একুশ বছর পরে

রিমি রুম্মান ৫ এপ্রিল ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৮:৩৫:১২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৫ মন্তব্য

আমার সুস্থ সবল মায়ের আকস্মাৎ মৃত্যুর খবরে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে দিশেহারা আমি হুট করেই দেশে যাবার সিদ্ধান্ত নেই। সংসার, সন্তান, দায়িত্ব সব ছেড়ে ছুঁড়ে কয়টাদিন ভাইবোন দু’টির সাথে থাকতে ইচ্ছে হলো। বাবার বাড়ি গিয়ে পড়ে থাকতে ইচ্ছে হলো। মা-বাবা’র কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকতে মন চাইলো। অবাধ্য মনের, সব নিয়ম ওলট-পালট করা চাওয়া ! ব্যাগ গুছাই। দু’বছরের রিহানকে নিয়ে তীব্র মন খারাপের মাঝে দেশে যাচ্ছি। শাশুড়ি কাছে এলেন। কিছু হাতে গুঁজে দিলেন। চেয়ে দেখি। গুণে দেখি ১৫০০ ডলার। বলি, “আম্মা, এতো টাকা দিয়ে কি করবো !” আম্মা বললেন, “দেশে গেলে তো লাগে, রাখো “।

আম্মা চাকুরী করেন না। টাকা কোথায় পেলেন ! জানি, মায়েদের চাকুরী না করলেও কিছু সঞ্চয় থাকে। একটু একটু করে জমানো সঞ্চয়। নিজের সমস্ত শখ, চাওয়া-পাওয়া’কে উপেক্ষা করে জমানো সঞ্চয়। সেই তিল তিল করে জমানো সঞ্চয়টুকু প্রয়োজনের সময় বিলিয়ে দিতে এতটুকু কার্পণ্য করেন না।

এটি আজ থেকে বছর চারেক আগের কথা। এই চার বছরে পৃথিবী বদলেছে। বদলেছে কতো কি-ই। কিন্তু আমার ভেতরের অনুভূতিরা বদলায়নি আজো। আমার এতটুকু জীবনে অনেক পাওয়া, অনেক অর্জন আছে যদিও, কিন্তু সেই পনর’শ ডলার সব পাওয়াকে ছাপিয়ে একই রকম অনুভূতি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় যখন তখন। এ-তো শুধু সামান্য কিছু অর্থ নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে পুত্রবধূর প্রতি একজন শাশুড়ির অগাধ স্নেহ, মমতা। বুকের গহীন থেকে উঠে আসা ভালোবাসা।

গতকাল আম্মাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ওয়েটিং এরিয়াতে বসে থাকবার সময় টুকটাক আলাপ জমানো পাশের এক রোগী বললেন, “আমি তো ভেবেছিলাম আপনারা মা-মেয়ে”। আমরা দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে মৃদু হাসি। উপভোগ করি। মনে পড়ে, যখনই পরিবারসহ দেশে যাই, দীর্ঘ ভ্রমনে পাশের সহযাত্রীরা আম্মাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার মেয়ে ?”, কিংবা আমার পাশেরজন জানতে চায়, “আপনার মা ?”। সেই সময় বুকের ভিতরটায় সীমাহীন এক আনন্দ খেলে যায়। পৃথিবীর অন্যসব আনন্দের চেয়ে ভিন্ন এক আনন্দ। একজীবনের সেরা কিছু পাওয়ার আনন্দ। আমি নিশ্চিত জানি, ওই দূরের আকাশে বসে আমার বাবা-মা এসব দেখে খুশি হবেন। ভীষণ খুশি। কেননা, তাঁরাই আমাকে শিখিয়েছেন, কেমন করে অন্য মা’কে ভালবাসতে হয়, আগলে রাখতে হয়, সন্মান জানাতে হয়।

আজ থেকে একুশ বছর আগে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমি আমার চিরচেনা শহর, বাবা-মা, ভাই-বোন, খেলার সাথী সব ছেড়ে নতুন এই পরিবারটির অংশ হয়েছিলাম। শুভ একুশ বসন্ত। (3

শুভকামনা পৃথিবীর তাবৎ মায়েদের জন্যে।
শুভকামনা সকলকে।

৪২২জন ৪২১জন
0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ