
আশ্বিনের বৃষ্টিগুলো কুয়াশার মতো। ঝিরঝির শব্দে মন মাতাল করে। সাদা কাশবন আরও ঝকঝকে হয়। কাজ শেষে বের হয়ে দেখি, বৃষ্টি। ব্যাগে ছাতাও নেই। একটু জোরে পা চালিয়ে মোড়ে যেতে পারলেও; দোকানে চা খেতে খেতে রিকশা খোঁজাও যাবে।
চাচা, চা দেন। সাথে সিঙ্গারাও।
মা, আজ এতো দেরি যে! বৃষ্টিও যেভাবে নামছে।
কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছে।
এই নাও চা।
একদিন চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেমনে এতো সুন্দর করে চা বানান? উনি বলেছিলো, পানিতে এলাচ দিয়ে অনেকক্ষণ ফুটাই। দুধ আর চিনি আলাদা জ্বাল দিয়ে নিই। চাপাতা দেয়ার পর, বলক উঠলে দুধ চিনি দিয়ে হালকা জ্বালে বসাই। ওনার চা এক চুমুক খেলেই বুঁদ হয়ে বসে থাকা যায়। চোখ বন্ধ করে ভাবছি, কি নিয়ে গল্প লিখবো। টিউব লাইটের মতো চমকে দেখি, একজন লোক সামনে বসে। জোরে জোরে গলা খাঁকড়িয়ে থুথু ফেলছে।
আ- প- নি!! কখন এলেন?
আপনার চায়ের ধোঁয়ার মধ্য থেকে।
কি বলেন?
মিথ্যা বলে কি লাভ?
চা খাবেন?
না, এখন খেলে ঘুম আসবেনা!
কোথায় যাবেন?
যাবোনা। এইখানে বসে থাকবো। বৃষ্টি খাবো। মেঘ খাবো। আঁধার খাবো।
ভয়ডর কম হওয়াতে, ওনার কথায় মজা পাচ্ছি। তবে কৌতূহল বাড়ছে।
আপনি খাওয়া শেষ করে কী ছবি আঁকবেন?
হুম! ছবি আঁকবো। তুমি জানলে কেমনে?
আপনার বন্ধু হতে চাই। বানাবেন?
আমার এই উসকো খুসকো চুল দেখে কেউ বন্ধু হতে চায় না।
আমার তো ভালোই লাগছে। আপনার চেহারায় লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির মিল পাচ্ছি।
তুমি ওনাকে চেনো? জানো, উনি আমার বন্ধু। উনি যখন মোনালিসা এঁকেছিলেন তখন ওনার পাশে ছিলেম। তুমি কি বলতে পারো: মোনালিসার ভ্রু নাই কেনো?
ভ্রু থাকলে ভালো লাগতো না।
আরে নাহ্। ভ্রু থাকলে ওর রহস্যময় হাসি চোখে পরতো না।
দারুণ বললেন। আব্বা, একবার জন্মদিনে মোনালিসার ছবি ফ্রেমে বেঁধে গিফট দিয়েছিলেন। আমার রাত জাগার অভ্যেস। বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখি, মোনালিসার চোখ দিয়ে আলো বের হচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে ওড়না দিয়ে ওর মুখটা ঢেকে দিয়েছিলাম। সেই থেকে ঐ ছবি আর ঘরে রাখিনা।
হা—হা—হা–হা!!!
হাসছেন যে?
আমার জীবন কাহিনী শুনলে তো তুমি ভয় পাবে।
বয়সের তালে তালে ভয় কমে গেছে। বলেন। আমি শুনবো। বৃষ্টি কমতে আধাঘণ্টা দেরি লাগবে। আর এক কাপ চা খাই।
আমি তো মরে গেছি। গ্রামের লোক কবর দিতে গেলেই উঠে বসি। সবাই তা দেখে ভুত বলে দৌড় দিলো। বাড়িতে গেলাম, বৌ বাচ্চা সবাই ডরায়। সেই থেকে কবরে থাকি।
এই প্রথম লোকটার চোখে চোখ রাখলাম। ফ্যাকাসে চোখ। নির্লিপ্ত দৃষ্টি। আচ্ছা, চাচা আপনার নাম কী?
নাম মনে নাই। ভুলে গেছি। সব ভুলে যাই। খিদা লাগলে পানি খাই, মাটি খাই। দেখবা পানি খাবো। বলেই হাত বাড়ালো লম্বা করে, পানি কেমনে জানি ওনার মুখে আসলো। অবাক হলাম। ভুত না মানুষ? মাথাটা আউলায় গেলো। চোখটা ঝিম ঝিম করছে। দুই/ তিন সেকেন্ড ঝিমায় ছিলাম। চোখ খুলে দেখি লোকটা নাই। গায়ে চিমটি দিলাম। ঠিক আছি।
দোকানি চাচা, চাচা!! আপনি কই? একটু আগে যে লোকটি কথা বললো, উনি কই গেলেন?
কার কথা বলছো?
নীরব হয়ে, রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছি। তবে পিছন ফিরে দেখছি। যদি আবার দেখা পেতাম। পৃথিবীতে অনেক অপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে। তার কিছুটা অবান্তর হলেও ছাপ থেকে যায় মনের গহীন কোনে।
২৬টি মন্তব্য
শিপু ভাই
গুড ট্রাই
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
কিছু দেখা বা অদেখা মনের মাঝে গভীর ছাপ ফেলে যায়। এমন অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো শুনতে আমার বেশ ভালোলাগে আপু…….শুভ সকাল।
আরজু মুক্তা
অনুপ্রাণিত হলাম।
কামাল উদ্দিন
শুভ রাত্রি আপু
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এটা হ্যালুসিনেশন। আপনার গল্প লেখা চমৎকার হয়। এটাও ভালো লেগেছে। শুভ সকাল। ভালো থাকুন
আরজু মুক্তা
জি এটা হ্যালুসিনেশন। ধন্যবাদ আপনাকে, আমার গল্প ভালো লাগলো জেনে।
রেহানা বীথি
যখন ব্যাখ্যাতীত কোনও কিছু ঘটে, ছাপ থাকেই মনের ভেতরেে। ভালো লাগলো খুব আপনার গল্প।
আরজু মুক্তা
আপু, শুভেচ্ছা জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
উরে বাপ্রে!
আপনি এখন ভুতের ভয় দেখাচ্ছেন!
স্টাইলটি পছন্দ হইছে।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ। স্টাইলটা ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম।
ত্রিস্তান
আমার কখনো এমন হয়নি। এখন থেকে প্রায় পনের বছর আগে এক বসন্তের রাতে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম। আমি একাই, নিজেই ড্রাইভ করছি। তো সৈয়দপুরের আগে এসে দেখলাম একটা পাগল মাথা নিচু করে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হাতে অনেকটা দরবেশী টাইপের লাঠি। আমি ভাবলাম কোন সাধু হবে, একটুখানি লিফট করে নেই। আবার ভয় ও কাজ করছে যদি সে কোন ক্ষতি করে। পরে থামি নি। কি আশ্চর্য আমি ওখান থেকে প্রায় পনের বিশ কিলোমিটার ড্রাইভ করে আসার পর দেখি আবার ও সেই পাগল আমার সামনে। আমি অনেকটা ভয় পাওয়ার মতোই অবস্থা।তবে ভয় পাইনি এটা ভেবে যে এই লোকটা হয়তো অন্য আরেকজন। একই রকম পোশাক পরার কারণে আমার মনে হয়েছিল সেই লোকটাই। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো রংপুর মডার্ন পার হয়ে আরো শঠিবাড়ির আগে এসে দেখি ঐ একই লোক আবারো আমার সামনে। তখন প্রায় আড়াইটা বাজে। আমি একটু পেছনে এসে ব্রেক করে ইমার্জেন্সি দিয়ে গাড়ি পার্ক করলাম। কাঁচ নামিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে বসে সিগারেট টানছি। আর অপেক্ষা করছি লোকটা আরেকটু দূরে যাক দেখি কোথায় যায়। সিগারেটের ছাই ফেলতে এক সেকেন্ডের জন্য জানালায় তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে দেখি সে আর নাই। এবার আমি একটু অবাক হয়েছি। কারণ ওখানে আশপাশে রাস্তায় কোন বাড়ি ঘর গাছপালা কিছুই ছিলো না। একটা মানুষ এক সেকেন্ডের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো?
আরজু মুক্তা
এরকম আমারও ঘটেছিলো। চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামিতে। পরে একদিন গল্প আকারে লিখবো।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লিখনী । শুভেচ্ছা সতত ।
আরজু মুক্তা
আপনাকেও শুভেচ্ছা সতত।
সাদিয়া শারমীন
সত্যিই ভয়ের গল্প!!
আরজু মুক্তা
তাহলে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খান।
সুপায়ন বড়ুয়া
গল্পের ছলে জানা হলো
চা বানানো অল্প।
আপু আপনি লিখতে থাকুন
মনের মতো গল্প।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
মনের মতো গল্প
চুপটি করে বসেন তাহলে
আনি চিড়া মুড়ি অল্প।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ। হা হা হা
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
অদৃশ্য মানব।চমৎকার গল্প।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
সঞ্জয় মালাকার
দিদি পড়ে বেশ ভালো লাগলো, আপনার জন্য শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
শুভকামনা দাদা
মোহাম্মদ দিদার
কেমন লাগলো গল্প! বলবোনা!
চায়ের রেসিপিটা অস্থির!!
আরজু মুক্তা
তাহলে চা বানিয়ে একদিন নিমন্ত্রণ দিয়েন।