
ছায়ার বুকটা ঢিপঢিপ করছে, দ্রুত বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলো, এরপর ফ্রেস হয়ে নিলো।
বাথরুম থেকে বেরুনোর সময় সেলফোনে রিং হচ্ছে শুনে এগিয়ে ফোন তুলে নিয়ে স্ক্রিনে দেখলো অনিক কল দিচ্ছে, ওর বুক আবার ধুকপুক করতে শুরু করলো, ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো।
হ্যালো ছায়া, ঘুম নষ্ট করলাম নাতো, অনিকের প্রশ্ন।
ছায়া জবাব দিতে গিয়ে বিষম খেলো, গলা খাকারি দিয়ে বললো, না কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠলাম।
ভালো, তোমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো?
না না কি অসুবিধা হবে, তু তু তুমি ঠিক আছো তো, তোতলালো ছায়া।
হাঁ আমি ঠিক আছি, ঘুমাতে যাবো এখন, তাই ভাবলাম একটু খবর নিই তোমাদের?
খালা খালুর সাথে কবে দেখা হবে?
কাল সন্ধ্যায় উনার্য পোঁছুবেন, রাতে আশা করছি দেখা করবো, পরশু তো আমাদের রিটার্ন ফ্লাইট।
পরশু আসতোছো?
না না সময় লাগবেনা, এরপরের দিন পোঁছুবো, ঠিক আছে তাহলে এখন রাখি, পরে কথা হবে।
ইয়ে মানে?
কি কিছু বলবে?
না মানে জিজ্ঞেস করছিলাম আফরিন কই?
ও আছে ওর রুমে।
বড় একটা নিশ্বাস ফেলে ছায়া বললো, ওহ তাই, আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও, শুভ সকাল।
শুভরাত্রি।
আবারও বড় একটা দম ছাড়লো ছায়া, অনিকের সাথে কথা বলতে গিয়েই ওর হাত পা কাঁপছিলো, আবার অন্য রকম ভালো লাগাও ছিলো।
বাবা আপনি ফ্রেস হয়ে নিয়েছেন, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
হাঁরে মা, আজ ভিষণ ক্ষিদে লেগেছে, ব্রেকফাস্ট রেডি?
হাঁ বাবা আপনি বসে যান, ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।
কি করেছিস আজ?
আজ লুচি, হালুয়া আর মিক্সড ভেজিটেবল।
তা তুই কি আজ যাচ্ছিস?
বাবা আপনার সাথে কে থাকবে, আমি তো সন্ধ্যার আগে ফিরতে পারবোনা?
অসুবিধা হবেনা, তুই কয়েটা সেন্ডউইচ ফ্রিজে রেখে যা, আমি তাই খাবো।
ছায়া ব্রেকিফাস্ট গুলো টেবিলে দিয়ে নিজেও বসে বললো, বাবা আমাকে নয়টার মধ্যে পোঁছুতে হবে, আমি কাছের স্ন্যাক্স শপ থেকে চার পাঁচটা সেন্ডউইচ আর পেস্ট্রি নিয়ে ফ্রিজে রেখে যাবো।
ঠিক আছে, হ্যাঁরে মা অনিকের কোন খবর পেয়েছিস?
হাঁ বাবা, কল দিয়েছিলো।
কি বললো?
তেমন কিছুই না, শুধু খবর নিলো।
ওহ, ছেলেটা আসলেই ভালোরে।
ভালো নাহলে কি কেউ কাউকে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে হেল্প করে বাবা?
হুম একদম ঠিক বলেছিস, ওকে কাছে পেয়ে যেন আমি আমার রওশনকে পেয়েছি।
ছায়ার গাল বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
বাবা আর লুচি দেবো?
না মা অনেকটা খেয়ে ফেলেছি, তুই দ্রুত রেডি হয়ে নে, আমি সামনের রুমে বসছি।
ছায়া দ্রুত প্লেট বাটি সব ধুয়ে মুছে তুলে রাখতে শুরু করলো।
ওদিকে হংকংয়ে পরদিন সকাল আটটার সময় অনিকরা ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে পড়লো অনিকের অফিসের উদ্দেশ্যে, হংকংয়ে বড় একটা ডিল ফাইনালাইজ হবে আজ, অফিস থেকে গাড়ী পাঠিয়েছে ওদের পিক করার জন্য, এই অফিসটা অনিক গতবছর ওপেন করেছিলো এশিয়াটা কন্ট্রোল করার জন্য, এশিয়ার বেশ অনেক গুলো দেশ এখন বায়োকেমিক্যালের দিকে ঝুকে পড়েছে।
অফিসে পোঁছেই অনিক আর আফরিন ব্যস্ত হয়ে গেলো তাদের প্রেজেন্টেশনটা ফাইনাল চেকের জন্য, আফরিনকে হেল্প করছে হংকং ম্যানেজার।
কিছু সময় পর অফিস স্টাফ এসে খবর দিলো, দুইজন বাংলাদেশি গভার্মেন্ট অফিসার অনিকের সাথে দেখা করতে এসেছে।
সেন্ট দ্যাম ইন, অনিক বললো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই ভদ্রলোক এসে প্রবেশ করলো অনিকের কেবিনে, এসে পরিচয় দিলো দুই অফিসিয়াল।
আমি সোহেল চৌধুরি আর ও বরকত উল্লাহ, সিবিআই বাংলাদেশ।
জ্বি বসুন প্লিজ।
মি. অনিক, আমরা জানি আপনি একজন বাঙ্গালী এবং বায়ো কেমিক্যাল লাইনে খুব অল্প সময়ে খুব নাম করেছেন।
ধন্যবাদ, আসল কথা বলুন প্লিজ, আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যস্ত হয়ে পড়বো।
তাহলে আসল কথাতেই আসি, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আমেরিকা থেকে ইম্পোটেড বায়ো হ্যাজার্ড কেমিকেল বাংলাদেশে যাচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে।
তো?
আমরা কয়েকটা কন্টেইনার আটক করেছি, যার মধ্যে আপনার কোম্পানির সিল করা ড্রামও ছিলো।
হোয়াট, বলেন কি, অনিক উদ্বীগ্ন হলো।
জ্বি মি. অনিক, আমরা যখন ভালো করে চেক করলাম তখন দেখলাম আপনার সিল গালা অরিজিনাল না, এইটা মিস ইউজ হয়েছে।
ওহ মাই গড, তাহলে কি আমাকে ফাসানো হচ্ছে?
তা মনে হচ্ছেনা, আমরা ধারণা করছি আপনার থেকে ইম্পোর্ট করার পর ওরা আপনার কেমিকেল বের করে নিয়ে আবার রিফিল করছে।
না না এইটা উচিত না, তা কারা করছে এই কাজ, আমার ডিলার, অনিক বললো।
জ্বি এইখানেই সমস্যা, আপনার ডিলার কিনা আমরা জানিনা, কারণ বাংলাদেশে যারা ডাম্পিং করছে ওরা অন্য নামে এক্সপার্ট করেছে।
অনিক হাফ ছেড়ে বললো, আমি কিভাবে হেল্প করতে পারি?
দেখুন আমরা চাইছি আপনি ভিয়েতনামের দিকে একটু খেয়াল রাখুন, কেউ যদি ধরা পড়ে আমাদের জানান, বাকিটা আমর করবো।
ওয়েট আমি এখনি দেখছি কি করা যায়, অনিক নিজের সেলফোন নিয়ে লেভিনকে কল করলো, অপর পাশে রিং হতেই লেভিন রিসিভ করলো।
হাই লেভিন, কি খবর?
এভরিথিং ইজ ফাইন।
লিসেন লেভিন, আমি যতদূর জানি আমাদের ভিয়েতনাম ডিলার লাস্ট ইয়ার এবং দিস ইয়ার হিউজ পরিমানের বায়ো নিয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির।
হাঁ, তা ঠিক।
অনিক সব কিছু বুঝিয়ে বললো এইখানে কি হয়েছে, এরপর বললো, তুমি আমাদের এক্সপার্ট টিম নিয়ে ভিয়েতনাম যাও কিন্তু তা হবে সারপ্রাইজ ভিজিট, গিয়ে সব চেক করো ওরা ওখানে কি করছে, কাকে সেল করছে, ওদের ফ্যাক্টরি, ওয়েরহাউজ সব চেক করে দেখো কোন বায়ো হ্যাজার্ড কেমিকেল পাও কিনা, এরপর আমাকে লিখিতে রিপোর্ট করো।
তুমি কখন আসছো?
কাল ফ্লাইট আমার।
ওকে দ্যান সি ইউ।
বাই।
অনিক সোহেল চৌধুরির দিকে ফিরে বললো, আই হোপ খুব দ্রুত আপনারা রেজাল্ট পাবেন।
ধন্যবাদ, আমার কার্ড রাখুন, আমি আজ উঠছি, আপনার মেইলের অপেক্ষায় রইলাম।
বাই।
বাই বাই।
……… চলবে।
ছবিঃ গুগল।
৩০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
‘আফরিন কই’ ঠিক মতই জ্বলছে তুষের আগুন!
ইঞ্জা
আফরিন কাজে ব্যস্ত ভাই, রোমান্সের সময় কই?
তুষের আগুণ না জ্বালালে কেমনে চলবে গল্প?
ধন্যবাদ ভাই। 😊
রাফি আরাফাত
১০ পর্ব পড়ছি ভাই।। আর একটু। মন্তব্যটা তার পরেই করবো। ভালো থাকবেন
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম ভাই। 😁
মনির হোসেন মমি
ঘটনা রোমান্টিকতা রেখে মনে হয় অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে।অবশ্য একটু আধটু এ্যাকসান সাসপেন্স না থাকলে গল্প জমে না। তবে ছায়ার “আফরিন কৈ? জিজ্ঞাসায় বুঝা গেল ছায়া নিজ নীড়ে যাবার তৈরী হচ্ছেন।খুব ভাল লাগছে।চলুক।
ইঞ্জা
ছায়ার নিজ নীড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি কিনা আমার জানা নেই, তবে ঘটনা এখনো অনেক বাকি ভাই। 😉
তৌহিদ
ছায়ারতো দেখি অবস্থা কাহিল, দূর্বল হয়ে পড়ছে অনিকের দিকে! আফরিন পাশের ঘরেই আছে তাতেই ছায়ার মনে আগুন? ছায়া কি জবে যাচ্ছে দাদা? নাকি অন্য কোন কাজ?
অনিকের জন্য শুভকামনা রইলো। আচ্ছা ডিন হবে নাকি ডিল?
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা দুর্বলতা এসেছে ছায়ার মধ্যে, দেখা যাক কি হয়, ছায়া কই যাচ্ছে তা যদি লেখক জানতো তাহলে লেখাটি আরও দ্রুত এগুতো।
ধন্যবাদ ভাই, আসলে টাইপিং মিস্টেক হয়েছে, এখন ঠিক করে দিলাম। 😊
জিসান শা ইকরাম
ছায়ার অবচেতন মন আফরিনকে হিংসা করছে।
ফেঁসে প্রায় যেতে বসেছিল অনিক।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
জ্বি ভাইজান, একদম সঠিক ধরেছেন, ছায়ার মনে একটু হিংসা, কিছুটা উদ্বেগ আসছে, কারণ ও অনিকের প্রতি একটু দুর্বল বৈকি।
পরের পর্ব চেষ্টা করবো দ্রুত দেওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইজান। 😊
শিরিন হক
এক নিশ্বাসে পড়ে নিলাম। ভালো। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ শত সহস্র আপু, আশা করছি দ্রুতই পরের পর্ব পাবেন। 😀
রেহানা বীথি
ঈর্ষা!
জমছে তবে।
ভালো লাগলো ভাইয়া।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ঈর্ষা বৈকি, নারীর অধিকার বলে কথা।
ধন্যবাদ আপু, আশা করছি দ্রুতই লিখবো পরেরটা। 😊
আরজু মুক্তা
ভালোই জ্বলছে
ইঞ্জা
আপু আপনি হলেন আমাদের রাইজিং স্টার, এতো অল্প কমেন্টে পেট ভরেনা। 😄
প্রদীপ চক্রবর্তী
পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
আগের পর্ব পড়েনি।
নিশ্চয় পড়ে তারপর মন্তব্য করব দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাদা, অপেক্ষায় থাকলাম।
বন্যা লিপি
নিয়ে এলেন তো আরেক সান্সপেন্স্??
একদিকে ছায়ার জ্বলুনী আরেকদিকে লেন্দি!!
কতদুর যাবে লেখকই ভালো জানেন।
মুঠো ভর্তি ভালোবাসার অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
আপু গল্প তো শুরু হলো আরও যাওয়ার আছে অনেক বাকি, পাশে থাকুন, ইনশা আল্লাহ্ অনেক এগুবে এই গল্প, ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
ছায়া আর আফরিন একে অপরের বিয়োগান্তক ভাবনা হচ্ছে না কি?? ছায়া তো অলরেডি আফরিন কোথায় তা খবর নিচ্ছে।
ইঞ্জা
একদম ঠিক ধরেছেন ভাই, দেখা যাক পরে কি হয়। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
অপেক্ষায় আছি। পরের পরবের…………
ইঞ্জা
দ্রুতই পাবেন ভাই
রেজওয়ান
ব্যস্ত আরিফিনকে দেখা গেলো নাতো আজ..
ইঞ্জা
আফরিন, দ্রুতই আসছে। 😊
কামাল উদ্দিন
বায়োকেমিক্যালটা আসলে কি জিনিস? বা কি কাজে এগুলো ব্যবহার হয় কিছুই তো জানিনা। সাথেই আছি, প্রয়োজনে ভিয়েতনামেও যাবো, হালংবেটা আমার দেখার খুব ইচ্ছে 😀
ইঞ্জা
বায়ো ক্যামিকেল হলো রসায়নের একটি শাখা যাতে কম পরিবেশ দূষণ করে এবং ঝুঁকি হ্রাস করে এমন রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা উৎপাদন-পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হয়, কার্যত: ‘সবুজ রসায়ন’ এমন একটি গবেষণাদর্শন যার উদ্দেশ্য এমন রাসায়নিক পদ্ধতির উদ্ভাবন ও অবলম্বন করা যাতে শিল্পজাত বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়, ঝুকিঁপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং শক্তির অপচয় হ্রাস পায়, এটি রসায়নের একটি নবতর শাখা এর লক্ষ্য মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বর্জিত ও পদ্ধতি আবিষ্কার।
এটি পরিবেশ রসায়ন থেকে ভিন্ন এবং প্রাকৃতিক।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাইজান, এসব ব্যপারে আমি একেবারেই মূর্খ 🙁
ইঞ্জা
ইঞ্জিনিয়ার আমি, বুঝেন তো। 😉