কিছুদিন থেকেই ভাবছিলাম এই গরমের ছুটিতে কোথাও বেড়াতে যাবো। কোথায় যাওয়া যায় হিসেব করতে করতে ঠিক হলো মালয়েশিয়া যাওয়া যাক। কিন্ত বললেই হয় না। ভিসার কাগজপত্র রেডি করা এক বিরাট হ্যাপা। কোন দু:খে যে পাসপোর্টে পেশা চাকুরীজীবী দিয়েছিলাম জানিনা। এর কারণে অফিসিয়াল কাগজ, ব্যাংকের কাগজ এটা পাই তো বস আরেকটা ফেলে রাখে। আবার তাগাদা দিতে দিতে আরেকটা। এভাবে সব সেট করে জমা দেয়া হলো ট্রাভেল এজেন্সিতে। কয়েকদিনের মধ্যেই ভিসা হয়ে গেলো। প্ল্যান হলো সব ঠিক থাকলে মে’র শুরুতেই উড়াল দেবো ইনশাআল্লাহ। এদিকে ছুটি শুরুর আগের ৩ দিন টানা এই প্রোগ্রাম সেই প্রোগ্রাম পড়ে গেলো স্কুলে। দিন-রাত কাজ করে ৩০ এপ্রিল রাতে একাই চলে আসি ঢাকায়। ফ্লাইট ২ মে। দেখতে দেখতে ২ মে চলে এলো। সব গুছানো শেষ। রাত ১২.২৫ মিনিটে ফ্লাইট। রাত ৮.৩০ এর দিকে তৈরী হয়ে নিলাম। উবারের গাড়ি ডেকে রওনা হলাম এয়ারপোর্টের দিকে। পৌছে দেখি এ কি, অসম্ভব ভীড়। নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের বুথ খুঁজে বের করে ব্যাগগুলো দিয়ে দিলাম। তারপর আসলাম ইমিগ্রেশনের জায়গায়। এক ফর্ম ফিলাপ করা নিয়ে লোকজনের দৌড়াদৌড়ি। বিশেষ করে যারা অল্পশিক্ষিত তাদের অবস্থা দেখে মায়া লাগছিলো। বেশ কয়েকজনের ফর্ম ফিলাপে সাহায্য করে লাইনে দাড়ালাম। ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ করে ভেতরে বসে আছি। সময় আর যায় না। বসে থাকতে থাকতে রাত ১১.৪০ নাগাদ ডাক এলো। আবার হাটো। আবার চেকিং, হ্যান্ড ব্যাগ স্ক্যানিং শেষে আবার বসো। বসলাম। হঠাৎ আমাদের সিট নম্বর নিয়ে ডাকাডাকি। এগুলো নাকি আবার হট সিট। আমাদের সহ আরো কিছু নির্দিষ্ট হটসিটের যাত্রীদের সবার প্রথমে প্লেনে গিয়ে বসতে বলা হলো। আমি জানালার ধারের সিটে গিয়ে বসলাম। এরপর সব যাত্রীরা এলেন। যার যার সিট দেখে বসার পর উড়াল দেবার প্রস্তুতি। কেন যেন এ সময়টা আমার খুব ভয় করে। বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে মোবাইল অফ করার জন্য। কিন্ত দুয়েকজন তখনো ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। কথার ধরণ, “হ্যালো, হ্যা প্লেনে বসছি। এখুনি বিমান উড়বো।” আজব। যাই হোক, প্লেন উড়লো। অবশেষে কুয়ালালামপুর সময় ভোর ৫ টার দিকে ঘোষণা করা হলো অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে প্লেন কুয়ালালামপুর ল্যান্ড করবে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি নিচে ঝলমলে শহর।
দেখতে দেখতেই প্লেনের চাকা মাটি স্পর্শ করলো। মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ। এখন আর ভয়ের কিছু নাই। যাক এয়ারপোর্টে ঢুকে কোনদিকে যাবো খুজে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়ালাম। তখন আমাদের পাশের একটি রুম দেখিয়ে বলা হলো অফিসে যেতে। কিন্ত অফিসে কি করবো বুঝতে পারছি না। দেখি দুজন মহিলা পুলিশ ডেস্কে কাজ করছে আর যাত্রীরা সব চেয়ারে বসে মোবাইল টিপছে। বাইরে এসে দেখি এক বিশাল সাইজের মহিলা পুলিশ অফিসার বিরাট চিল্লাচিল্লি করছে। উনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে ভেতরে কোথায় যে গেলো আর খবর নাই। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে একে ধমকাচ্ছে, তাকে ধমকাচ্ছে। আবার ভেতরে যাচ্ছে। সবাই দেখি তার ভয়ে তটস্থ। নাম দেখলাম উষা রানী। এক পর্যায়ে আমাদের ডাক এলো। আমার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে গেলাম কিন্ত ঝামেলা বাঁধলো আমার কর্তার ছবি নিয়ে। পাসপোর্টের ছবি আর ভিসার ছবি মেলে না। একটা ইয়াং গোফ ছাড়া, আরেকটা কাঁচাপাকা চুল আর গোফওয়ালা। কি বিপদ। যাই হোক বুঝানোর পর আর দুই পুলিশ সহ হেসে বিদায় দিলেন উনি। হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। তখন বাজে ৮টা। গাড়ি বাইরে অপেক্ষা করছে।
তাড়াতাড়ি একটা সিম কিনে যোগাযোগ করা হলো ড্রাইভারের সাথে। ডলার ভাঙিয়ে আমরা রওনা হয়ে গেলাম কুয়ালালামপুরে আমাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে।
হোটেলে পৌছে গেলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। কিন্ত সমস্যা হলো চেকইন হবে ১২টার পর। সারারাত না ঘুমানোয় আর না খাওয়ায় সব ক্লান্ত। লবিতে ব্যাগ রেখে বাংলা হোটেল খুঁজতে বের হলাম। আর কি আশ্চর্য আমাদের থাকার হোটেলের পেছনেই দেখি এক বাংলা হোটেল। উপরে লেখা “এখানে বাংলাদেশী খাবার পাওয়া যায়”।
দেখেই সবার দাঁত সব বের হয়ে গেলো। ঢুকে পড়লাম।
দেখি দোকানের সবাই বাঙালি। কি যে ভালো লাগলো….। জিজ্ঞেস করলাম ভাই ভাত আছে কি না বলেন। বলে আপা, সব আছে। ভাত, ডাল, মুরগী, গরু, লাল শাক, সবজি, পটলভাজি….কি নাই।
খুশিতে ভাত, ডাল, সবজি, কালাভুনা দিয়ে খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আশে পাশে হাটতে। সাথে প্ল্যান চলছে বিকেলে কোথায় যাওয়া যায়। শেষে প্ল্যান হলো টুইন টাওয়ারের কাছেই যেহেতু হোটেল তাই বিকেলে সেখানেই যাওয়া হবে। প্ল্যান আর হাটাহাটি করে হোটেলে এলাম। রুম দিয়েছে ১১ তলায়। লিফটে উঠে রওনা হলাম রুমের উদ্দেশ্যে।
চলবে…….
মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ১
৩৫টি মন্তব্য
ইঞ্জা
টুই টাওয়ারে আপনার ছেলে পার্ট টাইম জব করে। 😀
নীহারিকা
কন কি!!!! খুব ভালো। আগে জানলে দেখা কইরা আসতাম 🙂
ইঞ্জা
ইশশিরে……
মোঃ মজিবর রহমান
একটা ইয়াং গোফ ছাড়া, আরেকটা কাঁচাপাকা চুল আর গোফওয়ালা। দারুন!!!!
ভাল লাগলো আপু।
নীহারিকা
সত্যিই তাই। সেই মহিলার যা মেজাজ, এক পর্যায়ে ভয়ই পাচ্ছিলাম ওকে আটকে দেয় কি না।
লীলাবতী
মালয়েশিয়া না গেলেও আপনার লেখায়, আপনার চোখে মালয়েশিয়া দেখব এই আশা করছি।
নীহারিকা
আপা, চেষ্টা করবো ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপনের। কতটুকু পাঠযোগ্য বা উপভোগ্য হবে জানি না।
ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সেলামত পাগি।ভ্রমণ শুভ ও আনন্দঘণ হয়েছে জেনে ভাল লাগল।ইমিগ্রেসনের অফিসারদের ব্যাস্ততা এমন হওয়ার আরো একটি কারন হলো যাত্রীদের ভয়ে ভয়ে রাখা যদি কোন দুই নম্বর যাত্রী থাকে তবে সে কথার জেরে ঘাভরে যাবেন।যাক সুস্থ ভাবে ফিরে এসেছেন এই শুকরিয়া -{@
নীহারিকা
একটি ছেলেকে ওই অফিসার আলাদা দাড় করালেন। সে আবার ইংরেজি কিছুই বুঝে না। অফিসার যা জিজ্ঞেস করছে ভুল ভাল বলছে। অফিসার ইংরেজি, হিন্দি, মালে সব ভাষায় জিজ্ঞেস করছেন, লাভ হচ্ছে না। তখন উনি খুব বিরক্ত হয়ে চিৎকার করলেন কেউ ইংরেজি বাংলায় ওর ইন্টারপ্রেটর হোক। তখন আমার কর্তা গিয়ে কাজটি করলেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
সেকি রুম কতদূর? রুমের উদ্যেশ্যে রওনা দিলাম কিন্তু পৌঁছাতে আর পারছিনা।
বাংলাদেশি হোটেলে গিয়ে কী খেলেন তাতো লিখলেন না আপু। এই ব্লগে দুই টুরিস্ট আছে হেরা কোন জায়গায় গেলে পুরা লেখায় খালি খাওনের বর্ননা থাকে। আপনি দেখি কিচ্ছু পারেন না লিখতে।
চুলে কলব দিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না আপু? 😀
আপনি দেখি দিনে দিনে তরুণী হচ্ছেন, অন্যের চুল পাকে ক্যাম্নে? 🙂
অপেক্ষায় রইলাম, এইবার ভালো কইরা মালয়েশিয়া দেখুম আপনার পোস্ট দিয়া। 🙂
নীহারিকা
হ দুইজন তো কি সব খায় আর ফডু দেয়। একবার তো কাছিমের বাচ্চাওয়ালা ডিম সেদ্ধ দেইখা বমি করতে নিছিলাম। আমার লগে পাহারাদার গেছে, ফডু তুললেই ধমক। কয় জীবনে খাও নাই? কি অপমান কও।আচ্ছা আরেকখান দুইখান ফডু দিতাছি। দেখতে দেখতে হোটেল রুমে চলে যাবা 🙂
মিষ্টি জিন
আপা কাবার ? হি হি হি ।
আইট গাইট বাইন্দা বইছিলাম আপনার চোখে মালেশিয়া দেখুম, তা না
সকালের নাস্তা করেই চলবে লিখে দিলেন। 🙁
আমার দেখা মতে পৃথিবীর সব এয়ারপোটের ইমিগ্রেশন অফিসাররাই খুরুস হয়। 🙁
হনুমুনে গেলেন, কিন্তুক ফটুক তুলার সমঁয় এত দূরে ক্যালা :D) :D)
তাড়াতাড়ি লেখেন বাকিটা ।অপেক্ষায় আছি।
নীহারিকা
আপনার শুন্যর জইন্যে আর ৩ খান ফডু দিলাম। কি করুম, এই ভদ্রলোকের জ্বালায় ফডু তুলা যায় না। খালি বকে। তাই তো ভয়ে ভয়ে দূরে থেকেই ফটুক তুলছি 🙂
অপেক্ষা করেন। এর পরে আরো ফডু আসিতেছে…
মিষ্টি জিন
শোনন আমার জনও এমন ছিলেন। ছবি তুলবেন না। তুললেও এমন ভাবে যা দেখে সবাই ভাববে উনি আমার ভাসুর । :D)
তেনাগো এই বকা খাওয়া খাওয়ি মনে হয় শুধু আফনের আর আমার কফালেই জোডে। :D) :D)
নীহারিকা
উনিও হানিমুনে ভাসুর সেজেই গিয়েছেন। ছবি যা দেখবেন সব একই অবস্থা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার ভাসুর ভ্রমণের পূর্নাঙ্গ চিত্র চাই, কী কী খেলেন, কী না কী করলেন
সব আস্তে আস্তে করে আমাদের জানাবেন, পক্ক-কেশের আত্মীয়ের পিক সহ!!
নীহারিকা
চোখ রাখুন সোনেলার পর্দায়। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
চৌখ রাখতেই আছি!!
নীহারিকা
চৌখ রাইক্ষা আবার চইল্যা যায়েন না। শেষে চৌখ নিয়া বিপদে পড়ুম।
ছাইরাছ হেলাল
আছি, আছি চৌক ঠিকরাইয়া চাইয়া রইলাম,
দিয়ে দিন ভ্রমণ-কথা।
নীহারিকা
দিমু দিমু, আইজই দিমু ইনশাআল্লাহ।
ছাইরাছ হেলাল
ভাসুরেরে সাথে রাইক্কেন!!
নীহারিকা
:D) :@
নীলাঞ্জনা নীলা
যাক মালয়েশিয়া দেখা হয়ে যাবে, আপনার বর্ণনায়। শুরুটা কিন্তু দারুণ। মজা পেয়েছি বাস্তবের ছবির সাথে ভিসার ছবি। একই অবস্থা কোথায় জানি আমারও হয়েছিলো। পাসপোর্টের ছবি কড়া কড়া মুখ, বারবার আমার দিকে তাকায় আর পাসপোর্টের দিকে। তবে ঝামেলা করেনি তার কারণ আমার তীর্থর লেগেছিলো ক্ষিধা, কেঁদে উঠলো। বেঁচে গেলাম। 😀
এই আপু গিয়েই খাওন-দাওন আর তা-ও দেশী খাবার? আর আমি যে কোনো দেশে গেলে প্রথমে ওদের খাবার ট্রাই করি। পরে খুঁজি দেশের। জানেন ট্রানজিটে ছয় ঘন্টা থাকলাম কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর হোটেলে। ছেলেটা ছিলো ছোট তাই কোথাও যেতে পারিনি। 🙁
চলুক চলুক, তবে অপেক্ষা বেশি করাবেন না যেনো!
নীহারিকা
আপা আরো যে কত কাহিনি। পোস্ট বড় হয়ে যাবে বলে একটু চেপেই লিখলাম। আর খাবারের ব্যাপারে ভয়েই কিছু ট্রাই করি নাই। 🙂
পরের পর্ব শীঘ্রই আসবে। বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভ্রমণ কাহিনী অনেক বড়ো হলেও পড়তে আমার আপত্তি নেই।
লিখুন সব।
নীহারিকা
আচ্ছা 🙂
সৈয়দ আলী উল আমিন
ভাল লিখেছেন। মনে হল আমি ও তখন সেখানেই ছিলাম । 😀
নীহারিকা
অনেক ধন্যবাদ ভাই। পাশে থাকবেন। আরো পর্ব আসছে….
ইকরাম মাহমুদ
যেন আমি ঘুরছি কুয়ালালামপুরে। দেশের বাইরে দেশি খাবার….. আর কি চাই।
নীহারিকা
সেই খাবারের হোটেলের নাম “হোটেল আলিফা”। রান্না তেমন আহামরি কিছু নয় তবে বাঙালী পরিবেশ হাতের কাছে পেয়েছি এতেই বিরাট মুগ্ধ ছিলাম আমরা।
জিসান শা ইকরাম
ভ্রমন কেচ্ছা ভালই লিখেছেন।
উপস্থাপনা সুন্দর হয়েছে।
খাবারের হোটেলটি চিনি আমি।
উষা রানী আটিকে দিলেই হতো কর্তাকে 🙂 রানী বলে কথা। প্রজাদের আটকাতেই পারেন।
পরের পর্ব দিয়ে ফেলুন দ্রুত।
নীহারিকা
লেখার কথা আর কি বলবো, সে যোগ্যতা নিয়ে নিজেরই বিশেষ সন্দেহ আছে। তবে আপনাদের উৎসাহে লিখে যাচ্ছি।
খাবারের হোটেল চেনেন? দারুন তো!
হুম উষা রানী আটকে দিলে ভালোই হতো 😉
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনার সাথে সাথে মালেশিয়া ঘুরে আসার ইচ্ছা রইল। -{@
নীহারিকা
ভাইয়া ঘুরতে থাকুন। আশাকরি ভালো লাগবে।
২য় পর্বও দিয়েছি, সময় পেলে পড়বেন।
ধন্যবাদ।