
মিতা বন্যা~
কেমন আছো আজকাল? জানি খুব একটা ভালো হয়তো নেই । সময়টাই যে
যাচ্ছেনা ভালো!
বলেছিলে কিছু যেন লিখি তোমায়, বেশ লম্বা করে।
কি লিখি বলোতো?
একটা কবিতা লিখতে বলেছো।
বহুবার চেষ্টা করেও একটা কবিতা দাঁড় করাতে পারিনি জানো।
কবিতা -গল্প, উপন্যাস চাইলেই কি লেখা যায়?
কতগুলো শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে ,কুড়ে খাচ্ছে মগজ,
তবুও কবিতা যেনো হচ্ছেনা কিছুতেই।
স্থবির সময়কে অতিক্রম করছি।
মৃত্যুর মুখোমুখি যেনো বসে আছি।
চারদিকে সব থমকে গেছে, গৃহবন্দী জীবনে কবিতারাও যেনো নিস্তব্ধ!
করোনার কালচক্রে- ঘুর্ণায়মান পৃথিবীর তাবৎ সুখ কেড়ে নিয়েছে।
অস্ত্রহীন যুদ্ধে নিরীহ মানুষ বাঁচার জন্য ঘরে থাকবে নাকি ক্ষুধার জন্য মড়বে?
নব্যযুগের বেহুলা হৃদয়ে চিতা জ্বালিয়ে বসে আছে চার দেয়ালের ঘরে।
তোমার মনে আছে মিতা! আমাদের দেখা হবার কথা ছিলো!
আর বুঝি দেখা হবে?
অসীম রহস্যের ওপাড়ে আমি নিজেকে দেখি প্রতিটি মূহুর্তে!
আমাদের শহর এখন মৃত্যুপুরী।
একটি ভাইরাসের কারনে নাকি অসাবধানতা আর নির্বুদ্ধিতার কারনে?
মানুষগুলো যেনো তামাশায় মত্ত, যে যার মতো।
দেখে খুব হাসি পায়।
তবুও বিনোদনের খোরাক পাচ্ছি নতুন নতুন এই যা।মানুষের ভেতরের অনুভবকে এখন খুঁজে পাইনা আর। হৃদয়ের ঐশ্বর্যের খবর পাইনি কারো। নদী যেমন তার নাব্যতা হারিয়ে শূন্য এখন! মানুষও তেমনিভাবে হয়েছে মনুসত্বহীণ।
সমাজ সংসারে নাকি তিন শ্রেণীর উন্মাদ বাসকরে…
ভাবোন্মাদ, দিব্যোন্মাদ এবং বিদ্যোন্মাদ।
করোনা পরিস্থিতীতে অনেককে দেখে উন্মাদ মনে হলেও, নিজেকে বর্তমানে উন্মাদ উপলব্ধি করছি।দীর্ঘদিন গৃহবন্দী হয়ে কেমন
যেন, বুঝাতে পারবোনা।মানুষের জন্য কিছু করতে না পারার যন্ত্রনা যে কি তুমি জানো।
আমার মত মধ্যবিত্তের সে সাধ্যি কই?
প্রতিটি মূহুর্তে দম বন্ধ হয়ে আসে দুশ্চিন্তা আর ভয়! কোথায় যাচ্ছি বলতে পারো?
তোমার চাই একটি কবিতা ; আমার চাই একজন কবি!
যিনি সত্যিকারের কবি তার কন্ঠে থাকবে এমন বারুদ যা দিয়ে আমরা একটি সোনালী সকালের দেখা পাবো।
কবিতা লেখা হলোনা। এ তোমাকে লেখা প্রথম চিঠি। হয়তো আর লেখা হবেনা কোনো চিঠি সফেদ কোনো কাগজে।
এ আমার শেষ চিঠি দূঃসহ সময়ে।……
যদি এই ক্রান্তিকাল কেটে যায় মহাধিরাজ মহান স্রষ্টার মহানুভবতার অপার কৃপায়!
আবার আমরা আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে লিখবো কোনো নতুন দিনের নতুন কোনো কাব্য।
আমাদের দেখা হবে নতুন কোনো ভোরের আলোয়।
এসো তবে আমরা প্রার্থনায় করি আগামীদিনের তপস্যা
ভালো থেকো মিতা বন্যা….
অনেক ভালো থেকো।
তোমার মিতা শিরীনঃ
২৯টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
“সমাজ সংসারে নাকি তিন শ্রেণীর উন্মাদ বাসকরে…
ভাবোন্মাদ, দিব্যোন্মাদ এবং বিদ্যোন্মাদ।”
সুন্দর একটা চিঠির ছলে
সমাজকে আনলেন তুলে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
শিরিন হক
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো লেগেছে আপু। সমাজে তিন ধরনের উন্মাদ বাস করে ভালো বলেছেন। মধ্যবিত্তদের এই এক সমস্যা তাদের সাধ আছে, সাধ্য নেই দেবার। করোনার মূহূর্ত গুলো চিঠির মাধ্যমে সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ রাত্রি
শিরিন হক
ধন্যবাদ আপনাকে।
বন্যা লিপি
আসছি তোমার জবাব নিয়ে, অপেক্ষা করো মিতা। তোমাকে ভালবাসা।
শিরিন হক
অপেক্ষায় রইলাম নিশ্চই জবাব দেবে তুমি।
বন্যা লিপি
অপেক্ষা শেষ। দেখো হাজির হয়েছি জবাব নিয়ে। ভালো থেকো সে কটা দিন! যে কটা দিন উনুনের ওপর জ্বলছে গোটা সংসার চিত্র!
শিরিন হক
ধন্যবাদ তোমাকে তোমার চিঠি পেয়ে বাধিত হলাম। এবং খুশি হলাম
জিসান শা ইকরাম
করোনা বন্দী সময়ে চিঠি লিখে কাছের বন্ধুকে মনের অভিব্যাক্তি জানানো- বেশ ভালো একটি বুদ্ধি।
সামান্য একটি ভাইরাসের কাছে আমরা কত অসহায়। অসহায় অবস্থাটা ভালোই তুলে এনেছেন চিঠিতে।
কবিতার জবাবে কবিতা, উপরে বন্যার মন্তব্যে দেখলাম, চিঠির জবাবে চিঠি দেয়া হবে। চালু থাকুক দু বন্ধুর এই আদান প্রদান।
শুভ কামনা।
শিরিন হক
আমরা চেষ্টা করবো আপনাদের অনুপ্রেরণা যদি পাই। ধন্যবাদ জনাব
মাছুম হাবিবী
আগে আপনার চিঠির উত্তর পড়ে আপনারটা পড়লাম। বন্যা আপুও খুব সুন্দর লিখেছেন।
সত্যি দুজনার চিঠি ই অসাধারণ
শিরিন হক
ধন্যবাদ
সাবিনা ইয়াসমিন
স্থবির সময়ে কিছুই করা যায় না আসলে। স্মৃতিচারণ করা যায়, তাও সৃজনশীল হয়ে লেখায় ধরা দিতে চায় না। মনের বর্তমান পরিস্থিতির টানপোড়নের লেখা চিঠিটা পড়ে ভালো লাগলো। উপরে এই চিঠির উত্তরটাও পড়েছি। সব মিলিয়ে যুগল চিঠি সার্থক হয়েছে।
হয়তো কর্মব্যস্ততা আপনাকে খুব বেশি সময় দিচ্ছে না। তবুও বলবো নিজের লেখার পাশাপাশি অন্যদের পোস্টেও যাবেন। বিশেষ করে যারা আপনার লেখা পড়ে মতামত দিয়ে যায়, তাদের পোস্টে সময় দেয়া খুব জরুরী। ব্লগে এভাবেই আন্তরিকতা ধরে রাখতে হয়। নয়তো সুহৃদৃতা আগাবে কেমন করে!
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
শিরিন হক
মন্তব্যের জন্য অনুসুচনা হয়। সত্যি এতটা অলস এবং অস্হির সময় যাচ্ছে অন্য লেখায় মনোযোগ দিতে পারছিনা। অপরাধী হই নিজের কাছে নিজে। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই যারা আমার লেখায় মন্তব্যই করে যান কোনো প্রাপ্তির আশা না করে। তাদের মহানুভবতা আমাকে উৎসাহ দিলেও আমি কৃপণতা দেখাই অন্যের পোষ্টে।
তবে আশা করি শিঘ্রই সবকিছুর অবসান হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে উৎসাহ এবং পরামর্শ দেবার জন্য। আপনার উদারতায় ধন্য আমি। শুভ কামনা
ফয়জুল মহী
ভালো লাগলো ।
বাস্তবতার নিখুঁত প্রকাশ।
শিরিন হক
ধন্যবাদ
সুরাইয়া পারভীন
বেস্ট ফ্রেন্ড কে লেখা দুর্দান্ত চিঠি
এই করোনা কালে বদ্ধ ঘরে
আবদ্ধ থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠেছে মন
চারিদিকে আতঙ্ক কি জানি কখন চলে যেতে হয় সময়ের সাথে ধেয়ে আসা মরণঘাতী মহামারীর মরণ ছোবলে। এমন মুহূর্তে প্রাণের বন্ধুকেই তো মনে পড়বে।
শিরিন হক
শুভেচ্ছা আপনাকে
সুরাইয়া নার্গিস
সত্যি চমৎকার একটা চিঠি পড়লাম।
ভালো থাকবেন দুজনেই।
শিরিন হক
আপনিও ভালো থাকবেন
ছাইরাছ হেলাল
চিঠি লিখি লিখি করেও লেখা হয়নি, হয়নি কবিতা লেখা।
লেখা না হওয়াতেই যা অবস্থা, লিখে ফেললে কী হতো কে জানে।
চিঠি চালাচালি দেখতে চাই।
শিরিন হক
চিঠি লিখবো আবার যদি বেঁচে যাই।
কামাল উদ্দিন
যদি এই ক্রান্তিকাল কেটে যায় মহাধিরাজ মহান স্রষ্টার মহানুভবতার অপার কৃপায়!
আবার আমরা আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে লিখবো কোনো নতুন দিনের নতুন কোনো কাব্য।
……….সেই আসার কাব্য, স্বপ্ন কাব্য লিখার দিন গুলো ফিরে আসুক এই কামনায় শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম আপু।
শিরিন হক
শুভেচ্ছা।নিশ্চই সব বিপদ কেটে যাবে।
কামাল উদ্দিন
খুব দ্রুত কেটে যাক
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রিয় মিতা কে নিয়ে এতো সুন্দর সাবলীল ভাষায় লেখা চিঠি।
অনেক ভালো লাগলো দিদি।
বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।
তৌহিদ
বন্ধুর কাছে এরকম আবেগ মেশানো পত্র দিতে সবাই পারেনা। আপনি ভাগবান সেইসাথে আপনার বন্ধুও। ব্লগে এরকম পোষ্ট একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি করে।
আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শিরিন হক
ধন্যবাদ আপনাকেও
হালিম নজরুল
চিঠিতে সমাজের চিত্র