার।
আরজু মুক্তা
তাই নাকি?
ভালো লাগলো
শুভকামনা!
মনির হোসেন মমি
আপনি কত ভাগ্যবান আফা কবি নজরুলের লগে কতা কইয়া ফেললেন।দারুণ লেখা উপভোগ্য।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা।এরপরে আপনারে লগে নিবো।
মনির হোসেন মমি
আচ্ছা ।।
জিসান শা ইকরাম
হরোর গল্প ভালোই হয়েছে এটি।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা অহর্নিশি।
মোহাম্মদ দিদার
আহা!এমনটা যদি হতো।
তবেতো আমার ও সৈভাগ্য হতো ঐ বাবরী ওয়ালাকে দেখার!
পরতে পরতে ডুবে গিয়েছিলাম আপু আপনার গল্পর অতলে।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।