কই যামু কন???

রোকসানা খন্দকার রুকু ৫ জুলাই ২০২২, মঙ্গলবার, ০৪:৫৯:৩৯অপরাহ্ন রম্য ১৭ মন্তব্য

স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদ, ছুটি, আম,কাঁঠালের আমেজ চলছে চারদিক। ছুটি পেয়ে কেউ কেউ জমিয়ে খাচ্ছে, লিখছে, গান শুনছে আরও কতো কি?

আর আমার মন ভালো নেই! কেন জানেন? কথায় আছে না, অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা। তাই আমিও সবার ক্রাশ,হার্টথ্রব বিদ্যুৎ মিয়ার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু। আর সে আমাকে কোনভাবেই পাত্তা দিচ্ছে না।

কদিন আগেও সে আমার প্রেমে পড়বে পড়বে করছিল। নোরা ফাতেহী হায়! গারমী নিয়ে আসার পর থেকেই বিদ্যুৎ মিয়ার বাজার ভীষন চড়া হয়ে গেল। নোরার সাথে ইন্ডিয়াই গেল কিনা কে জানে?

এদিকে আমি তাকে পাবার জন্য পাগল। কি না করতেছি। ইন্ডিয়া থেকে আনা একেবারে খাঁটি Vivel Soap দিয়ে দিনে তিনবার গোসল করছি। গা ঘেমে থপথপে হয়ে যাচ্ছে, স্প্রে মেখে নিচ্ছি, তবুও তিনি ধরা দিচ্ছেন না। তাকে ছাড়া আমার এ যৌবন বৃথাই যায়, যায়,,,।

”যেওনা সাথী চলেছ একেলা কোথায়,,পথ খুঁজে পাবে না তো,, এ গান শুনিয়ে টুনিয়ে ঘন্টায় কথা না রাখা বিদ্যুৎ মিয়া কিছুক্ষন আগে এসেছিলেন। আমিও Vivel soap এ গোসল সেরে মাত্রই বেরিয়েছি। কি যে হলো, বিদ্যুৎ মিয়াকে Vivel  এর গন্ধ না শোকাতেই আসছি বলে তিনি আবার হাওয়া। কতোক্ষন পাকিস্তানী ফ্যানসহ, সব ফ্যান ছেড়ে দিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করলাম। এরপরও তিনি এলেন না।

তার জন্য ঘেমে যাচ্ছি। আইপিএস বেগমরে দিলাম গালি। সে বলে, আমি কি করতাম, আমি থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি? কাজ হইতো না। কারন বিদ্যুৎ মিয়া তো এ পাড়ায় থাকেনই না। আইপিএস বেগম আর প্রেম থুক্ক চার্জ হবেন কখন?

অগত্যা তার অপেক্ষা না করে হাওয়া- বাতাসের জন্য বাইরে বসে আছি। গ্রামের বাড়ি হাওয়া- বাতাসে কলিজা ঠান্ডা হবার কথা। সে হাওয়া- বাতাস এখন আর নাই। এ সময় বিদ্যুত মিয়া এলেন। দৌড়ে গিয়ে তাকে নিয়ে পাকিস্তানী স্ট্যান্ড ফ্যানের তলে ঢুকলাম। আহ্ কি শান্তি! কি শান্তি! চুল উড়ছে, শাড়ির আঁচল উড়ছে। কেবলই গান ধরেছি- “এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল, কখন যেন মেখে দিয়েছ,,,

পাশে থেকে কেউ চিৎকার শুরু করলো এই ধরো বারে, বাঁচাও বারে! কি যন্ত্রণা! বিদ্যুত মিয়া এসেছেন, কোথায় একটু, শান্তিতে আহ উহ্ করবো তাও করতে দিবে না।

ফিরে দেখি, ও মোর আল্লা! পঁয়ত্রিশ কেজি ওজনের আমার মায়ের পাকিস্তানি ফ্যানের বাতাস ম্যাক্সির ভেতরে ঢুকে উড়েই যায় যায়। তাকে খপ করে ধরে ফেললাম। জানে পানি এলো। ইন্ডিয়া মেখেও কাম হয় না, পাকিস্তানও সয় না। কি করমু!

 

হাঁড়িভাঙ্গা আম কিছু ফ্রিজে রাখা দরকার। উপযুক্ত করে ধুয়ে ন্যাকরা দিয়ে মুছে সংরক্ষণ করলাম। ও মা, পরদিন দেখি শুকনা আম আমার ঘেমে আমার মতো কালো হয়ে গেছে। যেখানে সেখানে পঁচা কালো ব্রণের দাগ।

ফ্রিজের গালে থাপ্পড় দিয়া কইলাম- তোমারে তাহলে বিদায় করি? কটা আমও রাখতে পারো না, তো তোমার আর কাম কি?

সে উল্টা আমারে ঝাড়ি দিল – জীবনে আম খান নাই? এতো আম রাখছেন। আপনের তো আক্কেল নাই! বিদ্যুত মিয়ার জন্য তো নিজেই হা করে থাকেন। দেখেন না, সারাদিন রাইত মিলে সে কয়বার আমার কাছে আসে? নিজে সারাদিন তার জন্য পথপানে চায়া থাইকা সে আসতে না আসতেই আপনের যতো ধারকরা পোলাপান ( মোবাইল, ওভেন, রাইস কুকার, কারী কুকার, ইস্ত্রি) লাগায় দেন। আবার নিজেও সাবান দিয়া গোসল দিয়া তার জন্য থাকেন। এতো সে নিতে পারে! সে রিরক্ত হয়ে চলে যায়। আপনের জন্য আমি একটু দেখতেও পারি না। আমাদের একটা চুমু পর্যন্ত হয় না।

বেচারী ফ্রিজের জন্য আমারই কান্না পেল। সেও দেখলাম কাঁদছে মানে ভিতরে জমে থাকা সব বরফ কষ্ট গলে পানি পড়ছে আরকি! বললাম বইন কি আর করবা, বিদ্যুত মিয়া যখন নাই তখন গইল্লা গইল্লা কাইন্দা নাও। পরে তুমারেও Vivel৷  Soap এ ডেটল মিশায়া গোসল করায়া দিমুনে।

ফ্রিজ আপায় কয়- বইন আর কিছু রাইখেন না, তাইলে আর আমারো বিদ্যুত মিয়ার অপেক্ষা করা লাগবে না। পারলে কোরবানীও দিয়েন না।

আমি তাকে স্বান্তনা দেবার ভাষা হারায় ফেললাম৷ আমারী তো অবস্থা – ” দিন গেল তোমার আশায় বসিয়া,,সহেনা যাতোনা,,,,

সন্ধায় আবার ইন্ডিয়ান Vivel Soap  এ গোসল সেরে ইন্ডিয়ান থ্রিপিস,ইন্ডিয়ান পন্ডস ক্রিম,ইন্ডিয়ান হোয়াইট টোন পাউডার মাইখা বিদ্যুত মিয়ার অপেক্ষায় সেজে বসে আছি।

” সখি কুন্জ সাজাও গো,আজ আমার প্রাণো নাথ আসিতে পারে,,,,,  সে এলেই গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।

আমার শখের বাসর আর হইলো না। দশটা বাজতে বাজতে সকল সজ্জা সর্বনাশ করে ঘেমে নেয়ে পন্ডস গলে গলে পড়লো। অবশেষে আস্তে আস্তে সব খুলে গেন্জি গায়ে বইসা গান ধরলাম – “সে যে কেন এলো না, কিছু ভালো লাগে না এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো,,,

আসলে তবেই তো মজা দেখামু? তার কোন খবরই নাই। এদিকে চোখেও ঘুমের লুটোপুটি খেলা। অগত্যা মেঝেতে শুয়ে পড়লাম। কোথা থেকে রেলগাড়ি মামা ধীর আর শান্ত গতিতে কানে ঢুকবার জন্য এগিয়ে আসছেন। আল্লাগো বাঁচাও! বলে আবার বিছানায় উঠলাম।

জানালা খোলা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা চলছে। হঠাত মনে হইলো, কদিন আগে ইন্ডিয়ান Vivo ফোনটা কিনেছি। কেউ যদি নিয়া যায় তাই আর সেটা খোলা রাখাও গেল না। জানালা লাগায়া চলতে থাকলো বিদ্যুৎ মিয়ার অপেক্ষা- ” ওগো সাথী আমার তুমি কেন বোঝ না,,,তুমি না এলে তো ঘুমাইতেও পারি না”।

 

অভ্যাস আর উঠতি বয়স বুঝলেন! মানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী ছুঁই ছুঁই। বিদ্যুৎ মিয়া ছাড়া বিছানাময় এপাশ আর ওপাশ করছি। বিদ্যুৎ মিয়ার অভাবে গা যেন জ্বলছে। বিছানায় গা লাগলেই তোশক কয়, – আগুন জালাইস না আমার গায়।

এতো কিছুর পরও রাতভর বিছানায় গড়াগড়ি। তোশকেরও তো একটা জীবন? রাতভর আর কতো সে বিদ্যুত মিয়ার প্রক্সি দেবে।

বালিশ বলে, কি গন্ধ রে বাবা! এই গন্ধ মহিলা, সর তো সর, ঘামতে ঘামতে আমারে একেবারে দলা বানায় দিলি। প্লাস্টিক গায়ে দিয়ে শুয়ে থাক!

বালিশ বিরক্ত হয়ে দিল ধাক্কা বিছানার গায়ে আর বিছানার এক লাথিতে আমি মেঝেতে ধপাস। মাগো, মা কোমরটা গেলরে!

বিছানা কয়- ” ৬৫ কেজির মহিলা, সরম করে না তোর। ঘুম না আসে, বাইরে গিয়া বইসা থাক। আমার উপরে এসে ঢলাঢলি, গড়াগড়ি করবি না। বয়স বাড়ে লজ্জা হয় না। তিনবার  Vivel Soap দিয়া গোসল কইরাও তোর বিদ্যুত মিয়া না আসলে আমি কি করবো? আর সে আসবে তার তো কোন কথা সে দেয় নাই।”

কথা সত্যই! সে তো আসবে কথা দেয় নাই। তবুও তো প্রতিমাসে প্রেম থুক্কু বিল নিয়া লাইনে দাঁড়াই। প্রেমে তো খরচা আছেই, কি কন?

অবশেষে, নির্ঘুম রাত আর ভাঙ্গা কোমরে ফোনই ভরসা। ইউটিউবে নোরা ফাতেহীর আগমন! আচ্ছা নোরা ফাতেহী কি পাকিস্তানী? ধুর কি সব পাকিস্তান আর ইন্ডিয়া করছি। আমার কি লাভ তা দিয়া! আমার দরকার ‘ বিদ্যুৎ মিয়া’।

কেবলই বরুন ধাওয়ান এসে বলছে, কই এসি চালাদো ভাই, ইতনি গারমী কিউ হ্যায়,,? এদিকে বেহায়া Vivo ফোনও বিদ্যুত মিয়ার অপেক্ষায় বলছে, ব্যাটারী চার্জ ১%!!!

থাকেন গোসলে যাই। অন্যকিছু আবার ভাইবেন না। বিদ্যুৎ মিয়া এখনও আসেন নাই। তিনি না এলেও গোসল ফরজ হয়!!!

ছবি- নেটের।

৭০২জন ৫০২জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ