আবেগাপ্লুত হয়ে লেখা যায়না আসলে কোনো কিছুই। লেখার জন্যে আবেগের প্রয়োজন যদিও। কিন্তু মান্না দে’র সেই গান “গভীর হয় গো যেখানে ভালোবাসা, মুখে তো সেখানে থাকেনা কোনো ভাষা…”—আজ এই লেখাটি লিখতে বসে আমারও এমনই অবস্থা হচ্ছে। তাই কোনো কাব্যিক উপমায় না গিয়ে সরাসরি চলে যাই সেই দিনে, যখন আমার রাত আর ওর দিন।
২০০৯ সালে বেলজিয়ামে থাকাকালীন ফেসবুকে পরিচয় হয় একটি মেয়ের সাথে। অনেক গল্প করতাম। গল্পে গল্পে রাত কেটে যেতো। ওর প্রাণের মধ্যে সত্যি সুধা আছে। সেই রবি ঠাকুরের গানের মতোই। বলতাম দেশে এলে দেখা হবে। একদিন হঠাৎ দেখি ওর একাউন্টটা নেই। কেমন এক অস্থিরতা। হয়তো অভ্যাসই ছিলো তখন ও। কাউকে বলতাম না, কারণ অনেক অনেক মানুষ তালিকায়। এরই মধ্যে একদিন ম্যাসেজ এলো ইনবক্সে, “নীলাঞ্জনা।” ওর আইডি হ্যাক হয়ে গিয়েছিলো।ও আরেকটি আইডি তৈরী করে ফিরে এলো। আবার গল্প শুরু হলো। বিষয় লেখালেখি, এলোমেলো আড্ডা। এভাবেই চলে যাচ্ছিলো। কবে যে মনের ভেতর একটা জায়গা করে নিলো, বুঝতেই পারিনি।
২০১০ সালে দেশে গেলাম। দেখা হলোনা। ২০১৫ সালে আবার দেশে গেলাম। প্রচন্ড ব্যস্ততা। এরই মধ্যে ফোনে কথা হলো। ইস দেখা কি এবারও হবেনা? আজই আমার রাতে ফ্লাইট। রাত আটটার সময় ফোন “নীলাঞ্জনা আমি আসছি।” বগুড়া থেকে ওর বর রমজান আলী রিপন ভাইকে নিয়ে আমার ছোট বোন মৌয়ের বাসায় এলো। রিপন ভাই অনেক ভালো একজন মানুষ। তা নইলে ওর সাথে দেখা হতোনা। বাঙালী কোন স্বামী তাঁর স্ত্রীর ফেসবুকের বন্ধুর সাথে দেখা করা্নোর জন্যে বগুড়া থেকে নিয়ে আসবেন, এমনটি ভাবা অসম্ভব নয় কি? বন্ধুত্ত্ব তো অনেক দেখেছি। এভাবে সত্যি ভাবিনি আমাদের দেখা হবে। অসম্ভব ভালো একটি মেয়ে, যার চোখে-মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে। আমার এক্সিডেন্টের খবর শুনে যে রোজা রেখেছে, দুই রাকাত নামাজ পড়েছে। আর প্রতিদিন নামাজে বসে এখনও দোয়া করে। একটা হলেও রোজ ম্যাসেজ করে জানতে চায় কেমন অবস্থা আমার? সেই মেয়েটির আজ জন্মদিন। ওর নামই তো বলা হলোনা। ওর নাম শিউলী। যাকে নিয়ে কোনোদিন কোনো গল্প কিংবা কবিতা লেখা হয়নি। যে কোনোদিনই অভিযোগ করেনি কেন তাকে নিয়ে কিছু লিখিনি? ফেসবুকের ওয়ালে লিখে আসা কেবল “শুভ জন্মদিন।”
বন্ধু আজও আমাদের সেই কথা বলা হয়নি
যে কথায় কিছু কথা আছে ঘাসফড়িঙ বেলায় পিঠ ঠেকিয়ে
হিমালয়ে সূর্যাস্ত দেখার
তুষারপাতের মধ্য থেকে হেঁটে এসে
দু’ হাতে সমস্ত শীতঋতুকে বদলে দিয়ে
গ্রীষ্মের আলোয় ঝলমলে করে ওঠা নায়াগ্রার রঙধনুকে দু’ চোখ ভরে দেখা
বন্ধু আমাদের যে কথা বলা হয়ে গেছে
ছবির ফ্রেমে, শব্দ-বিনিময়ে
সেসব তোলা আছে স্মৃতির সিন্দুকে হৃদয়ের খামে।
শুভ জন্মদিন আমার মিষ্টি হাসির বন্ধু শিউলী।
হ্যামিল্টন, কানাডা
৩ মার্চ, ২০১৬ ইং।
৩৩টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
বন্ধুত্ব দুরত্ব, স্থান বা অন্য কোন কিছু দিয়েই হয় না। বন্ধুত্ব হয় মন দিয়ে। সত্যিই খুব ভালো লাগল বন্ধুত্বের কথাগুলো। শুভ কামনা আপু দুইজনের জন্যই।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনের খুব কাছেই আছে ও। থাকবেও।
ভালো থাকুন ভাইয়া।
আবু খায়ের আনিছ
শুভেচ্ছা
ছাইরাছ হেলাল
আপনার বন্ধুকে অবশ্যই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
তবে কথা হল, আমরা এতদিন শুধু আপনার এক, দেড় বা পৌনে দু’জন বন্ধুর কথা জানতাম,
দেরি করে হলে এই প্রথম এত্ত বছর পর অন্য কারো কথা জানলাম!!
নূতনটির আপডেট দিয়েন।
সত্বর ভাল হয়ে উঠুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
কবিভাই সব কি আর সবাইকে বলা কিংবা জানানো যায়?
কিছু মানুষ থাকে যারা থাকে অন্তরালে।
এমনভাবে বলছেন যেনো কত্তো কত্তো বছর থেকে আপনার সাথে আমার কথা হয়?
কি আপডেট চান? পরিচিত হতে চাইলে বলবেন পরিচয় করিয়ে দেবো।
আপনার প্রার্থনার অনেক শক্তি, ভালো হয়ে উঠছি। 😀
জিসান শা ইকরাম
শত হাজার মানুষের মাঝে দু একজনই কেবল প্রানের বন্ধু হন।
গদ্য, কবিতা,গান সহ একটি অনবদ্য লেখা।
শিউলীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা -{@
আমি আমি
খুব ভাল বন্ধুত্ব, আমি সম্মান করি আপনাদের বন্ধুত্বকে
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি আমি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর বন্ধুত্ত্বর পুজা করি আমি।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তুমি দেখেছো ফেসবুকে। অনেক ভালো মেয়ে। ওর মন্তব্যগুলো বড়ো মায়াময়।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা তো দেখেছি জানিয়েছো আমার ফেসবুক পোষ্টে।
এমন সারপ্রাইজ এ জীবনে নাকি কখনো পায়নি। 😀
জিসান শা ইকরাম
হুম দেখেছি
শুভেচ্ছাও দিয়েছি। তোমার বন্ধুদের শুভেচ্ছা দিতেও ভাবি ১০০ বার 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা। :D) নানা অনেক মজা পেলাম।
খসড়া
ভাল থকুক বন্ধু এমন হাসি থাকুক সারাজীবন আমলিন।
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মৌনতা রিতু
এই বন্ধুত্ব অটুট থাক।
নীলাঞ্জনা নীলা
নিঃস্বার্থ সম্পর্ক টিকে থাকে আজন্মকাল। ধন্যবাদ আপনাকে।
অপার্থিব
জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।
নীলাঞ্জনা নীলা
অপার্থিব আপনাকে ধন্যবাদ।
রিমি রুম্মান
এমন বন্ধু খুব কমই থাকে।
ভাললাগলো লেখাটি।
শুভ জন্মদিন বন্ধুটিকে -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আসলেই মাত্র একবারের দেখা, তাও বেশী হলে ৩০ মিনিট।
কিন্তু টানটা ওর বেশী। সেই বগুড়া থেকে ছুটে আসা।
জানিয়ে দেবো শুভেচ্ছা। 🙂
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
চারদিকে আজ একান্ত অনুভূতি।
ভালো লাগলো ফেসবুকের বন্ধুর গল্প।
নীলাঞ্জনা নীলা
এখন আর ফেসবুকে আবদ্ধ নই। জীবনে চলার পথে আমার এই বন্ধু আছে।
অরুনি মায়া
তোমার বন্ধু ভাগ্য অনেক ভাল আপু ,সবার তা হয়না | ভাল থেকো সব প্রিয় বন্ধুদের পাশে থেকে |
শিউলি আপুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল 🙂 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু ঠিক বলেছো। আমার বন্ধু ভাগ্য অনেক ভালো। বন্ধুদের নিয়ে একটা ধারাবাহিক লেখা শুরু করেছিলাম ফেসবুকে সেই ২০০৯ সালে। ্তারপর থেমে গেলো। ভাবছি আবার শুরু করবো।
শিউলীকে ফুল পৌঁছে দেবো। 🙂
অরুনি মায়া
অবশ্যই শুরু করবে।যারা বিপদে ছায়ার মত পাশে থাকে তাদের গুরুত্ব সবার আগে আপু। আমার লেখ তুমি বন্ধুদের নিয়ে।
নীলাঞ্জনা নীলা
তিরি-অহম শেষ হোক। তারপর বন্ধু ধারাবাহিক শুরু করবো।
স্বপ্ন
আপনার বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা -{@ লেখাটি কয়েকবার পড়লাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দেবো।
কি সৌভাগ্য আমার লেখাটি কয়েকবার পড়ার মতো হয়েছে তাহলে!
শুন্য শুন্যালয়
তুমি বন্ধু অন্তঃপ্রান। তোমার বন্ধুরাতো এমনই হবে। বন্ধুত্বের এমন সৌভাগ্য সবার হয়না। ঘিরে থাকো সারাক্ষন। বন্ধুটিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিও, তোমার এমন সুন্দর উপহার পেয়ে সে নিশ্চয়ই খুশি। ঘিরে থেকো বন্ধু আলয়ে।
-{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু তোমার জন্যে অপেক্ষায় থাকি। আর না গো আমার বন্ধুরা সত্যি ভালো। তা নইলে এভাবে আমাকে সয়ে নেয়া খুব কঠিন।
আসলেই ও খুব খুশী হয়েছে।
তোমার এতো সুন্দর মন্তব্য শিউলীকে পাঠাবো। আরোও খুশী হবে।
ভালো রেখো নিজেকে। -{@
নাসির সারওয়ার
আপনার বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা!
বন্ধু ভাগ্য অনেক বড় কিছু।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়ূ এ জীবনে আমার পরম পাওয়া বন্ধু।
আমি আমি
আপনার বন্ধুর জন্মদিনে বার বার আপনার এই রকম শুভেচ্ছা চলতে থাকুক এই কামনা রইল।
নীলাঞ্জনা নীলা
ওর আনন্দে এতো ভালো লেগেছে। কাউকে আনন্দ দিতে পারলে মন কেন এতো খুশী হয়?