গির্জার দিকে মুখ করা বারান্দায় বসে আছি। বেশ ক’বছর থেকে ইনসমোনিয়া চলছে। বিষণ্নতাও। মধ্য বয়সে এসে সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা। হচ্ছে না। কোথায় যেন তাল কেটে গেছে।
সংসারে প্রবল হাহাকার। সন্তান-সন্ততির।সব অপূর্ণতা সওয়া যায় না।
কেন যায় না!উত্তর খুঁজেছি বহুদিন।মেলে নি।
আধাঁর কাটছে ধীরে ধীরে।মোহ যেমন কেটে যায়। জামানের সাথে সংসার জীবনের সতেরো বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।প্রেম কি আসলেই ধীরে মুছে যায় !এক বিছানায় ঘুমিয়েও আমরা আজকাল কতো কতো দূরের !
.
কালো বিড়ালকে অলুক্ষণে লাগে।মনে হয় মৃতের আত্মা শরীরে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটা কালো বিড়াল বসে আছে।চোখ দুটো থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে।কোন মৃত আত্মা কি ভর করেছে!
চোখের সামনেই যেন বদলে যাচ্ছে বিড়ালের রঙ ! বড় হয়ে উঠছে ! এক সময় পুরো সাদা হয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। এ তো বিড়াল নয় ! নারীর মুখ , চোখ সমেত একজন।এগিয়ে আসছে এক পা-দু পা ! চিৎকার দিলাম।সাহায্য পেলাম না। ঠোঁট ভেদ করে দাঁত বের হয়ে আছে। কি কালো ! ঝিঙের বিচি যেমন।এমন দাঁত কখনোই দেখিনি। জীবিত থাকতে কি এই আত্মা অন্যের অনিষ্টের ভেতর যাপন করে গেছে জীবন ! কি ভয়ানক দেখাচ্ছে! কতো জনে আঘাত দিয়েছে কে জানে! অনেকখানি সামনে এসে ঘুরে দাঁড়ালো। প্রাণপণে চেয়ার ছেড়ে উঠতে চাচ্ছি।অথচ আটকে আছি।কোনভাবেই সরতে পারছি না।হঠাৎ হুমড়ি খেলে বারান্দার একদম কাছে এসে গেলো। গ্রীল ভেঙে আমাকে টেনে নেয়ার চেষ্টায় হাত বাড়িয়েছে। হাত এসে গলায় আটকেছে।কথা বলতে পারছি না। ছুটতে চাইছি।পারছি না।
।সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হাতে কামড় বসালাম। কিছুটা হালকা হতেই চোখ বন্ধ করে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম হাত।শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুততর হচ্ছে। জামান কাঁধে ঝাঁকি দিলো-
-তোমার অসুখটা বেড়ে যাচ্ছে।
ভোর রাতে আবার সেই দুঃস্বপ্ন হানা দিয়েছিলো।
.
বৃদ্ধ বাড়িটাকে ঘিরে মায়া জন্মে গেছে। গত সতেরো বছরে সতেরো দিনও বাড়ির বাইরে থাকি নি। কিছু কিছু জায়গার পলেস্তরা খসে গেছে বটে তবে বসবাসের উপযোগী।সবচে’ ভালো লাগে পরিবেশ একদম কোলাহলমুক্ত। শহর থেকে অনেকখানি বাইরে বলে যান্ত্রিকতাও নেই ।
শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতায় বারান্দায় বসি। এক সময় দু’জন বসে পূর্ণিমা দেখেছি এই বারান্দায়। গল্পে গল্পে রাত গভীর করেছি। এখন আমি একাই চাঁদটার সাথে কথা বলি। জামান ক্লান্ত মন -দেহ নিয়ে ঘুমিয়ে যায় ভেতরে।
অসুখটা বেড়ে গেছে। সংসারের কিছুতেই মন নেই। ঔষুধ নিতে অনীহা জন্মেছে।
.
জামানকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে ক’দিন ধরে। ওর পরিবর্তনটা উপভোগ করছি। প্রিয় পারফিউমের
ঘ্রাণ মেখে সকালে বের হয়। ফিরে আসে রাতে। বাড়িটাও কেমন যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে ! আমারও নতুন করে মায়া বাড়ছে যেন সংসার , বাড়ি ঘিরে! মন হালকা লাগছে ।
মধ্য বয়সে এসে ওর প্রেমে পড়ছি।
– কিছু কথা বলতে চাইছিলাম।
– বলো ।
– অনেক দিন তো হলো সংসার জীবনের। হাহাকার বেড়েই চলেছে । বংশের পরবর্তী উত্তরাধিকার না থাকলে….
– অনুমতি চাইছো ?
আর কথা এগোয় নি। জামান চলে যাওয়ার পর ঘুরে ঘুরে বাড়িটাকে দেখলাম । নতুন কারও ছোঁয়া পেলে জড় বস্তুও কি মুছে দেয় পুরোনো স্মৃতি ?
বের হয়ে এলাম। বাড়ির দরোজা বন্ধ করেছি , কিন্তু মনের ? প্রশ্নটা নিজের কাছে।
২৩টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
ও কি চলে গেলো? মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে। 🙁
রুম্পা রুমানা
মেয়েটা চলে গেলো। অভিমান জমলে চলে যায় কেউ কেউ।
দীপংকর চন্দ
বিষণ্ণ শব্দাবলী!!!
কতো ধরনের বেদনা মানুষের!!!
শুভকামনা জানবেন।
ভালো থাকবেন। সবসময়।
রুম্পা রুমানা
শুভ কামনা আপনার জন্যও । ধন্যবাদ ।
ব্লগার সজীব
সংসার এক জটিল জগত। কত ধরনের যে অপুর্নতা এক জীবনে! আপু আপনার লেখা মিস করি।
রুম্পা রুমানা
এখন থেকে নিয়মিত হয়ে উঠবো ভাই। আমিও মিস করি সবার লেখা।
ব্লগার সজীব
আপনি ভাল লেখেন, লেখায় পরিপক্কতার ছাপ। শিখতে চাই কিভাবে লিখতে হয়, না আসলে শিখব কিভাবে?
নিয়মিত হবে শুনেই আনন্দে লাফাচ্ছি 🙂 \|/
রুম্পা রুমানা
আপনার লেখা পড়ে মন ভালো হয় ভাই। মজা পাই। আসবো নিয়মিতই।
নীলাঞ্জনা নীলা
গল্পটাকে গল্প লাগেনা। এমন কাহিনী আমাদের চারপাশেই কতো কতো যে আছে।
সংসার মানে সঙ সেজে সার(শূণ্য) পাওয়া।
বহুদিন পর এলেন এতো সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। নিয়মিত চাই, পাবো কি? 🙂
রুম্পা রুমানা
প্রিয় আপু , নিয়মিত হয়ে উঠবো এবার। সোনেলা ভালোবাসার উঠোন। ভালোবাসার মানুষদের উঠোন। দূরে যাচ্ছি না আর। কাছেই পাবেন। ভালো থাকবেন কিন্তু।
নীলাঞ্জনা নীলা
খুব ভালো লাগলো শুনে যে দূরে যাবেন না আর।
নতূন লেখা আরোও চাই যে, কবে দেবেন?
ভালো তো থাকবোই, আপনারা সবাই চলে এসেছেন। 🙂
ভালো থাকুন আপনিও।
রুম্পা রুমানা
নীলাপু , লেখা দিবো শীঘ্রই । আপনাদেরটাও পড়ি । না পড়লে আন্তরিকতা বাড়বে কি করে !
ইঞ্জা
আহ পুরুষ, পুরুষ হয়েছো মানুষ হওনি
সে চলে গেল অনেক অভিমান ভরা মন নিয়ে
তুমি ফিরে দেখনি, তুমি ফিরে দেখনি।।
অসাধারণ কাব্যিক লেখা, মন কাঁদালেন আপু।
রুম্পা রুমানা
এভাবে অনেকেই চলে যায়। আমরা বুঝি না কেবল। ধন্যবাদ রইলো। ভালো থাকুন ।লিখুন।
ইঞ্জা
ঠিক তাই আপু, ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক দিন পর লিখলেন।
অভিমান নিয়ে চলে গেলেও আমাদের মনে স্থান করে নিয়েছে,
রুম্পা রুমানা
ফেসবুকে একটু সময়টা বেশি দেয়া হচ্ছিলো। লিখতেও মন বসছিলো না । এই আরকি। এখন থেকে লিখবো। ধন্যবাদ পাঠ করলেন বলে।
আবু খায়ের আনিছ
কিন্তু মনের?
এটা কি বন্ধ করা যায়? শত চেষ্টা করেও বোধ করি যায় না।
রুম্পা রুমানা
আসলেই যায় না । ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
জটিল কাহিনী।এক পৌঢ় ব্যাক্তির আশা নিরাশার প্রতিচ্ছবি।সংসারে সন্তানাদি না থাকলে ঘর শুণ্য মন শুণ্য।সুন্দর বর্ননা। -{@
রুম্পা রুমানা
অসংখ্য ধন্যবাদ । জীবন কতো যে রঙ
ধারণ করে । বুঝা মুশকিল।
মৌনতা রিতু
ফাঁকা কি হয় জীবন! সেই ফাঁকা যায়গায় বসবাস করে হাহাকার। অভিমান সব জমা হয় নিজের সাথে।
যে চলে যায় সে তো যায়ই। মনের দরজা এক বার বন্ধ হলে তা খোলা মুশকিল।
দারুন সব অভিমানের শব্দমালা উঠে এসেছে।
ভাল লাগা রইল।
দেরি হয়ে গেলো পড়তে।
রুম্পা রুমানা
কত সুন্দর করে বললেন , আপু ! দেরি করে পড়ায় কোন সমস্যা নেই। ধন্যবাদ।