পড়ন্ত বিকেলের চকচকে দিগন্তরোদে চোখ রেখে নয় , নয় কোন চূর্ণী নদীতীরে নাট-মন্দিরের দাওয়ায় বসে সূর্যাস্ত চোখে মাখা।গুমোট গরমের সমাপ্তি এক পশলা বৃষ্টিতে। সতেজ সুশীতল স্বস্তিরতার শেষ বিকেল।
বোকা বাক্সের মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ চালু রেখে বই মন্দিরে ঝানু ঝাড়পোছ। এটিকে তৈলাক্তকরণও বলা যেতে পারে , অবশ্যই ক্যানাবিস(cannabis) ঘি বা তৈল সহযোগে নয়। অবস্থা হাল্কা কর্দমাক্ত ।
খুটখুট ক্ষীণ শব্দ কাচ ঘেরা সাত বাই বারো ফুটের বিশাল জানলার দিক থেকে। জানলার ওপাশে বাহারি সবুজ বৃষ্টিস্নাত ডানা মেলে রেখেছে।’ও কিছু না ‘ ভেবে কাজের মন কাজেই ফিরে যায়। আবার খুট খুট শব্দ হতেই তাকিয়ে দেখি ছোট্ট একটি নাম না জানা পাখি ততোধিক ছোট ঠোঁট দিয়ে কাচে ঠুকে শব্দ করছে। এরপর প্রায় কাচের সাথে চোখ মিলিয়ে ঘরের ভিতরে এদিক দিক তাকিয়ে কী যেন খুঁজছে মনে হোল। ক্ষুদ্র চোখে খোঁজার ঔৎসুক্য দেখে অবাক হলাম। সমস্ত মনোযোগ একীভূত করে লক্ষ্য করতে থাকলাম। পাখিটির চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝতে পারছি আমাকে দেখতে পায়নি। যেহেতু সামান্য দূরত্বে ও আধো আলোয় আমার অবস্থান। চোখ তুলে নিয়ে এখন নিজ মনে জানলার পাশে হাঁটাহাটি করছে ও পিচ্চি ঠোঁট তুলে বিচিত্র শব্দ করছে , এটি ওদের গান কিনা কে জানে , শুনতে মন্দ না। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখছি চোখ না সরিয়েই। গান হঠাৎ যেমন শুরু হয়েছিল আবার তেমন করেই বন্ধ করে দিয়েই আবার কাচে খুট খুট করেই সরাসরি আমার দিকে তাকাল , আমাকে দেখে ফেলেছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল , মনে হল যা খুঁজতে এসেছে তা যেন সে পেয়েছে। অবাক করে দিয়ে হুট করেই উড়ে চলে গেল। আমি ঝিম মেরে বসে রইলাম ।
মুহূর্তের মধ্যেই ফিরে এলো আর একটি পাখিকে সাথে নিয়ে । এবারে কোন খুট খুট নয় , আমাকে দেখাচ্ছে ঐ পাখিটিকে।এরপর দু’জনে মিলে নেচে নেচে গান , গান ।
স্থাণু আমি ,আমাকে ফেলে দু’জনেই চলে গেল !
৩৬টি মন্তব্য
খসড়া
প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে একটি ধন্যবাদ পাওনা। চমতকার বর্ননা।
বনলতা সেন
আপনাকে কুটি কুটি ধন্যবাদ । আপনাকে মিস করি ,
আপনার লেখাকেও ।
প্রজন্ম ৭১
আপনার মাঝে নিশ্চয়ই কিছু আছে যে কারনে আপনাকে নাচ দেখালো। কিন্তু চলে গেলো কেনো ।
অনেক দিন পরে লগইন হলাম। প্রচুর নতুন ব্লগার, প্রচুর লেখা। ভালোই লাগছে সোনেলাকে দেখে। আপনাকে দেখেও ।
বনলতা সেন
ওরা আসেই চলে যাওয়ার জন্য । আমাদের স্থাণু করে দিয়ে।
অনেক নূতন জনেরা লিখছেন এখন ,ভালো লেখেন তারা। ভালো থাকবেন , অনেকদিন লিখছেন না আপনি ।
মশাই
কি যে বলতাম!!! গত কয়েকটি লেখাতে নিজ অবস্থান ছিল লেখার পিঠের সম্মুখে, প্রশংসা এড়িয়ে।কিন্তু আজকের লেখাতে সেই লাইন কোট করার সেই সুযোগ পেলাম না, কিছু কিছু শব্দবন্ধ অসাধারণ লেগেছে, শব্দের ব্যবহারে যে অনেক সচেতন ছিলেন তা বুঝাই যায়, প্রশংসা পাওয়ার দাবী রাখেন এই লেখনীতে।বহুমুখিতায় আমি হারিয়ে যাই তারপরও আজকের লেখাকে উচু মানের লেখা বলতে কুন্ঠিত হবার কথা নয় কারো।
বনলতা সেন
মন পবনের নাও , যখন যেদিকে ধায় আমিও সে দিকেই যাই ।
ছোট্ট লেখা হলেও নানা দিকে চোখ ফেলেছি । তবে প্রশংসা একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে ।
ভালো বলা গুণীদের কাজ । তা তারা করেই থাকে । করুক ।
উঁচু মান নিয়ে আমার সংশয় আছে ।
পড়লেন , লিখলেন । ভালই ।
জিসান শা ইকরাম
কাহিনী কি সবাই দেখি পাখি প্রেমি হয়ে যাচ্ছে সোনেলার 🙂
বনলতা সেন
মন পবনের নাও , যখন যেদিকে ধায় আমিও সে দিকেই যাই ।
ছোট্ট লেখা হলেও নানা দিকে চোখ ফেলেছি । তবে প্রশংসা একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে ।
ভালো বলা গুণীদের কাজ । তা তারা করেই থাকে । করুক ।
উঁচু মান নিয়ে আমার সংশয় আছে ।
পড়লেন , লিখলেন । ভালই ।
বনলতা সেন
ভুলে এটি এখানে দিয়ে ফেলেছি , আসলে মশাই এর মন্তব্যের উত্তর ।
বনলতা সেন
তাই তো দেখছি সাবাই পাখাল হয়ে যাচ্ছে ।
আমার লেখাটি কিন্তু পুরোন , তখন কিন্তু আপনারা পাখাল হয়ে আসেন নি ।
আমাদের জীবন পাখিময় । আমরা কখনও না কখনও পাখিদের সংস্পর্শে আসি ।
আবার পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও কম নয় । এরা আসে যাওয়ার জন্যই ।
কিছু পাখি আসে আমাদের মাঝে থেকে যাওয়ার জন্যই । আমরা তাদের ভালোবাসি ।
ওরাও ভালোবেসেই উঁকি দিয়ে খোঁজ রাখে ।
পড়ার জন্য শুভেচ্ছা ।
জিসান শা ইকরাম
” আমাদের জীবন পাখিময় । আমরা কখনও না কখনও পাখিদের সংস্পর্শে আসি ।
আবার পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও কম নয় । এরা আসে যাওয়ার জন্যই ।
কিছু পাখি আসে আমাদের মাঝে থেকে যাওয়ার জন্যই । আমরা তাদের ভালোবাসি ।
ওরাও ভালোবেসেই উঁকি দিয়ে খোঁজ রাখে । ” —- ভালো বলেছেন । একমত আপনার সাথে ।
বনলতা সেন
ভালো থাকুন ।
জিসান শা ইকরাম
কি গান শুনালো , তা আমাদের জানালেও পারতেন ।
বনলতা সেন
না , তা বলা ঠিক হবে না । ঐ গানটি ছিল শুধু আমার জন্যই ।
জানলাম সোনেলার ফেডারেশনে বিদেশে অবস্থানকারীরা ও আছে । বিদেশ যেতে পারলে ভালই হত ।
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা গান আপনি একাই উপভোগ করুন ।
জি, মডারেশনে দুজন আছেন যারা দেশের বাইরে থাকেন।
নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান এনারা 🙂
বনলতা সেন
তবে এসব মহিষাসুর লেখোয়ারদের সামলানো চাট্টিখানি কথা নয় ।
মহিষমর্দানা/মহিষমর্দিনী আপনাদের এই সব দেশী-বিদেশি কপালচক্ষুওয়ালা (third eye) শক্তিমান মডারেটরদের বিপ্লবী শুভেচ্ছা ।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা হা , এমন সম্বোধনে খুশীই হবেন তাঁরা ।
বনলতা সেন
যাক আশ্বস্ত বোধ করছি আপনার কথায় । যা ভয়ে ভয়ে ছিলাম ।
শিশির কনা
সাথী নিয়ে আসলো আবার চলেও গেলো? এরা কেন আমাদের একা রেখে চলে যায়?
বনলতা সেন
হঠাৎ একটু একা করেই ফেলেছিল । যায়নি তো । আবার আসবে বলেই চলে গেছে ।
একটু নিয়মিত হচ্ছেন দেখে ভালো লাগে ।
আগুন রঙের শিমুল
অসম্ভব সুন্দর প্রাঞ্জল বর্ণনা 🙂
বনলতা সেন
অবশ্যই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।
লীলাবতী
ঝাড়পোছে হাল্কা কর্দমাক্ত হয় কিভাবে? ^:^
বনলতা সেন
শীঘ্র ঝাড়পোছ করেছেন ? করলে বুঝতেন কর্দমাক্ত কাহাকে বলে ও কী কী প্রকার ।
তা আপনার চুপা বাক্সের খবরাখবর পাচ্ছি না অনেকদিন ।
লীলাবতী
আমার চুপাবাক্স এখন ফকফকা, কিছু নেই সেথায় 🙂
বনলতা সেন
আজব । যাদুর পর্দা টানিয়ে দিয়েছেন মনে হয় । তাও ভাল ।
স্বপ্নচারী
অসাধারন … কিছুটা এমন একটা আমার লেখা আছে, তবে এটা পড়ে মনে হল সে লেখা এটার তুলনায় আনেক কাঁচা … খুব ভাল লাগলো দিভাই … 🙂
বনলতা সেন
ভাল বা মন্দ নিয়ে কথা নয় ,আপনার লেখাটি আমাদের পড়ার সুযোগ দিন ।
পড়ছেন দেখে আনন্দ বোধ করছি ।
আমার আছে নীল
চলে যাওয়াটা খুব কষ্টের। এরা আসে আবার চলে যায়, এটিই মনে হয় নিয়ম।
বনলতা সেন
আমার কাছে কিন্তু খুব কষ্টের নয় । আমাকে খুঁজে পেয়ে ওর যে আনন্দ সেটা আমার
কাছে অনেক আনন্দের ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
ছাইরাছ হেলাল
সান্ধ্যকালীন বর্ণনায় অপূর্ব শব্দসম্ভার ও সমন্বয়ের যে কারুকাজ দেখালেন তা মনে রাখার মত ।
আপনার প্রতিটি লেখায় অন্য যা কিছুই থাকুক না কেন বিশেষ একটি বাক্য বা লাইন বা শব্দ এমন ভাবে জুড়ে দেন
সমস্ত লেখা জুড়ে সেটি আলোড়িত হতে থাকে । এ কোন প্রশংসার বিষয় নয় । এক ধরনের অবজারভেশন বলা যেতে পারে । নাট মন্দির ও দেখা হয়ে গেছে! আমাদের জন্য আর কিছুই বুঝি বাকী থাকল না ।
পাখিদের চোখের ভাষা বুঝে নিলেন ! সখ্যতার কথা না হয় বাদ ই গেল ।
বনলতা সেন
দুঃখিত , এমন মন্তব্যের উত্তর দেয়া ঠিক না ।
নিজের ভাষা বুঝতে পারলে পৃথিবীর তাবত প্রাণী সহ গাছ পালার কথাও বোঝা যায় ।
কথা বলাও যায় ।
প্রশংসা শুনলে ভালই লাগে । বেশি বেশি না হলেই আনন্দ ।
অলিভার
অবশেষে নিঃসঙ্গ সেই নিঃসঙ্গই থেকে যায়..
বর্ণনা চমৎকার হয়েছে 🙂
বনলতা সেন
আমি আবার নিঃসঙ্গতা প্রিয় মানুষ ।
চেষ্টা করেছি সাধ্যের মধ্যে , ভাল হলেই ভাল ।
ভাল থাকবেন ।
শুন্য শুন্যালয়
এতো মিস্টি একটা লেখা মিস করে যাচ্ছিলাম !!! cannabis থেকে দূরে থাকাই ভালো।
ছোট্ট পাখিটা যা খোঁজার পেয়ে গেছে। ইশ আপনাকে হিংসা হচ্ছে।
বাক্স বন্দি করে যে আর কি কি লুকিয়ে রেখেছেন কে জানে !!! অনেক সুন্দর।
বনলতা সেন
আপনি চাইলেও মিস করতে দিচ্ছে কে ? canabis নিয়ে পড়ছিলাম তাই লিখে দিয়েছি ।
আপনি পাখিদের নিয়ে যা করছেন তাতে আপনাকেই হিংসে করতে পারলে ভালো লাগত ।
বন্দি করতে আর রাখতে পারলাম কই , প্রায় সবই উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে যে আপনাদের কাছে ।
আপনার এই সুন্দর মন্তব্য না পেলে হয়ত লেখাটি অসম্পূর্ন থেকেই যেত। অনেক ধন্যবাদ।