আমার সুস্থ সবল মায়ের আকস্মাৎ মৃত্যুর খবরে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে দিশেহারা আমি হুট করেই দেশে যাবার সিদ্ধান্ত নেই। সংসার, সন্তান, দায়িত্ব সব ছেড়ে ছুঁড়ে কয়টাদিন ভাইবোন দু’টির সাথে থাকতে ইচ্ছে হলো। বাবার বাড়ি গিয়ে পড়ে থাকতে ইচ্ছে হলো। মা-বাবা’র কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকতে মন চাইলো। অবাধ্য মনের, সব নিয়ম ওলট-পালট করা চাওয়া ! ব্যাগ গুছাই। দু’বছরের রিহানকে নিয়ে তীব্র মন খারাপের মাঝে দেশে যাচ্ছি। শাশুড়ি কাছে এলেন। কিছু হাতে গুঁজে দিলেন। চেয়ে দেখি। গুণে দেখি ১৫০০ ডলার। বলি, “আম্মা, এতো টাকা দিয়ে কি করবো !” আম্মা বললেন, “দেশে গেলে তো লাগে, রাখো “।
আম্মা চাকুরী করেন না। টাকা কোথায় পেলেন ! জানি, মায়েদের চাকুরী না করলেও কিছু সঞ্চয় থাকে। একটু একটু করে জমানো সঞ্চয়। নিজের সমস্ত শখ, চাওয়া-পাওয়া’কে উপেক্ষা করে জমানো সঞ্চয়। সেই তিল তিল করে জমানো সঞ্চয়টুকু প্রয়োজনের সময় বিলিয়ে দিতে এতটুকু কার্পণ্য করেন না।
এটি আজ থেকে বছর চারেক আগের কথা। এই চার বছরে পৃথিবী বদলেছে। বদলেছে কতো কি-ই। কিন্তু আমার ভেতরের অনুভূতিরা বদলায়নি আজো। আমার এতটুকু জীবনে অনেক পাওয়া, অনেক অর্জন আছে যদিও, কিন্তু সেই পনর’শ ডলার সব পাওয়াকে ছাপিয়ে একই রকম অনুভূতি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় যখন তখন। এ-তো শুধু সামান্য কিছু অর্থ নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে পুত্রবধূর প্রতি একজন শাশুড়ির অগাধ স্নেহ, মমতা। বুকের গহীন থেকে উঠে আসা ভালোবাসা।
গতকাল আম্মাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ওয়েটিং এরিয়াতে বসে থাকবার সময় টুকটাক আলাপ জমানো পাশের এক রোগী বললেন, “আমি তো ভেবেছিলাম আপনারা মা-মেয়ে”। আমরা দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে মৃদু হাসি। উপভোগ করি। মনে পড়ে, যখনই পরিবারসহ দেশে যাই, দীর্ঘ ভ্রমনে পাশের সহযাত্রীরা আম্মাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার মেয়ে ?”, কিংবা আমার পাশেরজন জানতে চায়, “আপনার মা ?”। সেই সময় বুকের ভিতরটায় সীমাহীন এক আনন্দ খেলে যায়। পৃথিবীর অন্যসব আনন্দের চেয়ে ভিন্ন এক আনন্দ। একজীবনের সেরা কিছু পাওয়ার আনন্দ। আমি নিশ্চিত জানি, ওই দূরের আকাশে বসে আমার বাবা-মা এসব দেখে খুশি হবেন। ভীষণ খুশি। কেননা, তাঁরাই আমাকে শিখিয়েছেন, কেমন করে অন্য মা’কে ভালবাসতে হয়, আগলে রাখতে হয়, সন্মান জানাতে হয়।
আজ থেকে একুশ বছর আগে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমি আমার চিরচেনা শহর, বাবা-মা, ভাই-বোন, খেলার সাথী সব ছেড়ে নতুন এই পরিবারটির অংশ হয়েছিলাম। শুভ একুশ বসন্ত। (3
শুভকামনা পৃথিবীর তাবৎ মায়েদের জন্যে।
শুভকামনা সকলকে।
২৫টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শুভেচ্ছা ২১ বছরের জীবনকে -{@ পরকে যে আপন করতে পারেন সেই তো মানুষ।এমন দৃষ্টান্ত খুবই বিরল।
রিমি রুম্মান
পরকে আপন করে নেয়ার মাঝে লাভ বই ক্ষতি নেই। ভাল থাকুন, অনেক ভাল। আশেপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে।
শুভকামনা… -{@
জিসান শা ইকরাম
আপনার এই প্রাপ্তি কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যাবে না, আপনি এমন এক শাশুড়ি মা পেয়েছেন……
আপনার শাশুড়ির প্রাপ্তি কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যাবে না, তিনি আপনার মত একজন মেয়ে পেয়েছেন……
আপনি আপনার শাশুড়ি মায়ের হৃদয়ে এমন এক স্থান অধিকার করেছেন, যে স্থানের জন্য তিল তিল করে জমিয়ে রাখা সঞ্চয় দিয়ে দিতে পারেন।
ভালো থাকুন আপনি সবাইকে নিয়ে, একান্ত আপন হয়ে,
রিমি রুম্মান
পরস্পরের প্রতি সহনশীল আচরন একটি সুন্দর সম্পর্ক, সুন্দর পারিবারিক আবহ তৈরিতে ভূমিকা রাখে, যা আমাদের সন্তানদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
ভাল থাকুন। শুভকামনা।
খসড়া
অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আরও ২১*৩=৬৩ বছর কাটুক পরম সুখে।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মায়েরা ভাল থাক, খুব ভাল আর আনন্দে থাক।
আর যে মায়েরা চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে তাদের জন্যও রইল দোয়া,।
আপনার আম্মা ও আপনার মধ্যে এত মধুর সম্পর্ক ঈর্ষনীয়। ভাল থাকুন আপনি, ভাল থাকুক আপনার আম্মা, ভাল থাকুক আম্মার আদরের ছেলে ও আপনার সন্তানেরা। শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন আপনিও আশেপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে।
শুভকামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
এটিই আতকার বাঁধন, আপনি অর্জন করেছেন শাশুড়ি হৃদয়ে বাঁধনে।
কম কথা নয়। কয়জন পারে বলুন?
রিমি রুম্মান
আমরা দু’জনে দু’জনার প্রতি সহনশীল বলেই সম্পর্কটি আজ এ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে।
আমরা একে অপরের সাথে সুখ দুঃখগুলো ভাগাভাগ করি, বিপদে এগিয়ে আসি।
ভাল থাকবেন সকলকে নিয়ে।
শুভকামনা। -{@
মৌনতা রিতু
সত্যি এমন শাশুড়ি পাওয়া ভাগ্য। এ দৃশ্য সত্যি অকল্পনিয়। যেখানে শাশুড়িরা মনে করে, ছেলের বৌ মানেই বাড়ির কাজের লোক। শুধু দ্বায়িত্বই করবে।
আপনি ও আপনার মা ভালো থাকুন। এই বন্ধন দৃঢ় থেকে দৃঢ় হোক। অনেক অনেক শুভকামনা।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন আপনিও।
শুভকামনা রইল, আপু।
আবু খায়ের আনিছ
শুভ কামনা আপনাদের জন্য। বউ-শাশুড়ির সর্ম্পকগুলো এমন হওয়াই উচিৎ।
রিমি রুম্মান
সম্পর্কগুলো এমন হতো সবখানে, যদি কোন একজন ধৈর্যশীল হত। মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা থাকতো। তবেই অন্যজন স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন হতে বাধ্য। কিন্তু কে হবে সেইজন ?
ভাল থাকুন। শুভকামনা।
ইলিয়াস মাসুদ
এমন যেন হয় পৃথীবিময়
রিমি রুম্মান
সেই কামনাই করি আমিও।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ব্লগার সজীব
আপু, আপনার পরম ভাগ্য যে আপনি এমন শাশুড়ি আম্মা পেয়েছেন। আপনার শাশুড়ি আম্মারও পরম ভাগ্য আপনার মত পুত্রবধূ পেয়েছেন।
আপনারা আদর্শ বৌ-শাশুড়ির উদাহরন হতে পারেন। আপনাদের দুজনের প্রতিই অশেষ শ্রদ্ধা আপু। লেখা পড়ে মনটা শান্তিতে পূর্ণ হয়ে গেলো। -{@
রিমি রুম্মান
অনেক শুভকামনা। আমার প্রকাশিত প্রথম বই ‘সুখের আকাশে বিষাদ রাত” উৎসর্গ করা হয়েছে শাশুড়িকে। আমার বাবা-মা নেই। তাঁদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাই। কিন্তু পৃথিবীর বুকে যিনি বেঁচে আছেন, তাঁকেও সঠিক সন্মানটুকু দিতে চাই।
ভাল থাকুন।
অনিকেত নন্দিনী
দুজনেই এক রকম বলে এমন আন্তরিক আর মজবুত সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এই সম্পর্ক সহসা দেখা যায়না। আপনারা দুজনেই অনেক ভাগ্যবতী বলে অমন জুটি হয়েছে। আমৃত্যু এমনটি টিকে থাকুক আপু। 🙂
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। সুস্থ থাকার চেয়ে সুন্দর কিছু নেই।
ছাইরাছ হেলাল
এমন মা ও মেয়ে বেঁচে থাকুক শত বছর।
রিমি রুম্মান
অনেক শুভকামনা রইল। দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত …
নীলাঞ্জনা নীলা
অভিনন্দন আপু। -{@
রিমি রুম্মান
ভাল থেকো, নীলাদি… -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
🙂 -{@
মেহেরী তাজ
খুব ভালো লাগলো এমন সম্পর্কের কথা জেনে! ভালো থাকুক এমন সম্পর্ক গুলো। ভালো থাকুন আপনারাও! 🙂
রিমি রুম্মান
শুভকামনা আপনার জন্যেও … 🙂