
শীতকালে ফজরের আজানের পরপরই ঘুম থেকে জেগে স্কুলের খেলার মাঠে ব্যায়াম করতে যেতাম দলবেধে। ব্যায়াম করে বাসায় ফিরে ভিজিয়ে রাখা ছোলা বুট কাচা খেতাম, সাথে আদা এবং আখের গুর। অমৃত সম লাগত তা।
আমরা তিন ভাই প্রায় সম বয়সী। আমার বড় জন আমার পাঁচ বছরের বড়। তার বড়জন আমার সাত বছরের বড়। আমি যখন ক্লাস থ্রী তে পড়ি, আমার বড় দুই ভাই তখন ক্লাস এইটে একই ক্লাসে। শীতের সময়ে তাদের আরো বন্ধু বান্ধব সহ প্রায় বিশ জনের একটি গ্রুপ ব্যায়াম করার জন্য একত্র হতো এত ভোরে। আমিও ছিলাম এই গ্রুপে। সুগন্ধ্যা নদীর লাগোয়া পুরাতন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে বিভিন্ন ভাবে ব্যায়াম করতাম দলবেধেই।
সবাই একত্রিত হয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে সমবেত ভাবে গান গাওয়া হতো। যে গান গুলো সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর আমাদের সেই গ্রুপের কেউনা কেউ রচনা করতো। যেমন হঠাৎ একদিন ভোরে স্কুলের কাছাকাছি জেলে পাড়ার কাছে বিশাল চেচামেচি। গিয়ে দেখলাম একজন লোক গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঝুলে আছে গাছের ডালে, ইয়া বড় জিহবা বের হয়ে আছে। তার মেয়ে বিলাপ করে কান্না করছে। দেখে এত ভয় পেয়েছিলাম যা বর্ননায় প্রকাশ করার মত নয়। এই ভয় তাড়াতে আমাদের গ্রুপের একজন এমন ভাবে গান গেয়ে উঠলো যে হেসে আমরা অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। উচিত অনুচিত ভাবিনি, অন্ধকার ভোরে ভয় তাড়াতে হবে তাই এই গান অনেকদিন আমাদের প্রভাতী গান হয়েছিল। গানটি ছিলো ” জোতা জোড়া রাইখ্যা বাবো গাছে উঠিলো, একটা বিড়ি খাইয়া বাবো ভেটকি মারিলো। ”
আমাদের এই গ্রুপের একজন ছিল হাবিব। তাকে ঘুম থেকে জাগানো খুব কঠিন ছিল। ঘুম বেশি তার। তাকে বাসার দরজায় নক করে জাগানোর উপায় ছিল না। কারন তারা বাবা এটি পছন্দ করতেন না। নিশ্বব্দে তাকে জাগানোর পদ্ধতিটি ছিল অভিনব। একটি লম্বা নায়লনের সুতলি জানালার ফাক দিয়ে ঝুলানো থাকতো। সুতলির অন্য প্রান্ত বাঁধা থাকতো তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে। ভোর রাতে প্রথমবার জোরে এবং পরের দিবার আস্তে টান দিতাম আমরা। সে জেগে গেলে দুইবার সুতলি ধরে টান দিত। আমরা বুঝে যেতাম যে সে জেগেছে। জেগে পিছনের গেট দিয়ে রাস্তায় চলে আসতো সে। এভাবেই চলে আসছিল তাকে ঘুম থেকে জাগানো।
বিপত্তি বাধলো এক ভোরে। জানালায় ঝুলানো সুতায় তিনবার টান দেয়া হলো। হাবিবের কোনো সাড়া নেই। আর একবার টান দেয়ায় সুতলি চলে আসলো আমাদের দিকে। এমন তো হবার কথা নয়। হঠাৎ দরাম করে সামনের দরজা খুলে গেলো। দরজা লাগানোর লাঠ হাতে রুদ্র মুর্তিতে আমাদের দিকে ছুটে আসলেন হাবিবের আব্বা। মুখে খিস্তি ” হালার ফালারা আজ তোগো ব্যায়াম করা ছুডাইয়া দিমু। ” আমরা সবাই যে যেদিকে পারি দিলাম ছুট। কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারিনি। ঘটনা কি হয়েছিল তা জানা গেলো হাবিব স্কুলে আসার পরে। ঐ রাতে হাবিবের আব্বা দেখে জানালা দিয়ে একটি সুতলি হাবিবের রুমে চলে গিয়েছে। তিনি দেখলেন হাবিবের আঙ্গুলে সুতলি বাঁধা। সুতলি খুলে উনি নিজের আঙ্গুলে বাঁধলেন। এরপর তো ইতিহাস।
চলবে –
৪৫টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
আগে হাজিরা।পরে মন্তব্য😊
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা, পড়ে মন্তব্য দিলেই চলবে।
সত্যি ঘটনা এটি 🙂
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা ভাই ঘটনা তো দারুন। খুব মজার। এমন শৈশব কী ভোলা যায়! খুব ভালো লাগলো। শুভকামনা রইলো অফুরন্ত
জিসান শা ইকরাম
আজকাল খুব ছোট বেলার স্মৃতি মনে পরে।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সেটাই , ছোটবেলায় ভাবতাম কবে বড় হবো আর এখন ভাবি কেন বড় হলাম। শুভ কামনা দাদা ভাই
জিসান শা ইকরাম
শৈশব এর স্মৃতি নিয়ে লিখতে পারো ছোটদি।
ফয়জুল মহী
দারুণ, সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ ।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ মহী ভাই।
শুভ কামনা।
ইসিয়াক
চমৎকার কথামালা। খুব ভালো লাগলো আপনার শৈশবের দিনগুলির স্মৃতি।
শুভকামনা।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ ইসিয়াক ভাই।
ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া নার্গিস
হা হা হা ভাইয়া, ভিষন মজার গল্প।
খুব হাসলাম পা’য়ে সুতা বাঁধা সেটা ধরে টান দিলে ঘুম ভাঙ্গানো..
দারুন বুদ্ধি তবে ভাগ্যিস মার খেতে হয়নি 😊
তবে আপনাদের গানেরও প্রতিভা ছিলো, সবমিলিয়ে অসাধারন লাগছে।
সুন্দর শৈশব গুলো বেঁচে থাকুক মনের কোঠায়, চির সবুজ এই ভাইটার জন্য জন্য দোয়া ও ভালোবাসা অফুরান।
ভালো থাকবেন ভাইজান,
শুভ কামনা রইল সবার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
মার দিবে কিভাবে? ছুটে পালিয়েছিলাম তো 🙂
ভাইকে দোয়ায় রাখবেন সারাক্ষন।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
জোতা জোড়া রাইখ্যা বাবো গাছে উঠিলো, একটা বিড়ি খাইয়া বাবো ভেটকি মারিলো।
আমি হাসতে হাসতে যখন শেষ, তখন নিচের প্যারাটা পড়ছিলাম আর বাকিটা ইতিহাস, হাসতেই আছি। 😂🤣🤣🤣
ছেলেবেলার স্মৃতি কথা তাও এমন মজাদার 😆😆
ধন্যবাদ ভাইজান, এই দুঃখের সময়ই নির্মল আনন্দ পেলাম।
জিসান শা ইকরাম
খুব বোরড হয়ে গেছি ভাইজান, তাই এমন স্মৃতিময় লেখা দিলাম।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
ইঞ্জা
ভাইজান এইসময় মনটাকে শক্ত রাখতে হবে, ফ্যামিলির সাথে আনন্দ করুন, সময় কাটানোর নিত্যনতুন পন্থা এপ্লাই করুন, লুডু, ক্যারাম খেলতে পারেন সবাইকে নিয়ে, যেমন আমি করছি।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
যতটা সম্ভব আনন্দের মাঝে থাকার চেস্টা করি।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
ইঞ্জা
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ নিশ্চয় আপনাদের সবাইকে হেফাজত করবেন ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
আমীন…..
ইঞ্জা
সুম্মা আমীন।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভয় তাড়াতে গান বানিয়ে ফেলতেন! তাও আবার গাছের ডালে লটকে থাকা লাশ দেখে? আপনারা দেখি পিচ্চিকালেই অনেক সাহসী ছিলেন। ঐ জিনিস দেখার পরে তো বড়ো-বুড়োদেরও গলায় আওয়াজ বের হওয়ার কথা না।
ঘুমন্ত বব্ধুকে ডেকে তোলার পদ্ধতিটা ভালো লেগেছে। আহারে, আগে যদি আমার এটা জানা থাকতো তাহলে কতই না উপকৃত হতাম!
শৈশবের রঙ্গীন দিনগুলো আমাদের অমুল্য সম্পদ। কত নির্মল প্রানবন্ত হয়ে স্মৃতির মণিকোঠায় জমা হয়ে থাকে! যেন আমাদের শেকড়ের কথা। তরতরিয়ে বেড়ে উঠতে উঠতে চোখের পলকে হারিয়ে যায় দিনগুলো। কিন্তু বেঁচে থাকার আনন্দটা রয়ে যায় সেই শেকড় আঁঁকড়ে।
আপনার শৈশবের গল্প পড়ে এখন আমারও বলতে ইচ্ছে করছে, আহা,শৈশব!
জিসান শা ইকরাম
লাশ দেখে ভয় তাড়াতেই এমন গান।
আরো বিভিন্ন গান আছে ছোটবেলার স্মৃতির স্টকে।
” তরতরিয়ে বেড়ে উঠতে উঠতে চোখের পলকে হারিয়ে যায় দিনগুলো।” – ঠিক বলেছেন। কখন হারিয়ে গেলো চোখের পলকে বুঝতেই পারলাম না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
কয়েকবার পড়লাম ‘আহা শৈশব’…..
খলবলিয়ে হৈ হৈ করে উঠলো চোখের পাতায় ফেলে আসা মাঠ ঘাট, নদীর পাড়, ওই চেনা পথ। খুব সক্কালে কাচা ছোলা, আখের গুড় আর আদা? অনেক ভালো অবস্থানে ছিলেন। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর পানীয় গেলাতো ঠেসে ধরে আমাকে আর আমার ছোটো ভাইকে আব্বা আম্মা। খুব সকালে বন্ধুদের ডেকে তোলার বিষয়টা দারুন মজা পেয়েছি। আমারো স্মৃতী মনে পরে গেলো আপনার এই লেখা পড়ে।
তবে চলবে* কথাটা লিখলেন না কেন?
আরো পড়তে চাই তো শৈশব স্মৃতী!
জানি আরো অনেক অনেক স্মৃতী আছে লেখার মতো। প্লিজ লিখে ফেলুন ক্রমশঃ।
ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন,নিরাপদে থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
চিরতার পানি খাওয়াত নাকি? 🙂 চরম তেতো চিরতার পানি।
আচ্ছা চলবে লিখে দিচ্ছি। তোমার মত পাঠক যখন লেখা পড়ে আরো লিখতে বলে, তখন না লিখে আর পারা যায়?
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
আপনার লেখা পড়ে আমারো ইচ্ছে জেগেছে, শৈশব নিয়ে কিছু লিখতে। কি খাওয়াতো আব্বা আম্মা সেখানেই বলবো না হয়।
জিসান শা ইকরাম
তাহলে তো খুবই ভালো হয়।
লিখে ফেলো শৈশব নিয়ে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
শৈশবের দারুণ স্মৃতি রোমন্থন ভালোই লেগেছে ভাই। ধন্যবাদ ।
জিসান শা ইকরাম
নিয়মিত আমার লেখা পড়ছেন দেখে কৃতজ্ঞ।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
ভালো থাকবেন।
সাদিয়া শারমীন
ভাইয়া এই রকম আরো স্মৃতি চারণ চাই আপনার কাছে। খুব মজা পেয়েছি আপনার ছেলেবেলার গল্পে।
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা আরো লিখবো,
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
ছেলেবেলার গল্প গুলো আছে যে সবার
লেখনী গুনে হয় ভারী মজাদার।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
কাব্য দিয়ে মন্তব্য আপনারই সাজে দাদা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হাহাহা দাদা
আমি হাসতে হাসতে শেষ।
আপনার শৈশবসঙ্গীতে শৈশবকাল এত মধুমাখানো।
তার সাথে গান ” জোতা জোড়া রাইখ্যা বাবো গাছে উঠিলো, একটা বিড়ি খাইয়া বাবো ভেটকি মারিলো। ”
আমার অনেক ভালো লাগছে।
আর এ কথা তো আর কী বলবো দাদা হালার ফালারা আজ তোগো ব্যায়াম করা ছুডাইয়া দিমু। ”।
এমন কথা যখন মনে হবে তখনি হাসতে থাকবো আমি।
জিসান শা ইকরাম
আমি নিজেও হাসি মাঝে মাঝে এসব স্মৃতি মনে এলে 🙂
ধন্যবাদ প্রদীপ,
ভালো থেকো সারাক্ষন।
তৌহিদ
বাহ! ভাই আর বন্ধুরা মিলে চমৎকার ব্যায়াম গ্রুপ হয়েছিলো বুঝতেই পারছি। ফাঁস নেয়া লাশ দেখে অনেকেই হতবুদ্ধি হন। আপনার সেই বন্ধুর বুদ্ধির তারিফ করতেই হন। না হলে সকলেই ভয় পেতেন নিশ্চিত। তবে পায়ে সুতা বেধে রাখার আইডিয়া কিন্তু দারুণ! একদিন টের না পেলে ব্যায়াম মিস হতে পারে।
স্মৃতিময় ছেলেবেলার এমন মজার ঘটনা পড়ে আনন্দিত হলাম ভাই। জানতে চাই এমন আরো স্মৃতিময় সব ঘটনা।
ভালো থাকুন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
গ্রুপটা আসলেই ভালো ছিলো ভাই। আজকাল এমন আন্তরিক গ্রুপ এর কথা ভাবাই যায় না। বর্তমান প্রজন্ম এমন নির্মল আনন্দ পেলোই না।
আরো কিছু স্মৃতি লেখার ইচ্ছে আছে।
শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
সোনালী দিনের গল্প।
আজকাল তেমন একটা চোখে পড়বেনা এমন বন্ধুত্ব, পরিবেশ আর স্বাধীনতা। সময়ের সাথে সাথে কৈশরের স্বাধীনতা আজ গৃহবন্দি।
মজার গল্প। ভালোলাগা রইলো ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
আজকাল এমন আন্তরিকতা আর নেই বাবু ভাই। আমাদের সন্তানরা জানলোই না এমন আন্তরিক আনন্দের কথা।
ভালো থাকবেন ভাই।
এস.জেড বাবু
অনেক মিস করি
সে স্বর্ণযুগ আর ফিরবে না কোনও কালে
জিসান শা ইকরাম
যা চলে যায় তা আর ফেরেনা ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
একটি টাইম মেশিন পেলে ভাল হতো ।
জিসান শা ইকরাম
টাইম মেশিন পেলে তো সারাক্ষনই শৈশবে বিচরণ করতাম 🙂
Mohammad Ali
অসাধারণ
আরজু মুক্তা
শৈশব হচ্ছে স্মৃতির আধার।
বড়ই মধুময়।
ভালো লাগলো
জিসান শা ইকরাম
অকৃত্রিম আনন্দময় ছিল শৈশব।
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
আপনার ছেলেবেলার কিছু স্মৃতির সাথে আমার মিল রয়েছে। মনে পড়ে গেল।