সোনেলায় আজ আমার দু’বছর পূর্ণ হলো। সেইসাথে এই লেখাটিও সোনেলা ব্লগে আমার দুইশততম লেখা। আমার জন্য এটি অনন্য অসাধারণ অনুভূতি যা ভাষায় লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। পাঠকদের সাথে আজকের লেখায় সোনেলায় নিজের বিচরণ নিয়ে কিছু অনুভূতি শেয়ার করতে চাই।

ব্লগ-ব্লগার-ব্লগিং এ তিনটি শব্দের সাথে পরিচিত হই ২০১৩ সালে যখন ঢাকার শাহবাগ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল। এরপরে বিভিন্ন ব্লগে ব্লগারদের লেখা পড়তে থাকি এবং আমার মনে ব্লগ সম্পর্কে অন্যরকম একধরনের অনুভূতি কাজ করা শুরু করে। মনের মাঝে গোপন ইচ্ছে উঁকি দিতে থাকে একদিন আমিও ব্লগিং করবো! অবশেষে পাঁচ বছর পরে এলো সেই সুবর্ণ সুযোগ, সোনেলায় লেখার আমন্ত্রণ।

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের দিকে সোনেলার জনপ্রিয় ব্লগার ইঞ্জা ভাই আমাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে সোনেলা ব্লগ সম্পর্কে জানান এবং ব্লগ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেন। যেহেতু ব্লগে আগে কখনো লিখিনি তাই আমি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। অন্যদিকে অনেক ব্লগের ভীড়ে সমসাময়িক বাংলা কোন ব্লগ ভালো, যেখানে রাজনীতি নেই তার খোঁজখবর করছিলাম। এর মাঝেই এদেশের দু’জন ব্লগারকে হত্যার ঘটনায় ব্লগাররা সহ সবাই অস্থির একটা সময় পার করছিল। এসব কিছু মিলিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম ব্লগিং করবো কি না? কিন্তু ইঞ্জা ভাই নাছোড়বান্দার মতো আমার পিছে লেগে রইলেন এবং উৎসাহমূলক অনেক কথা বলে মনে সাহস যুগিয়ে অবশেষে আমাকে রাজি করালেন সোনেলা ব্লগে লেখার জন্য।

ইঞ্জা ভাইয়ের কাছে আমার আগ্রহের কথা জেনে প্রিয় ব্লগার জিসান ভাই মে মাসের ২০ তারিখ নিজেই আমার ব্লগ আইডি তৈরী করে দিলেন। তার মনোমুগ্ধকর কথায় আমি ওনার ভক্ত হয়ে গেলাম, অনুপ্রাণিত হলাম। ফেসবুকে বন্ধু হলাম আমরা। তিনি সোনেলা সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন কিভাবে লগইন করতে হবে এবং লেখা পোষ্ট করতে হবে। এখনকার আর তখনকার সোনেলা ব্লগের ভিজুয়াল গেটআপে বিস্তর ফারাক। আমরা এখন ওয়েবের আধুনিক সংস্করণ ওয়ার্ডপ্রেসের সর্বশেষ সংস্করণে সোনেলায় লিখি যা দেখতে মনোমুগ্ধকর, ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ পাওয়া যায়। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের অন্যতম ব্লগার এবং ডেভলপার নাজমুল আহসান ভাইয়ের। গত দু’বছরে এটাও অনেক বড় প্রাপ্তি আমাদের।

নানাবিধ জড়তা ভয়ভীতি কাটিয়ে বুকে সাহস বেঁধে “হৃৎপিণ্ড” লেখাটির মাধ্যমে সোনেলায় প্রথম পোষ্ট দিয়ে আমার পথচলা সেই যে শুরু হল তা দেখতে দেখতে আজ দুইশততম পোষ্টের সাথে দুই বছর অর্থাৎ সাতশত ত্রিশ দিন, সতেরো হাজার পাঁচশত বিশ ঘন্টা, দশ লক্ষ একান্ন হাজার দুইশত মিনিট এবং তেষট্টি কোটি সাত লক্ষ দুই হাজারের বেশি সেকেন্ড অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে কোনদিক দিয়ে, মনে হচ্ছে এইতো সেদিন!

ব্লগে প্রথম এসে সোনেলার অন্যান্য সিনিয়র ব্লগার জিসান শা ইকরাম ভাই, ছাইরাছ হেলাল ভাই, ইঞ্জা ভাই, মনির হোসেন মমি ভাই, শুন্য শুন্যালয় আপু, রীতু আপু, নীলাঞ্জনা নীলা আপু, আগুন রঙের শিমুল ভাই, মজিবর ভাই, রিমি রুম্মান আপু সহ অনেক সিনিয়র ব্লগারদের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করলো এবং নিজের সকল জড়তা দূর হয়ে গেলো তাদের উষ্ণ আতিথেয়তায়। তারা সবাই আমাকে লেখা এবং ব্লগিং সম্পর্কে আন্তরিকভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

সাথে সাথে আমার সমসাময়িক ব্লগারগণ আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন একান্ত আপন হিসেবে। সাবিনা ইয়াসমিন আপু, বন্যা লিপি আপু, এস.জেড বাবু ভাই, শবনম, আরজু মুক্তা আপু, শাহরিন আপু, রেহানা বীথি আপু, প্রদীপ, সঞ্জয়, নাজমুল, শামীম চৌধুরী ভাই, কামাল উদ্দিন ভাই, হালিম নজরুল ভাই, সুরাইয়া পারভীন আপু, সুপর্ণা ফাল্গুনী আপু, সুরাইয়া নার্গিস আপু, ফয়জুল মহী ভাই সহ অন্যান্য ব্লগারগণ আমার প্রতিটি লেখায় আলোচনামূলক মন্তব্য দিয়ে আমার লেখার উৎসাহ বৃদ্ধি করেছেন প্রতিনিয়ত। সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ।

আট বছর আগে যে ছোট্ট চারাটির বীজ বপন করা হয়েছিলো, কালের গর্ভে সেটি আজ বিশাল মহীরুহে পরিনত হয়েছে। এর শাখা প্রশাখার প্রতিটি পাতায় বিচরণ করছে আমাদের লেখকগন। আমি সোনেলায় লিখতে এসেই জেনেছি কিভাবে ব্লগিং করতে হয়, কিভাবে ব্লগের লেখায় মন্তব্য করতে হয়। সোনেলা নামক সেই বটবৃক্ষের পাতার ফাঁক গলে সূর্যের সোনালি আলোকছটার আভায় আমাদের লেখকগন রচনা করে চলেছেন কালজয়ী সব কাব্যকথা।

২০১৯ সালের এই মে মাসেই আমাকে সোনেলার ফেসবুক গ্রুপের এডমিন হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলো। জানিনা ব্লগ কর্তৃপক্ষ আমার মধ্যে কি এমন দেখেছিলেন! সেই আমন্ত্রণ পেয়ে আমি, মনির ভাই, ইঞ্জা ভাই, সাবিনা আপু, হেলাল ভাই, জিসান ভাই আলোচনা করেই আমরা এডমিনের দায়িত্ব নিয়েছিলাম যা অদ্যাবধি চলমান। ফেসবুকে অন্যান্য গ্রুপের এডমিন হওয়া আর সোনেলার মত একটি স্বনামধন্য বাংলা ব্লগ গ্রুপের এডমিন হওয়ার মাঝে বিস্তর ফারাক। সম্মান এবং মর্যাদায় সোনেলার একজন এডমিন অনন্য মর্যাদার অধিকারী এবং এই সম্মান প্রদানের জন্য আমি ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে সবসময়ই কৃতজ্ঞ।

আমি সোনেলাকে ভালোবাসি আমার প্রেমিকার মত। সোনেলার কাছে কিছু চাইবার নেই আমার। কারন সোনেলায় আমার ব্যক্তিগত প্রাপ্তি অনেক বেশী। সোনেলাতে আমি অসংখ্যবার নানাবিধ ভুলভাল করার জন্য বকাঝকা খেয়েছি, কর্তৃপক্ষের ঝাড়ি খেয়েছি। আমার সাথে অনেকের মনোমালিন্য হয়েছে। তবে এসব পাশ কাটিয়ে ভাইয়ের মত কখনো আমি নিজ উদ্যোগেই ভুল বুঝে ক্ষমা চেয়েছি। আর কখনো সিনিয়ররা আদর করে পরম যত্নে বুকে টেনে নিয়েছেন। আমার প্রতি তাদের এ ভালোবাসা অকৃতিম আর সে কারনে আজও সোনেলায় বিচরন করতে ভালো লাগে আমার। আসলে সোনেলাকে আমরা ভালবাসি বলেই এত মান অভিমান হয়। আর সোনেলার বাইরের কেউ সোনেলাকে নিয়ে কটূক্তি করলে সেটি আমার মোটেও সহ্য হয়না।

সোনেলা ব্লগ ব্যতিত আমি অন্য কোথাও কোন ব্লগে আর কখনোই লিখিনি, লিখতে চাইও না। সোনেলা আমার ভালোবাসার জায়গা। এখানে আমি সবসময় একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে থাকতেই পছন্দ করি। সোনেলায় আমার আমন্ত্রণে অনেক ব্লগার এসেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। গত দু’বছরে ব্লগার যারা এসেছেন শবনম, আরজু মুক্তা আপু, শাহরিন আপু, রেহানা বীথি আপু, প্রদীপ, সঞ্জয়, নাজমুল, বন্যা আপু, সুরাইয়া পারভীন, সুরাইয়া নার্গিস, রুমন আশরাফ, সুপর্ণা দিদি, শামীম ভাই, হালিম ভাই, আতা ভাই, সাদিয়া শারমীন আপু, রেজওয়ান, শিরিন আপু, মাসুদ রানা, বাবু ভাই, সুপায়ন দাদা, কামাল ভাই, ইসিয়াক, ত্রিস্তান, ফয়জুল মহী, ফজলে রাব্বী সোয়েব, আকবর হোসেন রবিন, মাছুম হাবিবী, মুক্তা মৃণালিনী, মারজানা আপু, কামরুল ভাইসহ অনেকেই আপনাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আমি প্রতিদিনই অনেক কিছু শিখছি।

ব্লগার বাবু ভাই ২০১৮ সালে বিজয়ের মাসে আমাদের সোনেলার ব্লগারদের জন্য চমৎকার একটি ফেসবুক প্রোফাইল ফটোফ্রেম বানিয়ে তা উন্মুক্ত করেছিলেন। সোনেলার ব্লগ পেজের জন্য চমৎকার ব্যানার বানিয়েছিলেন জাকিয়া জেসমিন আপু। প্রিয় ব্লগার রিমি রুম্মান আপু, নিতাই দাদা, মনির ভাই, নীরা সাদিয়া, মাহবুবুল ভাইসহ সকল ব্লগারদের ক্ষুরধার লেখা আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করে।

গেল বছরে সোনেলার অষ্টম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে সোনেলা কর্তৃক আয়োজিত দু’টি লেখা উৎসব- হেমন্ত বন্দনা এবং পৌষ সংক্রান্তি উৎসব ছিলো মনে রাখার মত বিষয়। ব্লগারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং বিজয়ী লেখকগণ, এডমিন প্যানেল, উপদেষ্টা মণ্ডলীসহ অন্যান্য ব্লগারদের ক্রেস্ট প্রাপ্তি ছিলো উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় ঘটনা। এর জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত অর্থায়নে আলাদা দিনক্ষণ এবং স্থান ঠিক করে যে সফল মিলনমেলার আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী যারা সোনেলায় পোষ্ট দিয়ে কৃতজ্ঞতা ও প্রাপ্তিস্বীকার লেখা লিখেছিলেন সে লেখাগুলোর শব্দীয় আবেগ আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো।

সোনেলার প্রথম দিকের সবচেয়ে সিনিয়র ব্লগার হিসাবে হেলাল ভাই, জিসান ভাই আমাকে প্রতিনিয়ত পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন তা যেমন কখনো ভোলার নয় তেমনি ইঞ্জা ভাই সেই শুরু থেকেই আমাকে ব্লগিং জগতের এপিঠ ওপিঠ দু’টোই দেখিয়ে যেসব সুপরামর্শ দিয়েছেন তার ঋণও শোধ হবার নয়। আলাদাভাবে সাবিনা আপুর কথা বলতেই হয়। আপন ভাইবোনের মত তার সাথে আমার নিত্যনতুন ঝগড়া, মনোমালিন্য হয় আর বড় আপুর মত তিনি চকলেট, কেক এসবের লোভ দেখিয়ে নিজেই অভিমান ভেঙ্গে ফেলেন। তার সাথে আমার এই আদুরে ঝগড়া চলতেই থাকবে নিশ্চিত এবং বেহিসাবি কেক চকলেট দু’জনাই দু’জনার কাছে পাওনা থাকবো। সোনেলায় আমার দেখা অন্যতম উৎসাহদানকারী ব্লগার হচ্ছেন সাবিনা আপু।

সোনেলার প্রত্যেক লেখক এবং পাঠকগণ আমার কাছে হীরকখণ্ডের চেয়ে কোনও অংশেই কম নন। অপূর্ব সুন্দর এই হীরকখণ্ডদের প্রজ্জ্বলতাকে ম্লান হতে দেখতে চাইনা। সোনেলার মায়ায় সোনেলার সুশীতল ছায়ায় দাঁড়িয়ে, সোনেলায় বিচরণরত আমার সকল প্রিয়জনেরা সর্বদা হাসিমুখে থাকুক প্রতিনিয়ত এটাই কাম্য।

সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

৭৮৬জন ৫৩৩জন
0 Shares

৪৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ