
একদিন নোবেলজয়ী পাবলো নুরুদা চিন্তা করলেন নামডাক যশতো অনেক হলো এবার অন্যকিছু করা যাক। কি করা যায়? কি করা যায়? দিন কয়েক চিন্তা ভাবনার পর মনে হলো- রাজনীতি করার শখ তার অনেক দিনের। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে এসব নোবেল টোবেল দিয়ে রাতারাতি চেয়ার দখল করা যাবেনা। তাহলে উপায়? কিভাবে হবেন নেতা? এই চিন্তা নিয়ে তিনি শরণাপন্ন হলেন বিখ্যাত দার্শনিক নুরুস্টটলের কাছে।
দার্শনিকের কাছ থেকে কেউ বিনা বুদ্ধিতে ফিরে এসেছে এমন নজির নেই। তাদের মাথায় বুদ্ধি সবসময় কিলবিল কিলবিল করে। তিনি পাবলো নুরুদাকে বুদ্ধি দিলেন -নেতা হতে হলে নিজের চারপাশে কিছু পাক্কা ভড়ংবাজ অভিনেতা রাখতে হবে। সে কলাকুশলীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একটা নাটক মঞ্চস্থ করবেন। জনগন খাবে, নাটকও হবে সাথে কার্যসিদ্ধিও হবে।
এবার নাটক লেখার পালা। কিন্তু এই নাটক লিখবে কে? উপায়ন্তর না দেখে তারা দু’জনে মিলে জনপ্রিয় বিদ্রোহী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নাট্যকার উইলিয়াম নুরুক্সপিয়ারকে অনুরোধ করলেন একটা নাটক লেখার জন্য। যেটা দেখে জনগন পাবলো নুরুকে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত করবে।
যেমন কথা তেমন কাজ। নুরুক্সপিয়ার রাজী হলেন সে নাটক লেখার জন্য তবে শর্ত একটাই- পাবলো নুরুদা জিতলে যে চেয়ারের মালিক হবেন তার পায়া চারখানা তাকে দিতে হবে। নুরুদাও কম ধড়িবাজ নন। এমনি এমনিই নোবেল বগলদাবা করেননি তিনি। পরেরটা পরে দেখা যাবে আগে নাটকটাতো সফলভাবে মঞ্চায়ন হোক। এই ভেবে তিনি রাজী হয়ে গেলেন। যে কোন উপায়ে একবার চেয়ারে বসতে পারলে তখন চারপাশের ভোলাভালা জনগনই তার ঢাল হয়ে পাশে দাঁড়াবে।
কিন্তু নাটকের নাম কি দেয়া যায়? এখনকার জনগন বহুত চালাক। নামকরণ সঠিক না হলে নাটক চলবেনা। নুরুস্টটলের চিকন পিনের বুদ্ধি আবার ঝিলিক দিয়ে উঠলো। তার উপদেশ অনুযায়ী সবাই এলেন বিখ্যাত নাট্য নির্দেশক এবং ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয় নেতা নুরুন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। পাবলো নুরুদার নাটকের নামকরন তিনি করবেন তবে শর্ত দিলেন- সেই চেয়ারের হাতল দু’খানা তার চাইই চাই।
নুরুক্সপিয়ার নেবেন পায়া, নুরুন্দ্রনাথ নেবেন হাতা, তিনি তো চেয়ারে আরাম করে বসতেও পারবেননা। তাই সই, তবু অনেকদিনের সাধের সেই চেয়ারে বসাতো যাবে, এটা ভেবে পাবলো নুরুদা রাজী হলেন। অনেক ভাবনা চিন্তা করে ঠাকুর সাহেব নাটকের নাম দিলেন “হাঁসের জুতা” ইংরেজিতে ডাক সু।
ক্ষমতাসীন দলের নাট্যকার হবার কারনে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এ নাটকের নির্দেশনা দেবেন নাট্যগুরু নুরুন্দ্রনাথ ঠাকুর। দলকে তিনিও নোবেল এনে দিয়েছেন, সেখানে একটা চাহিদাতো তার আছেই। অন্যান্যরা বিরোধীতা করার সাহস পাবে না।
কিন্তু নাটকতো আর বললেই লেখা যায়না, বিস্তর গবেষনার প্রয়োজন। সানন্দে এ দ্বায়িত্ব নিলেন বিখ্যাত গবেষক স্যার আইজ্যাক নুরুটন এবং বিজ্ঞানী আলবার্ট নুরস্টাইন। তাদের সহযোগী হিসেবে থাকলেন জনপ্রিয় আবিষ্কারক নুর্কিমিডিস। এনারা সবাই হালের ক্রেজ, এদের রাজনৈতিক মতাদর্শ এখন তুঙ্গে। পর্দার আড়ালের রাজনীতিতে এনারা যথেষ্ট পারদর্শী।
“হাঁসের জুতা” – এই নাটক নিয়ে মহাবিজ্ঞানী নুর্কিমিডিস গবেষনার এক পর্যায়ে নতুন এক থিউরি উদ্ভাবন করলেন। আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলেন- নুউরেকা! নুউরেকা! কিভাবে হাঁস জুতা নাটকের সফল মঞ্চায়ন হতে পারে তা তিনি বের করে ফেলেছেন। পাবলো নুরুর চেয়ার এবার কেউ ঠেকাতে পারবেনা।
তিনি তৎক্ষণাৎ কথা বললেন চিত্রশিল্পী নুরু দ্য ভিঞ্চি সাহেবের সাথে। দৃশ্যপট তৈরি, শুধু তাতে একটু রঙ মেশালেই সফল একটি নাটকের ছবি দৃশ্যমান হবে সবার সামনে। সেই রঙ নুরু দ্য ভিঞ্চি ছাড়া আর কেউই ছিটাতে পারবেনা। এই ছবিই একদিন স্থান পাবে বিখ্যাত দি লুভনুর মিউজিয়ামে। যেখানে সবুজ শ্যামল নুরু চত্বরে প্রকৃতিবিদ চার্লস নুরউইন দশ টাকা নয়, তিন টাকায় সমুচা সিংগারা আর চা খাওয়ান সবাইকে।
চার মাস পর, আজ দেশের সচেয়ে দূরদর্শী কর্ণধার নূর সে তুং এসেছেন হাঁসের জুতা নাটকটির উদ্বোধন করতে। সকাল সকাল সবাই মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তিনি কাঁচি দিয়ে ঘ্যাচাং করে ফিতা কাটলেই নাটক শুরু হবে।
কিন্তু বাঁধ সাধলেন লুভনুর মিউজিয়ামের মহান পরিচালক নেতা মহাত্মা নুরুজী! নাটকের কলাকুশলীদের দেখে তিনি ইচ্ছেকৃতভাবে নাটকীয় কিছু মিথ্যে বলা শুরু করলেন। আরে এ নাটকতো আমি আঁঠাশ বছর আগেই লিখেছিলাম, কিন্তু প্রকাশ করিনি। নিশ্চই স্ক্রিপ্ট চুরি করা হয়েছে। না হলে নাটকের নাম ভিন্ন কিন্তু গল্প একই হবে কেন? এই হইহুল্লোর আর হট্টগোলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করা হলো। চারিদিকে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এসব দেখে মঞ্চের পিছনের কারিগর জর্জ নূরশিংটন মুচকি হাসে আর মুচকি হাসে। মনে মনে ভাবে, এইবার হবে মুল নাটক। সবাই সত্য যাচাই না করে হইহট্টগোল করুক। এটাইতো নুরুগং( পাবলো নুরুদা, নুরুস্টটল, নুরুক্সপিয়ার, নুরুন্দ্রনাথ ঠাকুর, নুর সে তুং থেকে শুরু করে নুরুশিংটন, মহত্মা নুরুজী ) সবাই চেয়েছিলেন।
এসব দেখে পাবলো নুরুদা ফাইনাল দৃশ্যপটে চলে গেলেন, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। হট্টগোলের এই ফাঁকে কারা নাকি তাকে আলতো মোলায়েম হাতের ছোঁয়া দিয়েছে, আর কয়েক ছোঁয়াতেই সে অজ্ঞান। তিনি চোখ বন্ধ করে মিচকি মিচকি হাসেন আর ভাবেন- যাক নুরু গংদের কাছ থেকে তিনি যথেষ্ট অভিনয় শিখে নিয়েছেন। এটাও আর একটা বিরাট নাটক।
সেদিন সন্ধ্যায় সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দলীয় প্রার্থী বিদ্রোহী নুরুজুল ইসলাম যিনি পাবলো নুরুদার কাছে ভোটে হেরে গেলেন, তিনি নুরু দ্যা রকস্টারের সাথে মঞ্চে উঠে সকলকে এমন সুন্দর একটি সফল নাটক মঞ্চায়ন করার জন্য নিজেই ফুলের মালা পাবলো নুরুর গলায় পরিয়ে দিলেন।
বিদ্রোহী নুরুজুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললেন- আমি রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে এসেছি ঠিকই তবে অভিনয়টা আজও ঠিক ঠাক করতে শিখলামনা!
৩৭টি মন্তব্য
নীরা সাদীয়া
দারুন মজা করলেন।
তৌহিদ
হুম লেখাটি নুরুময় করে সবাইকে মজা দিলাম।
ইঞ্জা
ইশশিরে এইখানে অঅট্টহাসির ইমোজি স্টিকার নেই, থাকলে আমি আজ সেটাই দিতাম। 😂
তৌহিদ
আমি কল্পনায় দেখছি আপনি হা হা হা করে হাসছেন দাদা 😃😃😃
ছাইরাছ হেলাল
এভাবে এমন করে আপনি লিখতে পারেন এটি না দেখলে জানা হতো না।
নাম নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে। চলুক এমন কিছু মাঝে মাঝে।
তৌহিদ
পরিস্থিতি, সময় আমাদের বাধ্য করে এভাবে লিখতে। তবে লেখায় ভ্যারাইটি থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। নাম নির্বাচন আইডিয়া ফেসবুক থেকে নেয়া ভাই। পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
ফেসবুক দেখেছি।
লিখুন, পড়বো অবশ্যই।
বন্যা লিপি
আমিও আফসোস জানাচ্ছি হা হা হা রিএ্যাক্ট দিতে পারলাম না। যুতসই কইলেন ভাই😊😊😊
তৌহিদ
আমার কিন্তু আপনার হা হা হা লিখাতেই হাসি পাচ্ছে আপু।😃😃 লেখা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।
মোস্তারী শবনম
সময়য়োপযোগী লেখা।
দারুন…👍
তৌহিদ
প্রথমবার ব্লগে এসে আমার পোস্টে প্রথম মন্ত্যব্য করেছেন দেখে আনন্দিত হলাম। সোনেলায় আপনাকে স্বাগতম।
এভাবেই আমাদের সবার লেখায় মন্তব্য করে উৎসাহিত করবেন কিন্তু।
ভালোবাসা জানবেন।
রিতু জাহান
আমি দুজনের এমন মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য দেখে বড়ই মজা পেলাম।
দুজনের জন্যই ভালবাসা।
তৌহিদ
আপনিও ভালোবাসা জানবেন আপু।
মোস্তারী শবনম
সময়োপযোগী লেখা।
দারুন…
মোস্তারী শবনম
সময়োপযোগী লেখা।
দারুন….
মোস্তারী শবনম
সময়োপযোগী লেখা…
দারুন।
মোস্তারী শবনম
সময়োপযোগী লেখা….
দারুন।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা, দারুন মজা পেলাম ভাই।
সম সাময়িক একটি বিষয়কে ফান এর মাধ্যমে প্রকাশ করা চাট্টিখানি কথা নয়।
চারদিকে সুধু নুরু আর নুরু।
নুরুময় এমন লেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আরো রম্য চাই ভাই।
তৌহিদ
দুদিন পরেই নুরু পঁচে যাবে,আমি নিশ্চিত। রম্য লেখা খুব একটা হয়না তবে চেষ্টা করবো।
ধন্যবাদ ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
এতো একদম নুরুধারণ লেখা হয়েছে। 🙂 আপনি যে এমন করে লিখতে পারেন, নুরু আমাদের জীবনে না এলেতো জানতেও পারতাম না, হি হি।
নুরুব্বাস নুরুব্বাস 😀
তৌহিদ
আপনিওতো কম যাননা😰😰
নুরুধারন লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমিও নুরানন্দিত হলাম।
নুরুন্যবাদ জানবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাতো নুরু নুরুতে নুরুময় হয়ে একদম নুরানী রুপ ধারণ করেছে তৌহিদ ভাই। রম্যরচনার রোমাঞ্চকর ভাব বিরাজমান। বাহ ! দারুন লিখেছেন। এমন লেখা পড়লে অসুস্থ হার্ট দশ মিনিটে ঠিক হয়ে যাবে হাসতে হাসতেই।
আরো হাসতে চাই, মানে পড়তে চাই। লিখুন প্লিজ।
শুভকামনা অবিরত।
তৌহিদ
নুরানী রূপ!! একি শব্দ সুধালেন আপু!! নুরু আর ক’দিন পরেই পচানিতে পরিনত হবে। অপেক্ষা করুন, দেখবেন।
আমার এই লেখা দেশ বিদেশের সকল হাসপাতালে হার্টের রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি। অনেক টাকা বেঁচে যাবে 😃😃
ধন্যবাদ জানবেন।
নাজমুল আহসান
কী বলতে চাচ্ছেন? একটু খোলাসা করে বলা যাবে?
তৌহিদ
ডাকসু নির্বাচনে নুরুকে নিয়ে রাজনীতি -এটাই মুল বিষয় ভাই।
মাহমুদ আল মেহেদী
দারুন মজায় আমায় মজা দিলেন।
তৌহিদ
মজা পেয়েছেন জেনে আনন্দিত হলাম। শুভকামনা জানবেন।
মেহেরী তাজ
সমসাময়িক একটা বিষয় এতো সুন্দর একটা গল্পের দ্বারা উপস্থাপন করলেন । পড়ে মজা পেলাম…
তৌহিদ
পাঠক আনন্দ পেলেই লেখকের তৃপ্তি। উৎসাহিত হলাম ভাল থাকবেন।
অপার্থিব
হা হা হা … নুরুময় এই পোষ্ট পড়ে নিজেকে নুরান্বিত বলে মনে হচ্ছে।
তৌহিদ
নুরুন্যবাদ জানবেন।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা
চমৎকার তা যা বলেছেন না
একেবারে ফাটাফাটি।
তৌহিদ
ফাটাফাটি আস্তে বলুন, নুরুর মাথা এমনিতেই গরম আছে। কখন আবার ফেটে যায় কে জানে!!
রিতু জাহান
হাসতে বেশ কষ্ট হচ্ছে, তবু হাসি পেলো। গতকাল পড়েছিলাম অল্প একটু।
ভেবেছি ব্লগেই পড়ে নিব।
তবে হ্যাঁ, নুরু এ লেখা পড়লে নির্ঘাত স্ট্রোক করবে সত্যি সত্যি।
আপনি এতো চমৎকার করে এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করবেন সত্যিই অবাক হইছি। এ ধরনের লেখা ব্লগে এই প্রথম।
লেখায় কোথাও কোনো ছেদ পড়েনি।
মজার একটা লেখা।
লেখার জন্য অভিনন্দন।
তৌহিদ
মাঝেমধ্যে রাগ উঠলে আমার এরকম লেখা বের হয় আপু। না পারছি হাসতে না পারছি রাগতে।
ব্লগে এরকম লেখা প্রথম জেনে আনন্দিত হলাম।
আপনিও অভিনন্দন জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
নুরসাহিত্য আবার কবে পাবো?
নুরালোকিত থাকুন ভাই,
তৌহিদ
আবার যেদিন নুরুর মত কেউ হাস্যরস নিয়ে আসবে সেদিন নিশ্চয় পাবেন ভাই।
শুভেচ্ছা জানবেন ভাইয়া।