বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে কত কিছুই আছে যা আমাদের অজানা। জীবনকে হাসি আনন্দে ভরপুর করে রাখার জন্য কত আয়োজন। টমেটো উৎসব, ফুল উৎসবের কথা আপনারা জেনে গিয়েছেন,আমার এবং শুন্য শুন্যালয় আপুর পোষ্ট থেকে। এবার জানুন মাটি উৎসবকে ।
১৯৯৬ সনে দক্ষিন কোরিয়ার একটি প্রসাধন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বোরিয়ং অঞ্চলের মাটি সংগ্রহ করেন। ঐ মাটিতে প্রসাধন সামগ্রীর রাসায়নিক উপাদান বেনটোনাইট, গার্মানিয়ামস প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরী হয়। মাটি থেকে সংগৃহিত উপাদান থেকে প্রস্তুতকৃত প্রসাধনী সামগ্রীকে জনপ্রিয় করার জন্য কোম্পানী মাটি উৎসবের আয়োজন করে। তাদের আশা ছিলো এই উৎসবের মাধ্যমে জনগন মাটির ব্যবহার এবং মাটি থেকে প্রস্তুতকৃত কসমেটক্স সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আগ্রহী হবেন। এর দু বছর পরে ১৯৯৮ সনে প্রথম মাটি উৎসবের আয়োজন করা হয় এবং বর্তমানে শুধু কোরিয়া নয় আমেরিকা সহ অন্যন্য দেশেও এটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
প্রতিবছর রাজধানী শিউলের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিনের বোরিয়ং অঞ্চলের মাটি সংগ্রহ করে ট্রাকে করে নেয়া হয় ডেইচন সমুদ্র বীচে । ওখানে এই মাটিকে নরম করে উৎসবের জন্য প্রস্তুত করা হয়। জুলাই মাসের ২য় উইকেন্ডে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান এবং শেষ হয় মাসের শেষ উইক এন্ডে। প্রতি বছর মাটি উৎসব দেখতে আসা এবং মাটিতে মাখা মাখি করতে কোরিয়া ভ্রমন হাজার হাজার মানুষ। শুরু থেকে পরবর্তী ২০ বছরে ভ্রমণ করেছেন প্রায় ২৫ লাখ ভ্রমণকারী।
শুধু মাটি উৎসব নয়, এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজক গন আরো কিছু আকর্ষনীয় ইভেন্টের আয়োজন করেন। কাদা পুল, কাদা স্লাইড, কাদা কারাগার এবং কাদা স্কিইং প্রতিযোগিতা এর মধ্য অন্যতম। বডি পেইন্টিং এর জন্য বিভিন্ন রঙয়ের কাদা বানানো হয়, এসব দিয়ে ভিজিটরগন গায়ে আঁকা জুকি করেন।
একটি বিশাল স্টেজ বানানো হয় সমুদ্র বীচ এলাকায়। এখানে গান গাওয়া হয়, গানের প্রতিযোগিতা হয়।
যে যেমন পারে ফ্রিস্টাইলে গান গাইতে থাকেন। অবশ্যই তা গায়ে কাদা মেখে ভুত হয়ে 🙂
কত সহজ একটি উপকরন দিয়ে কত মজার একটি উৎসব। এই কাদা মাখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটক গন কোরিয়াতে। পর্যটক মানেই ডলার। দেশের আয়। আমাদের দেশে কি এই মাটি কাদার অভাব ? গ্রামে এখনো ছেলেরা বর্ষাকালে কাদার মাঝে ফুটবল হাডুডু খেলে। কাঁদায় ভুত হয়ে একজন লাফ দিয়ে পানির মাধ্যে পরে কাদা ধুয়ে ফেলে। কাদা দিয়ে খেলার আনন্দ আলাদা। মানুষ প্রকৃতির কাছে আনন্দ পায় বেশি, মাটি তো প্রকৃতির একটা নির্ভেজাল অংশ।
আমাদের দেশে কাদা আছে সব অঞ্চলে, শুধু নেই উদ্যোগ। এই কাঁদায় মাখা মাখি করে যে বছরে কোটি কোটি ডলার আয় করা সম্ভব, তা আমাদের দেশের আহাম্মুক পর্যটন কর্পোরেশন বা আমলা, মন্ত্রীর মাথায় আসবেনা।
একটি ভিডিও দেখুন কাদার, এটি পুর্তগালের । আপনিও পারেন এভাবে গায়ে কাদা মাখতে 🙂
আমার এই পোষ্ট উৎসর্গ করলাম, গত দুই বছর যাবত যারা সোনেলায় আছেন , ব্লগার, পাঠক, মডু, ব্লগটিম সবাইকে। ইচ্ছে করে সবাইকে নিজ হাতে কাদা মাখিয়ে এমনি ভুত করে দেই।
৪৬টি মন্তব্য
সাইদ মিলটন
ইচ্ছে করে সবাইকে নিজ হাতে কাদা মাখিয়ে এমনি ভুত করে দেই।
বুদ্ধি খারাপ না 😀
লীলাবতী
এমন একট উৎসব আমাদের দেশেও করা যায় ভাইয়া। প্রতিটি গ্রামেই এটি করা সম্ভব। ইচ্ছে করলে কি করবো ? 🙂 প্রকাশ তো করতেই পারি ইচ্ছেকে।
ছাইরাছ হেলাল
কাদা আড্ডা হলে আরও ভাল হত।
লীলাবতী
খুবই ভালো হতো ভাইয়া 🙂
জিসান শা ইকরাম
ওয়াও, দারুন এক পোষ্ট দিলেন আবার।
আমাদের দেশে এটা হলে ভালোই হয়
উপকরনে কোন খরচ নেই 🙂
লীলাবতী
শুধু ইচ্ছে হলেই হয়। কোন খরচ নেই 🙂
মরুভূমির জলদস্যু
ঐ দিনটাতে ঐ যায়গাগুলিতে সাবান শ্যাম্পু আর সুদন্ধির দোকান খোলন লাগবো!
লীলাবতী
দোকানদারকে ও মাটি মাখতে হবে ভাইয়া 🙂
মরুভূমির জলদস্যু
যাহ!! তাহলে তো লাভের গুড় পিঁপড়েতে খাবে
লীলাবতী
খাক পিপড়ায়।
অলিভার
হা হা হা হা
মানুষ কত ভাবেই না আনন্দ খুঁজে নেয়। আমাদের দেশে কাদামাটি দিয়ে ভুত হয়ে ঘরে ফিরলেই মায়ের বকুনি। আর এখনে তো রীতিমত উৎসব করে কাদা মাখাচ্ছে সবাই।
চমৎকার পোষ্ট, অসাধারণ উপস্থাপন।
লীলাবতী
আমার কাছে উৎসবটি খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
কৃন্তনিকা
আমি দক্ষিণ কোরিয়ার মুভি ও সিরিয়ালখোর। কিন্তু আজ অবধি ওদের “মাটি উৎসব” সম্পর্কে জানতাম না। আজ জানলাম। অনেক ধন্যবাদ জানানোর জন্য লীলাবতীকে…
অনেক অনেক ভালো লাগলো জেনে।
(y) (y) (y)
লীলাবতী
আমিও কি জানতামনাকি ? সার্চ দিয়ে পেলাম 🙂
রিমি রুম্মান
অনেক অজানাকে জানলাম। তবে আমার দেশে এমন উৎসব হলে মোল্লা’রা একদফা আন্দোলনে নেমে যাবে…
লীলাবতী
এটি সত্যি বলেছেন আপু। ধন্যবাদ আপু পোষ্ট দেখার জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
জয় হোক আনন্দের।
দিদি খুব আনন্দ লাগলো।
লীলাবতী
ভালো লাগাতে পেরে ধন্য হলাম ভাইয়া।
আজিম
দেখলাম, জানলাম এবং মুগ্ধ হলাম।
অনেক ধন্যবাদ জনাবা লীলাবতীকে।
লীলাবতী
মুগ্ধ করতে পেরে ধন্য হলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।
স্বাধীন নবাব
ভালো লাগলো মাটি উৎসবটি পড়তে!
আপু,পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন!
গ্রামে যখন গরমের দিনে বৃষ্টি হতো না তখন আমরা পোলাপানরা এই কাদামাটি করতাম,দারুণ আনন্দ পেতাম৷
লীলাবতী
কাদামাটিতে ফুটবল খেলতে দেখেছি ছেলেদের, সব কাদায় ভুত হয়ে যেতো 🙂
জিসান শা ইকরাম
শিরোনামটা শুধু মাটি উৎসব না হয়ে এর সাথে কাদায় মাখামাখি যুক্ত করলে আরো ভালো লাগতো মনে হয়।
লীলাবতী
এখন জানলাম এটি ? আগে জানলে সবাই অন্য শিরোনাম দেখতো।
ব্লগার সজীব
লীলাবতীদির পোষ্ট মানেই হচ্ছে সোনেলায় একটি উৎসব উৎসব আমেজ এসে যাওয়া। কোথায় পান এমন উৎসবের খোঁজ ? আমাদের দেশে হলে ভালোই হয়।
লীলাবতী
শ্রদ্ধা করেন আর পছন্দ করেন বলে একটু বেশি লিখেছেন, বুঝি কিন্তু ভাইয়া। আমাদের দেশে হলে খুবই ভালো হতো।
মেহেরী তাজ
আপু আমি রাজি। কিন্তু আপনি ও পার পাবেন না। নতুন কিছু দেখলাম। বেশ ভালো হয়েছে। আসলে বলতে পারি জব্বর হয়েছে। 🙂
লীলাবতী
আচ্ছা, আমরা দুজনে কাদা মাখামাখি বেশি করবো 🙂 ধন্যবাদ আপনাকে।
সীমান্ত উন্মাদ
চমৎকারতো। আমিও খেলতে চাই। যারা রাজি আছেন আসেন এক সাথে খেলি।
লীলাবতী
আমাদের দেশে এর প্রচলন হলে ভালোই হতো ।
প্রহেলিকা
নূতন সাজে সোনেলা এখন, একটু সতর্ক থাকাটাই জরুরী আবার না কাদা লেগে যায়। দারুন পোষ্ট।
লীলাবতী
সতর্ক থাকা মানে ? এখানে কেউ কি অসতর্ক আমরা ? উৎসবের জন্য এই পোষ্ট, কাদা তো লাগবেই।
নুসরাত মৌরিন
😀
বাহ খুব মজা তো।
অনেক ধন্যবাদ এমন দারুন পোস্টের জন্য।
লীলাবতী
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
ছবি আর বর্ননায় কাদা মাখামাখি উৎসবে চলে গিয়েছিলাম আমি। এমন পোষ্ট দিয়ে আনন্দ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
লীলাবতী
আমিও চেয়েছি, সবাই যেনো উৎসবের আমেজ পায়। ধন্যবাদ নীলাদি।
খসড়া
কত কি যে কান্ড আছে এই পৃথিবীতে। মারমেইড উৎসব নিয়ে একটা পোস্ট দিন।
লীলাবতী
কত কিছু জানার বাইরে আমাদের। মারমেইড ফেস্টিভ্যাল নিয়ে দেবো ভাইয়া। ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।
বনলতা সেন
বেশ মাখামাখি হচ্ছে আপনাকে ছাড়াই।
লীলাবতী
আমি হলে তো আরো মাখামাখি হতো
শুন্য শুন্যালয়
এই উত্সবে আমি লীলাবতী দির ড্রেস পরে যাবো 😀
ভত্তা বৌ মানেই সোনেলায় আনন্দ আনন্দ।
লীলাবতী
আচ্ছা, আমারা দুজনেই আমার ড্রেস পরবো,কেউ যদি শুন্যাপুকে লীলাবতী ভাবে কাদায় মাখামাখি অবস্থায়, আমাকে দোষ দেয়া চলবে না
ঘুড্ডির পাইলট
ছোটবেলায় কাদার মধ্যে ফুটবল খেলার কথা মনে পরে গেলো !
তবে একটা কথা মনে আসছে , এই কাদা পেটে চলে গেলে পেটে অসুখ হয় না তো !!!!
লীলাবতী
আমার ছোট ভাইটাও কাদার মধ্যে ফুটবল খেলে ভুত হয়ে আসতো। কাদা পেটে যাবে কিভাবে ? 🙂
ভোরের শিশির নীতেশ
ছোটুকালে কাদায় মাখামাখি হলে যা জুটেছে তা ভাবলেই 😀
আমাদের এই রকম প্ররযটক বাড়ানোর প্রজেক্ট হাতে নেওয়া খুবই সহজ কিন্তু এর অবকাঠামোগত পুরো ব্যাপারটা তৈরী হতেই তো সময় লেগে যাবে… তা না হলে পর্যটক আসবে আর যাবে এবং বদনাম বাড়বে…
লীলাবতী
প্রথম প্রয়োজন মানসিকতার উন্নয়ন।