বন্ধ দরোজার ওপারে

রুম্পা রুমানা ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৭:০৪অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

গির্জার দিকে মুখ করা বারান্দায় বসে আছি। বেশ ক’বছর থেকে ইনসমোনিয়া চলছে। বিষণ্নতাও। মধ্য বয়সে এসে সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা। হচ্ছে না। কোথায় যেন তাল কেটে গেছে।
সংসারে প্রবল হাহাকার। সন্তান-সন্ততির।সব অপূর্ণতা সওয়া যায় না।
কেন যায় না!উত্তর খুঁজেছি বহুদিন।মেলে নি।
আধাঁর কাটছে ধীরে ধীরে।মোহ যেমন কেটে যায়। জামানের সাথে সংসার জীবনের সতেরো বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।প্রেম কি আসলেই ধীরে মুছে যায় !এক বিছানায় ঘুমিয়েও আমরা আজকাল কতো কতো দূরের !
.
কালো বিড়ালকে অলুক্ষণে লাগে।মনে হয় মৃতের আত্মা শরীরে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটা কালো বিড়াল বসে আছে।চোখ দুটো থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে।কোন মৃত আত্মা কি ভর করেছে!
চোখের সামনেই যেন বদলে যাচ্ছে বিড়ালের রঙ ! বড় হয়ে উঠছে ! এক সময় পুরো সাদা হয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। এ তো বিড়াল নয় ! নারীর মুখ , চোখ সমেত একজন।এগিয়ে আসছে এক পা-দু পা ! চিৎকার দিলাম।সাহায্য পেলাম না। ঠোঁট ভেদ করে দাঁত বের হয়ে আছে। কি কালো ! ঝিঙের বিচি যেমন।এমন দাঁত কখনোই দেখিনি। জীবিত থাকতে কি এই আত্মা অন্যের অনিষ্টের ভেতর যাপন করে গেছে জীবন ! কি ভয়ানক দেখাচ্ছে! কতো জনে আঘাত দিয়েছে কে জানে! অনেকখানি সামনে এসে ঘুরে দাঁড়ালো। প্রাণপণে চেয়ার ছেড়ে উঠতে চাচ্ছি।অথচ আটকে আছি।কোনভাবেই সরতে পারছি না।হঠাৎ হুমড়ি খেলে বারান্দার একদম কাছে এসে গেলো। গ্রীল ভেঙে আমাকে টেনে নেয়ার চেষ্টায় হাত বাড়িয়েছে। হাত এসে গলায় আটকেছে।কথা বলতে পারছি না। ছুটতে চাইছি।পারছি না।
।সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হাতে কামড় বসালাম। কিছুটা হালকা হতেই চোখ বন্ধ করে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম হাত।শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুততর হচ্ছে। জামান কাঁধে ঝাঁকি দিলো-
-তোমার অসুখটা বেড়ে যাচ্ছে।
ভোর রাতে আবার সেই দুঃস্বপ্ন হানা দিয়েছিলো।
.
বৃদ্ধ বাড়িটাকে ঘিরে মায়া জন্মে গেছে। গত সতেরো বছরে সতেরো দিনও বাড়ির বাইরে থাকি নি। কিছু কিছু জায়গার পলেস্তরা খসে গেছে বটে তবে বসবাসের উপযোগী।সবচে’ ভালো লাগে পরিবেশ একদম কোলাহলমুক্ত। শহর থেকে অনেকখানি বাইরে বলে যান্ত্রিকতাও নেই ।

শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতায় বারান্দায় বসি। এক সময় দু’জন বসে পূর্ণিমা দেখেছি এই বারান্দায়। গল্পে গল্পে রাত গভীর করেছি। এখন আমি একাই চাঁদটার সাথে কথা বলি। জামান ক্লান্ত মন -দেহ নিয়ে ঘুমিয়ে যায় ভেতরে।
অসুখটা বেড়ে গেছে। সংসারের কিছুতেই মন নেই। ঔষুধ নিতে অনীহা জন্মেছে।
.

জামানকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে ক’দিন ধরে। ওর পরিবর্তনটা উপভোগ করছি। প্রিয় পারফিউমের
ঘ্রাণ মেখে সকালে বের হয়। ফিরে আসে রাতে। বাড়িটাও কেমন যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে ! আমারও নতুন করে মায়া বাড়ছে যেন সংসার , বাড়ি ঘিরে! মন হালকা লাগছে ।
মধ্য বয়সে এসে ওর প্রেমে পড়ছি।
– কিছু কথা বলতে চাইছিলাম।
– বলো ।
– অনেক দিন তো হলো সংসার জীবনের। হাহাকার বেড়েই চলেছে । বংশের পরবর্তী উত্তরাধিকার না থাকলে….
– অনুমতি চাইছো ?
আর কথা এগোয় নি। জামান চলে যাওয়ার পর ঘুরে ঘুরে বাড়িটাকে দেখলাম । নতুন কারও ছোঁয়া পেলে জড় বস্তুও কি মুছে দেয় পুরোনো স্মৃতি ?

বের হয়ে এলাম। বাড়ির দরোজা বন্ধ করেছি , কিন্তু মনের ? প্রশ্নটা নিজের কাছে।

৫৯৬জন ৫৯৮জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ