
১৫/২০ ফিট একটি রুমে ২০/৩০ জন বসতে পারলেও সেখানে প্রতিদিন ১০/১২ জন নিয়মিত বসেন। মাঝে মাঝে ২/৩ জন সংখ্যায় বাড়ে মাঝে মাঝে কমে। সপ্তাহে ৫ দিন স্কুলের অভিভাবকদের এখানে থাকতে হয় বাচ্চাদের জন্য। অনেক সুখ, দুঃখ, আক্ষেপ, আহাজারি, হাসাহাসির মিলনায়তন এই রুম।
কিন্তু মুল বিষয় হলো , এখানে অনেকই আছেন গল্প করতে করতে নিজ গণ্ডি ভুলে আরেকজনের বেড রুমে চলে যেতেও দ্বিধা করেন না। ওর বান্ধবীর জামাই রান্না খারাপ হয়েছে বলে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে, চাচা শশুরের ছেলে খারাপ হয়ে গিয়েছে। কলিগের মেয়ের রান্না ভালো না। সোমার বাবা কি কলপ লাগায়। বেশির ভাগ সময়ই এসব নিয়ে গল্প হয়।
কারো কোন প্রকার বিনোদন এর দরকার হলে নিজে বিনোদন এর অন্য উপায় খুঁজুন। কারো ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে শুধু মাত্র সময় কাটানোর জন্য ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভালো। অনেক গোপন কথা আজ বিশ্বাস করে শুধু আপনাকেই বলেছে, বা কোন সমাধানের জন্য আপনাকে আপন ভেবে আপনার দ্বারস্থ হয়েছে আর আপনি নিছক সময় কাটানোর জন্য তা সবার সামনে মেলে ধরছেন। সাথে নিজের মুল্যবান সময় আর অপরের আপনার প্রতি বিশ্বাস নষ্ট করছেন।
দুই বন্ধু গল্প করছেন!! করুন। কিন্তু আরেক বন্ধু তার বান্ধবীর সাথে ফোনে কী বলে বা বন্ধুর দাম্পত্য জীবন কেমন তা নিয়ে তো আপনাদের আলোচনার কিছু নেই। এগুলো নিজেরা না বলে যাদের সমস্যা তাদের সামনে যেয়ে বলুন। আপনার সময়ের সৎ ব্যবহার এর সাথে তাদের উপকার হতে পারে।
কারো কাছের মানুষ বা প্রিয় পাত্র হওয়ার জন্য অন্য জনের গোপন বা স্পর্শকাতর কথা গুলো বলে ফেললেন আর ভাবলেন যে দেখ আমি তোমাকে কত আপন মনে করি তাই ওর এই ব্যাপারটা কেউ জানেনা তাও তোমাকে বললাম। একজনের পর কে কাছে টানতে যেয়ে অনেক কাছের মানুষকে কিভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন।
গল্পের সময়, গল্পের ছলে নিজেকে নিয়ে কথা বলুন, নিজের ভালো খারাপ, পছন্দ অপছন্দ , শখ, স্বপ্ন এসব নিয়ে আলোচনা করুন। অপরের টা জানুন। নিজ চর্চায় আপনি নিজেকে আরো ভালো করে জানতে পারবেন আর আপনার প্রতি অপরের বিশ্বাস ও দৃঢ় করতে পারবেন।
অন্যের ব্যাক্তিগত কথা না শুনেও আপনি আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারেন। যেমন, কেউ কিছু বলতে আসলে নিজে প্রথমে অনাগ্রহ দেখান। কাজ না হলে তাকে বুঝিয়ে বলুন। এতে আপনার মুল্যবান সময় বাঁচবে এবং আপনি বন্ধু বা প্রতিবেশী কেমন সেটাও তারা বুঝতে পারবে।
চাইলেই এই কঠিন পৃথিবীতে একটু সহজ করে বাঁচা যায়। চেষ্টা করলে ক্ষতি কি!!!
ধন্যবাদ
৩২টি মন্তব্য
তৌহিদ
বিষয়টি আসলেও ডিজগাস্টিং। আমি ছোট ভাইবোনদের একটা সময় স্কুল থেকে আনতে যেতাম। অপেক্ষা করতে হতো গার্জিয়ান শেডে।তখন ইচ্ছে না থাকলেও কানে আসতো একেকজনের হাঁড়ির খবর থেকে বেডরুমের কথা। সত্যি আমার লজ্জা লাগতো সে সময়।তাদের যেন সময় কাটানোর একটাই মাধ্যম, এসব গল্প করা। তাদের পাশে ছোট ছোট শিশুরাও সেসব শুনতো। একবারও ভাবেনা সে সব বাচ্চাদের মনে কি ইফেক্ট পড়বে!
ভালো একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন আপু। শুভকামনা রইলো।
শাহরিন
ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলে শুধু স্কুল না সব জায়গাতেই মানুষ এই কাজটি করে। দুই ভাই বোন মিলেও আরেক ভাই বা বোনের ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলে। যেখানে তাদের কোন ঘটনা বা সম্বন্ধ নেই। ঠিক বলেছেন সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত শিশুদের সামনে এসব কথা বলা ঠিক না।
তৌহিদ
শুভকামনা রইলো আপু। ভালো থাকবেন।
নাজমুল হুদা
অনেক সুন্দর একটি শিক্ষণীয় পোস্ট ।
ভালো লাগলো। সবাই চেষ্টা করি পাল্টে যাই
নিজের কোথায় ঘাটতি অনুসন্ধান করি ।
সুস্থ থাকবেন সবসময় 😍
শাহরিন
জ্বি, একটু একটু পালটানোর চেষ্টা করা যেতেই পারে।
ছাইরাছ হেলাল
অবশেষে গল্পের খনি খুঁজে পেলেন? যাক আমরাও হাফ ছেঁড়ে বাঁচলাম।
লেখা পাব নিয়মিত।
শাহরিন
শুধু খনি!! একটি রাজ্যের মতো ব্যাপার সেপার।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শিক্ষণীয় বিষয়।
বেশ ভালো লাগলো দিদি।
শাহরিন
অনেক ধন্যবাদ। ভালোভাবে ব্যাপারটি নেয়ার জন্য।
মনির হোসেন মমি
চমৎকার উপস্থাপনা।একজনের অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত।গীবত কবিরা গুণাহ থেকেও ভয়ংকর।তাই আমরা যেন কথা বলার সময় সংযত থাকি।খুব ভাল লাগল।
শাহরিন
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে একটু একটু পরিবর্তন হবে আশা করি। পাশে থাকবেন।
মনির হোসেন মমি
আমীন। অবশ্যই।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা…অনেক মজা পেলাম পড়ে। পড়তে পড়তে একটা গল্প মনে পড়ে গেল।
দশজন আলেম একসাথে হলে আল্লাহ রসুলের গুনগান ও শিফাত নিয়ে আলোচনা হয়।
দশজন রমনী একসাথে বসলে পুরা এলাকাটা পরচর্যার কারখানা হয়।
তবে নারীদের উচিত এ থেকে বের হয়ে আসা।
শাহরিন
ভাইয়া ছেলেরা কিন্তু কম না!!!
মোঃ মজিবর রহমান
অতো সহজে বাচব না। খারাপ হইনা একটু ক্ষতি কি আপু। নিন্দা পরনিদা থাকবেই। থাকুক। আমি খারাপ তাই ভাল কদর আছে থাকুকনা।
শাহরিন
জ্বি ভাইয়া কারো কারো খারাপ থাকার ব্যারাম এর পাশাপাশি অন্যের সুখ সহ্য না হওয়ার ও সমস্যা আছে।
মোঃ মজিবর রহমান
পাশাপাশি অন্যের সুখ সহ্য না হওয়ার ও সমস্যা আছে এইটা খাটি কথা
আরজু মুক্তা
পরচর্চা বাদ।
আসুন নিজের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবি।
শাহরিন
সহমত।
সাবিনা ইয়াসমিন
শুধু স্কুলে!! পরচর্চা ছড়িয়ে থাকে সব জায়গায়। নানা রকম অনুষ্ঠানে, চলতি পথে, শপিংয়ে, তাবলীগে, এমনকি উকুন মারার আসরেও কথা বলার একমাত্র বিষয়ই যেন পরচর্চা। যদি কেউ এতে একবার আসক্ত হয়ে পরে তাহলে আর ছাড়তে পারেনা। আর যারা এটাকে নিতে না পারে, সে অসামাজিকতার খেতাব পায়।
অনেক মানুষই আছে যারা বিশ্বাসের মূল্য দিতে জানেনা। কেউ হয়তো তাকে বিশ্বাস করে নিজের সমস্যার কথা শেয়ার করে। কিন্তু সে এটাকে বিনোদনের উপকরণ মনে করে ছড়িয়ে দেয় তার চারপাশে। এ ধরনের ব্যাক্তিদের মাঝে ব্যাক্তিত্ববোধ থাকেই না। যার মাঝে ব্যক্তিত্ব নেই সে বুঝবে কিকরে ব্যাক্তির সম্মান কেমন করে রক্ষা করতে হয়!!
নিজের কথা যাকে তাকে বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যের ব্যাপারে অহেতুক কৌতুহোল ত্যাগ করতে হবে। নিজ ব্যাক্তিত্ব নিজে ধরে রাখতে না পারলে অন্যের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
সুন্দর বিষয় নিয়ে অনেক ভালো লিখেছেন। আরও লিখুন। শুভ কামনা ও ভালোবাসা সব সময়ের জন্যে ❤❤
শাহরিন
সঠিক অন্যকে নিয়ে অহেতুক কৌতুহল বাদ দিতে হবে। তবে বিশ্বাস তো মানুষ আপনকেই করে। সে আপনই কেচাল টা বাধায়।
শবনম মোস্তারী
অনেক গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে লিখেছেন আপু।
ভালো লাগলো।
আমাদের সমাজে পরচর্চা করতেই সবাই বেশি পছন্দ করে। নিজের চেয়ে অন্যের হাঁড়ির খবর জানতেই সবাই আগ্রহী। যা খুবই দুঃখজনক।এ ব্যাপারে আমাদের সবার সচেতন হওয়া উচিত।
শাহরিন
অনেক ধন্যবাদ আপু পজেটিভ ভাবে বোঝার জন্য।
শিরিন হক
হাজির মন্তব্যে পড়ে করবো
শাহরিন
ধন্যবাদ আপু।
মোহাম্মদ দিদার
পরিবর্তন চাই পরিবর্তন।
শাহরিন
জ্বি এই পরিবর্তন খুবই দরকার।
মোহাম্মদ দিদার
বেশ শিক্ষনিয় লেখাটি
শাহরিন
অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিবেন।
নীরা সাদীয়া
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট লিখেছেন। সত্যি, আমরা এ কাজগুলো থেকে বিরত থাকলেই পারি। অন্যের চর্চা না করেও নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা যায়। তবে আজকাল বেশিরভাগ মানুষই পরচর্চা পছন্দ করে। সেটাতে যদি আপনি তাল দিতে না পারেন, তাহলে তারা আপনাকে কোণঠাসা করে ফেলবে, একা একা বসে থাকতে হবে। যদিও আমি বেশির ভাগ জায়গায় এটাই করি, চুপচাপ থাকি, ভয় হয়, কখন হরবর করতে গিয়ে আপনার বলা ঐ জঘন্য কাজগুলো করে ফেলি।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
আপু,খুব ভালো লিখেছেন।
শাহরিন
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।