গত ৩/৪ দিনে যে পরিমাণ গালি এবং থ্রেড আমার বিভিন্ন পোস্টের কমেন্ট এবং ম্যাসেঞ্জারে এসেছে, তার পরিমাণ হয়ত সারা বাংলাদেশের সবার অনলাইন এবং অফলাইন এক করলেও কাছাকাছি হবে না। অনেকে এমনকি বাড়ি থেকেও কল দিয়ে আমাকে বলেছে, এত গালি কেন খাচ্ছি! আমার কি দায় পড়েছে! জবাবে বলেছি, এজন্যই তো তারা এভাবে গালি দিচ্ছে যাতে সবাই চুপ হয়ে যায় এবং তারা বিকৃত ইতিহাস স্থাপন করতে পারে।
বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ অন্ধভাবে বিশ্বাস করে, শুধুমাত্র দাঁড়ি-টুপি পড়ে বলেই কিছু লোককে ক্ষমতার দাপটে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। যু দ্ধাপরাধী, রা জাকার কনসেপ্টটাই তাদের মাথায় নাই। প্রকাশ্যে-গোপনে বছরের পর বছর ধরে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তাদের ভয়াবহভাবে মানসিক কোমায় নিয়ে গেছে। যার প্রতিফলন আমরা গত কয়েকদিন দেখেছি।
সত্যি বলতে কি, এসব গালিগালাজ আসলে কখনো আমার গায়ে লাগেনি। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে দাঁড়িয়েছে। তারা জানতো না যে, আর কখনো বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা। সেখানে এই গালি তো কিছুই না। কিন্তু আমি হতাশ হয়েছি প্রজন্মের মহা অবক্ষয় দেখে। কারণ এরাই আগামী ১০/২০ বছর পর দেশ চালাবে। তাহলে দেশের ভবিষ্যত কি! তাদের বাংলাদেশের পক্ষে আনার উপায় কি! তারা সত্য জানবে কবে আর কবেই বা মেনে নিবে!
ঠিক এই পয়েন্টেই আমি দেখলাম ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’। দেউল্যা রা জাকারের মৃত্যুর পর নতুন করে অনেকগুলো মিথ্যা আবারো অনলাইনে মার্কেটিং শুরু হয়। ঘোষণা দিয়ে একদিন পর আমি একটা ভিডিও আপলোড দেই। সেখানে চলতে থাকে গালির নহর। কিন্তু তার ২ দিন পর হঠাৎ দেখি বিপরীত চিত্র। নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে আমার পক্ষ হয়ে লড়ছে সেই ভিডিওর কমেন্টে। আমি তাদের চিনি না, জানি না। কিন্তু তারা সত্যের সন্ধান পেয়ে, সত্যকে আবিস্কার করে লুফে নিয়েছে। তাদের সাথে যে বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে সেটা তারা বুঝতে পেরেছে।
স্ক্রুল করতে করতে একসময় আমার পিসি হ্যাং হয়ে যায়। রি-স্টার্ট দিয়ে আবারো কমেন্টে, শেয়ারে ঘুরতে থাকি। কিন্তু এত এত মানুষের পজেটিভ অংশগ্রহণ যে পিসি সে লোড নিতে পারছিলো না। শেষে আমি থেমে গেলাম।
আমি আবিস্কার করলাম এক অসাধারণ গাণিতিক মান। আজ দুপুর পর্যন্ত ১৫ হাজার রি-এ্যক্ট এর মধ্যে মাত্র ২৩৬ টি এংরি। ৩.১ হাজার কমেন্ট, ৪.৭ হাজার শেয়ার এবং ৭ লক্ষ ২৩ হাজার বার ভিডিওটা দেখা হয়েছে।
আমি আবিস্কার করলাম কেন আজকের প্রজন্ম ভুল এবং মিথ্যের মধ্যে ডুবে আছে। কেন তারা মুক্তিযুদ্ধকে একটা রূপকথার গল্প মনে করে। কেন তারা যু দ্ধাপরাধী এবং রা জাকার ইস্যুকে মিথ্যা, সাজানো নাটক মনে করে। কারণ তাদের সামনে সত্য কেউ হাজির করছে না। যে দায়িত্বটা সবচেয়ে বেশী ছিল আওয়ামীলীগ এবং সরকারের। যে দায়িত্বটা ছিল আমাদের গণমাধ্যমের। যে দায়িত্বটা ছিল আমাদের শিক্ষিত সমাজ এবং অভিভাবকের। কিন্তু আমরা কেউই কোন দায়িত্ব পালন করি নাই। আর তাই ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম বোঝাটা মাথায় নিয়ে বিভ্রান্ত আমাদের নতুন প্রজন্ম। যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং বর্তমান সরকারের ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতা।
নতুন প্রজন্ম জানতে চায় সত্যটা। তাই আজ সত্যের দেখা পেয়ে তারা বুঝতে পেরেছে যে তারা প্রতারিত। তাই গর্জে উঠেছে, লড়াই করেছে ঘাতকদের সৈনিকদের বিরুদ্ধে।
এভাবেই সত্যকে বারবার সামনে আনতে হয়, যাতে মিথ্যা ইতিহাস বিকৃত করতে না পারে।
একটি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
খুব কষ্ট লাগে ইতিহাস বিকৃতি হতে দেখলে। আবার কেউ কেউ সত্যিটা জেনেও বিশ্বাস করতে চায় না। তবু সত্য প্রকাশে এগিয়ে আসতে হবে।