আগের পোস্টঃ
> মোদের গরব মোদের আশা আ’মরি বাংলা ভাষ
> শোণিত ধারায় শানিত চেতনা
বাংলা তথা বাংলাদেশ শব্দের উৎপত্তি প্রাচীন ‘বঙ্গ’ থেকে। ‘বঙ্গ’ অত্যান্ত প্রাচীন দেশ। মহাভারতে বঙ্গ দেশের উল্লেখ আছে। তৎকালিন আর্যদের চেয়ে ‘বঙ্গ’ ছিল নিদারুন ঘৃনা আর আবজ্ঞার বিষয়। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। কারন আর্যরা ছিল এদেশে বহিরাগত। আর ‘বঙ্গ’ এদেশের গভীর থেকে উৎপত্তি লাভ করা নাম। সুতরাং তার মৃত্যু হতে পারে না। তাইতো দেখি আজ আর্য অনার্যদের পার্থক্যের প্রাচীর ভেঙে গেছে।কালের স্রোতে আর্যের অনার্যের উত্তর পুরুষ এই বাংলারই বাঙ্গালী হয়ে একত্রে বসবাস করছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিবর্তনের প্রাচীন ইতিহাসটি সংগ্রামে পরিপূর্ণ।
প্রচীনকাল থেকে ষষ্ঠ/সপ্তম শতক পর্যন্ত আজকের বাংলাদেশ ও পশ্চীমবঙ্গের বিভিন্ন কৌমের অধীন যে কয়েকটি জনপদে বিভক্ত ছিল তার মধ্যে পন্ড্রু, গৌড়, রাঢ়,বঙ্গ, সমতট আর হেরিকেল উল্লেখযোগ্য। এসব জনপদের মধ্যে একমাত্র রাঢ় ছিল মোটামুটি আজকের পশ্চীমবঙ্গের জনপদ।সপ্তম শতকের প্রথমদিকে শশাংক নামে এক শক্তিশালী রাঢ়াধিপতি গৌড় দখল করে অপরাপর সকল জনপদকে গৌড়ের নামে একত্রিত করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। একই চেষ্টা করেছিলেন পরবর্তি কালে পাল ও সেন বংশীয় রাজারা। কিন্ত তা সফল হয়নি। কারন এর প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জয় হলো বঙ্গের, স্থানীয় পাঠান সুলতানদের আমলে। মুসলিম সুলতান শামসুদ্দীনিলিয়াস শাহ্ প্রথমবারের মত নিজেকে শাহ-ই-বাঙ্গালাহ হিসেবে ঘোষনা করে সকল জনপদকে বাংলা নামের অধীন একত্রিত করেন। তাঁর রাজধানী ছিল লক্ষণাবর্তী অর্থাৎ গৌড়ে। এরপর বিভিন্ন শাসনামলে এবং বিশেষ করে ইংরেজ শাসনামলে বাংলা অধীক দৃঢ়তা লাভ করে। আবুল ফজল আইন-ই-আকবরীতে লিখেছন বঙ্গ শব্দের সাথে ‘আল’ যুক্ত হয়ে বাঙ্গাল হয়েছে। ‘বং’ শব্দের অর্থ জলাশয় আর ‘আল’ শব্দের অর্থ ক্ষেতের আল বা ছোট বাঁধ। বেঙ্গল থেকে ফরাসী বাঙ্গালা,পর্তুগীজ বেঙ্গালা, ইংরেজী বেঙ্গল এবং আমাদের ভাষায় বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দের উৎপত্তি। সুতরাং আমাদের জাতিত্ববোধে এ অনুভূতি স্পষ্ট হওয়া একান্ত প্রয়োজন যে, আজ গোটা বাংলাদেশ জুড়ে যে জাতি বিরাজ করছে তা একদিনে হঠাৎ করে আত্মপ্রকাশ করেনি।
বরং জাতি গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের আছে হাজার বছরের সংগ্রামী ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্রষ্টা যেমন একান্তই আমরা, তেমনি আমাদের আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে এ এক অমূল্য সম্পদ। পাশাপাশি এই জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্রটিও সহজেই লক্ষনীয়।যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আগমনের ফলে এ অঞ্চলের মধ্যে যেমন ধর্মান্তর ঘটেছে তেমনি কালের ব্যবধানে ক্রমাগত বর্ধিত সংখ্যক সম্প্রদায়ের আপন স্বকিয়তা বজায় রেখেই সাম্প্রদায়িক সম্মিলনের একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া এই দেশে প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল রয়েছে। সে কারনেই বাঙ্গালী নানা সম্প্রদায়ের সংমিশ্রণ হলেও সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে একটি অনন্য জাতি।
১৯টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
খুবই চমৎকার বাংলা ভাষার গোড়ার ইতিহাস এর অর্থটি জানা ছিল না জানলাম।ধন্যবাদ আপনাকে -{@
খসড়া
ধন্যবাদ ।
জিসান শা ইকরাম
প্রচুর পড়শুনা করে সংক্ষেপে এমন সহজবোধ্য ভাষায় লেখা খুবই কঠিন
সম্পুর্ন ইতিহাস ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করা গেলেই এমন লেখা সম্ভব।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন লেখা লেখার জন্য
আমাদের উৎসকে কে চেনা যে অত্যন্ত জরুরী
আমরা তো সঠিক ভাবে জানিই না আমারা কতটা সমৃদ্ধ।
খসড়া
ধন্যবাদ জিসান ভাই।
নুসরাত মৌরিন
লেখাটি পড়ে খুব ভাল লাগলো আপু।
আমাদের শিকড়ের গল্প।শিকড়ের গল্পের চেয়ে সুন্দর আর কী হয়?
খসড়া
ধন্যবাদ
বৃষ্টিহত ফাহিম
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস নিয়ে বড় আগ্রহ, তাই হাতের কাছে এমন পোস্ট পেলেই না পড়ে পারি না।
পাঠানরাও কিন্তু বহিরাগতই ছিল।
খসড়া
হ্যাঁ পাঠানরা পাঠান মুল্লুকের।
লীলাবতী
আপু মুগ্ধ হয়ে গেলাম আপনার লেখায়।এত সহজ সাবলীল ভাবে লিখে ফেললেন বাংলার কথা,বাংগালীর কথা।ধন্যবাদ আপু।
খসড়া
ভাল লাগল মন্তব্য।
ছাইরাছ হেলাল
অসাম্প্রদায়িক ইতিহাস জানতে পারছি।
লেখা চলবে। আমাদের পড়াও চলবে।
খসড়া
পড়ুন, পড়লেই আমি ধন্য।
খেয়ালী মেয়ে
অনেক ইতিহাস এখনো অজানায় রয়ে গেছে, ধন্যবাদ 🙂
খসড়া
ধন্যবাদ।
শিশির কনা
আপউ আপনার তিনটি লেখাই পড়লাম অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে।এ বিষয়ে খুব জানার ইচ্ছে ছিলো।আপনি তা পুরন করছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
খসড়া
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
অসাম্প্রদায়িক কিন্তু আনপ্রেডিকটেবল।
লেখাটা কি এখানেই টাইপ করা? রিভিশনের দরকার আছে একটু। ইতিহাস যতটুকু সম্ভব নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করাই শ্রেয়।
সীমান্ত উন্মাদ
চমৎকার পোষ্টে শত কুটি +। ইতিহাস লিখনে সহজ বোদ্ধতায় মুগ্ধ
শুন্য শুন্যালয়
গৌরবময় ইতিহাস আমরা রক্ষা করতে পারছিনা আপু। এদেশকে অসাম্প্রদায়িক আর বলতে পারিনা। কতোকিছু জানবার আছে!! আপনার কারনে কিছু জানতে পারছি, এজন্য অনেক ধন্যবাদ।