আস্তাবলে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু যেতেই হবে, আর তো কোন উপায় নেই হাতে। সন্ধ্যার আগে পৌছতে না পারলে উটকো ঝামেলা হিসেবে শেয়ালের দেখা মিলবে রাস্তায়। তাই এখুনি ফিরে যাবার জন্যে রওনা দিয়ে দিলাম। জেসি একটু খোঁড়াচ্ছে আজ। এতটা পথ একসাথে এসেও আমার মত হাঁপিয়ে যায় নি জেসি। সামনের বাম দিকে পা’টা একটু একটু করে খোঁড়াচ্ছে। এই অবস্থায় ওর পিঠে চড়ে বসলে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। তাই লাগামে ধরেই হাঁটছি একসাথে।
রোদের তাপ কমে গেছে ঠিকই কিন্তু গরমটা ঐভাবে কমেনি। সার্ট ভিজে একেবারে চুপসে আছে শরীরের সাথে। জেসি একটু একটু হাঁপাচ্ছে এতক্ষণ পরে। বুঝতে পারছি আমার তেষ্টা থেকে ওর তেষ্টাটা আরও বেশি। কিন্তু উপায় কি। এখানে পানি পাওয়া সম্ভব না। অন্তত আরও মাইল খানিক যাবার পর একটা গ্রামে পৌছতে পারবো। তখন একটা ব্যবস্থা করা যাবে। কিন্তু এখন সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। খবরটা যদি এতক্ষণে আশে পাশের গ্রামেও পৌঁছে গিয়ে থাকে তবে দেখার সাথে সাথে না আবার গুলি চালিয়ে দেয়।
অপরাধ না করেও মানুষ অপরাধী হয়ে যায় চোখের পলকে। আমার চাওয়াটা যে অতিরিক্ত নয় সেটাই বোঝাতে পারলাম না তাদের। মুক্তি। নিজের মুক্তি চাওয়াটাও কি অপরাধ এই মানব সমাজে? বোঝেনি হ্যারি আর বোঝেনি আমার মতই বন্দী কার্লও। সে ঠিকই হ্যারির হয়ে আমার সাথে কথা-কাটাকাটি করেছে। আমি যখনই বললাম- “আমাকে এখন মুক্তি দাও। তোমার বন্দী হিসেবে চাকরের মত খেটে মরার জন্যে আমার জন্ম হয় নি।” তখনই কার্ল আমার বিপক্ষে চলে গেলো। অথচ কাল রাতেও আমরা একসাথে বসে আড্ডা দিয়েছি।
বন্ধু হুট করেই শত্রু বনে গেলো আদি চিন্তা ভাবনায় আটকে আছে বলে। হ্যারি কার্লের সমর্থন পেয়ে আরও ক্ষেপে গেলো আমার উপর। চাবুক ছুড়ে মারার চেষ্টা করলো। কিন্তু আমি সরে গিয়ে সেই আঘাত থেকে নিজেকেই বাঁচালাম। হ্যারি তো ছাড়ার মানুষ নয়। সে আরও বেশি পরিমাণে উত্তেজিত হয়ে গিয়ে কার্লের উপরও চাবুক চালাতে উদ্যত হল। চাবুক খাওয়ার পরও কার্ল তার অবস্থান থেকে সরল না। উল্টো আমাকে বোঝাতে লাগলো আমি যাতে ক্ষমা চাই আমার কথার জন্যে। এতটা নীচ চিন্তাভাবনা কিভাবে করে মানুষ? মার পর্যন্ত খাচ্ছে, তারপরও ঐ ব্যক্তির সাফাই কিভাবে দেয়??
ক্রোধে চোখ অন্ধকার হয়ে গেলো আমার। দ্বিতীয়বার চাবুকটা আমাকে তার মত স্পর্শ করার আগেই সেটা হাতে পেঁচিয়ে নিলাম। তারপর কিছু বোঝার আগেই হ্যাঁচকা টানে হ্যারিকে সামনের দিকে নিয়ে আসলাম। তাল সামলাতে না পেরে হ্যারি মাটিতে পড়ে গেল। আর তারপর কি ভাবে কি হল বুঝলাম না, শুধু দেখলাম ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
আমি আর দাড়িয়ে সময় নষ্ট করি নি। হ্যারির ঘোড়া জেসিকে নিয়েই ছুট লাগালাম। পেছনে হ্যারির দেহের উপর কার্ল অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে চেয়ে আছে এতটুকুই একবার শুধু পিছু ফিরে দেখলাম। যা বোঝার তাতেই বুঝে গিয়েছি। আমার এখন সরাসরি ফাঁসি হবে চ্যায়ারম্যানকে খুনের অপরাধে।
বেশ অনেকটা পথ আসার পর বুঝতে পারলাম আমাকে ঐ-স্থানে না পেয়ে বেচারা কার্লকেই ফাঁসিতে ঝোলাবে আমার অপরাধে। খুন না করেও যেমন আমি এখন খুনি তেমনি অপরাধ না করেও আমার চেয়ে বেশি অপরাধী হয়ে যাবে নির্দোষ কার্ল। নিজের সাথে অনেকটা সময় যুদ্ধ করলাম। একবার মনে মনে চিন্তা করলাম- “যা হয় হোক, কার্ল নিজেও ঐ হ্যারির সমর্থন করেছে। এখন জাহান্নামেও তার সাথেই যাক।” কিন্তু এই চিন্তা করে ২ কদমও এগুতে পারলাম না। পাঁজরে স্পর্শ করেই মনে হয়ে গেলো বেদম প্রহারের পর কার্ল কিভাবে আমার সেবা করতো। লতা পাতার মলম গুলি কিভাবে মেখে দিতো পাঁজরের এই প্রহারের ক্ষত খাঁজে।
তখন বুঝতে পারলাম আমার এই স্বাধীনতায়ও আমি বন্ধী থেকে যাবো কার্লের জীবনটার কাছে। আর সেটার অপরাধ বোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে যতক্ষণ না আমি মৃত্যুতে পতিত না হই। এর পরেই উল্টো এই পথটা ধরে হাটা শুরু করলাম। অন্তত কার্ল বন্দী হয়েও বেঁচে থাকবে, গোলাম হয়েই কাটাবে বাকিটা সময়।
আর আমি?
আমি তো বন্দিত্ব থেকে সত্যিকার অর্থেই মুক্তি পেতে যাচ্ছি সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে গিয়ে…..
(জানি না কেমন হয়েছে। তারপরও হিজিবিজি করে লিখলাম। লেখনী উন্নয়নের জন্যে পরামর্শ কামনা করছি)
২৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এক জন ওয়েস্টার্ন লেখককে নিজেদের মধ্যে দেখতে পেয়ে নিজের একটা সময়ে
ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।
আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন ?
সোনেলা আপনাকেই খুঁজছে ।
কেমন হয়েছে তা আমিও জানিনা তবে এতেই অনেক হয়েছে ,আমার অন্তত ।
স্বাগত এই অখ্যাত ব্লগে ।
অলিভার
ধন্যবাদ ভাইয়া। কিন্তু আমি আসলে ওয়েস্টার্ন লেখক না। গতকালই হুট করে এটা লিখলাম। এক্সপেরিমেন্টও বলতে পারেন। এই ধরণের লেখা গুলি লিখতে গেলে মোটামুটি বাইরের ঐ দুনিয়া সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকতে হয়। আমি এখনো ঐ পর্যন্ত পৌছতে পারি নি। তবে চেষ্টা তো অবশ্যই করবো। আর আপনারা তো আছেনই ভুল হলে সেগুলি ধরিয়ে দেবার জন্যে।
শুভ কামনা থাকলো ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম -{@
শুভকামনা
শুভ ব্লগিং ।
অলিভার
ধন্যবাদ জিসান ভাইয়া 🙂 অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্যে।
জিসান শা ইকরাম
ওয়েস্টার্ন একসময় টানতো প্রবল ভাবে আমাকে ।
কলেজ জীবনে প্রচুর পড়েছি ওয়েস্টার্ন।
খুব অল্প কথায় একটি সুন্দর গল্প উপস্থাপন করার জন্য মুগ্ধ হয়েছি।
ভালোবাসার বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়া যায়না আসলে।
ভালো লিখেছেন ।
অলিভার
ওয়েস্টার্ন আমি অনেক পড়েছি ব্যাপারটা এমন নয়। তবে অল্প কিছু পড়েছিলাম। কাল কিছু একটা লিখবো লিখবো করতে করতে এটা সামনে চলে আসলো। আর সেখান থেকেই লেখা। ভালো লেগেছে জেনে অনেক আনন্দ অনুভব করছি।
ব্লগার সজীব
প্রথম লেখায়ই আপনি আপনার জাত চিনিয়ে দিলেন । অত্যন্ত ভালো লিখেছেন ভাই (y) -{@
অলিভার
:D)
লেখার জাত ধর্ম থাকে না ভাইয়া। লেখা শুধুই লেখা। আর সেটা দিয়ে কারো জাত বের করতে গেলেই বিপদে পড়তে হয়।
কষ্ট করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।
শুভ কামনা থাকলো 🙂
মশাই
সোনেলায় স্বাগতম , এমন গল্প নিয়মিত পাব সেই আশা রাখি। -{@
অলিভার
ধন্যবাদ ভাইয়া।
নিয়মিত আমি দিতে না পারলেও নিয়মিত আপনাদের লেখা তো পড়তে পারবো -{@ (3
শুভ কামনা থাকলো 🙂
পুষ্পবতী
সোনেলায় স্বাগতম। ভালো লিখেছেন।ভালো লেগেছে। -{@
অলিভার
আপনাকেও ধন্যবাদ কষ্ট করে ছাইপাঁশ পড়ার জন্যে 🙂
শুভ কামনা থাকলো 🙂
ছাইরাছ হেলাল
ছবি নির্বাচন খুবই সুন্দর ।
অলিভার
ধন্যবাদ ভাইয়া।
গুগল যে ধরণের সহায়তা দেয় তাতে অনেক জিনিষ বের করাই সহজ হয়ে গেছে আমাদের জন্যে 🙂
বনলতা সেন
বুনো পশ্চিম মনে হচ্ছে । আমি পড়িনি ওয়েস্টার্ন সিরিজ । আশেপাশে পড়তে দেখেছি ।
এখন না হয় এখানেই পড়া শুরু করে দেব । চালু রাখতে হবে ।
অলিভার
ওয়েস্টার্ন আমিও হাতে গোনা কয়েটা পড়েছি মাত্র। সিরিজ গুলি শুরুর সময় একটু খাপছাড়া মনে হয়। তবে সেটা বেশিদূর গড়ায় না। একটু এগুতেই জেঁকে ধরে বসে। পড়ে দেখুন, ভালো লাগবে আশা করি।
শুভ কামনা থাকলো 🙂
মা মাটি দেশ
গল্প তো ভালই লাগল -{@ (y)
অলিভার
ধন্যভাদ ভাইয়া 🙂
শুন্য শুন্যালয়
বাহ দারুন !! আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি সোনেলা পরিবারে এবং চমৎকার এই গল্পের জন্য ৫ স্টার। অপেক্ষা করবো পরের পোস্টের।
অলিভার
ধন্যবাদ ভাইয়া। তবে গল্পটা ঐ অর্থে ততটা ভালো হয়নি বলে আমার নিজের কাছেই মনে হয়েছে। ওয়েস্টার্ন ধরা লিখতে হলে সে সম্বন্ধে অনেক জানতে হয়। আমার ততটুকু জানাশোনা নেই এখনো। চেষ্টা করবো ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে লিখতে।
শুভ কামনা থাকলো 🙂
শুন্য শুন্যালয়
আমরা যে কি লিখিলুখি পড়লেই বুঝতে পারবেন আপনি কতো ভালো লিখেছেন, আপনার জানার আগ্রহ আপনাকে অনেক দূরে নেবে। আপনার জন্যও শুভকামনা।
আগুন রঙের শিমুল
সেবার ওয়েস্টার্ন সিরিজ পড়তাম কিশোর বেলায়…
লেখাটায় আমার কৈশোরের সুবাস লেগে আছে …… স্মৃতি তারানিয়া সুবাস 🙂
অলিভার
ধন্যবাদ।
ওয়েস্টার্ন আমিও ঐ সময়টাতেই হাতে পেয়েছিলাম। অল্প কিছু যা পড়েছিলাম তা ঐ কলেজ জীবনেই।
শুভ কামনা থাকলো 🙂
আগুন রঙের শিমুল
🙂