এলোমেলো কিছু কথা…**সতেরো**

নীলাঞ্জনা নীলা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শুক্রবার, ০৯:৩৩:৫০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২২ মন্তব্য
"দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না..."
“দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না…”

“সাতটি দিনে সাতটি ফুলে মালা গেঁথে এক সপ্তাহ হয়
দুই পক্ষের তিরিশ দিনে বারো মাসে এক বছর ফুরায়…
Monday সোমবার সপ্তাহ শুরু, Tuesday মঙ্গলবার কাজেতে পুরু
Wednesday বুধবার, Thursday বৃহস্পতিবার
সপ্তাহ চলে যায় ছড়া বলা ছন্দ
সময় তো থামবার নয়, সময় তো থামবার নয়।।

Friday শুক্র পরিপূত সাজ, Saturday শনিবার আধাবেলা কাজ
Sunday রোববার ইস্কুল বন্ধ, সপ্তাহ চলে যায় ছড়া বলা ছন্দ
সময় তো থামবার নয়, সময় তো থামবার নয়।”

আজ গানটি খুব বেশী মনে পড়ছে। মামনি আমাকে এ গান গেয়ে গেয়ে দিন-মাস-সপ্তাহ-পক্ষ-বছর শিখিয়েছিলো। আজ যখন প্রতিদিনকার মতো ফোন দিলাম মামনিকে, মামনি বললো, “৩০ সেপ্টেম্বর মহালয়া শুনতে পারবি? টিভিতেও দেখাবে। কিন্তু তুই তো দেখতে পারবি না।” মামনিকে বললাম মহালয়া শোনার দিন অনেক বছর হয়ে গেলো আমার জীবন থেকে চলে গেছে। মহালয়া মানেই হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা, শরতের মধ্যে শীতের জানান দেয়া, যে সে হেমন্ত পার করেই আসছে। তার মধ্যেই বাপির বুকের ভেতর গুটিসুটি মেরে কম্বল গায়ে দিয়ে ঢুলুঢুলু চোখে রেডিওতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের গুরুগম্ভীর উচ্চারণে মায়ের আবাহনের মন্ত্র শোনা। শঙ্খধ্বনি দিয়ে শুরু হবার পর চন্ডীমন্ত্র, তারপরেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের অমোঘ উচ্চারণ —

“আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জী, ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তারাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনীবার্তা, আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নবভাবমাধুরির সঞ্জীবন, সেই আনন্দিকা, শ্যামলীমাতৃকা চিন্ময়ীকে মৃণ্ময়ীতে আবাহন।”

তারপরে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের “জাগো, তুমি জাগো”, শিপ্রা বসুর “ওগো আমার আগমনী আলো”, সুপ্রীতি দেবীর “বাজলো তোমার আলোর বেণু…” এসব গান শুনে বুকের ভেতর কেমন জানি করে ওঠে, এই এখনও! এইতো কলেজে যখন পড়ি তখনও এভাবেই বাপির বুকে আমি, ছোট বোন মৌ ও মামনি পাশে বসে শুনতো। দেখা যেতো আমি ঘুমিয়েই পড়েছি, আর বাপিও ঢুলছে। অসাধারণ সব গান। মানবেন্দ্রর “তব অচিন্ত্য রূপচরিত মহিমা” মহালয়া শেষ হলেই স্নান। স্নানের পর জামা-কাপড় পড়ে রেডি হয়েই দৌঁড়। কোথায় গেলো সেই দিন! কতো বছর হয়ে গেলো একই আকাশের নীচে থেকেও আটটি বছর বাপি-মামনির সাথে পূজো দেখা হয়না। আর বাপি তো পূজোতে যেতেই পারেনা। বাপিকে একা রেখে মামনিও মা দুর্গার মুখ দেখতে যেতে পারেনা। আমি এখানে আনন্দ করি, ঘুরে বেড়াই, কিন্তু মনের ভেতর থেকে যায় যদি পারতাম বাপি-মামনিকে আমার কাছে নিয়ে আসতে। একসাথে আবার মহালয়া শোনা, তারপর পূজার আনন্দে মেতে ওঠা।

ইস আবার যদি এমন হতো, অষ্টমীর রাতে মামনির হাতের খিচুড়ী-আলু ভাঁজি, নবমী-দশমীতে মাছের বিভিন্ন রকম পদ রান্না, আর পাশে বসে বাপি মামনির রান্না দেখছে। লবণ টেষ্টের জন্য মাছের পিসও পেয়ে যাওয়া। বাপির চিৎকার করে ডাকা, “কই রে নীলা, আয় আয় দেখি যা তোর মামনি মাছ রান্ধছে।” কোথায় সেই দিন!?

সবাইকে অগ্রীম শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা। শারদীয়া দেবীর আগমন সকলের জীবনে শান্তি ও সৌহার্দ্য বয়ে নিয়ে আসুক।

আজ সোনেলার জন্মদিন। আজকের এই দিনে আমার মনের ভেতরে যা চলছে, সেটাই দিলাম। ভালো থেকো সোনেলা। আমাদের সবাইকে তোমার নীড়ে আজীবন রেখো।

হ্যামিল্টন, কানাডা
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং।

এলোমেলো কিছু কথা…**ষোলো**

৬৮৩জন ৬৮৩জন

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ