টুইয়ের আজকাল খুব মন খারাপ থাকে। বড়ো হলে নাকি মন খারাপ বেড়ে যায়, সৌম্যতা বলেছে। সেটা ও একটু একটু করে বুঝতে পারছে। আগে কাঁদলেই মামনি দৌঁড়ে আসতো, এখন দূর থেকেই বলে, “এই কি হয়েছে? এত্তো বড়ো মেয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে। লজ্জ্বাও নেই। চুপ কর!” এতোই কি বড়ো হয়ে গেছে টুই যে কান্না পেলে কাঁদতেও পারবে না! খুব মন খারাপ হয়ে যায়। যদিও বাপি অনেক আদর করে, অফিস থেকে এসেই ডাকবে, “আমার পাখীটা কইরে?” ওই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে টুই। আর মামনি বলবে, “যত্তো আদিখ্যেতা! সারাটাদিন আমি যে কি নিয়ে থাকি, সে আমি-ই জানি।” বাপি কিছু বলেনা।
সেদিন কি হলো, স্কুলে যাবার জন্যে যেই রেডি হলো অমনি মাথা ঘুরে পড়ে পড়ে গেলো টুই। মামনি দৌঁড়ে এসে বকুনি, “দেখে চলতে পারিস না?” কি করে বলবে টুই হঠাৎ যেনো চারপাশ ঘুরতে লাগছিলো আর তারপর সব অন্ধকার। কপালের কোণা ফুলে ঢোল। গজগজ করছিলো আবার কোল্ড ব্যাগও চেপে ধরেছিলো ইন্দ্রাণী, টুইয়ের মা। স্কুলে ফোন দিয়ে ছুটি নিয়েছিলো। ইন্দ্রাণী যে স্কুলে চাকরী করে, টুইও সেই স্কুলেই পড়ে।
কিছুক্ষণের মধ্যে আবার বমি করলো, আর প্রচন্ড জ্বর। ডাক্তার ডেকে আনা হলো। প্রচুর টেষ্ট, কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলো না। রাতের পর রাত, দিনের পর দিন ইন্দ্রাণীর অস্থিরতা-যন্ত্রণা। টুইয়ের কষ্ট হচ্ছিলো খুব। কেন যে এমন অসুস্থ হলো।
—“সোনা খুব কষ্ট হচ্ছে?
টুই দু’দিকে মাথা নেড়ে না বললো। —কিছু খাবি? যা মন চায় বল।”
টুই অবাক। মামনিকে অনেকদিন রাগ করতে দেখেনি। তাই বললো, “ভ্যানিলা-ম্যাঙ্গো ফ্লেভার আইসক্রীম খেতে ইচ্ছে করছে। খেতে পারবো?”
কিছুক্ষণের মধ্যেই আইসক্রীম উপস্থিত। টুই যথেষ্ট অবাক। অসুস্থতা অনেক ভালো, এতো এতো আদর। শুধু একটাই খারাপ খেলতে যেতে পারছেনা। স্কুলে অনেক গল্প-আনন্দ সবকিছু মিস হচ্ছে। কিন্তু মামনির এই আদরটুকু যে পাচ্ছে, এটা কম কি! সৌম্যতা ভুল বলে বড়ো হয়ে গেলেই যে মন খারাপ বেড়ে যায়। এই যে এখন ও কতো বড়ো, ক্লাশ টু-তে উঠেছে। তারপরেও কতো আদর।
—“মামনি, কাঁদছো কেন? তুমি আমার চেয়ে এতো বড়ো হয়ে কাঁদছো? ”
ইন্দ্রাণী হেসে ফেললো। বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে বললো, “স্কুল যাবি? ডাক্তার বলেছে আবার তুই স্কুল যেতে পারবি।”
টুই চেয়ে রইলো। মামনি যখন শুধু বকতো, তখন একদিন বাপিকে বলতে শুনেছে,
—“আদর তো কম করোনা। এতো বকো কেন? কেজো আদরের চেয়েও অকাজের আদর সবাইকে টানে। মেয়েটাকে সেই আদর দিও।”
এভাবে কথা শোনা খুব বাজে। কিন্তু তাও সরে আসতে পারেনি। তবে কেজো মানে বোঝেনি। অকাজ শব্দটা মামনি প্রায়ই বলে, ওটাও বোঝেনা টুই। অবশ্য আর কিছু বোঝার দরকার নেই, এটুকুই চাওয়ার ছিলো। ইন্দ্রাণী আর টুইয়ের বাবা তিমির দুজনেই একসাথে টুইয়ের রুমে এলো। অনেক কথার মধ্যে টুই একটি প্রশ্ন করলো,
—“আচ্ছা বাপি কেজো আর অকাজের আদর কাকে বলে?”
—“কোথায় শুনেছিস কথাটা?”
—“তুমি মামনিকে বলছিলে শুনে ফেললাম। ইচ্ছে করে শুনিনি।”
—“দেখেছো কেন বকি তোমার মেয়েকে?” ইন্দ্রাণী বললো।
—“মামনি আয়াম স্যরি। এমন আর কখনো করবো না। প্রমিজ।”
ইন্দ্রাণী এবং তিমির হেসে ফেললো।
**জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো ছোটদের জন্য একটা গল্প লেখার চেষ্টা করলাম। প্রথম গল্পটি আমার ছেলের জন্য লেখা ওর জন্মের কিছুদিন আগে।**
হ্যামিল্টন, কানাডা
২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ইং।
২৬টি মন্তব্য
আবু জাকারিয়া
মা বাবার ভালবাসা ফুরায়না কিন্তু তারা হয়ত একদিন ফুরিয়ে যান। বেশি বেশি ভালবাসা উচিৎ মা বাবা কে। আপিক্ষতার কাছে হার মানা ঠিক নয়। বৃধ্য মা বাবা অনেক ক্ষেত্রে আপিক্ষতার স্বিকার হন। ভাল লাগল গল্পটা পড়ে।
নীলাঞ্জনা নীলা
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ…… আবু জাকারিয়া
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ছোটদের গল্প বেশ ভাল হয়েছে।পাখিদের মতো বাচ্চারা যখন শিশু থেকে কিছুটা হাটতে চলতে পারে তখন মা বাচ্চাদের কেবল দূরে ঠেলে দেয় আদরের ভিন্নতা দেখা যায় ঠিক তেমনি মানুষের বেলাও।মনে হয় এটা প্রকৃতির নিয়ম।তবে বাচ্চার প্রতি মায়ের ভালবাসার কোন কালেই কমতি থাকে না। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
সন্তানরা মা বাবার কাছে কখনো বড় হয়না……… মনির হোসেন মমি
প্রহেলিকা
প্রচেষ্টা বেশ ভালো হয়েছে, চালু রাখতে পারেন এতে করে আমরা কিছু সুন্দর গল্প পাবো, শুভেচছা জানুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখার জন্য সময় পাচ্ছিনা ভাই,হঠাৎ দু একটা লেখা আসে,লিখে ফেলি তা।ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার লেখায় প্রথম বা শেষ বলে কিছু দেখছি না। বরং চালু রাখলেই আমরা কিছু পেয়ে যাই
না পাওয়া লেখা।
ছেলে থাকুক মায়ের আদরের দুধে-ভাতে।
নীলাঞ্জনা নীলা
এত বড় সনদ দিলেন!ধন্যবাদ আপনাকে……ছাইরাছ হেলাল
খসড়া
আপনার অনুভূতি আপনি কত সাবলিল ভাবে লিখেছেন। দেখেছেন সারা বিশ্বেতো মায়ের অভাব নেই কিন্তু এভাবে কে লিখে বা লিখতে পারে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনি খুব ভালো লেখেন খসড়া।ধন্যবাদ।
নুসরাত মৌরিন
অনেক সুন্দর হয়েছে গল্পটি।অ-নে-ক। 😀
আমার তো এখনো শুধু মনে হয়,কেন মানুষকে বড় হতে হয়?বড় হলেই খুব বেশি মন খারাপ হয়। আর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদাও যায় না!! ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
আর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদাও যায় না!! 🙂 আমিও এমন ভাবি মৌরিন।ধন্যবাদ আপনাকে।
খেয়ালী মেয়ে
চমৎকার লিখেছেন (y) -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ খেয়ালী মেয়ে।
ব্লগার সজীব
সুন্দর একটি সুখি পরিবারের গল্প।হাসি খুশি আনন্দে কাটুক সবার দিন।
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ সজীব।
জিসান শা ইকরাম
মনে হচ্ছে আমার ছোট বেলার কাহিনী লিখলেন।
এখনো জ্বরকে মিস করি
জ্বর হলে আম্মা সারাক্ষন পাশে বসে
গরু দুধ আর পাউরুটির স্বাধ যেন এখনো লেখে আছে মুখে।
ছোটদের আবেগকে ভালো ভাবেই তুলে এনেছেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
এখনো ছোট হতে ইচ্ছে করে আমারো 🙂 ধন্যবাদ
লীলাবতী
আপু আপনি যা লেখেন তাই ভালো হয়ে যায়।আপনার হাতে যাদু আছে।আমার হাত একটু ছুঁয়ে দিন আপনি 🙂 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ছুঁয়ে দিলাম আপনার হাত লীলাবতী (3
স্বপ্ন নীলা
আমারই এখন ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আপু !! দারুন লেখা হয়েছে
নীলাঞ্জনা নীলা
মা বাবার কাছে আমরা এখনো ছোটই স্বপ্ন নীলা 🙂
তামান্না
সুন্দর তো
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ তামান্না।
তানজির খান
স্কুলে থাকতে কত বৃষ্টিতে ভিজেছি শুধু জ্বর আসবে সেই আশায়! কিন্তু আসেনি। শিশুতোষ গল্প ভাল লেগেছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
চেষ্টা করেছিলাম শিশুদের নিয়ে লিখতে। তবে অনেক কঠিন এটুকু বুঝেছি। ধন্যবাদ তানজির।