জানালার পাশে বসে কত কিছুই না দেখা যায়। মাঝে মাঝে দেখি কিছু টিনএজার কাপল হেটে যাচ্ছে। অট্টহাসি আর একজনের হাতের কিছু অন্য জন নেবার জন্য মাঝে মাঝেই টানাটানি বা কথায় কথায় মারামারি করছে,দেখলেই বোঝা যায় এদের বয়স অল্প। এদের দেখতে খুব ভালো লাগে। আবার চোর চোর ভাবে ভরা মায়া মাখা মুখগুলো দেখলে মজা লাগে সেই সাথে মায়াও।
রক্ষনশীল মা বাবা আর পরিবারের মেয়ে বলে ঐ বয়স টা কি পানসেই না গেছে আমার । চুরি করে প্রেম করার মত একটা রোমাঞ্চকর কাজ থেকে বিরত থেকেছি।
আবার আমার জানালা দিয়ে মাঝে মাঝেই দেখি কোন নেতা গোছের ছেলেকে, যে রাস্তার মাঝে বাইকে বসে মাটিতে পা রেখে সিগারেট ধরায়। থার্মোমিটারে জ্বর মাপার সময় পারদ স্কেলটা যেমন হুট করে উপরে উঠে যায়, এদের দেখলে মেজাজ টাও ঠিক তেমন হুট করেই খারাপ হয়ে যায়।
মেজাজ যেমন করে উঠে যায় তারচেয়ে ও অনেক দ্রুত আজ মন ভালো হয়ে গেলো। আজকের এই মাস্তান টাইপ ছেলেটার মোবাইলে বলা কথা শুনতে শুনতে। তার আজকের কথা গুলো হলো” কে রে? সারাদিন মিসকাল দেছ ক্যা? ” একটু থেমে… ” রক্ত লাগবে? কি গ্রুপ? O – ? থাকেন আসি! ” বলেই সিগারেটে একটা লম্বা করে টান দিয়ে সেটা ফেলে দিয়ে বাইকের গিয়ার বদল।
ইচ্ছে করলো ছেলেটাকে ডেকে একটা ধন্যবাদ দেই। ভাবতে ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেলো। কারন ছেলেটাকে হয় তো আমার মত অনেকেই মাস্তান ভাবে। আর সে একটা রেয়ার গ্রুপের রক্তের বাহক। যে দিন সে কোন ভাবে এক্সিডেন্ট করে বা মার খেয়ে রাস্তায় পরে থাকবে, তখন ওকে রক্ত দেওয়ার জন্য ওর মত করে কি কেউ ছুটে আসবে?
রাস্তার পাশে সামান্য একটু ফাঁকা জায়গা পরে আছে। বিকেল হলেই সেখানে মোবাইলে কথা বলা ছেলেদের ভিড় বেড়ে যায়। ছেলেগুলো অন্য কিছু না করলেও মোবাইল কানে ধরে আসে পাশের বিল্ডিং গুলোর জানালার দিকে তাকাতে মোটেই ভুল করে না। আমার জানালাটা গাছে ঢাকা।
আজ একটু ব্যতিক্রম। একটা মাত্র ছেলে দাড়িয়ে আছে। বেশ লম্বা দেখে তাকিয়েই থাকলাম। যেহেতু সে আমায় দেখতে পাচ্ছে না তাই কিছু টা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। মোবাইলে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে রুমাল কি টিসু দিয়ে চোখ মুছছে। কারন হাতে সাদা একটা কিছু। আমার চোখে চশমা নাই। একটু হাত বাড়িয়ে চশমা টা নিয়ে চোখে দিলেই স্পষ্ট দেখতে পাবো। হয়তো ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর অনেক চেষ্টা করছে বা থেমে থেমে কান্না গিলছে সেটাও। কিন্তু ইচ্ছে করছে না। সম্ভবত ছেলেটা খুব কষ্ট পেয়েছে। কারন আমি শুনেছিলাম ছেলেরা সহজে কাঁদে না। কিন্তু এই ছেলেটা কাঁদছে। অন্য একজনের জন্য। এই ছেলের কান্না ভেজা চোখ আর কষ্টে ভরা মুখ দেখে একে আমি মনে রাখতে চাই না। একে আমি মনে রাখবো অন্য ভাবে। এর টল, ডার্ক আর ঝাপসা অবয়বের মালিক হিসেবে।
পুরানো লেখা থেকেঃ ২ এপ্রিল ২০১৫
৩০টি মন্তব্য
নাটোর শূন্য কিলোমিটার
“”নেতা গোছের ছেলেকে, যে রাস্তার মাঝে বাইকে বসে মাটিতে পা রেখে সিগারেট ধরায়। থার্মোমিটারে জ্বর মাপার সময় পারদ স্কেলটা যেমন হুট করে উপরে উঠে যায়, এদের দেখলে মেজাজ টাও ঠিক তেমন হুট করেই খারাপ হয়ে যায়।””
https://sonelablog.com/wp-content/plugins/smilies-themer/MDC/2.gif ভালো লিখছেন
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ আপনাকে।
অনিকেত নন্দিনী
আপু, মানুষ যে কত বিচিত্র স্বভাবের হয়! ফেসবুক ব্যবহার করতাম সময়ে বলধা গার্ডেন এলাকার এক ছেলে ইনবক্সে আমাকে নোংরা কথা বলতো। ফেসবুকেই সেই ছেলেই রক্ত জোগাড় করে দেয় এমন এক গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিলো।
মেহেরী তাজ
ঠিকই বলেছেন মানুষ বড় বিচিত্র স্বভাবের।
ধন্যবাদ আপনাকে।
অলিভার
হরেক মানুষ হরেক স্বভাব। বাইরে থেকে দেখে যা মনে হয় সে ভেতরে তার বিপরীত, কিন্তু ঐ বিপরীতটাই কেউ দেখি না। দেখলেও না দেখার ভান করে এগিয়ে যাই।
মেহেরী তাজ
একটা মানুষের দুটা দিক একসাথে দেখা যায় না। একটা না একটা ছেড়ে দিতেই হয়।
ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
জানালার পাশে বসা তাজ মেয়েটির আজ মন ভালো ছিলো, তাই সে সুন্দরভাবে সব দেখতে পেয়েছে। সে পঁচা হোক কিংবা ভালো, রক্ত দেবার মতো মহান কাজের জন্য একটা ধন্যবাদ তার পাওনা রইলো। আর যে ছেলেটি কেঁদেছে তাকে তো তাজ আপু ভুলবেই না তার লম্বা, ডার্ক অবয়বের জন্য।
অপ্রাসঙ্গিক পুনশ্চঃ কোন এক ছেলের কান্না দেখে এক মেয়ে তার জীবনের চরম ভুল করে বসলো, সে ভুল থেকে সে আর বের হতে পারেনি।
মেহেরী তাজ
শুন্য আপু কেমন করে যেন সব কিছু বুঝে ফেলেন। এটা কিন্তু ঠিক না।
তাহলে সেই পচা কি ভালো ছেলেটার জন্য দুটা ধন্যবাদ রয়ে গেলো।
লীলাবতী
তাজ এই লেখাটি খুবই ভালো লিখেছ। আমিতো ভাবতেই পারিনি ছটফট করা তাজের মাঝে এমন ভাবনা আছে।
মেহেরী তাজ
ছটফট করতে করতেই কেমন করে যেন চোখে পরে গেছে।
আপনাকে ভালো লাগাতে পেরেছি সেটা তো বিশাল ব্যপার। ধন্যবাদ আপু।
তানজির খান
নিরব অবজারভেশন। ভাল লাগলো। একটা সময় ছিল আমি মাঠের মাঝে বাস্কেট বল গ্রাউন্ডের পাসে প্রতিদিন বসে থাকতাম মন খারাপ করে। কেউ কি দূর থেকে দেখেছে এমন করে?
মেহেরী তাজ
হয়তো দেখেছে,লিখেছে। রোজ রোজ মন খারাপ করে বসে থাকতেন কেনো??? ওরা আপনাকে খেলতে নিতো না??
ব্লগার সজীব
ওস্তাদ আপনার অন্য যেন কোন লেখার তুলনায় এটিকে আমি সেরা বলবো।আপনি সুস্থ্য আছেন তো? অসুস্থ্য হলে অনেকে বারান্দায় বসে অনেক কিছু ভাবে জীবন সম্পর্কে।ভালো থাকুন ওস্তাদ।
মেহেরী তাজ
না শিষ্য আমার শরীর ভালো আছে। মাঝে মাঝেই জানালার পাশে বসতে ভালো লাগে।
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
খেয়ালী মেয়ে
আবোল তাবোল ভাবনা ভালো লাগলো…
অন্যরকম ভাবে মনে রাখার ধরনটা পছন্দ হয়েছে….
মেহেরী তাজ
ভাবনা গুলো কি বড্ড বেশি এলো মেলো???
ধন্যবাদ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
এটি পুরানো লেখা ভাবতে পারছি না। এমনটি লিখলে নূতনের আর কী বা দরকার।
আচ্ছা ,এটি পুরানো !! নূতন কই এ মাত্রার?
মেহেরী তাজ
হ্যা ভাইয়া এটা পুরানো লেখা, ডাইরি থেকে খুজে পেলাম।
আর কি মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছি না।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
স্বপ্ন নীলা
নীচের প্যারাটা কি করে লিখলেন, এযে অসাধারণ, আমি পড়লাম আর মনে মনে আপনাকে ধন্যবাদ দিলাম, কান্নাও যে গেলা যায়- এই লেখা না পড়লে বুঝতেই পারতাম না
শুভকামনা রইল
মেহেরী তাজ
কেমন করে যেনো লিখেই ফেললাম। আপনিও কি কোন কারনে কান্না গিললেন এই লেখা পড়ে?
ধন্যবাদ আপু।
জিসান শা ইকরাম
অনেক ভালো লিখেছো তুমি।
মুগ্ধ হয়েছি তোমার এই লেখা পড়ে।
মেহেরী তাজ
যা লিখেছি তা মূলত আপনাদের উৎসাহের ফল।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চমৎকার হয়েছে লেখাটি।সত্যিই দূর থেকে অনেকে অনেক কিছু ভাবেন তার অন্তরালে যে ভাল দিকটি আছে তা কাছাকাছি না থাকলে বুঝা যায় না।আর বকাটে ছেলেদের মাঝে যে ভাল মনও আছে তা অনেকেই চিন্তা করেন না।
মেহেরী তাজ
একটা মানুষের অনেক গূলো দিক থাকে আপনাকে ভাবতে হবে আপনি কোনটা দেখবেন।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
নুসরাত মৌরিন
অনেক ভাল লিখেছেন।এভাবে বসে বসে চুপচাপ মানুষ পর্যবেক্ষন করা কিন্তু বড় লেখকের বৈশিষ্ট্য।আর লেখাটা মন ছুঁয়ে দিয়েছে।অজানা অচেনা লম্বা অবয়বের ছেলেটার কষ্ট,বাইকে বসা মাস্তান ছেলেটার রক্ত দিতে ছুটে যাওয়া-সব খুব সাধরন ঘটনা।তবু কেন যেন পড়তে পড়তে মনটা ভার হয়ে গেল।
মেহেরী তাজ
বলেন কি আপু?? বড় লেখক হতে না পারি তাদের অন্তত একটা বৈশিষ্ট্য তো আমার মধ্যে আছে। খুশি লাগছে।
ধন্যবাদ আপু।
আশা জাগানিয়া
অসাধারন লাগলো পড়ে।বসে বসে দার্শনিক হয়ে গেলেন নাকি আপু? 🙂
মেহেরী তাজ
মনে হয় দর্শনিক হয়ে গেছি আপু।
ধন্যবাদ।
মিথুন
এভাবে তো কখনো লক্ষ্য করে দেখিনি। আপনি শুধু দেখেন নি, অনেক গুছিয়ে লিখেছেন। প্লাস, প্লাস………
মেহেরী তাজ
কত মার্কস প্লাস করলেন???
অনেক ধন্যবাদ।