আহা শৈশব

জিসান শা ইকরাম ২৩ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৩৮:৩৯অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৪৫ মন্তব্য

শীতকালে ফজরের আজানের পরপরই ঘুম থেকে জেগে  স্কুলের খেলার মাঠে ব্যায়াম করতে যেতাম দলবেধে। ব্যায়াম করে বাসায় ফিরে ভিজিয়ে রাখা ছোলা বুট কাচা খেতাম, সাথে আদা এবং আখের গুর। অমৃত সম লাগত তা।

আমরা তিন ভাই প্রায় সম বয়সী। আমার বড় জন আমার পাঁচ বছরের বড়। তার বড়জন আমার সাত বছরের বড়। আমি যখন ক্লাস থ্রী তে পড়ি, আমার বড় দুই ভাই তখন ক্লাস এইটে একই ক্লাসে। শীতের সময়ে তাদের আরো বন্ধু বান্ধব সহ প্রায় বিশ জনের একটি গ্রুপ ব্যায়াম করার জন্য একত্র হতো এত ভোরে। আমিও ছিলাম এই গ্রুপে। সুগন্ধ্যা নদীর লাগোয়া পুরাতন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে বিভিন্ন ভাবে ব্যায়াম করতাম দলবেধেই।

সবাই একত্রিত হয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে সমবেত ভাবে গান গাওয়া হতো। যে গান গুলো সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর আমাদের সেই গ্রুপের কেউনা কেউ রচনা করতো। যেমন হঠাৎ একদিন ভোরে স্কুলের কাছাকাছি জেলে পাড়ার কাছে বিশাল চেচামেচি। গিয়ে দেখলাম একজন লোক গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঝুলে আছে গাছের ডালে, ইয়া বড় জিহবা বের হয়ে আছে। তার মেয়ে বিলাপ করে কান্না করছে। দেখে এত ভয় পেয়েছিলাম যা বর্ননায় প্রকাশ করার মত নয়। এই ভয় তাড়াতে আমাদের গ্রুপের একজন এমন ভাবে গান গেয়ে উঠলো যে হেসে আমরা অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। উচিত অনুচিত ভাবিনি, অন্ধকার ভোরে ভয় তাড়াতে হবে তাই এই গান অনেকদিন আমাদের প্রভাতী গান হয়েছিল। গানটি ছিলো ” জোতা জোড়া রাইখ্যা বাবো গাছে উঠিলো, একটা বিড়ি খাইয়া বাবো ভেটকি মারিলো। ”

আমাদের এই গ্রুপের একজন ছিল হাবিব। তাকে ঘুম থেকে জাগানো খুব কঠিন ছিল। ঘুম বেশি তার। তাকে বাসার দরজায় নক করে জাগানোর উপায় ছিল না। কারন তারা বাবা এটি পছন্দ করতেন না। নিশ্বব্দে তাকে জাগানোর পদ্ধতিটি ছিল অভিনব। একটি লম্বা নায়লনের সুতলি জানালার ফাক দিয়ে ঝুলানো থাকতো। সুতলির অন্য প্রান্ত বাঁধা থাকতো তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে। ভোর রাতে প্রথমবার জোরে এবং পরের দিবার আস্তে টান দিতাম আমরা। সে জেগে গেলে দুইবার সুতলি ধরে টান দিত। আমরা বুঝে যেতাম যে সে জেগেছে। জেগে পিছনের গেট দিয়ে রাস্তায় চলে আসতো সে। এভাবেই চলে আসছিল তাকে ঘুম থেকে জাগানো।

বিপত্তি বাধলো এক ভোরে। জানালায় ঝুলানো সুতায় তিনবার টান দেয়া হলো। হাবিবের কোনো সাড়া নেই। আর একবার টান দেয়ায় সুতলি চলে আসলো আমাদের দিকে। এমন তো হবার কথা নয়। হঠাৎ দরাম করে সামনের দরজা খুলে গেলো। দরজা লাগানোর লাঠ হাতে রুদ্র মুর্তিতে আমাদের দিকে ছুটে আসলেন হাবিবের আব্বা। মুখে খিস্তি ” হালার ফালারা আজ তোগো ব্যায়াম করা ছুডাইয়া দিমু। ” আমরা সবাই যে যেদিকে পারি দিলাম ছুট। কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারিনি। ঘটনা কি হয়েছিল তা জানা গেলো হাবিব স্কুলে আসার পরে। ঐ রাতে হাবিবের আব্বা দেখে জানালা দিয়ে একটি সুতলি হাবিবের রুমে চলে গিয়েছে। তিনি দেখলেন হাবিবের আঙ্গুলে সুতলি বাঁধা। সুতলি খুলে উনি নিজের আঙ্গুলে বাঁধলেন। এরপর তো ইতিহাস।

চলবে

১৮৭৯জন ১৬১৪জন

৪৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ