কতো অজানারে জানাইলে তুমি

নীলাঞ্জনা নীলা ৫ জানুয়ারি ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১০:৫৭পূর্বাহ্ন অন্যান্য, একান্ত অনুভূতি ২০ মন্তব্য
রহস্যে ভরা মস্তিষ্ক এবং মহাকাশ...
রহস্যে ভরা মস্তিষ্ক এবং মহাকাশ…

লেখাটির ক্যাপশন আমার বুড়ো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের থেকে নেয়া। হুম কতো কিছু যে অজানা থেকে যায় জীবনে। রহস্যে ভরা আমাদের মানুষ থেকে প্রকৃতির অনেক কিছুই। চাঁদে পৌঁছে গেছে মানুষ বহু আগেই, এখন খোঁজ করা হচ্ছে আরেক পৃথিবীর। অবশ্যই আছে এমনই আরেকটি পৃথিবী অন্য আরেক সৌরজগতে। একদিন সেটাও পেয়ে যাবে মানুষ। ওই পৃথিবী খুঁজে পাবার পরও আরোও জানার চেষ্টা করে যেতেই থাকবে বিজ্ঞানীরা। কারণ জানার যে কোনো শেষ নেই। লেখার ক্যাপশনের সাথেই মিল রেখে এবার আমার কাছে অবাক করা কিছু জানা সবাইকে শেয়ার করছি।

অন্তাক্ষরী :- কি নামটা শুনে মনে হচ্ছে না ইস বন্ধুদের সবাইকে যদি এখন পাওয়া যেতো! গানের খেলা, অক্ষরের খেলা আর মজা-দুষ্টুমীর খেলা। এই খেলার জন্মদাতা লেখক-সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়। চিনতে পারেননি? বলিউডে অনেক হিন্দী সিনেমার চিত্রনাট্যকার ছিলেন এবং প্রায় প্রতিটি-ই সুপারহিট হয়েছিলো। তবে তিনি গান দিয়ে নয়, কবিতার প্রথম অক্ষর দিয়ে অন্তাক্ষরী খেলা শুরু করেন। বর্তমানে এটি রূপান্তরিত হয়েছে গানে।

অ্যামিগডালা :- অ্যামিগডালা এমন একটি সিন্দুক যার অবস্থান মস্তিষ্কের ভেতর। এখানে স্মৃতিদের সংরক্ষণ করা হয়। মজা হলো,বহু স্মৃতিতে বেশী ভারী হয়ে পড়ে যখন এই সিন্দুক, সে তখন তার মতো করে নির্ধারণ করে কোন স্মৃতিকে রাখবে আর কোনটিকে না। তো আমরা অনেক স্মৃতি যে ভুলে যাই, তার জন্য দায়ী কিন্তু আমরা মানুষ নই। ওটা অটোমেটিকভাবে তার কাজ করে, সে-ই ঠিক করে নেয় কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ! বুঝুন তবে কি কান্ড!!

রংধনু মস্তিষ্ক ঃ- এ্যা মস্তিষ্ক কিভাবে রংধনু আঁকে!!! বিশ্বাস হচ্ছেনা, তাই না? আমারও হয়নি। কিন্তু বিশ্বাস না করেও উপায় নেই যে! মানব মস্তিষ্ক পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান। মানবদেহের সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ ওই মস্তিষ্কের উপর এ কথা তো আমরা জানি। কিন্তু এটা কি জানা আছে যে আমাদের সাতটি মৌলিক অনুভূতি মানে ইমোশ্যনের আলাদা আলাদা রং-ও আছে? সাতটি ইমোশ্যনের নাম এবং রঙগুলো হলো, “সন্তুষ্টি(কালচে লাল), আনন্দ(হলুদ), বিস্ময়(সবুজ), ভয়(হাল্কা সবুজ), রাগ(লাল), দুঃখ(বেগুণী), নিরপেক্ষতা(গোলাপি)।” এবার থেকে নীলকে আর বেদনার রং বলা যাবেনা কিন্তু!

আসগার্ডিয়া ঃ- ইস আর ভালো লাগেনা এ পৃথিবী। এতো মানুষ-জন, ব্যস্ততা, ধূলো-বালি, নিরাপত্তাহীনতা, ধর্ম নিয়ে জঘণ্য খেলা, বিশ্রী রাজনীতি কতো কি যে সারা পৃথিবী জুড়ে! কিন্তু ‘কোথায় যাবো’, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে।  ‘আসগার্ডিয়া’ আছে তো, ‘আকাশের শহর!’ আসলে আসগার্ডিয়া একটি Space Nation(দেশ)। আর ওই ‘মহাকাশ দেশে’র জন্য পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতও থাকবে। ওহ ওখানে কিন্তু কোনো ধর্ম-বর্ণ-ভাষা দিয়ে পরিচিতি পাওয়া যাবেনা। প্রতিভা এবং মানবতার বিচারে পরিচিতি। তবে ওখানে থাকতে চাইলে এই পৃথিবীতে ফিরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে চিরতরে। মানে স্থায়ীভাবে বসবাস ওখানেই। তো ওই স্পেস নেশন আসগার্ডিয়ার নাগরিক হতে চান? চাইলে ওদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ফর্ম পূরণ করতে হবে। যেতে চান? ‘ভাবিয়া করিও কাজ…’, আমি বলিয়া রাখিলাম কিন্তু!

ভাগ্যচক্র ঃ- এমন কেউ নেই যে রাশিফল পড়েন না। কেউ বিশ্বাস করেন, আবার কেউ একেবারেই না। তবে বিশ্বাস-অবিশ্বাস থাকুক কিংবা না-থাকুক, রাশিচক্রে চোখ প্রায় সকলেই বুলান। তো জন্মসময় অণুযায়ী আপনি যে রাশি-ই হয়ে থাকুন না কেন, আপনার রাশি আর সেই একই রাশি নেই। যেমন আমার রাশি কন্যা মানে Virgo. কিন্তু জোডিয়াক সাইনের পরিবর্তনে এখন আমি হয়ে গেছি সিংহ মানে Leo. জোডিয়াক সাইন ছিলো বারোটি, কিন্তু এখন নাসা বলেছে আরোও একটি নতূন জোডিয়াক সাইনের কথা। পুরোনো রাশিচক্র ভুলে গিয়ে এবার জ্যোতিষিকে জিজ্ঞাসা করুন, “আচ্ছা বলুন তো রাশি কয়টি?” ধাপ্পাবাজ জ্যোতিষী হলে বলবে বারোটি, কিন্তু আসলে আনলাকি থার্টিন।

ব্যাক্টেরিয়া কারিগর ঃ- আমরা কি মানুষ? সমস্বরে একযোগে সকলেই চিৎকার করে বলবেন “হ্যা অবশ্যই আমরা মানুষ।” কিন্তু বিজ্ঞান বলে অন্য কথা। আমাদের দেহে মানব কোষের সংখ্যা ত্রিশ ট্রিলিয়ন এবং ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা উনচল্লিশ ট্রিলিয়ন!!! তার মানে আমরা অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক ব্যাক্টেরিয়া। যাক এ কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এ খবর কি জানেন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নগর তৈরীরও কারিগর ব্যাক্টেরিয়া? জলের নীচে প্রাচীন এক নগরীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিলো, যা কোনো মানুষ তৈরী করেনি। লক্ষ-কোটি ব্যাক্টেরিয়ারা মিলে সুপ্রাচীন কাঠামোটি বানিয়েছিলো। বাপরে ব্যাক্টেরিয়াও দেখি বুয়েটের সার্টিফিকেট পেয়েছে!!!

আজ তাহলে এটুকুই থাক! সবাইকে জানাচ্ছি নতূন বছরের শুভেচ্ছা। ২০১৭ সালে আমার প্রথম পোষ্ট একটু ভিন্নতর করে লেখার চেষ্টা করলাম, আশা করি আপনাদের সকলের ভালোবাসা পাবে এ লেখাটি। একটা কথা না বললেই নয়, আমার কাছে একটা মজার খেলা হলো প্রচুর ব্রাউজ করি বিভিন্ন রকম মজাদার অজানাকে জানতে। বিশেষ করে মস্তিষ্ক আর মহাকাশ সম্পর্কীয় জিনিস আমায় বেশ টানে। তবে কঠিন আলোচনা পড়িনা, বরং মজার ব্যাপারগুলোই “অ্যামিগডালা” সংরক্ষণ করে। যাক অন্তাক্ষরী দিয়ে শুরু করেছিলাম, আজ তবে এই গানের কথা দিয়েই শেষ করছি। পৃথিবীতে প্রথম সঙ্গীত কোনটি জানেন? ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বে বিশ্বের প্রথম সংগীতের লিখিত স্বরলিপি পাওয়া গিয়েছিলো। একে বলা হয়ে থাকে Cult Hymn, মানে হলো অর্চনা স্তবগান। উরহিয়া এবং আমমিয়া নামে দুজন হুরিয়ান কম্পোজারের নামও পাওয়া গেছে। সুরটি যথেষ্ট আধুনিক শুনেই দেখুন।

Cult Hymn

হ্যামিল্টন, কানাডা
৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ইং।

Happy New Year 2017
-{@

৮৪৮জন ৮৪৮জন

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ