বই পড়তে ভালোবাসি। যখনই টরেন্টো যাই, ডেনফোর্থের ATN Mega Store-এ আমি পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও যাবোই যাবো। দু’ সপ্তাহ আগে গেলাম, গিয়ে বই কিনলাম সেলিনা হোসেনের “গেরিলা ও বীরাঙ্গনা”, চিত্রা দেবের “ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহল”, “ঠাকুর বাড়ির বাহির মহল।” হঠাৎ চোখে পড়লো প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের ছবি সম্বলিত একটি বই। দূর থেকে ভাবলাম বুঝি আত্মজীবনী, কাছে গিয়ে দেখি আনন্দলোক সংকলন “সম্পূর্ণ সুচিত্রা।” পাতাটি উল্টিয়েই দেখি রবীন্দ্রনাথের সেই গানটি লেখা, “তুমি কোন কাননের ফুল!” মুহূর্তের জন্য মনে হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসলেই যেনো সুচিত্রা সেনের জন্যই লিখেছিলেন। সাধারণত আমি কোনো একটা অজানা বই কিনলে লাইব্রেরীর মালিক দোহা ভাইকে জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু সেদিন তিনি দোকানে ছিলেন না। উনাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, বললেন বইটা পড়তে ভালো লাগবে, তাছাড়া অনেক অজানাও জানা যাবে। জীবনে বহুবার সুচিত্রা সেনের সিনেমা দেখেছি মামনির সাথে। মামনি-বাপির প্রিয় অভিনেত্রী বলেই, উনার সম্পর্কে ইচ্ছে হলো জানতে। ভাবলাম বইটি পড়া শেষ করে মামনির সাথে এ নিয়ে গল্প করা যাবে। কিন্তু তারপর মনে হলো, সোনেলাও তো আমার প্রিয়, কেন এখানে জানাচ্ছি না বইটির কথা? যাক, এখন আসল প্রসঙ্গে আসি।
“সম্পূর্ণ সুচিত্রা” বইটি আসলেই মন্দ নয়। অন্তত যাঁরা ব্যক্তি এবং অভিনেত্রী সুচিত্রা সম্পর্কে অজানা কোনো তথ্য জানতে চান, পড়ে দেখতে পারেন। কারণ উনাকে নিয়ে কোনো সম্পূর্ণ বায়োগ্রাফি মনে হয়না কখনও লেখা হবে। ১৯৭৮ সালে সেই যে লোকচক্ষু থেকে অন্তরীন হয়েছিলেন, ২০১৪ সালে মৃত্যুর পরেও উনার মুখ দেখা যায়নি। কন্যা মুনমুন সেন, নাত্নী রাইমা-রিয়া এবং সুচিত্রার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার কান্তিভূষণ বকসি ছাড়া আর কারুরই প্রবেশাধিকার ছিলোনা বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বহুতল ওই অট্টালিকায় সুচিত্রা সেনের ফ্ল্যাটে। নিজেকে এতোটাই আড়াল করে নিয়েছিলেন কেন, সে সম্পর্কে বিভিন্ন জনের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় (আমার মতে), উনি আসলে জগৎ-সংসারের মোহ-মায়া থেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আর সেটা তিনি পেরেওছিলেন। অনেকেই তাঁকে বলেন প্রাচ্যের গ্রেটা গার্বো। কিন্তু আমি মনে করি গ্রেটা আর সুচিত্রা অন্তরালবাসিনী হলেও দুজনের একজন বিবাহিতা, অন্যজন সিঙ্গেলই থেকে গেলেন। আর বিবাহিত জীবনে সন্তানসহ পরিবারকে সামাল দিয়ে সিনেমায় অভিনয় সুচিত্রার জন্য সহজ ছিলোনা।
বইটিতে বেশ কিছু ছবি আছে, যা এই প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। এমন কয়েকজনের বয়ান আছে যা থেকে আন্দাজ করা যেতে পারে নায়িকার দিনকাল কেমন কেটেছিলো। তাছাড়া উনি সময় কিভাবে কাটাতেন এসব বিভিন্ন কিছুর ধারণা পাওয়া যায়। সুচিত্রা সেন এমন একজন অভিনেত্রী, যাঁর অভিনীত ছবি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরষ্কার পেয়েছিলো এবং তিনি শ্রেষ্ঠ নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলেন সিলভার প্রাইজ। একজন বাঙালি হিসেবে অবশ্যই গর্ববোধ করি আমি। সুচিত্রা সেন আমাদের বাংলার মেয়ে, যাঁর শেকড় এই বাংলায়। বিস্তৃত হয়েছে ভারতে এবং বিশ্বেও। বিশ্ব বলার কারণ হলো, বেশ কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো যাঁরা ভারতীয় কিংবা বাংলাদেশের নয়। উনারা সুচিত্রা সেনকে চেনেন, “সাত পাকে বাঁধা” সিনেমা থেকে। কারণ এটি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়েছিলো। আমার এক ক্লায়েন্ট আমাকে অবাক করে দিয়ে বলেছিলো, “তুমি বাঙ্গালী? জানো, একজন বাঙ্গালী অভিনেত্রী একটা সিনেমায় অভিনয় করেছিলো, ওটা নাকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জীবন থেকে নেয়া হয়েছিলো?” আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, বলেছিলাম হুম! ওটার নাম “আঁধি।” জুডিথ শোনো আরেকটা কথা বলি, আমি বাঙ্গালী, তবে কলকাতার নই। আর ওই অভিনেত্রীর নাম সুচিত্রা সেন, যার জন্ম ও বড়ো হওয়া আমাদের বাংলাদেশে। গর্ব হচ্ছিলো কথাটা বলে, কারণ ভারতীয় বহু বিখ্যাত বাঙ্গালীদের শেকড় আমাদের দেশের মাটিতে।
বইটির নাম ঃ সম্পূর্ণ সুচিত্রা
আনন্দলোক সংকলন
প্রকাশনী ঃ আনন্দ পাবলিশার্স
মূল্য ঃ ৪৫০ রুপি (বাংলাদেশী ৮১০ টাকা)।
প্রথম প্রকাশ ঃ জানুয়ারি, ২০১৭ ইং।
হ্যামিল্টন, কানাডা
১২ মে, ২০১৭ ইং।
২৪টি মন্তব্য
সৈয়দ আলী উল আমিন
সম্পূর্ণ সুচিত্রা, বইটি সংগ্রহ করব। ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আশা করি পেয়ে যাবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মোঃ মজিবর রহমান
অজানাকে জানা হল। বইটি সংগ্রহ করে পড়তে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
বইটি অবশ্যই পাবেন। আজকাল তো একইসাথে ঢাকা-কলকাতায় একই বই প্রকাশিত হয়।
ধন্যবাদ মজিবর ভাই।
নীহারিকা
বইটি কেনার ইচ্ছে রইলো। এমন একজন মানুষ যার সম্পর্কে জানা উচিত সকল বাঙালীর।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু এমন অনেক কিছু আছে যা আমি জানতামই না! অবাক হয়ে গিয়েছিলাম পড়ার পর।
ভালো থাকবেন আপু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এই সোনেলাতেই এই স্বরণীয় বাংলাদেশী পাবনার মেয়ে নামে একটি পোষ্ট আছে।সে আমার মত আরো অনেকের স্বপ্নের নায়িকা। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
যতোটুকু মনে হয় আমি পড়েছি ওটা। নব্বই ভাগ নিশ্চিত।
ধন্যবাদ মনির ভাই।
ইঞ্জা
দিলেন তো লোভ লাগিয়ে, কালই যাবো খুঁজে আনতে, মন ভরে পড়তে চাই মহা নায়িকার গল্প যা সত্যও বটে।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া পাবেন অবশ্যই। আজকাল তো পাওয়াটা সহজ। আগে যেমন কলকাতার বই ঢাকায় পেতে অর্ডার দিতে হতো। তা নইলে অপেক্ষায় থাকতে হতো।
পড়ে জানাবেন। ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
অবশ্যই জানাবো আপু, এমন বই নিজের বুক সেল্ফে মানাবেও বেশ। 😁
নীলাঞ্জনা নীলা
তা অবশ্য ঠিক। আমার লাইব্রেরীটাকে যে কি মিস করি ভাইয়া! 🙁
বাবু
ভালো লিখেছেন দিদি। তবে বইটি পাবো কোথায়? আমাদের দেশে বইটি এসেছে?
নীলাঞ্জনা নীলা
দাদা অবশ্যই পাবেন। ঢাকাতে খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন। আজকাল ঢাকা-কলকাতায় একইসাথে বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখুন।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
সুচিত্রা সেনের মত এত জনপ্রিয় নায়িকা তৎকালীন সময়ে ছিল না,
অভিনয়, সৌন্দর্য্য আর সুন্দর রুচির এক সম্মিলন হচ্ছেন সুচিত্রা সেন।
হঠাৎ তিনি নিজকে আড়াল করে ফেললেন, কেন করলেন এই কৌতূহল সবার মত আমারও।
দেখি বইটি সংগ্রহ করা যায় কিনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা বইটা পড়ে দেখো, অবাক হয়ে যাবে। এমন অনেক কিছু আছে, যা আমার জানা ছিলোনা।
ঢাকায় গেলে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেটে খোঁজ করে দেখতে পারো। অবশ্যই পাবে।
ভালো থেকো নানা।
ছাইরাছ হেলাল
এমন সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন যে পড়ার খুব ইচ্ছে, ভিড় ঠেলে হলেও
পড়ার চেষ্টা করতেই হবে,
এলিজাবেথ টেলরের সাথে তাঁর চেহারার খুব মিল!!
নীলাঞ্জনা নীলা
উপস্থাপন সুন্দর করে করেছি বুঝি? তাহলে এবারে পুরষ্কার দিন।
বলেন কি এলিজাবেথ টেলরের সাথে সুচিত্রা!!! তবে লিজের কয়েকটা সিনেমা দেখেছিলাম বিটিভিতে। দুঃখের ব্যাপার হলো সাদা-কালো টিভি ছিলো, কোনটা রঙ্গিন তখন জানাই হয়নি। 🙁
কুবিরাজ ভাই গ্রন্থখানা পড়িয়া জানাইবেন আশা করি। কেমন? 😀
ছাইরাছ হেলাল
আইচ্ছা, পরে পড়ে জানামুনে;
আজকে এই বইটার-ই বিজ্ঞাপন দেখলাম,
নীলাঞ্জনা নীলা
বলেন কি! এই বইয়ের বিজ্ঞাপন?
আপনার জন্য আমি বিজ্ঞাপন তৈরী করেছিলাম, বুঝেছেন? 😀
শুন্য শুন্যালয়
পোস্টটা অসম্পূর্ন লিখেছ নীলাপু। বুক রিভিউ এর মতো আবার রিভিউ নয়, এত কঞ্জুস তুমি? কিছু ছবি শেয়ার দিলে কী ক্ষতি ছিলো? এখানে বই এর যা দাম, তাতে ঢুকতে ভয় পাই। বাংলা বই এর দোকান খুঁজে পাইনি, পেলে অবশ্যই খুঁজবো এটি। উত্তম-সুচিত্রা এই দুই-ই হচ্ছে আফিমের মতো, প্রবল আকর্ষন এখনো টানটান। মাঝে মাঝে পড়া বইগুলো নিয়ে লিখো। ভালো থেকো।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু গো বইটা সেদিন পড়ে শেষ করলাম, মনে হলো ব্লগে আমার প্রিয় কয়েকটা বইয়ের নাম দেই। অমনি মনে হলো আজ যেটা পড়লাম তার কথাই বলি। তাই তৎক্ষণাৎ লিখলাম। ঠিক আছে এরপর যে বই পড়বো, সেটা নিয়েই লিখবো।
বইয়ের দামের কথা বলো? এখানেও গো আপু। এইতো বছরের শুরুতে টাকা ছিলোনা হাতে, বন্ধুর থেকে ধার নিয়ে কিনেছিলাম। কারণ বইগুলো শেষে না হাতছাড়া হয়ে যায়। শোনো তুমি অনলাইনে কিনতে পারো। দাম কিন্তু কম পড়ে অনলাইনে।
শোনো লেখা দাও নতুন। -{@
মৌনতা রিতু
শোনো, একসময় কেন এখনো ভাবি, ইশ! আমার যদি সূচিত্রার মতো চেহারা হইতো। বইটি নিতেই হবে। আমি তার প্রায় সব ছবিই দেখছি। তার মতো রোমান্টিক নায়িকা আর হবে কি! তার পাবনার বাড়িতে গিয়েছিলাম।
ছবিগুলো দিলে না কেন?
তুমি এতো ভাল লেখ❤ দারুন লেখ তুমি। কেন যে তোমার মতো লিখতে পারি না! লিখতেই হবে, তোমার শিষ্য বলে কথা!
নীলাঞ্জনা নীলা
শোনো সুচিত্রার চেয়ে আমরা দেখতে কি কম সুন্দর! তুমি শান্তসুন্দরী, সুচিত্রা তো কেবলই সুচিত্রা।
ওই বইটিতে তুমি সুচিত্রার একটা ছবি পাবে, যেটা ওঁর শেষ ছবি। ১৯৯৫ সালের। ওই ছবি দেখার পর মনে হলো একেবারে মৃত্যুর সময়কার ছবিটা যদি দেখতে পারতাম!
হুম বইটি সংগ্রহ করো। ভালো লাগবে।