
প্রথম যখন প্রেম এসেছিল তখন ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি। প্রতিদিনের মত অফ পিরিয়ডে কমনরুমে বসে টেবিল টেনিস খেলছিলাম। হঠাৎ কলেজের পিয়ন এসে বললো ম্যাডাম আপনাকে রুমে ডাকছেন।
দরজার সামনে গিয়ে সালাম দিলাম রুমে বসে থাকা চুল অর্ধ পাকা সাদা ছাপার শাড়িতে চেয়ারে বসে থাকা ম্যাডাম কে। কখনো কথা হয়নি তাঁর সাথে আমার, আজ প্রথম দেখা। ডেকে পাঠাতেই বুকের ভেতর ভয় লাগছে। শুনেছি উনি কলেজের সবচেয়ে প্রবীণ টিচার। শিক্ষকতা দিয়ে রিটায়ার্ড করলেও ক্রীড়া ডিপার্টমেন্ট এ ওনাকে রেখে দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সালাম দিতেই বললেন ভেতরে এসো। পিয়নকে চা বিস্কুট দিতে বলে বাহিরে পাঠিয়ে দিলেন।
নিজেই রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেন বসো। ভয়, উৎকণ্ঠায় ভাবছি কি অপরাধে ডাকলেন, কি বলবেন ? তবুও হাসি মুখে জানতে চাইলাম ‘ম্যাডাম আমাকে কেনো ডাকলেন?’ বললেন ‘বসো বলছি, চা খাও।’ একে একে আমার পরিচয়,বাবার নাম, ভাইবোন সবার কথা জানতে চাইলেন। তার পর… বুড়ি আপা (মুরসিদা আপা) সবাই বুড়ি আপা বলে ডাকত, তিনি বললেন… তোমাকে রোজ দেখি, তোমার হাটাচলা তোমার কথা বলা, অনুষ্ঠানে তোমার আবৃত্তি, উপস্থাপনা শুনেছি আমি । তোমাকে আজ কিছু বলবো। খুব ধিরে থেমে থেমে কথা গুলো বলছিলেন ম্যাডাম। তুমি জানো? আমার এক বান্ধবী ছিলো তার নামও শিরিন? স্কুল জীবন থেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়েছি। ও হঠাৎ করে ক্যানসারে মারা যায়। বাঁচাতে পাড়িনি। তোমাকে দেখে আমার বান্ধবী শিরিনকে মনে পড়ে যায়। তুমি ঠিক ওর মতো বলেই কেঁদে দিলেন।
আমি হতবাক বিস্মিত! চোখে পানি আটকে রাখতে পাড়িনি তখন। কিছু বলার ভাষা ছিলনা আমার। কিছুক্ষণ পর ড্রয়ার থেকে একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে বললেন- এটা তোমার ভেলেন্টাইন উপহার। আজ ভেলেন্টাইন ডে। সেদিন প্রথম জেনেছি ভেলেন্টাইন ডে বলে কিছু আছে। প্রথম উপলব্ধি করেছি ভালোবাসার সুখ। প্যাকেটের ভেতরে একটা ডায়রি, একটা কার্ড, একটা কলম ছিলো। বলেছিলেন- তুমি আমার সেই বান্ধবী আবার আমার কাছে ফিরে এসেছো পুনঃজন্ম নিয়ে।
বুড়ি আপা আর পৃথিবীতে নেই। আমার কাছে তাঁর ভলোবাসা সেই উপহার গচ্ছিত থাকবে আজীবন। ভেবেছিলাম কোনো ভ্যালেন্টাইনে একটা শাড়ি কিনে দেবো, নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে যাবো ওনার বাসায় আর দেওয়া হয়নি শাড়ি। খাওয়ানো হয়নি আমার হাতের রান্না খাবার। ওইদিনের কিছু দিন পর ট্রান্সফার হয়ে চলে যাই অন্য কলেজে আব্বার বদলি জনিত কারনে। বলে আসতে পারিনি আপাকে। তারপর অনেকটা সময় বছর চলে গেছে জীবন থেকে। যখন ওনার কথা মনে পড়লো এই শহরে এসে খোঁজ নেই আমি। দেখা করবো কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বড় দেরি করে ফেলেছি আমি কারণ তিনি চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আর দেখা হলোনা।
এখন শুধু তাঁর দেয়া স্মৃতিচিহ্ন ই আছে আমার কাছে।এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে গচ্ছিত থাকবে।
ভালোবাসা রইলো শুধু আপা। যেখানে আছেন যেনো শান্তিতে থাকেন।
৩৪টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
কিছু কিছু মানুষ থাকেন মানসিক উৎকর্ষতায় ছাড়িয়ে যান অতি উঁচুতে।তোমার এই মুরসিদা আপা তাঁদের একজন। লেখাটা পড়ে অনেক ভালো লাগা রইলো।
তিনি যেন সর্বোচ্চ স্থানে অধীন থাকেন।
তোমার জন্য ভালবাসা ❤❤
শিরিন হক
কোনোদিন ভুলতে পারবোনা। ওনার মতো মানুষের শ্নহ ভালোবাসা পেয়ে আমি ধন্য আজীবন
সুরাইয়া পারভিন
এমন ভালোবাসা সবার ভাগ্যে জোটে না। অনেক ভাগ্যবতী আপনি বলেই এমন খাঁটি ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছেন।বুড়ি আপা যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
চমৎকার স্মৃতি রোমন্থন
শিরিন হক
সত্যি আমি ভাগ্যবান। আপা যেখানে থাক ভালো থাক।
মোঃ মজিবর রহমান
আল্লাহ মুর্ষিদা আপাকে বেহেস্ত নসিব করুন। আমিন।
শিরিন হক
আমীন
মোঃ মজিবর রহমান
এই সব মানুষগুলি অনেক সময় হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যাই। জিবন পাল্টিয়ে যাই চিন্তা ভাবনাই।
তৌহিদ
লেখা পড়ে আবেগাপ্লুত হলাম, জীবনে কিছু মানুষের স্মৃতি ভোলা যায়না কখনওই। তিনিও আপনার মাঝে তার প্রিয়জনকে খুঁজে পেয়েছেন। ভালো মানুষ বলতে যাদের বুঝি আপনার ম্যাডাম তেমনই একজন। তার জন্য শ্রদ্ধাভরা ভালোবাসা।
অনুভূতিময় লেখা ভালো লেগেছে আপু।
শিরিন হক
আমার জীবনের শ্রেষ্ট অনুভুতি একটি অনুভুতি। ওমন মানুষ খুব কম জন্মায় পৃথিবীতে যাকে পেয়েও হাড়িয়ে ফেল্লাম আফসোস।
জিসান শা ইকরাম
কতটা ভালোবাসতেন উনি তার বান্ধবীকে যে আপনার সাথে আলাপ করার সময়েই উনি কেঁদে ফেললেন।
লেখাটি পড়ে আবেগাপ্লুতু হলাম।
ম্যাডামের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি,
আল্লাহ ওনার আত্মাকে শান্তিতে রাখুক।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
শিরিন হক
আমীন। কখোনো বলতে পারিনি আমার কতটা মনে জায়াগা দখল করে আছেন উনি।ওনার বান্দবীর আত্মার মাগফেরত কামনা করি।
শামীম চৌধুরী
ভালোবাসায় আপনার স্মৃতিচারন সু্ন্দর করে উপস্থাপন করেছেন আপু। আপনি ভাগ্যবতী। দোয়া রইলো আপনার জন্য।
শিরিন হক
যতটুকো মনে ছিলো সেদিনের ঘটনা হুবহু ততটুকুই তুলে ধরেছি।আমি ভাগ্যবতী নই ভাই ওনার আবার দেখা পেলে জীবন ধন্য হতো। কেনো আগে দেখা করতে পারনি আফসো।
শামীম চৌধুরী
আফসোসটা ছিলো বলেই এমন সুন্দর লেকা বের হয়েছে।
শাহরিন
আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুক। অনেক দামী উপহার পেয়েছেন আপু। বই না বন্ধু। আমিও ভাবছি যদি অন্য স্কুলে যাওয়ার আগে বলে যেতেন, যদি তার সাথে আরেকবার যোগাযোগ এর চেষ্টা করতেন, যদি আসলেই একটি শাড়ী কিনে দিতেন!!!! আহা সময় ফিরে আসে না। আর যদি গুলো সারাজীবন পীড়া দেয়।
শিরিন হক
পরিস্থিতি অনুকুলে ছিলোনা।
আফসোস হয়।
এস.জেড বাবু
কি সুন্দর উপস্থাপন ! ভালো লাগলো।
আপার জন্য অনেক দোয়া।
শিরিন হক
আপনার জন্য দোয়া রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
আপনাকে অ ধন্যবাদ, এমন প্রাণময় একটি বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
শিরিন হক
সেয়ার করতে পেড়ে নিজের ও হালকা লাগছে।ভালো থাকবেন।
হালিম নজরুল
ওপারে ভাল থাকুক।
শিরিন হক
আমীন
মোহাম্মদ দিদার
লেখাটা পরে বেশ ভালো লাগলো। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে আমার মনের গহীনে জমিয়ে থাকা সুমিষ্ট শব্দসমূহ কে আপনি সঠিক ভাবেই উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন।
খুব ভাগ্যগুনেই পাওয়াজায় এমন ভালোমানুষের সান্নিদ্য, অটুট থাকুক আপনাদের মিস্টি বন্ধন।।
শিরিন হক
ধন্যবাদ
আরজু মুক্তা
উনি ওপারে ভালো থাকুন।
শিরিন হক
আমীন
আকবর হোসেন রবিন
আপনার উপস্থাপনা সুন্দর। এরচেয়ে বেশি সুন্দর আপনাকে জানানো শুভেচ্ছা।
‘সুস্থ ও স্বাভাবিক
সুন্দর ও আনন্দ
আলোকিত ও দীর্ঘায়ু
জীবন কামনায়’
শিরিন হক
ধন্যবাদ সুহৃদ
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
ভালোবাসা এমনি হয়,
ভালো লাগলো।
শিরিন হক
একদম ভালোবাসা এমনি হয়।
অনন্য অর্ণব
এক পশলা শিহরণ খেলে গেল সমস্ত শরীর জুড়ে। এমন ভালোবাসা কেউ কি ভুলতে পারে? মুর্শিদা আপা যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। শুভ কামনা রইলো ❤️
শিরিন হক
ধন্যবাদ
রুমন আশরাফ
বেশ ভাল লাগলো।
শিরিন হক
ধন্যবাদ