জাগরণে যায় বিভাবরী
———————————
খুব যখন ছোট আমি, বাড়িতে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো। ছিলো কিছু ক্যাসেট, যাতে ছিলো বিখ্যাত সব শিল্পীদের গান। মান্না দে, মোঃ রফি, তালাত মাহমুদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শচিন দেব বর্মণসহ অন্যান্যদের। আর ছিলো রবীন্দ্রসংগীত । সাগর সেন, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দোপাধ্যায়। অন্যান্য গানের চেয়ে রবীন্দ্রসংগীতই বেশি বাজানো হতো। তাই গান বলতে মূলতঃ রবীন্দ্রসংগীতকেই বুঝতাম তখন থেকেই। খেলাধূলা করছি, স্কুল করছি, করছি একটু আধটু লেখাপড়াও। আর শুনছি ধীরে ধীরে বেজে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান। খুব যে মনোযোগ দিয়ে শুনতাম তখন তা নয়, তবে ভালো লাগতো। কেন ভালো লাগতো, সেই ছোট্ট আমি বুঝতাম কি তা? না। তবে কেন জানি না, কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব, খুব মৃদু… খুব শান্ত….. খুব কোমল একটা অনুভূতি হতো।
তারপর যত দিন গেছে, বড় হয়েছি, অনেককিছু দেখেছি, জেনেছি। কিন্তু আমার ভালোলাগাটা ওই জায়গাতেই থেকে গেছে। আমি রবীন্দ্রসংগীত থেকে বের করে এনে অন্যকোথাও বসাতে পারিনি আমার ভালোলাগাটাকে। সেই খুব মৃদু, খুব শান্ত, খুব কোমল অনুভূতিটা ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছে এমন একটা ভালোলাগায়, যেটা শুধু অনুভব করা যায় চোখ বুঁজে। চোখ বুঁজে শুনতে শুনতে কখন যে চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রুধারা, বুঝতেই পারি না! এই অশ্রু, এ কী শূন্যতার অনুভব, নাকি আনন্দের, নাকি বেদনার, নাকি কোনো এক অলৌকিক প্রেমের! আমি জানি না। আমার কাছে সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়! কেমন করে জানবো, কেমন করে বলবো, কেমন করে বোঝাবো?
“দেখাতে পারিনে কেন প্রাণ
খুলে গো তারে……..”
কিংবা,
ক্ষমা করো মোরে, সখী
সুধায়ও না আর…..
কিংবা,
“ওরা সুখের লাগি চাহে প্রেম
প্রেম মেলে না
শুধু সুখ চলে যায়।
এমনই মায়ার ছলনায়……
এগুলো কি শুধুই সংগীত? আমার হৃদয়ের অজানা অলিগলিতে যে কথাগুলো গোপনে ঘুরে বেড়ায়, সেগুলো নয় কী? যা আমি প্রকাশ করতে পারি না, যে অনুভূতির প্রকাশ আমার পক্ষে কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়, সেগুলোই তো পাই ওই সংগীতে! সবকিছু ছাপিয়ে যে সূক্ষ্ম বোধ অনুরণন তোলে হৃদয়তন্ত্রীতে সেসবই রবীন্দ্রনাথ যত্ন করে লিখে গেছেন, দিয়েছেন সুর জাদুময়। আর সেই জাদুতে মোহাবিষ্ট করে গেছেন বিশ্ববাসীকে, সেখানে আমি তো নগণ্য ভীষণ! আবিষ্ট হবো….. হতেই থাকবো, নিশিদিন। নিশিদিনের এই আবেশ কখনও কখনও নতুন মনে হয়, মনে হয়….পেয়েছে নতুন মাত্রা, নতুন পথ। যেমন আজ ভোরবেলায়….. ঠিক যেন বিভাবরী জাগরণের সমস্ত ক্লান্তি মুছে দিয়ে ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়ার পরশ বুলিয়ে দিলো। রবীন্দ্রনাথের কোনো গান বাঁশির সুরে সুরে বাজলো কানে, আমি আবারও ভালোলাগায় আবিষ্ট হলাম নতুন করে….. আবারও! কেমন করে বসাই বলো, আমার এ ভালোলাগা, অন্যকোথাও…. অন্য কোনোখানে?
২৫টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে আমার অনুভব আপনার মতই,
কনিকা, সুচিত্রা, সাগর- এই তিনজন মনে হয় রবীন্দ্রসংগীত এর জন্যই তৈরী করেছিলেন সৃষ্টিকর্তা।
পোস্ট ভাল লেগেছে।
নিয়মিত লেখা চাই।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া
তৌহিদ
রবীন্দ্র সংগীত আমার নিজেরই খুব প্রিয়। যদিও এখন গান শোনার খুব একটা হয়না আর। তবুও মাঝেমধ্যে রবীন্দ্রসংগীত শুনি। মনে প্রশান্তি আসে।
শুভকামনা জানবেন আপু।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাই
ছাইরাছ হেলাল
একটু নিজের কথা না বলে পারছি না,
সব ধরনের গান-ই শুনি (এখন একটু কম), ক্লাসিকাল বেশি, ইন্সট্রুমেন্টাল অনেক।
অনেক ইংরেজি গান, দিন শেষ রবীন্দ্র সঙ্গীত একটু লাগেই।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া
এস.জেড বাবু
তেমন শোনা হয়না রবীন্দ্রসঙ্গীত ।
আসলে নিজে থেকে বাজিয়ে শুনা হয় না ।
তবে যখনি শুনি, ভালো লাগে। গুনাগুন করে তাল মেলানো হয়।
চমৎকার লিখেছেন। মুগ্ধতা
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছু গানে প্রান থাকে,
কিছু গান হৃদয়ের আয়না হয়,
কিছু গান প্রানের কথা বলে,
কিছু গান শুধুই গান হয়…
গান আমারও ভালো লাগে।
শুভ কামনা, ভালোবাসা 🌹🌹
রেহানা বীথি
ভালোবাসা দিলাম
মনির হোসেন মমি
এক সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত ছিলো ছেলে মেয়েদের চারিত্রীক গুণাবলী বাছ বিচারের ক্ষেত্রে।কেউ দি রবীন্দ্র সঙ্গীতকে পছন্দ করত অথবা গান শুনতো অনেকে ভাবততো সে খুব ভাল মনের মানুষ।রবীন্দ্র নজরুল আমারও খুব পছন্দের ছিলো। এ সব গান কখনো হারিয়ে যায় না,বার বার ফিরে আসে নতুনত্বে। খুব ভাল লাগল ।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
সুরাইয়া পারভিন
আমি কখনো গান শুনতাম না।কেনো জানি গান সবসময় বিষণ্ণতার কালো ছায়ায় ঘিরে ফেলে আমার মন মনন।দু’চোখে অশ্রু ঝরায় অবিরত
যেনো মনে হয় কতো কিছুই হারিয়ে নিঃসঙ্গ এক মানুষ আমি।আমার গান ভালো লাগে না।
কিন্তু আপনার গান প্রীতি জেনে দারুণ লাগলো
রেহানা বীথি
অনেক ভালোবাসা
অনন্য অর্ণব
মোহনা’কে বলে দিও….
গান আমার ভীষণ প্রিয়।
আর দরাজ গলায় ইন্সট্রুমেন্টলেস গান যদি কেউ গেয়ে শোনায়, তবে আমি যেন তার হয়ে যাই❤️
শিরিন হক
মন খারাপদের রসদ হলো গান।মন ভালোকরার জন্য গান। গান যেনো জীবনের একটা পার্ট।
রেহানা বীথি
অনেক ভালোবাসা
শামীম চৌধুরী
আপনার লেখা পড়তে পড়তে রবীন্দ্র সংগীতের অনেক গান মনে পড়লো। আবার গুন গুন করে গাইলামও। মাঝে মাঝে আরো কবিদের নিয়ে লিখবেন। যেন আমি হারিয়ে যেতে পারি।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া
মাহবুবুল আলম
“মান্না দে, মোঃ রফি, তালাত মাহমুদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শচিন দেব বর্মণসহ অন্যান্যদের। আর ছিলো রবীন্দ্রসংগীত । সাগর সেন, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দোপাধ্যায়।” এঁরা সবাই আমার প্রিয় শিল্পী। বেশ লিখেছেন। শুভেচ্ছা জানবেন!
রেহানা বীথি
শুভেচ্ছা আপনাকেও
অনন্য অর্ণব
আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন…
খুঁজি তারে আমি আপনায়…
দরাজ গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে এখনো নাওয়া খাওয়া ভুলে যাই। শুভ কামনা আপু❤️
রেহানা বীথি
শুভকামনা আপনার জন্যও।
আরজু মুক্তা
সংগীত মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। এ রকম অপসন নেই। ভালো লাগলেই শুনি।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন।