প্রতীতি,

জিসান শা ইকরাম ২৬ জুলাই ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৯:৪০:৫৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৪৫ মন্তব্য

একটি নতুন দেশে বসতি স্থাপন করে নিরুপদ্রবে বসবাস করা সহজ ছিল না মোটেই। অজানা, নাম জানা দেশটিতে প্রথম পদার্পন, অপরিচিত, অনভ্যস্ত প্রকৃতি, মানুষ, জীবজন্তু, পক্ষিকুলের মাঝে নবাগত একজনের পা রাখা, পিছনে অনুসরণ করা ততোধিক জড়সড় কিছু মানুষ, সংখ্যায় একেবারে কম নয়। আস্থা হেঁটে যাচ্ছে দৃপ্ত পায়ে, আস্থার সদ্য পদ চিহ্নর উপর পা রেখে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে সবাই নিশ্চিন্তে, পা দেবে যাবেনা, আস্থার পা পরেছে এখানে। একটি স্থান চাই, শক্ত অন- অপসারণযোগ্য একটি স্থান, বিশাল পাহাড় সম এক পাথরের মত, সহজে দুলে না ওঠে, নিজের জন্য, অনুসরণ কৃত সবার জন্য। কেউ কাউকে স্থান দিতে চায়না সহজে, জীবন যুদ্ধে লড়াই করে যোগ্যতমরাই টিকে থাকে।
পাখির ছানাগুলোকে বুকে আগলে রেখে সমস্ত ঝড় ঝঞ্ঝা জলোচ্ছ্বাস নিজে ধারণ করে বড় একখণ্ড ভূমির মালিক ততদিনে সেই আস্থা এবং তার অনুসারিরা। সমতার ভিত্তিতেই ভুমি বন্টন এবং গৃহ নির্মাণ। বহু রঙ এর সম্পর্কগুলো জোছনা হয়ে হাসে, নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বল করে, জোনাকির মত একসাথে জ্বলে নিভে প্রাকৃতিক আলোকসজ্জায় সৃষ্টিশীলতায় মুগ্ধ সবাই। উঁচু পাহাড়ের জোড়া রংধনুতে ঢেকে থাকা সফেদ চুড়ার নাম সুখ আর আনন্দ।
সেই আস্থা হতে পারত বরফ দেশের মা শ্বেত ভাল্লুকের মত। প্রতিদিন শিকার করে নিয়ে এসে তার সন্তানদের আহার যোগানো সেই মা। মা শিকার করে নিয়ে আসবে, খেয়ে বেঁচে থাকে সন্তানেরা। একদিন মা যে গেল আর আসেনা। অভুক্ত সন্তানদের মা কৈ মা কৈ আহাজারি একদিন দুইদিন। দিন যত যায়, অভুক্ত সন্তানের কাছে মা এর আবেদন তুচ্ছ হয়ে বেঁচে থাকাটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। অবশেষে বেঁচে থাকার তাগিদেই সন্তানেরা বের হয় খাবারের সন্ধানে, শিকারের সন্ধানে। বেঁচে থাকতে হবে এবং এভাবেই বেঁচে থাকা শিখে যায় একসময়। ঐ সময়ের নিরিখে নিষ্ঠুর মা কেন এমন করেছিল? আজীবন সন্তানরা মায়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতো মা চলে না গেলে। এভাবেই জীবন বহমান কঠিন বরফময় অঞ্চলে। টিকে থাকা বেঁচে থাকা শিখতে হয়, শেখাতে হয়।
আস্থার জীবনটা বরফময় দেশে নয়, স্নেহ ভালবাসা প্রেমের পালকগুলো অদৃশ্য সুতোয় শক্ত করেই বাঁধা। যে পালক খসে পরে তা আসলে মৃত পালক বা কৃত্রিম রঙে উজ্জ্বল।
মৃত্যু কি? শরীর থেকে আত্মার চলে যাওয়া। সমস্ত বন্ধন থেকে আত্মার চলে যাওয়া। সমস্ত আকুতিকে উপেক্ষা করে আত্মার চলে যাওয়া। আত্মা ভালবাসা ক্রোধ ঘৃণা স্নেহ প্রেম যাবতীয় আবেগ অনুভুতির সম্মিলন। এসবের এক একটি অংশ উধাও হওয়া তো খণ্ডিত মৃত্যু। একজনের প্রতি ভালবাসা শূন্য হওয়াও তো একটি মৃত্যু। শারীরিক জীবন থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি? কারো শরীর বেঁচে আছে, কিন্তু তার আত্মা, তার আবেগ, ভালবাসা, প্রেম, টান আর নেই কিছু জনের বা একজনের উপরে, সেই কিছুজন বা একজনের কাছে সে মৃতই।

কিছু মানুষ মরে গিয়ে মরে যায়
কিছু মানুষ বেঁচে থেকেও মরে যায়,

৫১৫জন ৫১৪জন

৪৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ