প্রথমে প্যাচ লাগাই। পরে বাদবাকি কথা:
যে লোকটা সারাদিন লিচু চুলকায়, মোবাইলে জুম করে নারীর শরীর দেখে, বিবাহ বহির্ভূত শারিরিক সম্পর্কে জড়িত, আকাইম্মা বসে থাকে সে লোকটাই আবার আহাজারীর ওয়াজ দেখে মোবাইলে। আবার ইয়া-বাবার চালানের সময় সিএনজি চেকের সম্ভাবনা এলেই চালক মাথায় টুপি লাগিয়ে নেয়। একদমই পরহেজগারের মুখোশ। লেবাসধারী বাঙ্গাল মুমিনদের জেনুইন কম্বিনেশনের উজ্জ্বল উদাহরণ যেন। আবার আইন শৃংখলা বাহিনীর বাজে ইমেজে মানুষের নিশ্চুপ থাকা (ট্রেনের দৃশ্য), দিনে মানুষ আটক করে রাতে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার হাট বসানো এগুলো ছিল গুপ্ত সাহসী পদক্ষেপ।
এবার অনুভূতি ব্যবসার কথা জানাই:
একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক, তিনি আবার হিন্দু। একদিন একটু বেশী বিজ্ঞান পড়িয়েছিলেন ক্লাসে। বিনিময়ে অনুভূতি ব্যবসায়ীদের খড়গে পড়ে বাড়ি-ঘর ফেলে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেছে। দখলে নিয়েছে চোরাই কাপড়ের ব্যবসা করা আরেক বাঙ্গাল মুমিন।
কুরুচির গল্পটা শুনবেন:
না, খাওয়ার সময় পায়খানার আলাপটা কুরুচিতে অতটা পড়ে না, যতটা না ইয়া-বাবা পরিবহণের ব্যপারটা। যদিও যারা ইয়া-বাবা-খোর তাদের তাতে কিছুই যায় আসে না। যতটা যায় আসে না বাঙ্গাল মূলকের তথাকথিত তাগুদি চেতনায় আক্রান্তদের। দৃশ্য গুলো কুরুচিপূর্ণ কিন্তু প্রয়োজনীয়। তবে অন্যভাবেও দেখানো যেত।
বিভৎস:
ইয়া-বাবা প্রবেশের সময় যে ক্লোজ টিট্রটমেন্ট হয়েছে বাঁধনের উপর কিংবা একজন অসহায় নারী-মায়ের ভয় পাবার আতঙ্কিত লুকগুলো আসলেই পিলে চমকে দেয়ার মতো। কৃত্রিমভাবে সেটাকে উৎপাদন করতে হয় নি। সাধারণ ফ্রেমে শুধু লুক-এক্সপ্রেশনে যে ভয়টা জাগিয়েছে, তা আসলেই বিভৎস। অন্যদিকে পুরো সিরিজে বাধনের হাটার দৃশ্য দেখে একটু হার্টপেইন অনুভব করবেন। দূর্বল হার্টের মানুষের জন্য এটা অবশ্যই বিভৎস অভিজ্ঞতা।
বুমেরাং:
জীবন আপনাকে কখন কিভাবে ফাঁসিয়ে দেবে তার গ্যারান্টি কেউ জানে না। এই সিরিজের সবচেয়ে বড় বুমেরাং শেষ দৃশ্যের ফোনকল। সবচেয়ে বড় ঝাঁকিও। আমি শতভাগ নিশ্চিত, শুরু থেকে যে একটু একটু করে এই বুমেরাংটার মালা গাঁথা হচ্ছিল সেটা কোন দর্শক ধারণাও করতে পারে নি।
চমক:
সিরিজের শুরু থেকে যার ওয়ানম্যান শো মনে হচ্ছিল। সেটা হচ্ছে বাঁধন। তার হাটা, চোখের ভাষা, এক্সপ্রেশন এবং সর্বশেষ চিৎকার দিয়ে বলা, “ও আমার কেউ না! আমি তারে চিনি না” জাতীয় একটা ডায়লগ যেন বাধ ভেঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সব। গ্ল্যামার এবং ফিটনেস থেকে বেরিয়ে এই যে চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা এটা বহু ঝুকিঁপূর্ণ এবং সাধনার ব্যপার। সেটা বাঁধন করেছে। সবচেয়ে সাহসী ব্যপার ছিল, ফ্রেমে নিজেকে দেখতে বাজে লাগানোর যত কৌশল সবই এখানে ব্যবহার হয়েছে। বাঁধনের কষ্ট নিয়ে হাটা-দৌড়, শারিরিক কষ্টে শরীরে বেরিয়ে আসা ঘাম এগুলো ‘গুটি’কে কতটা সফল করবে জানি না। তবে বাঁধন নিজেকে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যাবার পদক্ষেপ হিসেবে সাধুবাদ পাবার যোগ্য।
তবে হ্যা, সিরিজের একটা সময় পর নাজিম জয় ফোকাসটা নিজের দিকে কিছুটা হলেও টেনে নিয়ে যান খুব ন্যাচারাল ডায়লগ ডেলিভারি এবং সরল এক্সপ্রেশন দিয়ে। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, তার মিচকা শয়তানী আর একই সাথে দূর্দান্ত ও খাঁটি প্রেমিক (পরকীয়া) চরিত্রটি লোভনীয় হয়ে থাকবে অন্যান্য অভিনেতাদের জন্য।
সর্বশেষ ব্লাস্ট করেছে প্রাইভেট টিউটর চরিত্রে অভিনয় করা ছেলেটি। তার ব্যপারে বেশী কিছু বলবো না। চমকটা যারা দেখেনি, সেই দর্শকদের জন্য তোলা থাকুক। আর হ্যা, কাপড়ের ব্যবসায়ী ভাইজানও ছোট সময়ে ভাল প্রভাব রেখেছেন।
অন্যান্য:
নাসির ভাই’র ওভার এ্যক্টিং বলেন কিংবা পুরান ঢাকার ভাষায় সাবলিল হতে না পারাটা চোখে পড়েছে। তার পাশাপাশি ক্লিনিকের ম্যানেজার এবং একজন নার্স ঠান্ডা মাথার হিংস্রতাকে দূর্দান্তভাবে তুলে ধরেছেন। মৌসুমী হামিদের কিছুই করার ছিল না এই সিরিজে। যদিও সে বরাবরের মতোই সাবলিল। ক্যামেরা এবং ড্রোন শট ভাল ছিল।
আর হ্যা, বাড়িটা লোকেশন/সেট হিসেবে চমৎকার ছিল।
সর্বশেষ:
অতি সিনেমাটিক, অতি ভুংভাং-ভুজুংভাজুং ছাড়াও ড্রামাটিকভাবেও যে এই দেশে ওয়েব সিরিজ করা যায় তারই একটা ধারণা দিয়ে গেল ‘গুটি’। হার্ডকোর থ্রিলারের বাইরে এসে হার্টকোর কিছু করার যে প্রয়াশটা নির্মাতা শঙ্খ দাসগুপ্ত নিয়েছেন তার জন্য সাধুবাদ। সিরিজটিতে বেশ কিছু শ্ল্যাং ছিল। তবে গল্পের ক্যনভাস এবং চরিত্রগুলো জীবনযাপন অনুযায়ী কিছু জায়গায় ঠিকঠাক হলেও, কোথাও কোথাও আরোপিত মনে হয়েছে।
এখন যদি জানতে চান কেমন লেগেছে! তাহলে বলবো: খারাপ না। ছোট ছোট কিছু ব্যপার হয়ত মনে থাকবে। কিন্তু আহামরী কিছু না। অভিজ্ঞ নির্মাতা একটা স্ক্রীপ্ট সফলভাবে নামিয়ে এনেছেন, এটুকুই। ঝাক্কি মারার মতো কিছু হয় নি।
৪১৮জন ৩৬৩জন
0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ