আমাদের এই বাংলায় যোগাযোগ এর মাধ্যম ছিল একসময় নৌকা। সড়ক যোগাযোগ বলতে গেলে ছিলই না।গরুর গাড়ির প্রচলনের যুগ খুব বেশী দিন পুর্বের নয়। শরৎচন্দ্রের দেবদাস পারু চন্দ্রমুখীর যুগ ছিল তা। জমিদারগণ বজরায় চলাচল করতেন। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন কুঠিবাড়িতে গেলেই এমন বজরা নৌকার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
গ্রাম বাংলার নিত্য প্রয়োজনীয় চলাচল,হাট বাজার,দূরে যাতায়াত সব কিছুই নৌপথে।
এটি একটি গানের পোষ্ট। ” গানটি শুনলেই বুকটা কেমন আনচান করে উঠে। একটা সময় এমনই ছিলো। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মেয়েরা বাপের বাড়ির মানুষের দেখা পাওয়ার জন্য এমনই পথের দিকে চেয়ে থাকতো। সে সময়কার অসহায় নারীকুলের অনেক আবেগ লুকিয়ে আছে গানটিতে। তখনকার সময়ে এমন নারীও নাকি ছিলো, যে কিনা বিয়ে হয়ে আসার পর সন্তান বড় হলে তাকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেছে।
এই একটি গান, যে গানে বিবাহিত মেয়েদের মনের গহীনের কান্না ফুটে উঠে। জন্ম থেকে মা-বাবা, ভাইদের মাঝে বেড়ে উঠার পর তাঁকে স্বামীর হাত ধরে আরেকবাড়িতে চলে যেতে হয়। যেখানে সম্পূর্ণ অচেনা একটা পরিবেশে তাঁকে তাল সামলিয়ে চলতে হয়, তাও আবার সকলের মন জয় করে। একটু এদিক অদিক হলেই কথা না শুনালেও, বাঁকা নজর তো পড়বেই। তখনই সে ফিল করে আপনজনদের। কবে ভাইটি তাঁর আসবে, আর সে তাঁকে দেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। ভাইয়ের হাত ধরে মায়ের কোলে যেতে পারবে নিরন্তর তাঁর সে অপেক্ষা চলে। ” – রুবা আপুর কমেন্ট থেকে।
বিয়ের পরে নব বধু তাকিয়ে থাকতো নদীর পানে দিনের পর দিন,কখন তার বাবার বাড়ি হতে ছোট ভাই তাঁকে নিয়ে যেতে আসবে।ভাইকে দেখার জন্য কত কান্না থাকে বোনদের!! এমনি অপেক্ষার একটি ভাটিয়ালি গান নিয়ে আজকের পোষ্ট।
কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া
আমার ভাইধন রে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা
তোরা কে যাস কে যাস।।
বছর খানি ঘুইরা গেল, গেল রে
ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না
কইলজা আমার পুইড়া গেল, গেল রে
ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না
ছিলাম রে কতই আশা লইয়া
ভাই না আইলো গেল গেল, রথের মেলা চইলা
তোরা কে যাস কে যাস।
প্রাণ কান্দে , কান্দে
প্রান কান্দে কান্দে প্রান কান্দে রে, প্রান কান্দে
নয়ন ঝরে ঝরে নয়ন ঝরে রে, নয়ন ঝরে
পোড়া মনরে বুঝাইলে বুঝে না
কান্দে কান্দে প্রান কান্দে।
সুজন মাঝিরে ভাইরে কইয়ো গিয়া
না আসিলে স্বপনেতে দেখা দিত বইলা
তোরা কে যাস কে যাস।
সিঁন্দুরিয়া মেঘ উইড়া আইলো রে
ভাইয়ের খবর আনলো না, আনলো না
ভাটির চরে নৌকা ফিরা আইলো রে
ভাইয়ের খবর আনলো না, আনলো না।
নির্দয় বিধি রে তুমিই সদয় হইয়া
ভাইরে আইনো নইলে আমার পরান যাবে জ্বইলা
তোরা কে যাস কে যাস।
কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া
আমার ভাইধন রে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা
তোরা কে যাস কে যাস।।
গানটির আবেগ এবং ভংগিটি শাহনাজ বেলীর কন্ঠে চমৎকার ভাবে এসেছে।
চন্দনার কন্ঠে এই গানটিই অন্য রকম লাগে
ইন্দ্রানী সেন এর কন্ঠে আছে শহুরে ভাব
মুল গানটি সচীন দেব বর্মন এর। সচীন দেব বর্মনের পরিচয় আর দিলাম না, বাংলা গানের লিজেন্ড বলা যেতে পারে সচীন দেব বর্মনকে।
আসুন সচীন দেব বর্মন এর কন্ঠে শুনি এই আবেগময় গানটি।
৪১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আমার খুব, খুব প্রিয় একটি গান।
বহুদিন ধরে শোনা, বহুবার শোনা। এখনো আবার শুনছি।
লীলাবতী
আমারও খুব প্রিয়।মাঝে মাঝে ভাবি আমি মনে হয় ব্যাক ডেটেড হয়ে গেলাম।নইলে এই গান ভাল লাগবে কেন? চার জন শিল্পী চার ধরনের গেয়েছেন।তবে সচীন দেব বর্মনেরটাই সেরা 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
উফফ!!!!গানটা আমার ভীষন প্রিয়। শুনলেই বুকটা কেমন আনচান করে উঠে।
একটা সময় এমনই ছিলো। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মেয়েরা বাপের বাড়ির মানুষের দেখা পাওয়ার জন্য এমনই পথের দিকে চেয়ে থাকতো। সেসময়কার অসহায় নারীকুলের অনেক আবেগ লুকিয়ে আছে গানটিতে।
তখনকার সময়ে এমন নারীও নাকি ছিলো, যে কিনা বিয়ে হয়ে আসার পর সন্তান বড় হলে তাকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেছে।
লীলাবতী
অনেক ভালো লিখেছেন গানটি নিয়ে।আবেগ আমি তেমন প্রকাশ করতে পারিনা।আপনার মন্তব্যটি আমার পোষ্টে দিয়ে দিলাম আপু 🙂
জিসান শা ইকরাম
আমার অত্যন্ত প্রিয় এই গানটি শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ।
‘ নাইওর’ শব্দটি এসেছে নৌকা হতে, এখনো বরিশালের গ্রাম বাংলায় এই শব্দটি প্রচলিত আছে।
লীলাবতী
ভয়ে ভয়ে পোষ্ট দিলাম জিসান ভাই।আমাকে আবার ব্যাক ডেটেড না ভাবে 🙂
আশা জাগানিয়া
‘সুজন মাঝিরে ভাইরে কইয়ো গিয়া
না আসিলে স্বপনেতে দেখা দিত বইলা’ -অসাধারন।ভাই বাস্তবে না আসতে পারলেও যেন স্বপ্নে দেখা দেয়।কত ব্যকুলতা বাবার বাড়ির মানুষের জন্য।ধন্যবাদ আপু।
লীলাবতী
কত আবেগ কত কান্না লুকিয়ে রাখেন আমাদের নারীরা।
খেয়ালী মেয়ে
অনেকদিন পর তোমার পোস্ট পেলাম আপু….
গানের যে লিংকগুলো দিয়েছো সবাই দারুন গেয়েছে, তবে শচীন দেব বর্মনের কন্ঠটা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়…
এগানের মাঝে এক দুখী নারীর হৃদয়ের আর্তি অনুভব করা যায়, যে সময়টা আজ অনেকটা পার হয়ে এসেছে, যে সময়টাকে আমরা কাছ থেকে দেখিনি কিন্তু এই গানের মধ্যে দিয়ে অনুভব করতে পারি…
লীলাবতী
সে সময়টা পার করে এসেছি,তবে বাবার বাড়ির লোকদের জন্য নারীর আবেগ কিন্তু এখনো আগের মতই।
মেহেরী তাজ
অনেক দিন পরে পোষ্ট দিলেন আপু।
আমি আগে কখন ও শুনি নি এই গান।
কথাগুলা ভালো লাগছে। শুনবো।
লীলাবতী
শুনবে অবশ্যই।ভিন্ন ধরনের একটি আমেজ পাবে গানে।তোমার মন্তব্যের মাঝে কাকে যেন দেখা যায় 🙂
মেহেরী তাজ
আমার মন্তব্যের মাঝে কাকে দেখা যায়??? :p
লীলাবতী
বলা যাবে না, আমি খাদ্য দ্রব্য না :p
শুন্য শুন্যালয়
শুনছি একটা একটা করে, আগে শুনেছি বলে মনে পরছেনা।অনেক সুন্দর গান, গানের কথা। টাচি।
পুরনো দিনের গান শুনলে বুঝি ব্যাকডেটেড হয়? আমার তো এখন ইচ্ছে করছে, নৌকায় বসে এই গান শুনতে।
লীলাবতী
পুরান দিনের গান কম মানুষ শোনে আপু। একারনে বলেছি। দেশে আসার পরে আপনার এই নৌকায় বসে গান শুনানোর ইচ্ছে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে 🙂
শুন্য শুন্যালয়
সচীনের টা অন্যরকম, তবে সবাই ভালো গেয়েছে। ভত্তাবতী মানেই ডিফারেন্ট আইডিয়া। একই গান ভিন্ন ভিন্ন কন্ঠে শুনতে বেশ লাগলো। অনেক ধইন্যাপাতা আপনাকে।
লীলাবতী
আপনাকেও অনেক ধইন্যা পাতা, যে কোন পোষ্টকে ভাল বলে উৎসাহিত করার জন্য।
রিমি রুম্মান
প্রিয় গান। অনেকদিন পর আবারো শুনলাম। আমার মায়ের কথা মনে পরে গেল। মনে পরে গেল মামাদেরও।
লীলাবতী
মনে পরিয়ে দিলাম তাহলে আপু 🙂
অরণ্য
শিরোনামটাই আমাকে যেন টেনে নিয়ে এল।
আপনার লেখার একটা অংশ খুব ভাল লাগলো। “বিয়ের পরে নব বধু তাকিয়ে থাকতো নদীর পানে দিনের পর দিন,কখন তার বাবার বাড়ি হতে ছোট ভাই তাঁকে নিয়ে যেতে আসবে।ভাইকে দেখার জন্য কত কান্না থাকে বোনদের!!”
এস ডি বর্মন বেশি মাত্রায় গেঁথে আছে।
লীলাবতী
গ্রেটদের তালিকায় আছেন এসডি বর্মন।আপনাকে তো আজকাল দেখাই যায়না ভাইয়া।ব্যস্ততা কি খুব বেশী?
অনিকেত নন্দিনী
একদম সময়োপযোগী গান নির্বাচন। গানটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে দূর গাঁয়ে কোনো এক বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে থৈ থৈ পানি, দুকূল ছাপিয়ে সেই জলরাশির কিছুটা ঠাঁই নিয়েছে গেরস্তবাড়ির বৌয়ের চোখেও।
দেশে এখনো অনেক এলাকা আছে যেখানে এমন দিনে নৌকো ছাড়া যাওয়া যায়না।
লীলাবতী
ঠিক বলেছেন দিদি।বুক কেমন মুচড়ে ওঠে।দেশে এখনো এমন এলাকা আছে!ভাবাই যায় না।
ব্লগার সজীব
দিদি, বিয়ের পরে আমার কথা ভেবে এ
মন গান গাইবে তুমি?
লীলাবতী
পাগল একটা।আমি কি গান গাইতে পারি?
নীলাঞ্জনা নীলা
গানটা বড়ো বিষণ্ন করে দেয়। নদী-নৌকা-পারাপার।
লীলাবতী
হ্যা নীলাদি এটি যে বিষন্নে্রই গান।
প্রজন্ম ৭১
অত্যন্ত আবেগ ময় একটি গান।ধন্যবাদ আপনাকে।
লীলাবতী
আপনাকেও ধন্যবাদ।
স্বপ্ন
গানের পোষ্টও কত সুন্দর ভাবে দেয়া যায়,এই পোষ্ট তার উদাহরন।
লীলাবতী
বেশী প্রশংসা করবেন না ভাইয়া,নিচে তাকিয়ে দেখুন কে আছে 😀
মিথুন
পুরনো গান নতুনদের গলায় শুনতে আমাদের অনেকেরই ভালো লাগেন। তবে এগানটি দেখলাম সবাই ভালো গেয়েছে। সচীন বেস্ট তবে সবাই ভালো। ভূমিকার কথাটুকু ভালো লাগলো আপু। পোস্টে ++++++++++++
লীলাবতী
ধন্যবাদ আপু।আপনি তো দারুন এক পোষ্ট দিলেন।আমিও ভাবছি আপনার মত করে একটা পোষ্ট দেবো 🙂
ইমন
পোষ্টে ছবি দেয়া আপুটার ওপরে ক্রাশ খাইছি :p
লীলাবতী
রোজা রমজানের দিনে এত খাওয়া দাওয়া কেন ভাইয়া? 😀
রাসেল হাসান
গানের কথা গুলি সুন্দর! তবে এই প্রথম পড়লাম। আগে কখনো শোনা হয়নি।
লীলাবতী
পুরান গান অনেকেই শোনেন না আজকাল 🙂
নীতেশ বড়ুয়া
১। শচীন কত্তার ঢঙ্গে কত্তার কন্ঠেই এই গান অন্য আর কারো সাথেই তুলনাহীন।
যদিও আমি এই সকাল থেকে “ক্লাসরুম” গান নিয়েই আছি। এই গান শুনবো ক্লাসরুম থেকে বেরুতে পারলে 😛
লীলাবতী
সচীন হচ্ছে গ্রেটদের তালিকায়,তার সাথে অন্য কারো তুলনা চলেনা।ক্লাস রুম তো ফাটাফাটি এক গান 🙂
নীতেশ বড়ুয়া
আমি নতুন করে শচীন কত্তার গানে মজেছি আবার। বিশেষ করে ‘শোন গো দখিণা হাওয়া’ ‘বাঁশী শুনে আর কাজ নাই’ ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে’ ‘তুমি আর নেই সেই তুমি’ ‘হায় কি যে করি এই মন নিয়া’ ‘মন নিলা বধু’…
আহা… আর এই ‘কে যাস…’ তো একেবারেই অন্য কিছু 😀