১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন হাজার হাজার মুক্তিকামী জনতা । ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে দেশকে স্বাধীন করার প্রত্যয়ে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি একতাবদ্ধ হয়ে পাক হায়েনাদের কবল থেকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলেন । এত রক্তপাত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের আর কোন জাতির জন্ম হয়নি।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব , অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী যোদ্ধার স্বীকৃতিস্বরূপ সাত জনকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক ” বীর শ্রেষ্ঠ ” পদকে ভূষিত করা হয় । ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের একটি অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেই সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের একজন।
১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তানে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়ানে কর্তব্যরত ছিলেন। জুলাই মাসের ৩ তারিখে পাকিস্তানে আটকে পড়া আরো তিনজন অফিসারসহ তিনি পালিয়ে যান । দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি ছুটে এসেছিলেন পাকিস্তানের দুর্গম এলাকা অতিক্রম করে। ভারতে এসে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ৭নং সেক্টরে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসাবে যোগ দেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের অধীনে যুদ্ধ করেন। বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখানোর কারণে তাঁকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বিজয় সুনিশ্চিত করেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন।
১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর, লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল ও ৫০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়া এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে মাত্র ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বারঘরিয়া এলাকা থেকে ৩/৪ টি দেশী নৌকায় করে রেহাইচর এলাকা থেকে মহানন্দা নদী অতিক্রম করেন। নদী অতিক্রম করার পর উত্তর দিক থেকে একটি একটি করে প্রত্যেকটি শত্রু অবস্থানের দখল নিয়ে দক্ষিণে এগোতে থাকেন। তিনি এমনভাবে আক্রমণ পরিকল্পনা করেছিলেন যেন উত্তর দিক থেকে শত্রু নিপাত করার সময় দক্ষিণ দিক থেকে শত্রু কোনকিছু আঁচ করতে না পারে। এভাবে এগুতে থাকার সময় জয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত তখন ঘটে বিপর্যয়। হঠাৎ বাঁধের উপর থেকে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের ৮/১০ জন সৈনিক দৌড়ে চর এলাকায় এসে যোগ দেয়। এরপরই শুরু হয় পাকিস্তান বাহিনীর অবিরাম ধারায় গুলিবর্ষন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর জীবনের পরোয়া না করে সামনে এগিয়ে যান। ঠিক সেই সময়ে শত্রুর একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় জাহাঙ্গীরের কপালে। শহীদ হন তিনি। এই জাতীয় বীর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরকে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ আঙিনায় সমাহিত করা হয়।
জাতীয় বীর শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালের ৭ ই মার্চ বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মোতালেব হাওলাদার। তিনি ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং ১৯৬৬ তে আই.এস.সি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮-র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন।
বরিশালের নিজ গ্রামের নাম তাঁর দাদার নামে হওয়ায় পরিবার ও গ্রামবাসীর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর ইউনিয়নের নাম ‘আগরপুর’ পরিবর্তন করে ‘মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর’ ইউনিয়ন করা হয়েছে ৷বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে , বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দান করা ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার ৷
১৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
স্যালুট শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ।
লেখা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ।
প্রজন্ম ৭১
আমাদের জাতীয় বীর যারা তাঁদের সবার কথা লেখার চেষ্টা করবো জিসান ভাই। প্রথমে বীর শ্রেষ্ঠ। এরপরে পর্যায়ক্রমে বীর উত্তম , বীর বিক্রম ও বীর প্রতীকদের নিয়ে পোস্ট দেব। আমাদের সবার জানা উচিৎ আমাদের জাতীয় বীরদের সম্পর্কে ।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই ভাল প্রচেষ্টার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
প্রজন্ম ৭১
আপনাকেও ধন্যবাদ ছাইরাছ হেলাল ভাই।
আদিব আদ্নান
এমন উদ্যোগ আমাদের আশাবাদি হতে সাহায্য করবে ।
প্রজন্ম ৭১
চেষ্টা করবো এখানে কিছু দেয়ার ।
জবরুল আলম সুমন
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই বাংলার এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে… আপনাকেও ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল পোষ্টটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
প্রজন্ম ৭১
আপনাকেও ধন্যবাদ জবরুল আলম সুমন ভাই ।
পেন্সিলে আঁকা পরী
প্রশংসনীয় উদ্যোগ !শুভেচ্ছা রইল।
প্রজন্ম ৭১
ধন্যবাদ , আপনাকেও শুভেচ্ছা।
শিশির কনা
শ্রদ্ধা জানাই আমাদের দেশের এই বীরকে। মন্তব্যের জবাবে দেখলাম আপনি সব বীরদের নিয়ে লিখবেন। প্রশংসনীয় উদ্যগ ।
প্রজন্ম ৭১
ইচ্ছে আছে সবার কথা লিখবার। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
লীলাবতী
শ্রদ্ধাঞ্জলী উনার জন্যে
প্রজন্ম ৭১
শ্রদ্ধাঞ্জলী এই বীরের জন্যে।
আজিম
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এই বীর শ্রেষ্ঠকে। অনেক শ্রদ্ধা করি এই বীরশ্রেষ্ঠকে।
অনেক ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক অনেক শ্রদ্ধা এই বীরের জন্য। জানা ছিলনা তেমন কিছু। অনেক আগের দেয়া দেখছি পোস্টটি। যাক তবু এটি রয়েছে। এবার আর এতো গ্যাপ দেয়া যাবেনা কিন্তু। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।