দূরন্ত:রিক্সার চাকার টায়ার সাথে একটি গাছের শুকনো ঢাল দিয়ে ছোট বেলায় মানে আজ থেকে প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ বছর পূর্বে দিন রাত মত্ত ছিলাম এমন একটি খেলা নিয়ে।দল বেধে গ্রামের সরু মেঠো পথ দিয়ে দূর দূরান্তে ছুটে যেতাম।এর প্রচল আজো কিছুটা দেখা যায়,গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহরে নিন্মবৃত্ত এবং বস্তির কিশোরদের মাঝে।
লাটিম খেলা।বাংলার এমন কোন দামাল ছেলে নেই যিনি এই লাটিম একটি বার হলেও ঘুড়াননি।তবে ছবিতে লাটিমগুলো সম্ভবত কোন ধাতবের তৈরি আমরা খেলতাম কাঠের লাটিম।লাটিম খেলতে একজন যেমন খেলতে পারে তেমনি দল বদ্ধ হয়ে খেলতে পারেন।যদি এক জন খেললে তার কাছে লাটিম খেলা মানে এটি কত ক্ষণ ঘোরাতে পারেন তা পরীক্ষা করে দেখা। আর কয়েক জন মিলে খেললে সেটা হয় প্রতিযোগিতা।এই প্রতিযোগিতায় যে জিতে সে প্রতিপক্ষ লাটিমের মালিক হয়ে য়ায়।বৃত্তের ভিতরের একটি লাঠিমটিকে অন্য লাটিমের মালিকরা তাদের লাটিমটি চিকন ফিতে বা নেতা দিয়ে পেচিয়ে বৃত্তে রাখা লাটিমটিকে আঘাত করেন যে যত আঘাতের ক্ষত চিহ্ন বেশী করতে পারবে সে ততো হাত তালি পাবেন।বয়স্কদের ভিন্ন রকম এক লাটিম খেলার ভিডিওটি দেখুন
এ এক মজার খেলা গোল্লাছুট।ছেলে মেয়ে উভয় এ খেলা খেলতে পারতেন তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই এ খেলা বেশী খেলে।খেলার শুরুতে প্রথম দুজন দলপতি ঠিক করা হয়। তাদের দুজনকে সম্ভবত “গোদা” বলা হয়। দু দলেই ৫ অথবা ৭ জন থাকে।দলপতি মাটিতে পুঁতা কাঠি এক হাতে ধরে অপর হাতে তার দলের অন্য খেলোয়াড়ের হাত ধরে থাকেন।এভাবে তারা পরস্পরের হাত ধরে কেন্দ্র স্পর্শ করে ঘুরতে থাকে। তাদের লক্ষ্য হলো বৃত্তের বাইরে যে কাঠিটি বা গাছটি যা দ্বিতীয় লক্ষ্যবস্তু থাকে তা দৌড়ে স্পর্শ করা।অপর দিকে দৌড়ে কাঠি স্পর্শ করার আগেই বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা যদি ওই দলের কোন খেলোয়াড়কে স্পর্শ করতে পারে তাহলে সে এই দান (পর্ব) খেলা থেকে বাদ যাবে। এভাবে শেষ পর্যন্ত দল পতিরও দৌড়ে কাঠি স্পর্শ করতে হয়।কোন খেলোয়াড়ই লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা দান পায়।
ঘুড়ি :এই উপমহাদেশের বিভিন্ন সংষ্কৃতি গোষ্ঠির সাথে উৎপেরত ভাবে মিশে আছে।আমাদের দেশেও এর ব্যাতিক্রম নয়।দেশের কোথাও কোথাও খুব ঘটা করেই বাৎসরিক ঘুড়ি উৎসব করেন।পুরানত ঢাকায় কবে, কখন, কোথায় প্রথম ঘুড়ি উৎসব শুরু হয়েছিল তা ইতিহাস থেকে ভালো ভাবে জানা যায় না।ঐতিহাসিকদের মতে,১৭৪০ সালের দিকে নবাব নাজিম নওয়াজেস মোহাম্মদ খাঁন এর সময় থেকে ঢাকায় ‘ঘুড়ি উড়ানো’ উৎসব হিসাবে প্রচলিত হয় এবং নবাব পরিবাররা এ উৎসবের উৎসাহদাতা ছিলেন।সেই সময় ঘুড়ি উড়ানো আনন্দ অভিজাত মহল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল যা এখন সর্ব সাধারনদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী ঘুড়ির বিভিন্ন আকৃতি ধারন করে।
দাড়িয়া বান্ধা: প্রায় পঞ্চাশ ফুট লম্বা ও বিশ ফুট প্রস্থে, মাঝ খানে সমান্তরাল পঞ্চাশ ফুট লম্বা ও এক ফুট চওড়া একটি লাইন থাকবে। এক ফুট অন্তর অন্তর আড়া আড়ি ৪টি লাইনে পুরো কোর্টটি দশ ইঞ্চি/দশটি টি খোপে ভাগ করা থাকবে।আড়াআড়ি ছয়টি লাইন এক ফুট চওড়া হবে।দাগ কেটে ঘর তৈরি করা হয়।ঘর দেখতে অনেকটা ব্যাডমিন্টনের কোর্টের মতো।দুই দলে চার-পাঁচজন করে খেলোয়াড় হলে জমে।কম হলেও দুজন করে খেলোয়াড় লাগবেই।সমতল ভূমিতে কোদাল দিয়ে দাগ কেটে ঘর কাটা যায়।বর্গাকার একটি ঘরে সামনে-পেছনে সমান দূরত্বে দুটি করে দাগ কাটতে হয়। এ দুই দাগের মাঝে এক হাত পরিমাণ জায়গা রাখতে হয়।এ গুলোকে বলে আড়া কোর্ট।দুটি আড়া কোর্ট জোড়া দিয়ে মাঝ খানে একটি কোর্ট তৈরি করা হয়। মাঝখানের এই কোর্টকে বলে ‘খাড়া কোর্ট’।খেলোয়াড় যত বেশি হবে, কোর্টের সংখ্যাও তত বাড়বে।প্রতিটি আড়া কোর্টে একজন করে খেলোয়াড় দাঁড়ায়। এখানেই দাঁড়িয়ে অন্য দলের খেলোয়াড়দের ঘরের ভেতর ঢুকতে বাধা দেয়।কোর্টের অন্য দলের খেলোয়াড়কে ছুঁতে পারলে সে মারা পড়বে।সামনের খেলোয়াড় তার পেছনের খাড়া কোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন।যে দল খেলার সুযোগ পাবেন তারা সামনের ঘর দিয়ে ঢুকে পেছনের ঘর দিয়ে বেরোতে থাকে।সব ঘর পেরোনোর পর আবার পেছনের ঘর থেকে সামনে আসে।কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য দলের খেলোয়াড়দের ছোঁয়া বাঁচিয়ে সবাই ফিরে আসতে পারলে গেম হয়ে গেল।যারা কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকে,তাদের খেলোয়াড়দের কারো পা যদি দাগে পড়ে তবে তারা ঘর ছেড়ে দেয়।অন্য দল ঘরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।এভাবে অনেক সময় ধরে খেলাটি খেলা যায়।দাড়িয়া বান্ধার কোর্টের সঠিক কোনো মাপ নেই।একজন খেলোয়াড় দৌড়ে কত টুকু ঘর সামলাতে পারবেন,তার ওপর ভিত্তি করে ঘর কাটা হয়।তবে সব ঘরের গঠন একই থাকে।
কাবাডি খেলা:
হাডুডু বা কাবাডির উৎপত্তি স্থল সম্ভবতঃ ফরিদপুর জেলায়,আবার কারো মতে বরিশাল জেলায়।তবে বাংলাদেশের সকল জেলাতেই এই খেলা কম বেশী খেলতে দেখা যায় বলেই এটা আমাদের জাতীয় খেলা হিসাবে ধরা হয়।মাঠের সাইজ প্রায় ৪২/৪৩ ফুট লম্বা ও ২৭ ফুট চওড়া হয়।মাঠ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।প্রতিটি ভাগকে কোট বলা হয়।মোট সময় ৪৫ মিনিট এর মাঝে ৫ মিনিট বিরতি আছে।খেলার শুরুতে খেলোয়াড়দের দুটি দলে ভাগ করে নিতে হয়। প্রতিটি দল তাদের দল নেতা নির্বাচন করে।দল নেতার অধীনে দুই দলে সমান সংখ্যক খেলোয়াড় থাকেন।সাধারণত খেলোয়াড় থাকে ১২ জন।তবে প্রতিবার সাত জনের দল নিয়ে খেলতে হয়।দুই পক্ষের দুই দল মখো মুখি অর্ধ বৃত্তাকারে দাঁড়ায়।খেলা শুরু হলে এক পক্ষ দম রেখে হাডুডু বা কাবাডি বলতে বলতে ডাক দিতে থাকে এবং মধ্য রেখা পার হয়ে বিপক্ষের কাউকে ছুঁয়ে দম থাকা অবস্থায় দ্রুত পালিয়ে আসতে চেষ্টা করেন।যদি কাউকে ছুঁয়ে আসতে পারে তবে সে মরা’ বলে গণ্য হয়।আবার আক্রমণকারী যদি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের হাতে ধরা পড়ে তবে সেও মরা বলে গণ্য হবেন।একজন মরা আর খেলতে পারবেন না,তাকে কোটের বাইরে অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না তাদের প্রতি পক্ষের কাউকে ছুয়ে আসতে না পারবেন।ছুয়ে আসতে পারলে মরা আবার জীবিত হয়ে খেলায় অংশগ্রহন করবেন।এই খেলা পরিচালনা ও বিচারকার্য করে থাকেন একজন রেফারি,দুইজন আম্পায়ার,ও একজন স্কোরার।
এই খেলাটির নাম কি সঠিক ভাবে আমার জানা নেই তবে একে আমাদের অঞ্চলে নই খেলা বলেন।মাটির তৈরি ভাঙ্গা ভাঙ্গা চাড়াই এই খেলার একমাত্র বস্তু।সাতটি চাড়া দিয়ে এই খেলাটি খেলতে হয়।
ডাংগুলি খেলা:
ডাংগুলি খেলা বাংলাদেশ ও উত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গ্রামীণ খেলা।যা সাধারণত কিশোর বয়সী ছেলেরা এই খেলা খেলে থাকেন। উত্তর ভারতে এর নাম গোলি ডাণ্ডা।ক্রিকেট আসার পর এর জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমতে থাকে।বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে খেলাটি ড্যাংবাড়ি, গুটবাড়ি, ট্যামডাং, ভ্যাটাডান্ডা ইত্যাদি নামে পরিচিত।খেলার উপকরণ দু’টি-একটি দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা লাঠি,অপরটি গুলি যা নামে গোল মনে হলেও গোল নয়,আসলে প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা আরেকটি ছোট লাঠি যার দুই প্রান্ত কিছুটা সূঁচালো করা থাকে।
মজার খেলা মোরগ লড়াই:
বাংলাদেশ সহ এই উপ মহাদেশে মোরগ লড়াই শিরোনামে শিশুদের মধ্যে হাঁটু লড়াই বা মোরগ লড়াই আয়োজন করে থাকেন।এ খেলায় এক পা ভাঁজ করে হাটু দিয়ে প্রতি পক্ষকে ঘায়েল করতে হয়।মোরগ লড়াই খেলায় এক দল ছেলে গোল হয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।দুই হাত দিয়ে অপর পা পিছনে ভাঁজ করে রাখেন।রেফারি যখন বাঁশিতে ফুঁ দেন তখনই খেলোয়াড়রা একে অপরকে ভাজ করা পা দিয়ে ধাক্কা মারতে থাকেন।কেউ পড়ে গেলে সে বাতিল বলে গণ্য হন।এভাবে শেষ পর্যন্ত তিন জন থাকে।তাদের মধ্য থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্ধারণ করা হয়।এ খেলাটি সাধারনতঃ কোন স্কুলের বর্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বেশী হয়ে থাকে।
কুতকুত খেলা:
স্নিগ্ধ আলোয় বাড়ীর আঙ্গিনায় কৈশর পেরোনো মেয়েরা কুতকুত খেলায় মেতে উঠতো।সাধারনতঃ বর্ষার পরের নরম মাটিতে মাটির ভাঙ্গা তৈজস পাত্রের অংশ দিয়ে দাগ কেটে কুত কুতের জন্য ঘর বানিয়ে খেলা শুরু করে দিতেন।কুতকুত খেলার শুরুতে আয়ত ক্ষেত্রাকার মোট ৭/৮টি ঘর আঁকা হয় এবং এই ঘরগুলোর শেষ মাথায় অর্ধ চন্দ্রাাকৃতির আর একটি ঘর বানানো হয়।তারপর পাতলা একটি চাড়া প্রথম ঘরে ফেলে এক পা শূন্যে রেখে এবং দম দিতে দিতে গুটি কে সবগুলো ঘর অতিক্রম করে অর্ধ চন্দ্রাকৃতির ঘরে এনে পা নামিয়ে দম ফেলেন।তারপর এই ঘর থেকে চাড়াটিকে পা দিয়ে আঘাত করে সব ঘর অতিক্রম করেন।এ সময় চাড়াটি সব ঘর অতিক্রম না করলে অর্ধ চন্দ্রাকৃতির ঘর থেকে বের হয়ে শূন্যে পা তুলে দম নিতে নিতে তাকে আবার আগের নিয়মে ঘর থেকে বের করে আনতে হয়।খেলোয়াড়রা কপালে চাড়া রেখে উপর দিকে তাকিয়ে আটটা ঘরের দাগে পা না ফেলে অর্ধ চন্দ্রাকৃতির ঘরে যেয়ে আবার প্রথম ঘরে ফেরত আসতে পারলে সে ঘর কেনার যোগ্যতা অর্জন করেন।কুতকুত খেলায় যে ঘর কেনা হবে সেই ঘরে খেলার অপর সাথি পা বা চাড়া ফেলতে পারবেন না।ঘর কেনার প্রক্রিয়াকালীন সময়ে খেলোয়াড়দের দাঁত দেখা গেলে ঐ খেলোয়াড় খেলা অবস্থায় মারা যাবেন।ক্রমান্বয়ে ঘর কিনে শেষ ঘরটি দখল করার মাধ্যমে খেলার নিস্পত্তি হয়।
বউচি খেলা:
বউচি খেলাটি বাংলাদেশের সব অঞ্চলের শিশুদের প্রিয় খেলা।এ খেলায় দুটি দলের প্রয়োজন হয়।প্রতি দলে ৮ থেকে ১০ জন করে খেলোয়াড় হলে খেলা জমে উঠে।মাঠ অথবা বাড়ির উঠোন যেখানে খুশি সেখানে এই খেলা যায়।খেলার আগে ১৫/২০ ফুট দূরত্বে মাটিতে দাগ কেটে দুটি ঘর তৈরি করতে হয়। দুই দলে যারা প্রথম খেলার সুযোগ পায় তাদের মধ্যে থেকে এক জন কে বউ বা বুড়ি নির্বাচন করা হয়।দুটি ঘরের মধ্যে একটি ঘর হবে বড়, যেখানে এক পক্ষের সব খেলোয়াড় থাকবে। আর ছোট ঘরে দাঁড়াবে বউ। ছোট ঘরটিকে বউঘর বা বুড়িঘর বলে।বউয়ের বিচক্ষণতার ওপর খেলার হারজিত নির্ভর করে। খেলার মূল পর্বে বউঘর থেকে বউকে ছুটে আসতে হবে বড় ঘরটিতে।বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা সব সময় পাহারায় থাকে বউ যেন ঘর থেকে বের হতে না পারেন।বউ বাইরে এলে বিপক্ষ দলের কেউ তাকে ছুঁয়ে দিলে ওই পক্ষের খেলা শেষ হয়ে যায়।এরপর বিপক্ষ দল খেলার সুযোগ পায়।এদিকে বড় ঘরটিতে যারা থাকে তারা দম নিয়ে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের তাড়া করে।দম নিয়ে তাড়া করলে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা দিগ্বিদিক ছুটে পালায়। আবার খেয়াল রাখে বউ যেন যেতে না পারে।দম নিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়রা কাউকে ছুঁয়ে দিলেই বিপক্ষ দলের সে খেলোয়াড় মারা পড়েন।মরা খেলোয়াড় চলতে থাকা খেলায় অংশ নিতে পারবেন না।এভাবে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় মেরে বউকে বড় ঘরে ফিরে আসতে সুযোগ করে দেয়া হয়।বউ যদি বিনা ছোঁয়ায় বড় ঘরে চলে আসতে পারে তাহলে এক পয়েন্ট।খেলা আবার তারাই শুরু করবেন।আর বউ মারা পড়লে অন্য দল খেলার সুযোগ পাবেন।যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ চালানো যায় এই খেলাটি।
কানা মাছি:
ছি কুতকুত সোনেলা,নৌকা দিমু বানাইয়া,নৌকা যদি ডুবে,বিয়া দিমু তোরে পুবে…।
’ওপেন্টি বায়স্কোপ,নাইন টেন টেইস্কোপ,চুল টানা বিবি আনা,সাহেব বাবুর বৈঠক খানা,সাহেব বলেছে যেতে,পান সুপারি খেতে,পানের ভিতর মরিচ বাঁটা,
ইসকাপনের ছবি আঁটা,যার নাম সোনেলা বালা,গলায় দিলাম মুক্তার মালা।
‘ইচিং বিচিং চিচিং ছা, প্রজাপতি উড়ে যা,‘কানামাছি ভোঁ ভোঁযাকে পাবি তাকে ছোঁ….এ রকম আরো হরেক রকম কথায় খেলায় মেতে উঠত গ্রাম-বাংলার শিশু কিশোররা।নতুন প্রজন্মের কাছে এসব ছড়া যেন স্বপ্নের মতো।
ধাপ্পা খেলা:এই খেলাটি খেলতে নিদিষ্ট কোন লোকের প্রয়োজন হয় না এটা কয়েকজন মিলেও খেলতে পারেন অথবা একা একাও খেলতে পারেন।
লাঠি খেলা:বাংলাদেশের এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ভ্রাম্যমাণ পরিবেশনা শিল্প।গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষেরা তাদের নৈমিত্তিক জীবনের উৎসব-বাংলা বর্ষবরণ,বিবাহ,অন্ন প্রাসন ইত্যাদি বিশেষ কোন অনুষ্ঠান উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকেন স্থানীয় লোকেরা।বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকেরাই এ খেলাটি খেলে থাকেন।এ ক্ষেত্রে অনেক সময় কোন লাঠিয়াল দলকেও ভাড়া করে আনতে হয়।সেই লাঠিয়াল বাহিনী সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা,বানুটি খেলা,বাওই জাঁক,নরি বারী খেলা এবং দাও খেলা খেলতে দেখায় যায়।এর মধ্যে ডাকাত খেলার উপস্থাপনা ঈদে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রসিদ্ধ।কোথাও কোথাও লাঠি খেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুমি, কাড়া ইত্যাদি ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে এবং সঙ্গীতের সাথে চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়।
বুদ্ধির খেলা ষোল গুটি খেলা:
বুদ্ধির খেলা ১৬গুটি খেলা যা এখনো কম বেশ প্রচলন আছে।দুজন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এই খেলা হয়ে থাকে।উভয় খেলোয়াড় ১৬ টি করে মোট ৩২ টি গুটি দিয়ে এই খেলা খেলে থাকেন।খেলার সুবিধার্থে উভয় পক্ষের গুটির বর্ণ আলাদা হয়।সাধারণত মাটিতে দাগ কেটে ষোল গুটির ঘর বানানো হয়।শুধু ঘরের মাঝ খানের দাগটি দান চালার জন্য খালি থাকে।কোনা কুনি দাগের গুটিগুলো সারা ঘর জুড়ে এক ঘর করে কোনা কুনি খেতে পারে।উলম্ব দাগ কাটা ঘরের গুটি গুলো লম্ব ভাবে এক ঘর করে খেতে পারেন।অপর পক্ষের গুটিকে ডিঙ্গাতে পারলেই সে গুটি কাটা পড়ে।এই ভাবে প্রতিপক্ষের গুটির সংখ্যা কমিয়ে শূন্য করে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ হয়ে যায়।
মজার খেলা মার্বেল বা গুল্লি খেলা:
শিশু-কিশোররা নির্দিষ্ট একটা ছকের বাইরে একটা গর্ত করে।ছকের বাইরে বসে প্রত্যেকে একটি করে মার্বেল বা গুল্লি ওই গর্তে ফেলার চেষ্টা করে।যার মার্বেল গর্তে পড়ে বা সবচেয়ে কাছে যায় সে প্রথম দান পায়।সবাই প্রথম যে দান পায় তার হাতে ২/৩/৪টি যত গুলো ডিল হয় তা জমা দেয়।সে মার্বেল গুলো ছকের বাইরে বসে সামনের দিকে ওই গর্তের আশপাশে আলতো করে ছড়িয়ে দেয়।এরপর অন্য খেলোয়াড়রা একটা নির্দিষ্ট মার্বেলকে বলেন বাদ।কারন ঐ মার্বেল ছাড়া বাকি যে কোন একটি মার্বেলকে অন্য একটি মার্বেল ছেড়ে দিয়ে স্পর্শ করতে হবে।যদি এমনটা পারেন তাহলে ঐ দান সে জিতে যাবেন। আর না পারলে পরবর্তী জন একই ভাবে খেলার সুযোগ পায়।তবে বাদ দেয়া মার্বেল কিংবা অন্য একাধিক মার্বেলকে ছুড়ে দেয়া মার্বেল স্পর্শ করলে ঐ খেলোয়াড়কে ফাইন দিতে হবে।
রুমাল চুরি
খেলার উপকরণের মধ্যে কেবল মাত্র একটি রুমাল।ছোট্ট এক টুকরো কাপড় হলেও চলবে।আট-দশ জনের বড় দল হলে খেলতে মজা হয়।
খেলোয়াড়রা সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে হাত তুলবেন।হাত তোলার সময় হাতের তালু বা পাতা যে কোনো একটি উপরের দিকে রাখতে হবে।যদি হাতের তালুর সংখ্যা বেশি থাকে,আর হাতের পাতার সংখ্যা কম থাকে,তাহলে যাদের যাদের সংখ্যা কম তারা একে একে সরে যাবে।এ ভাবে শেষ পর্যন্ত যে থাকবে, সে হবে চোর।কিন্তু শেষ বারে যদি দু’জন থাকে আর হাতের একই দিক দেখায়,তাহলে যারা একে একে সরে গেছে তাদের মধ্যে থেকে একজন এসে আবার হাত পাতবেন,তিন জনের মধ্য থেকে এক জনকে চোর নির্বাচিত করা হয়।
এবার দেখুন খেলাটি কি ভাবে খেলতে হয়:
চোর ছাড়া দলের সবাই গোল হয়ে বসবেন।চোর সবার পেছন দিয়ে রুমাল নিয়ে ঘুরতে থাকবেন।ঘুরতে ঘুরতে এক সুযোগে রুমালটি গোল হয়ে বসা কোনো এক খোলোয়াড়ের পেছনে রেখে দেবেন,চোর এরপর এক বার ঘুরে আসার পর যার পেছনে রুমাল লুকিয়ে রাখা হয়েছে, সে যদি টের না পায়, তাহলে চোর তাকে কিল মারতে থাকবে।তখন সে-ই হবেন নতুন চোর।আর পুরোনো চোর বসে পড়বেন নতুন চোরের স্থানে।এভাবে পুনরায় খেলা শুরু হবে।আর যদি রুমাল কারো পেছনে রেখে চোর ঘুরে আসার আগেই সে টের পেয়ে যায়, তবে রুমাল হাতে নিয়ে সেই হবেন নতুন চোর।আগের চোর খালি জায়গায় বসে পড়বেন।এখানে আর নতুন চোরকে কিল দেবে না পুরনো চোর।
এছাড়াও আরো এমন কিছু খেলা আছে যা অঞ্চলবেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপে খেলেছেন যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না।সোনেলা বন্ধুদের অনুরোধ থাকবে এ ছাড়াও অন্য আর কি খেলা আছে কৈশরে যা আপনি খেলেছেন,আমার জানা নেই।এমন খেলা মন্তব্যের ঘরে লিখলে আমারা আরো কিছু অজানা খেলা জানতে পারব।
ধন্যবাদ:
লেখাটি অনেক বড় তাই পড়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞ।
ছবি:অনলাইন সংগ্রীহিত
কৃতজ্ঞ:উইকিপিয়া,বিভিন্ন অন লাইন পত্রিকা ও ব্লগ এবং ইউটিউব
২৬টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই আপনি তো আমায় পুরোনো দিনে নিয়ে গেলেন। লাঠি খেলা ছাড়া বাকী সব খেলাই খেলেছি। জানেন আমাদের খেলার লিডার কে? আমার মামনি। বিকেল তিনটের সময় বাগানের সব বয়সের ছেলে-মেয়ে চলে আসতো। মামনি শুধু শিখিয়ে দিতো, আর আমরা খেলতাম। মনটা আজ ভালো নেই, চা’ বাগানের তালুকদার মামা(বাপির কলিগ) মারা গেছেন। আরোও বেশী করে মনে পড়ছে সেই দিনগুলোকে।
ভালো থাকুন মনির ভাই। -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চা’ বাগানের তালুকদার মামা পরপারে যেন ভাল থাকেন সেই কামনাই করছি। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই এ প্রার্থনা আমারও। অনেক সহজ-সরল মানুষ দেখেছি, তালুকদার মামা ছিলেন এমনই একজন।
মিজভী বাপ্পা
ভালো হয়েছে 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
-{@ (y)
গাজী বুরহান
এই কিছুটা সময় চলে গিয়েছিলাম শৈশবে। এক নাগাড়ে পড়ে শেষ করে অন্তত পাঁচ মিনিট পরে নিজেকে আবষ্কার করলাম নিজের রুমে। ধন্যবাদ ভাইয়া। আমরা বৃষ্টির দিনে ‘চোর-পুলিশ’ এবং লুডু খেলতাম।
আর ‘দাড়িয়া বান্ধা’ খেলাটির সাথে পরিচিত নই। মনে হয় নতুন নাম শুনেছি।
শুভ কামনা ভাইয়া
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ চোর পুলিশ সমভবত কাগজে লিখে তাই না -{@
গাজী বুরহান
ইয়াহ!
শুন্য শুন্যালয়
মনির ভাই এই লেখা সোজা প্রিয়তে নিয়ে রাখছি, ছেলেকে দেখাবো। 🙂
দাড়িয়াবান্ধা আর গোল্লাছুট যে ছেলেরাও খেলে এই প্রথম দেখলাম। 🙂 আমাদের একই বয়সী ছেলেরা খেলতো আমাদের সাথেই, কিন্তু ছবিতেতো দেখছি রীতিমত ছেলেদের কম্পিটিশন। ছবিগুলো কোথা থেকে কালেক্ট করেছেন, দারুন এঁকেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ চমৎকার এই পোস্টটির জন্য ভাইয়া।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ প্রিয়তে নেয়ার জন্য আর দাড়িয়াবান্ধা আর গোল্লাছুট আমাদের অঞ্চলে াধরণতঃ ছেলেরাই খেলে মেয়েরা নয়।ছবি গুলোকে দেখেই আমার এমন আইডিয়া এলো এ দিয়েতো একটি হারানো দিনের খেলা ধুলার পোষ্ট হয়ে যায়।বাস্ দিয়ে দিলাম পোষ্ট। -{@
অপার্থিব
দুর্দান্ত পোস্ট। শৈশবকাল শহরে কাটানোয় এই সব খেলার খুব একটা সৌভাগ্য হয় নি। তবে বছরে একবার যখন দাদাবাড়ি যেতাম তখন মাঝে মধ্যে দাড়িয়া বান্ধা , গোল্লাছুট, বউচি ও কাবাডি খেলেছি। ষোল গুটিও শিখেছিলাম। তবে সবচেয়ে মজা পেতাম কাবাডি খেলে যদিও তেমন কিছু পারতাম না। পোস্টটা আবার ক্ষণিকের জন্য শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সত্যি বলতে কি অতীতকে কেউ এড়িয়ে যেতে পারেন না তাইতো অতীত সামনে এলে মন কেমন যেন নড়ে চড়ে উঠে -{@ ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
ভাই আপনি তো আমার মনটা নস্টালজিক করে দিলেন, শহরের ছেলে হলেও প্রায় সব খেলায় খেলেছি আর চাড়া দিয়ে যে খেলাটা আমরা (চট্টগ্রামে) চাঁড়া, বোম ফাইট বলতাম।
ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর খেলা গুলিকে আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বোম ফাইট (3
মিষ্টি জিন
দুরন্ত আর লাঠী খেলা ছাঁডা সব খেলাই খেলেছি । জন্ম এবং বড হওয়া ঢাকায় হলেও এসব খেলা আমি খেলেছি।বাসার সামনে বড একটা মাঠ ছিল । বিকেল হলেই পাড়ার সব ছেলে মেয়ে মিলে আমরা খেলতাম।যে খেলাটার আপনি নাম জানেন না ., ঐটাকে আমরা ‘সাতচারা খেলা’বলতাম।
ধাপ্পা বা পাচগুটি খেলে তো হাতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি। এই তো সেদিন সিংগাপুরে বসে ঘুডি উডানোর বায়না করে তেনার মাথা খারাপ করে দিয়েছিলাম।
একদম শৈশবে নিয়ে গেলেন ভাইয়া।
অসাধারন একটা পোষ্ট।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমাদের সময় ঢাকাতো আর পুরো শহর ছিলনা তাই জমি ছিল মাঠ ছিলো খেলার পরিবেশ ছিল আর এখনকার ঢাকায়তো পিপিলিকার বসবাসে কঠিন হয়ে পড়েছে যাক সে কথা থাপ্পা মেয়েদের প্রিয় খেলা।সিঙ্গাপুরেও ঘুড়ি খেলা হয় দদি? -{@
মিষ্টি জিন
সিংগাপুরে গার্ডেন বাই দা বে তে ঘুডি ভাডা নিঁয়ে উড়ানো যায়। কত আকৃতির যে ঘুডি পাওয়া যায়। লাইট লাগানো ঘুডিও পাওয়া যায়। সেএক দারুন জিনিঁষ।
মেহেরী তাজ
ভাইয়া কোন লেখা খুব পছন্দ হলে কি করতে হয়।? সোনেলাতে সুন্দর একটা অপশন আছে। প্রিয় লেখা। আমি লেখাটা প্রিয়তে নিলাম। 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদের সহিত গৃহিত হইল -{@
মৌনতা রিতু
মনির ভাই এই লেখাটা শেয়ার করলাম। আমি এই লেখায় আমার গ্রামের বাড়ি রামপালে চলে গেছি।
স্কুলে খেলতাম বৌচি। কিতকিত খেলতাম ‘চাড়া’ অর্থাৎ ভাঙ্গা মাটির হাড়ি পাতিলের টুকরো দিয়ে। এই চাড়ায় আমার কপাল কেটেছিল ছোটবেলায়, সেই দাগ এখনো আছে।
অনেক ভাললাগল এই লেখাটা পড়ে। ডান্ডাগুলি খেলতে গিয়ে মারামারিও মনে পড়ল।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আপনিতো দেখছি স্মৃতির চিহ্ন রেখে দিয়েছেন….ধন্যবাদ শেয়ার দেয়ার জন্য। -{@
জিসান শা ইকরাম
পড়ছি আর দেখছি আমার শৈশবকে।
স্মৃতি কাতর হয়ে গেলাম।
অনেক ভাল একটি পোস্ট।
প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ ভাইয়া
অনলাইনে আর্ট করা ছবিগুলো দেখেই এ লেখায় অনুপ্রাণিত হই। -{@
ছাইরাছ হেলাল
আপনার লেখা পড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম।
সেই সব অম্লান স্মৃতি আজও অমলিন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমিও লিখতে গিয়ে অনেক খেলাই নতুন করে শিখেছি।ধন্যবাদ ভাঈয়া -{@
আবু খায়ের আনিছ
ছবিগুলো আগেই দেখেছি। আহারে সেই ছোট বেলা কোথায় হারিয়ে গেলো। পুরুনো ছবি দেখলে আমি ভয় পাই, কত দ্রুত বদলে যাচ্ছি আমরা।
আমার কপাল মন্ধ, বেশি পাকনা পোলা ছিলাম, দাবা খেলা, ষোলগুটিতে কেউ পারতো না আমার সাথে, তাই খেলতো না। তবে দাইড়াবন্ধা, হা ডু ডু , গোল্লাছুট কত খেলেছি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পড়ার আগেে এক দান খেলা শেষ করে তবেই বাড়ি ফিরতাম।