আপা,
কেমন থাকছিস না ফেরা দেশে ? কেমন লাগে রে ওখানে থাকতে? তোর কি মাঝে মাঝে খুব অস্থির লাগে? চলে আসতে ইচ্ছে করে কখনও কখনও? তুই ক্যামন করে এতোগুলো বছর রয়ে গেলি!এতোগুলো বছর!
তোর চলে যাওয়ার দিনে একটা রাত আমাদের বাড়িতেও নেমেছিলো। এতো বেশি অন্ধকার নিয়ে যে ভয়ার্ত ছিলাম খুব। মানুষের আনাগোনায় বাড়ি তখন জেগে উঠেছে। গভীর রাত। তুই চির নিদ্রায়।তোর মুখ দেখতে আমায় নেয়া হলো। আমি ডাকছি; তুই নিরুত্তর! এতো গভীর ঘুমে তুই যে জাগাতেই পারিনি! আমি তখন ক্লাস টু। মস্তিষ্ক থেকে অনেক স্মৃতিই মুছে গেছে। কেবল তোর স্মৃতিগুলোই আগলে রেখেছি যজ্ঞের ধনের মতোন। তুই আমার কাজলা দিদি ছিলি। আমার শৈশব তোর কোলেই বেড়ে উঠেছিলো। খুব যতনে। আম্মা তো আমার কোন বিরক্তই পান নি। তোর কাছেই আবদার-অভিযোগ নিয়ে বেড়ে উঠছিলাম। হঠাৎই আমার আবদার-অভিযোগের জায়গাটা হাহাকার করে শুন্য হয়ে গেলো। আমি আশ্রয় খুঁজি। হোঁচট খেয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেলে, খেলার সাথীদের সাথে ঊনিশ-বিশ বেঁধে গেলে। দৌঁড়ে আসি, নালিশ জানাতে। অথচ, তুই তো আমায় শুনতিসই না!
তখন আমার শৈশব বইছে। তোর ওই বিকেলের কথা মনে আছে? আমার পুতুল বিয়ে দিয়েছি, স্কুলের বান্ধবীর কাছে। তুই পিঠা বানিয়ে, সেমাই রান্না করে দিলি।
“পুতুল কি খায় নাকি?”
তুই টোল ফেলে গালে হাসলি একচোট। কি নির্মল হাসি!
আপা জানিস? সুমীও অনেকগুলো আনন্দের স্মৃতি রেখে চলে গেছে তোর মতোই। সুমীর সাথে তোর দেখা হয়? হলে বলিস, ও অনেক ভালো একটা মেয়ে। তোর মনে পড়ে? সুমীর সাথে বান্ধবী হলাম যেদিন তুই চুড়ি, নেইলপলিশ, চুল বাধার ক্লিপ কিনে নিয়ে আসলি। নিজের জমানো টাকা থেকে। সুমী ওগুলো দেখে ভীষণ খুশি। কাউকে আনন্দ দেয়ার সব চাবিই তোর কাছে ছিলো, না ?
তোর কাছে আসলে জাদু ছিলো। মানুষকে মুগ্ধ করার জাদু।
ঝড় ভয় পেতাম খুব। কালবৈশাখী উঠলেই তোরে জড়িয়ে ধরতাম। কি মায়া মায়া ঘ্রাণ ছিলো তোর শরীরের! এই ঘ্রাণ কতো দিন নিই না! এরপর কতো কতো ঝড় বয়ে গেলো! একাই সামলে গেলাম। জড়িয়ে ধরার শরীরটা তো তুই নিয়েই গেলি! ভয় পেলে মুখ লুকাবো কই! এখন অবশ্য বড়ও হয়েছি। চলতে শিখেছি পথ।
আপা, তুই ক্যামন আছিস? ক্যামন করে থাকিস? দম বন্ধ বন্ধ লাগে না তোর? প্রাণ খুলে হাসতে পারিস ওখানে? অনেক কথা বলা যায়? তোর নিকটজন কারা ওই দেশে?
স্বপ্নে আসিস আপা, প্লিজ। আসিস। দু বছর আগে ধবধবে সাদা কাপড়ে কি মায়াবতী দেখাচ্ছিলো তোকে! হাসছিলি। ডালিম ফুলে ভরে গেছে গাছ, উঠোনের কোণে। তুই এর নিচে দাঁড়িয়ে। ঘুম ভাঙলো মাঝ রাতে। হাতড়ে মরছি, তেষ্টা ধরেছে খুব। বোধ সজাগ হলো। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।
তুই এখন স্বপ্নের দেশে থাকিস!
স্বপ্নের দেশে ভাসিয়ে দেয়া এই চিঠি পড়বি হয়তো।হয়তো না। পড়লে স্বপ্নে আসিস, বুবু। ছোটবেলার মতোন আবদার দিলাম।
ভালো থাকিস স্বপ্নের দেশে। ভালোবাসা নিস।
ইতি,
তোর জন্য তুলে রেখেছি প্রাণের যতো আকুতি। জল ছলছল চোখে…..

৭৪৯জন ৭৪৯জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ