বাতু কেভ থেকে বের হয়ে রওনা হলাম শহরের দিকে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করছিলাম এখানে ভালো জিনিস কোথায় পাওয়া যায়। সে বললো অরিজিনাল পাথর এবং মেটালের জিনিস কিনতে চাইলে কাছেই একটি দোকান আছে সেখানে যেতে পারি, তবে এখানে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি হবে। আর নাহলে শহরে মাইদিন শপিং মলে যেতে পারি। বললাম মাইদিন মার্কেটে গিয়েছি। তো সেই অরিজিনাল প্রোডাক্টের দোকান যেহেতু কাছেই তাহলে সেটা দেখে যেতে পারি। দাম খুব বেশি হলে নাহয় নাই কিনলাম কিছু। সিদ্ধান্ত নিয়ে ড্রাইভারকে বললাম সেখানে নিয়ে যেতে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌছে গেলাম। একতলা বিল্ডিং। প্রথম রূমে ঢুকতেই এক ছেলে হড়বড় করে বিগলিত হয়ে তার উচ্চারণে ইংরেজিতে কি যে বললো তার বেশিরভাগই বুঝলাম না। যা বুঝলাম তা হলো, সে আমাদের ওয়েলকাম জানাচ্ছে আর একটি ফিল্টারে দেখলাম ফ্রিজের ঠান্ডা পানি রাখা, পাশে মেটালের ছোট ছোট গ্লাস, সেখান থেকে পানি খাওয়ালো। একটু হকচকিয়ে গেলাম যে সেধে পানি খাওয়াচ্ছে কেন? তবে বাতু কেভ ঘুরে যা তেষ্টা ছিলো পানিটা খেয়ে বেশ ভালো লাগলো। জানালো যে গ্লাসে খাওয়ানো হয়েছে সে গ্লাসে ঠান্ডা পানি/গরম পানি রাখলে তার তাপমাত্রা নাকি ১ ঘন্টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে। এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো পাশের ঘরে। সেখানে শো-কেসে বিভিন্ন পাথর সাজানো, অনেকটা জাদুঘরের মত। একজন পাশে পাশে এসব কি তা বলে যাচ্ছেন। ভাবছি এ কেমন দোকান রে বাবা? দেখলাম কিছু পাথর বসানো ঘড়ি। কিন্ত ওদের দোকানে শুধু কালো পাথর আর ছোট সাদা ক্রিস্টাল দিয়ে ডিজাইন করা ঘড়ি। আমি কালো পাথরটার নাম তেমন মন দিয়ে শুনলামও না। কারণ ঘড়িগুলোর যা দাম দেখলাম তাতে কিনবো না সিওর। এই ঘরে তেমন কিছু আর নেই। আমরা ঘড়ি কিনবো না বলার পর সিন্দুকের দরজার মত পাশের এক দরজা খুলে দেয়া হলো আরো ভেতরের ঘরে যাবার জন্য। আমার একটু ভয় ভয় করছিলো, এ কোথায় ঢুকছি ভেবে। যাক দরজা মেলে এক সেলসগার্ল কি সুন্দর হাসি দিয়ে ওয়েলকাম জানালো। ভেতরে ঢুকলাম। দেখি বিশাল শো-রুম। দেয়াল এবং ঘরের মাঝে রাখা অনেকগুলো শো-কেসে সেই কালো পাথরের অসংখ্য জুয়েলরি এবং সেই স্পেশাল ধাতুর তৈরী বিভিন্ন ডিজাইনের গ্লাস, জগ, সুরাপাত্র, বাটি এসব থরে থরে সাজানো। একপাশ থেকে দেখা শুরু করলাম। গ্লাস, বাটি, জগ এসব দেখে দেখে গেলাম গয়নাগাটির সেকশনে। সবকিছুই সেই কালো পাথর আর সাদা ধাতুর গয়না। ছোট ছোট। কানের দুল, আংটি, চুড়ি, ব্রেসলেট সবই সিম্পল ডিজাইনের। কোনোটাতে আবার ক্রিস্টাল বসানো। কিন্ত দাম খুব উঁচু মনে হলো। সেলসগার্লকে জিজ্ঞেস করতে বললো এগুলো সব হোয়াইট গোল্ডের উপর সেই পাথর বসানো। তাই এত দাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম কর্তা পাশে নেই। দেখি সে ছেলেদের আংটির সেকশনে আংটি দেখছে। তার আবার পাথরের আংটির উপর বিশেষ দুর্বলতা আছে। সে তার জন্য একটি আংটি পছন্দ করে পে করতে চলে গেলো। আমি ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে একটি লকেট হাতে নিয়ে দেখছিলাম। কর্তা কাউন্টার থেকে দেখে বলে, কি পছন্দ হয়েছে? পছন্দ হলে আনো পে করে দিচ্ছি। আমি আর কই যাই…..খুশিতে দাঁত বের করে চলে এলাম কাউন্টারে। কর্তা দাম দেখে হেসে বলে, ভালোই খসাইলা। আমি চুপ। কিছু না বলে বের হয়ে আসলাম। রওনা হলাম KL টাওয়ারের উদ্দেশ্যে। গিয়ে টিকিট দেখালে লিফটম্যান লিফটের গোড়ায় দাড়াতে বললো। আরো কিছু পর্যটক জড়ো হলে একসাথে নিয়ে রওনা হলো উপরে। এত দ্রুত উঠছে যে মনিটরে দেখাচ্ছে এই ১৫০ মিটার তার পরপরই ২০০ মিটার তারপরই ৩০০ মিটার। কিন্ত ফাইনালি দেখতে মনে নেই যে কত মিটার উঠলাম। লিফট থেকে বের হয়ে সামনে দেখি অপরূপ দৃশ্য। পুরো শহর নীচে আর আমি উপরে। টাওয়ারের উপরের গোল অংশের বাইরের দিকটায় কাঁচ লাগানো। মাঝে মাঝে দূরবীন ও সেট করা আছে। আর ভেতর সাইডের দেয়াল জুড়ে ছোট ছোট শো-পিসের দোকান, ঘড়ির দোকান সাজানো। সেদিকে নজর না দিয়ে বাইরের দিকটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। কাঁচের মধ্যে দিয়ে বাহির দেখছি। ওইযে টুইন টাওয়ার দেখা যাচ্ছে। আবার আরেকদিকে টাইম স্কয়ার। কি যে অপুর্ব দেখতে। দূরবীনের ভেতর দিয়ে দেখতে চাইলাম। ধুর, এর থেকে খালি চোখেই অনেক ভালো দেখা যায়। দেখছি আর ছবি তুলছি।
নিজের কাছেই যেন অবিশ্বাস্য লাগছে পুরো ব্যাপারটা। যাহোক, সেখানে আধঘণ্টা মত থেকে নেমে এলাম নিচে। গাড়িতে উঠে কোথায় যাওয়া যায় জিজ্ঞেস করতে ড্রাইভার/গাইড বললেন সুলতান’স প্যালেসে যাওয়া যায়। রওনা হয়ে গেলাম। ওদের দেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও একজন রাজা আছেন। তো আমরা চললাম সেই রাজবাড়ি দেখতে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই অনেক আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে গাড়ি এসে থামলো সেই রাজবাড়ির বাইরের উঠোনে। কি বিশাল জায়গা। গাড়ি থেকেই চোখে পড়লো বিশাল গেটটি। সামনে বিরাট ফাঁকা অংশে বিভিন্ন দেশের প্রচুর পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে-তকতকে। এদিকে খেয়াল করে দেখি কর্তা আবার হাওয়া। খুঁজে দেখি সে আপন মনে ছবি তুলছে। আমিও একা একা এদিক সেদিক ঘুরে কিছু ছবি তুললাম।
গেটের ভেতর দিয়ে দেখা গেলো রাজপ্রাসাদের কিছু অংশ। যাহোক ঘুরেফিরে গাড়িতে এসে বসলাম কারণ তখন ভর দুপুর আর প্রচুর রোদ। অনেক ক্ষুধাও লেগেছে। ফিরে এলাম হোটেলে। প্ল্যান, বিকেলে বের হবো নতুন কোনো স্পটের উদ্দেশ্যে।
চলবে…..
মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ৫/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৫
মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ৪/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৪
মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ৩/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৩
মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ২/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ২
মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ১/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ১
২৬টি মন্তব্য
মিষ্টি জিন
খুব সুন্দর বর্ননা আপু। তেনাকে খসাতে পেরেছেন । গুড 😀
নীহারিকা
মনে হয় আমাকে দেখে মায়া লেগেছিলো 😀
মিষ্টি জিন
হা হা হা আহারে :p
মৌনতা রিতু
হোয়াইট গোল্ড আমার মোটামুটি লাগে। তবে এতে কালো পাথর বেশ মানাইছে নিশ্চয়ই। দাঁত ক্যালাতে ক্যালাতে কাউন্টারে গেলেন! এই অংশটুকু পড়ে মজা পেয়েছি বেশ। যাইহোক, ভালোই বর্ণনা চলছে চলুক। রাজপ্রাসাদের ভিতরে ঢুকতে দেয় না?
নীহারিকা
এই ভবদ্রলোকের ট্যাক থেকে আমার জন্য টাকা খসানো বিরাট ব্যাপার। তাইতো দাঁত সব বের হয়ে গিয়েছিলো। সেটার ছবি দেখাবো একসময়, ভালোই লেগেছে আমার। আর রাজপ্রাসাদের ভেতর ঢুকতে দেয় না কারণ রাজা স্বয়ং সেখানে থাকেন যে। পর্যটকদের অনুমতি গেইটের বাইরে ঘুরাঘুরি পর্যন্তই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপা।
জিসান শা ইকরাম
KL টাওয়ারে এখনো ওঠা হয়নি আমার,
এর একমাত্র কারন হচ্ছে উচ্চতা ভীতি আছে আমার।
আপনার মাধ্যমে দেখলাম টাওয়ারে উঠে কেমন দেখায় কুয়ালালামপুর।
ভ্রমন কাহিনী ভাল হচ্ছে।
শুভ কামনা।
নীহারিকা
KL টাওয়ারে উঠে একদমই ভয় লাগে না। উঁচু বিল্ডিং থেকে বাইরে তাকালে যেমন তেমনই লাগে। তবে অনেকই উঁচু। আপনি পরেরবার গিয়ে দেখবেন, ভালো লাগবে আশাকরি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা বলো কি তোমার উচ্চতাভীতি আছে!!! 😮
আমার নানা হয়ে এই অবস্থা? ^:^
মেহেরী তাজ
আগের পর্ব গুলো পড়িনি তো কি হইছে? এটা পড়ছি। আগের গুলোও পড়ে ফেলবো।
আপু এই রাজা-রানী কি সেই রাজা- রানী যার ছবি আমরা সৌভাগ্য বসত আগেই দেখে ফেলেছি?
নীহারিকা
আগের পর্বগুলো সময় পেলে পড়ো, নীচে লিংক দিয়ে দিচ্ছি। আর “রাজা রানীর ছবি” কোথায় দেখেছো ঠিক বুঝতে পারলাম না এই অংশটা।
ছাইরাছ হেলাল
আমি ভাবছি অন্য কথা,
যে ভাবে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাতে তো শেষ করে ফেললেন বলে!!
এরপর কী পড়ব!
আপনার দেখা অনেক জায়গায় দেখিনি, জেনে নিলাম এগুলো পড়ে।
নীহারিকা
বলার আগেই বুঝে ফেললে খেলবো না কিন্ত। যে জায়গাগুলো এখনো দেখা হয়নি, পরেরবার দেখার চেষ্টা করবেন। আশাকরি ভালো লাগবে।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্য-ই আল্লাহর ইচ্ছেয় আবার গেলে আরও অনেক কিছু দেখব।
আমরা কিন্তু আমরাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সাবলিল ভাষায় প্রকাশ করছেন ভ্রমণ কাহিনী যেনো নিজেই চলে গেছি মালেতে। -{@
নীহারিকা
ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
দাদী, দাসারে কোপালেন তাহলে?
খুব ভালো একটা কাজ করেছেন, বাম্বুওয়ালারে দেখলেই বুঝা উনি একটু চিপা টাইপের। :p
দাদী খুব ভালো এগুচ্ছে লেখা, লিখে যান।
নীহারিকা
উনার মনে হয় জীবনে প্রথম মায়া লেগেছে। যাই হোক, কিছু তো দিয়েছে এই বেশি 🙂 আর লিখে যাচ্ছি। পাশে থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
আপনাকে ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে লিখছেন।
লীলাবতী
আপনার মালয়েশিয়া ভ্রমনের সব পর্বই পড়েছি আপু। আপনি অনেক ভাগ্যবতী, কত দর্শনীয় স্থান দেখে ফেলেছেন। আমি কবে যে দেখব এসব 🙁 কখনো মালয়েশিয়া গেলে আপনার এই পোষ্ট সাথে নিয়ে যাবো 🙂
নীহারিকা
কখনো মালয়েশিয়া গেলে এসব স্থান দেখতে ভুলবেন না যেনো। সব পর্ব পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মায়াবতী
দুলাভাই তো দারুন ভালবাসে আপনাকে আপা আপনাকে… মাশাল্লাহ
নীহারিকা
জি আপা, উনি ভালোবাসার সাগর :D)
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আপনি শেষ পর্যন্ত ভালোই খসালেন দুলাভাইকে \|/
তবে কতো জায়গা যে দেখা হয়ে গেলো আপনার সৌজন্যে, এজন্য আপনাকে এই ফুল দিলাম। -{@
নীহারিকা
মাঝে মধ্যে গিফট করতে হয় বুঝালাম। অবশ্য বুঝেছে বলে মনে হয় না দিদি।
সুন্দর ফুলের জন্য ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
“নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও
বাকীর খাতায় শূন্য থাক
কাজ কী সখী দূরের বাদ্যে
মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক!” 🙂
নীহারিকা
সেটাই 🙂