গণহত্যা বলতে দুইয়ের অধিক বা অনেক মানুষ মেরে ফেলা বোঝায়। পারিভাষিক অর্থে কোন দেশ, জাতি, গোষ্ঠী বা ভিন্ন মতাদর্শধারীদের খুন এবং মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করাই হল গণহত্যা। ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন ২৬০ (৩) এর অধীনে গণহত্যা বলতে বোঝানো হয়েছে এমন কর্মকান্ড যার মাধ্যমে একটি জাতি বা ধর্মীয় সম্প্রদায় বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে।
১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহিত রেজ্যুলেশন ২৬০(৩)অনুসারে যেসব কর্মকাণ্ড গণহত্যার উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় সেগুলো হল –
ক)পরিকল্পিতভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য তাদের সদস্যদেরকে হত্যা বা নিশ্চিহ্নকরণ
খ)তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিসাধন
গ)পরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে ধ্বংসসাধন কল্পে এমন জীবননাশী অবস্থা সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়
ঘ)এমন কিছু ব্যবস্থা নেয়া যাতে একটু জাতি বা গোষ্ঠীর জীবন ধারণে শুধু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নয়,সেই সাথে তাদের জন্ম প্রতিরোধ করে জীবনের চাকাকে থামিয়ে দেয়া হয়
ঙ)একটি জাতি বা গোষ্ঠীর শিশু সদস্যদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তাদের জন্ম পরিচয় ও জাতিগত পরিচয়কে মুছে ফেলাকেও গণহত্যা বলা হয়।
গণহত্যা বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টন গণহত্যা সংঘটনের একটি ধারণা দেন,যেখানে আটটি ধাপে গণহত্যা সংঘটনের কথা বলা হয়েছে।ধাপগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো –
প্রথম ধাপ শ্রেণীকরণ,এই ধাপে গণহত্যার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়,গণহত্যার উদ্যোগ গ্রহণকারীরা যে তাদের থেকে আলাদা এবং উন্নত – সেটা বলা হতে থাকে বারবার।
দ্বিতীয় ধাপ চিহ্নিতকরণ,এই ধাপে গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিশেষ কিছু পরিচয়ে চিহ্নিত করা করা হয়।
তৃতীয় ধাপ বিমানবিকীকরণ,এই ধাপে গণহত্যার ভিকটিমদের মানবিক মর্যাদার অবমাননা করা হয়।বিভিন্ন পশুর সাথে তুলনা করা হয়,হেট ক্যাম্পেইন চালানো হয়।
চতুর্থ ধাপ সংগঠন,এই ধাপে গণহত্যার পরিকল্পনাগুলোকে সুসংগঠিত করা হয়ে থাকে।
পঞ্চম ধাপ মেরুকরণ,এই ধাপে গণহত্যার পক্ষে বিপক্ষে দু’টি সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা যায়।এবং গণহত্যার বিপক্ষে অবস্থানকারীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়।
ষষ্ঠ ধাপ প্রস্তুতি, এই ধাপে হত্যার উদ্দেশ্যে তালিকা বানানো হয়,নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়।
সপ্তম ধাপ হত্যাযজ্ঞ,গণহত্যা বা জেনোসাইডের এটিই মুখ্য ধাপ।স্ট্যান্টন এই ধাপটিকে ম্যাস কিলিং বা ম্যাসাকার না বলে বলছেন এক্সটার্মিনেশন।এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় পোকামকড় দমন বা এই জাতীয় ক্ষেত্রে।গণহত্যা পরিচালনার সময়ে হত্যাকারী পক্ষ প্রতিপক্ষকে পোকামাকড় জাতীয় কিছুই মনে করে থাকে।
সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে প্রত্যাখ্যান বা গণহত্যা অস্বীকার,এই ধাপে গণহত্যাকে জায়েজ করার জন্য বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করানো হয়,নিহতের সংখ্যা কমিয়ে প্রচার করার প্রোপাগান্ডা চালানো হয়,হত্যাকাণ্ড অপরিহার্য ছিল এবং যা হয়েছে সেগুলো গণহত্যার পর্যায়ে পড়েনা – এই ধরণের প্রচার চালানো হয়।
এবার উপরে প্রদত্ত গণহত্যার সংজ্ঞা এবং গণহত্যা বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টন এর গণহত্যা সংঘটনের আটটি ধাপের সাথে ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যার কিছু সাদৃশ্য তুলে ধরা যাকঃ-
১৯৭১ সালে পাক বাহিনী বাঙালিদের উপরে যেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি চালায় সেটা যে ইতিহাসের অন্যতম একটি বীভৎস গণহত্যা তা আর বলার কোন অপেক্ষা রাখে না। মাত্র ৮ মাস ২০ দিন সময়ে পাক জানোয়ারেরা প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে ওদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী। পূর্ব থেকেই ওরা ওদের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে রেখেছিলো। এক্ষেত্রেগ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টন এর গণহত্যা সংঘটনের আটটি ধাপের ১ম ধাপটির কিছু তুলনা করা যাক- এই ধাপানুযায়ী শত্রুপক্ষ নিজেদেরকে বরাবরই আলাদা এবং উন্নত বলে বিবেচনা করে থাকে। ফলে যাদের উপর নির্যাতন চালানো হয় তাঁদের সম্পর্কে নানা রকম বিকৃতি স্বরূপ মন্তব্য করতে থাকে।ঠিক একই ভাবে পাকিস্তানিদের ভাষায় বাঙালিরা ছিল infidel(নাস্তিক)।প্রচণ্ড হিন্দুবিদ্বেষী এই পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে সেইভাবেই সংজ্ঞায়িত করেছিল যেভাবে হিটলার করেছিল ইহুদিদের।মেজর বশীরের জবানীতে এন্থনি ম্যাসকারেনহাস জানাচ্ছেন,
The people here may have Muslim names and call themeselves Muslims.But they are Hindus at heart.You won’t believe that the maulavi ( mulla ) of the cantonment mosque here issued a fathwa ( edict ) during the Friday prayers that the people would attain janat ( paradise ) if they killed West Pakistanis.We sorted the bastard out we are sorting our the others.Those who are left will be real muslims.We will even teach them Urdu.
নিয়াজির একটি চিঠিতে সে বলেছে,কমপক্ষে দশবছর বাঙালিদের মগজ ধোলাই করা উচিৎ।চূড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে সুপারিশ ছিল-
There must be more killing,more mopping up and more witch hunting
পাকিস্তানিরা আমাদের বিরুদ্ধে যেই গণহত্যাটি চালিয়েছিল সেটি ছিল শুরু থেকেই সুপরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত। বাঙালিদের বংশ পরম্পরায় নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা শুরু হয় একাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে,২০ মার্চ যা অপারেশোন সার্চলাইট নামে অনুমোদিত হয়।এর পর ২৫ মার্চ এই অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে শুরু হয় ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস গণহত্যা যা চলেছে পরবর্তী নয় মাস ধরে।
আচ্ছা আমরা কি জানি আমাদের এই দেশটিকে স্বাধীন করার জন্য,বাংলাদেশ নামের একটি ফুলকে বাঁচানোর জন্য, একটি দেশের মাটির জন্য আমাদের দেশের আনাচে কানাচে ঠিক কতোগুলো বধ্যভূমি তৈরি হয়েছিলো ?? আমরা কি জানি সেই সব বধ্যভূমির গণহত্যার ইতিহাস ?? নাহ্… হয়তো কিছুটা জানি। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে অনেক অনেক বধ্যভূমিতে সংঘটিত গণহত্যার ইতিহাস। হয়তো সামগ্রিক ভাবে পুরো বাংলাদেশের গণহত্যাকে আমাদের সামনে বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু পুরো বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সংঘটিত গণহত্যার হাজারো ইতিহাস চাপা পরে যায় মাত্র “একটি সামগ্রিক” গণহত্যার ইতিহাসে।
আমাদের দেশের এরকম কিছু বধ্যভূমি আর সেখানে সংঘটিত গণহত্যা ইতিহাসই এবার তুলে ধরবোঃ-
বরাইতলা বধ্যভূমি, কিশোরগঞ্জ
মহান মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে হয়েছে এ দেশের ৩০ লক্ষ মানুষকে। দেশের অগণিত বধ্যভূমি ঘাতকদের বর্বরতার চিহ্ন বহন করছে এখনো। তেমনি এক বধ্যভূমি কিশোরগঞ্জের বরইতলা। ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর এই বরইতলায় ৩৬৫ জন নিরীহ মানুষ স্বাধীনতার বেদীমূলে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলে গেছে কিশোরগঞ্জ-নিকলী সড়ক। এ সড়কের পাশেই বরইতলা ময়দান। বরইতলার পাশেই মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়ি। ফলে হানাদার ও রাজাকারদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়ে এলাকাটির উপর। ১৩ অক্টোবর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক বাহিনী এখানে চালায় নির্মম গণহত্যা। প্রায় চারশ’ গ্রামবাসীকে তারা প্রথমে বরইতলা মাঠে জমায়েত করে। পরে প্রত্যেককে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে। এর মধ্যে তাদের কয়েকজন নামাজ পড়ার ওসিলায় স্থানীয় মসজিদে গিয়ে রক্ষা পান। এই মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। বরাইতলা বধ্যভূমির সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের একটি নিদর্শন পাওয়া যাউ এই উক্তিটি থেকে-
“এক সকালে পাকি হানাদারবাহিনীর সহযোগী দালালরা প্রায় ১৫শ’ পুরুষ লোককে বরইতলা (কিশোরগঞ্জ) গ্রামের রেল লাইনের ধারে জড়ো করে। …… উপস্থিত লোকদের একজনের বাহু অন্যের বাহুর সঙ্গে বেঁধে লাইনে দাড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর হুকুম দেয়া হয় ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করার। কিন্তু এত লোককে এভাবে হত্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে তাদেরকে রেল লাইনের উপর বসিয়ে ত্রিশ কেশি ওজনের বিশেষ ধরনের শাবলের আঘাতে একে একে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলা হয় তাঁদের প্রত্যেকের মাথা। এরপর মৃতদের উপর ব্রাশ ফায়ার করা হয়। এত কিছুর পরও যাঁদের দেহ একটু আধটু নড়াচাড়া করছিল তাঁদেরকে বেয়নেট চার্জ করা হয়।এদিন বরইতলায় পাকি হানাদারদের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের নির্মম শিকারে পরিণত হয় ৩৬৬ জন গ্রামবাসী, মারাত্বক আহত হয় আরও ১৩৪ জন।”
(যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ, ডা. এম এ হাসান, পৃষ্ঠা ৭,৮)
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় এলাকাবাসী বরইতলার নাম পাল্টে রাখেন শহীদ নগর। তখন এ স্থানটিতে অস্থায়ীভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পরিচয় জানা শহীদদের নাম সংবলিত স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করে।
এলাকাবাসী বরইতলা গণহত্যার জন্য স্থানীয় রাজাকার কমাণ্ডার আবুল হাসিমসহ কয়েকজন রাজাকারকে দায়ী করেছেন। ঘাতকদের কেউ কেউ এখনো দুর্দাণ্ড প্রতাপে এলাকায় ঘুরে বেড়ায়।
আর এ সব কিছুর নিরব সাক্ষী হয়ে আছে শহীদ পরিবারের সদস্য লাল মামুদ, বরইতলা ঘটনায় আহত অবস্থায় বেঁচে যাওয়া শরাফত, মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ও প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ চাঁন মিয়া। বর্তমানে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলছে। তবে বরইতলার হত্যাকারীদেরকে এই বিচারের আওতায় আনা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা, মুক্তিযোদ্ধা, গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী ঘাতকদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। কিন্তু তাঁদের এই দাবি পূরণ হতে আর কতো দিন অপেক্ষা করতে হবে সেটা এখন শুধু সময়ই বলে দিতে পারে।
বাবলা বন বধ্যভূমি,রাজশাহী
রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের ‘টি-গ্রোয়েন’সংলগ্ন বাবলা বন বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদসহ প্রায় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় লোকজন ৩০ ডিসেম্বর নগরীর বোয়ালিয়া ক্লাবের কাছে তাদের গণকবর আবিস্কার করে। সেই ১৭জন বুদ্ধিজীবির মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির আবদুল কাইয়ুম, নওরোজ-উদ-দৌলা খান, তসলিম উদ্দিন, আবুল হোসেন, আলাউদ্দিন, তায়িব আলী, মির্জা সুলতান, আজিজুল হক চৌধুরী ছিলেন। শহীদ নওরোজ-উদ দৌলা খানের ছেলে আসাফ-উদ- দৌলা খান গুলজার বলেন,
‘আমার এখনো মনে আছে ১৯৭১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাইসাইকেলে করে আমি কবরস্থানে গিয়ে বাবার হাতের আঙুলের আংটি দেখে মৃতদেহ সনাক্ত করি।’
ব্যবসায়ী শহীদ আলতাফ হোসেনের ভাতিজা তৌফিকুর রহমান লাভলু বলেন,
“তিনি তার চাচার সোয়েটার দেখে মৃতদেহ সনাক্ত করেছিলেন। শহীদদের মৃতদেহের মধ্যে ১৩টির হাত-পা বাঁধা ছিল ।“
পরবর্তীতে যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে এ বধ্যভূমিটিকে আর সেভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।
বেলতলী বধ্যভূমি
একাত্তরে পাক সেনারা নৃশংস তাণ্ডবের মাধ্যমে যতোগুলো বধ্যভূমি সৃষ্টি করেছে তাঁর মধ্য অন্যতম একটি বধ্যভূমি হল কুমিল্লা জেলার লাকসাম রেল জংশনের বেলতলী বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমিটিতে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার নিরীহ বাঙালিকে পৈশাচিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এই গণহত্যার শিকার অধিকাংশ মানুষই ছিল চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং কুমিল্লার বাসিন্দা। এই বধ্যভূমিটি প্রায় ৪ হাজার বর্গমিটার সীমানা বিধৃত। এপ্রিলের শুরুতেই রেল জংশনের অতি সন্নিকতে অবস্থিত একটি সিগারেট কারখানা হানাদার বাহিনীর টর্চার সেলে পরিণত হয়। এই টর্চার সেলেই অকথ্য নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো নিরীহ বাঙালিদের। নারীদের উপর চালানো হতো পৈশাচিক শারীরিক নির্যাতন। অনেক যুকদের ধরে এনে হাত পা ভেঙে জীবন্ত পুতে ফেলা হয় এই বধ্যভূমির মাটিতে। এই বধ্যভূমিটিতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ছিল বিহারী বকাউল হাবিলদার। তাঁর নেতৃতেই কয়েকটি গ্রুপ বাঙালি নারী পুরুষদের ধরে আনার কাজ করতো। আর হত্যাকাণ্ড শেষ হবার পর সেই লাশগুলোকে মাটি চাপা দেয়ার কাজটি করতো রেলওয়ে জংশনের ডোম শ্রী চন্দ্রদাস ও তাঁর দুই আত্মীয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও জীবন বাঁচাবার তাগিদে মাটি চাপার কাজটি বাধ্য হয়ে করতে হতো তাঁদের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ এবং লজ্জার হলের সত্যি যে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও এই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের কোন ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। এইরকম আরও কতো বধ্যভূমি যে দিন দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক সংখ্যাও হয়তো আমাদের ধারনার বাইরে। অথচ এই বধ্যভূমিগুলো হল আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক অন্যতম জলন্ত সাক্ষী।
[চলবে…]
তথ্যসূত্রঃ-
1. সামহোয়ার ইন ব্লগ
2. সচলায়তন ব্লগ পোস্ট 3. আমার ব্লগ পোস্ট
4. জেনোসাইড বাংলাদেশ ডট ওআরজি
২২টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
একটি তথ্যবহুল পস্টের জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন।
ফাতেমা জোহরা
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ… 🙂
ব্লগার সজীব
গন হত্যা ও ১৯৭১ এর বিভিন্ন বধ্যভূমি সম্পর্কে জানলাম আপনার এই পোষ্ট থেকে।এই জানাটা অত্যন্ত জরুরী।বাংগালী কত রক্ত দিয়েছেন দেশের জন্য,এসব জানা উচিৎ আমাদের সবার। অপেক্ষা করছি পরের পর্বের জন্য।
সোনেলা ব্লগে স্বাগতম আপনাকে -{@
ফাতেমা জোহরা
খুব শীঘ্রই ২য় পর্বটি পোস্ট করতে পারবো আশা করি 🙂 অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
মেহেরী তাজ
অনেক কিছু জানলাম আপু।ধন্যবাদ আপনাকে।
ফাতেমা জোহরা
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য আপু 🙂
ছাইরাছ হেলাল
স্বাগত আপনি এখানে।আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলাম।
ফাতেমা জোহরা
ধন্যবাদ ভাই। এটা একাত্তরের ইতিহাসের ক্ষুদ্রতম অংশের অতি ক্ষুদ্রতম একটি অংশ। চেষ্টা করবো আরও কিছু ইতিহাস তুলে ধরার জন্য 🙂
লীলাবতী
৭১ এ নিহত সমস্ত শহীদদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রথম পোষ্টেই আপনি আপনার স্বরূপ চিনিয়ে দিলেন।শ্রদ্ধা এবং ধন্যবাদ আপনার প্রতিও।
অনেক কিছু জানলাম,আরো জানার প্রত্যাশায় থাকলাম। সোনেলায় স্বাগতম -{@
ফাতেমা জোহরা
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন 🙂
লীলাবতী
আপু ছবি দুটো আর একটু বড় করে দিন প্লিজ। বধ্য ভূমির মাটি মাথায় লাগাতে ইচ্ছে করছে।
ফাতেমা জোহরা
আচ্ছা আপু দিচ্ছি। আপনি যদি ঢাকা বা এর আশে পাশে থাকেন তাহলে খুব সহজেই এই মাটিগুলোকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পারবেন। মাটির ছবিগুলো মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি থেকে তোলা। পরবর্তী পোস্টে আমি জল্লাদখানা সম্পর্কেও কিছু তথ্য আপনাদের দিতে পারবো আশাকরি 🙂
শুন্য শুন্যালয়
ঘটনাগুলো খুব দুঃখজনক। একটা গ্রামের এতোগুলো মানুষকে একসাথে হত্যা করার পরও তাদের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হয়না, অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখা হয় আত্মত্যাগী মানুশগুলোর বধ্যভূমি। এগুলো মন খারাপ করে দেয়। এখন সব ভুলে যেতে পারলেই বাঁচি।
আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি আপু এমন একটি পোস্ট দিয়ে সোনেলায় আগমনের জন্য। লিখতে থাকুন এমন অজানা আরো।
ফাতেমা জোহরা
আমারও আক্ষেপটা এখানেই। তবে আক্ষেপ যতোই হোক না কেন অদৃশ্য এক টানে কিছুতেই যেন ভুলতে পারি না এই হারিয়ে যেতে থাকা ইতিহাসগুলোকে। অশেষ ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য 🙂
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে -{@
কত ত্যাগ, কত রক্ত, কত বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে প্রাপ্তি আমাদের এই দেশ।
এরপরেও
জাতীয় পতাকা খামছে ধরেছে পুরানো শকুন
শকুনদের দমন করতেই হবে।
ভালো পোষ্ট।
লিখুন নিয়মিত……
শুভ কামনা,শুভ ব্লগিং ।
ফাতেমা জোহরা
ধন্যবাদ জিসান ভাই।
বনলতা সেন
অনেক অজানা তথ্য সংযোজন করেছেন যা জানা ছিল না।
অভিনন্দন আপনাকে।এখানে আসার জন্য।
ফাতেমা জোহরা
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্যে।
নওশিন মিশু
ধন্যবাদ এমন তথ্য বহুল লেখার জন্য।
ফাতেমা জোহরা
লেখাটি পড়বার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ আপু 🙂
কৃন্তনিকা
আপনার কয়েকটি লেখা পড়েই ক্লান্ত হয়ে গেলাম। এই ক্লান্তি লেখার জন্য নয়, ভাবনার জন্য। আমরা যা কল্পনা করতে পারি না, তা হয়েছে ৭১এ…
আমি জানি না, কিভাবে তথ্যগুলো পেয়েছেন। তথ্যগুলো পেতে কি পরিমাণ ঘাম ঝরিয়েছেন- তাও জানি না। শুধু বলতে পারি- ধন্যবাদ।
ফাতেমা জোহরা
৯ মাস এতো ত্যাগ তিতিক্ষা করে যারা আমাদের স্বাধীন এই দেশ দিয়েছেন, তাঁদের কথা তুলে ধরতে এইটুকু আর খুব বেশি কিছু না। বরং এরপরেও এসব জানার পর মনের ভেতরের আক্ষেপগুলো আর বাড়ে 🙁