বাংলাদেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আজ আজ বুধবার সিংগাপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুকে বরন করে নিলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।
দেশ হাড়ালো এক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে । তাঁর এই চিরবিদায়ে তাঁর প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা । আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন।
জন্ম: মার্চ ৯, ১৯২৯
মৃত্যু :মার্চ ২০ , ২০১৩
বাংলাদেশের ১৮-তম রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ যাবৎ দেশের সবকয়টি আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এম এম রহুল আমিন তাঁকে বঙ্গভবনে শপথ বাক্য পাঠ করান। বাংলাদেশের ১৭-তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ।
জন্ম ও পরিবার
১৯২৯ সালের ৯ মার্চ জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্ত্রী আইভি রহমানও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার সহধর্মিনী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান। পারিবারিক জীবনে তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক।
শিক্ষা
জিল্লুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
রাজনীতি ও আন্দোলন
১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনসহ ‘৭৩, ‘৮৬, ‘৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে জিল্লুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ‘৯৬ এর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তিনি এলজিআরডি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমদের তত্তাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন তার পর থেকেই জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। নবম জাতীয় সংসদে জিল্লুর রহমান সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৮-তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ১৭-তম রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নবম সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় তার মেয়াদও দীর্ঘায়িত হয়।
সমস্ত তথ্য উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে নেয়া ।
১২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন ।
আল্লাহ তাঁর পরিবারকে এই শোক সইবার শক্তি দিন।
বনলতা সেন
আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন ।
শিশির কনা
শ্রদ্ধা এই নেতার প্রতি।
বনলতা সেন
জাতী চিরবিদায় জানালো আজ ।
যাযাবর
এমন সহজ সরল নেতা আজকাল নেই। আল্লাহ ওনাকে ভালো রাখুন ।
কারমরহুম সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য । মোমেনশাহী গ্রুপ থেকে নেয়া ।
সদ্যপ্রয়াত রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫২ সালে তিনি ফজলুল হক হল ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এক সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। সেই সভা থেকে একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ভাষা-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে ১৯৫৩ সালে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং তারসহ আটজনের এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেওয়া হয়। পরে ছাত্র-আন্দোলনের মুখে সরকার তাদের ডিগ্রি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ঐ বছরই তিনি আওয়ামি স্বেচ্ছাসেবক লিগের প্রধান এবং কিশোরগঞ্জ আওয়ামি লিগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬০ সালে জিল্লুর রহমান ঢাকা জেলা আইনজীবী-সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২-এর ছাত্র-আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয়দফা এবং ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন জিল্লুর রহমান। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তাকে বিশ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গণপরিষদ-সদস্য হিশেবে সংবিধানপ্রণয়নে অংশ নেন। ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদসদস্য নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পর তিনি আওয়ামি লিগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুহত্যার পর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে চার বছর কারাগারে থাকেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ সরকার গঠন করলে তাকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা করা হয়। তিনি একাধিকবার আওয়ামি লিগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও নির্বাচিত হন।
জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেডহামলায় আহত হয়ে দুদিন পরে মৃত্যুবরণ করেন তার স্ত্রী, আওয়ামি লিগের তত্কালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও মহিলা আওয়ামি লিগের সভাপতি আইভি রহমান।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনা কারাগারে যাবার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তিনি আওয়ামি লিগের দুঃসময়ের কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং আমৃত্যু দলীয় আনুগত্য পোষণ করা এই খাঁটি আওয়ামি লিগার ২০০৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
ভাষাসৈনিক, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের দুঃসময়ের সাথী, অবিসংবাদিত ও বর্ণাঢ্য রাজনীতিক, বাংলাদেশের রাজনীতির ঋষিতুল্য পুরুষ জিল্লুর রহমানের অন্তর্ধানে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা!
বনলতা সেন
এমন সহজ সরল নেতা আজকাল নেই। আল্লাহ ওনাকে ভালো রাখুন ।
এই মেঘ এই রোদ্দুর
উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি
বনলতা সেন
উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি
প্রজন্ম ৭১
কোন অহংকার ছিলনা ওনার। উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ।
বনলতা সেন
উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
প্রজন্ম ৭১
১৯ তম রাষ্ট্রপতি হবেন । সংশোধন করুন প্লিজ ।
বাংলাদেশের এই পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব যারা পালন করেছেন ।
১। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ ।
২। সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) – ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ৯ জানুয়ারি ১৯৭২ ।
৩। আবু সাইদ চৌধুরী – ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭৩ ।
৪। মোহাম্মদ উল্লাহ – ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ ।
৫। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৪ অগাস্ট ১৯৭৫ ।
৬। খন্দকার মোশতাক আহমেদ – ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ ।
৭। এস এম সায়েম – ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে ২০ এপ্রিল ১৯৭৬ ।
৮। জিয়াউর রহমান – ২১ এপ্রিল ১৯৭৬ থেকে ২৯ মে ১৯৮১ ।
৯। আবদুস সাত্তার (ভারপ্রাপ্ত) – ৩০ মে ১৯৮১ থেকে ১৯ নভেম্বর ১৯৮১ ।
১০। আবদুস সাত্তার – ২০ নভেম্বর ১৯৮১ থেকে ২৩ মার্চ ১৯৮২ ।
১১। এ এফ এম আহসান উদ্দিন চৌধুরী – ২৭ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১০ ডিসেম্বর ১৯৮৩ ।
১২। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ – ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ ।
১৩। সাহাবুদ্দিন আহাম্মদ (অস্থায়ী) – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯১ ।
১৪। আবদুর রহমান বিশ্বাস – ৯ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯৬ ।
১৫। সাহাবুদ্দিন আহাম্মদ – ৯ অক্টোবর ১৯৯৬ থেকে ১৪ নভেম্বর ২০০১ ।
১৬ । এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী – ১৪ নভেম্বর ২০০১ থেকে ২১ জুন ২০০২ ।
১৭। মুহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকার ( দায়িত্বপ্রাপ্ত ) – ২১ জুন ২০০২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০০২ ।
১৮। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ – ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ।
১৯। মো. জিল্লুর রহমান ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ২০ মার্চ ২০১৩ ।
বনলতা সেন
করেছি ভাইয়া ।