জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, এই দুটি মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
এর আগে  ১৫ জানুয়ারি হাজিরার দিন ছিল। গুলশান কার্যালয়ে খালেদাকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার কথা বলে হাজিরা দিতে পারেননি বলে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবীরা।গত ২৯ জানুয়ারি আদালতে না এসে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোকের কথা জানিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন পাঠান খালেদা জিয়া। বিচারক সেদিন তা মঞ্জুর করে সাক্ষ্য শোনার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন।আমরা অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দুটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা। এখানে তা বিস্তারিত দেয়া হচ্ছে।

 জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অভিযোগঃ
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯১-৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালিন সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। যার চলতি হিসাব নম্বর ৫৪১৬। এ এ্যাকাউন্টে ১৯৯১ সালের ৯ জুন এক সৌদি দাতার পাঠানো ইউনাইটেড সৌদি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের ডিডি নম্বর ১৫৩৩৬৭৯৭০ মূলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার যার মূল্য তৎকালিন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান হিসেবে জমা হয়। ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া সোনালী ব্যাংকের উক্ত একাউন্টে জমাকৃত এ অর্থ কোনো এতিমখানায় প্রদান করেননি। এ সময়ের মধ্যে তারেক রহমান সমাজ সেবার ব্রত নিয়ে আরাফাত রহমান ও মমিনুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে Trust Act, 1882 এর ধারা ৬’র বিধান অনুযায়ী জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট গঠন করেন। এ ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়ায় আরাফাত রহমানের কোন সাক্ষর না থাকায় তাকে এ মামলায় আসামী করা হয়নি। ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ট্রাস্টের নাম নিবন্ধন করা হয়। যার ঠিকানা হিসেবে সেনানিবাসের ৩ শহিদ মঈনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। এ সময় তারেক রহমানকে দি অথর বা দি সেটেলর অব দি ট্রাস্ট (ট্রাস্ট সৃষ্টিকারী) নিয়োগ করা হয় এবং মমিনুর রহমান এ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হন। অভিযোগ অনুযায়ী, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ৫০ লক্ষ টাকা কাজী সলিমুল হকের নামে ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের একাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, এ শাখায় কাজী সলিমুল হকের নামে পরবর্তীতে ২ কোটি টাকার আরো দু’টি এফডিআর খোলা হয়। যা তিনি নিজ নামেই ট্রান্সফার করেন। এছাড়া ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের ছেলে সৈয়দ আহমেদের নামে একটি ১ কোটি টাকা এবং দু’জনের যৌথ নামে আরেকটি ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলেন কাজী সলিমুল হক। এদের মধ্যে সৈয়দ আহমেদ এখন মৃত। এ দু’টি এফডিআর থেকে গিয়াস উদ্দিন আহমেদের এফডিআরে ট্রান্সফার হয়। যার কিছুদিন পরই গিয়াস উদ্দিন আহমেদ তার এফডিআরের ১ কোটি টাকা ভেঙে ৫০ লাখ টাকার ২টি এফডিআর করেন। এরপর আবার সে এফডিআর ভেঙ্গে শরফুদ্দিনের একাউন্টে ৬টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করা হয়। পরে শরফুদ্দিন আহমেদ ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা তুলেন। কোন ক্যাশমেমো, ভাউচার, চুক্তিনামা, ইনভয়েস ছাড়া ব্যক্তিনামে এ ২,১০,৭১,৬৪৩/- টাকা হস্তান্তরের নামে আত্নসাতই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার ভ্যালু। ট্রাস্ট আইনের বিধি মোতাবেক এটিকে অনেকটাই আর্থিক স্বাধীনতা দেয়া হয়, ট্রাস্টিকে কারো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কাজ করতে হয় না। তবে যখন কোন ট্রাস্ট কোনো বিশেষ মানুষের বা বিশেষ শ্রেণীর অর্থাৎ এতিম-দুস্থ, সংখালঘু, ধর্মিয়, বা প্রতিবন্ধি ইত্যাদি’র কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয় তখন যদি ট্রাস্ট কর্তৃক ট্রাস্টের শর্তাবলী কিংবা ট্রাস্ট আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আর্থিক বা অন্যান্য অনিয়ম করা হয়, তাহলে বেনেফিশারি অর্থাৎ ওই বিশেষ শ্রেণি এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র দেশের সকল এতিম-দুস্থদের অভিবাবক। সঙ্গত: কারণেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনানুগ সংস্থা দুদক রাষ্ট্রের পক্ষে ২,১০,৭১,৬৪৩/-টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাঃ
অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ  আনা হয় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে। এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ এর নামে ২০০৫ সালে ঢাকার কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ৪২ কাঠা জমি ক্রয়ের সময় জমির মূল্য দেখিয়েছিলেন ৬ কোটি ২৫ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। কিন্তু জমির মূল্য পরিশোধের সময় জমির মালিক সুরাইয়া খানমকে প্রদান করা হয়েছিলো ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ জমির মূল্যের চাইতে জমির মালিককে ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা বেশি প্রদান করা হয়েছে। যার কোনো উৎস বেগম জিয়া দেখাতে পারেন নি।

অপেক্ষা করছি  দেশের আগামী রাজনীতির গতি প্রকৃতির উপর।

৫৭৬জন ৫৭৬জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ