আচমকা মাঝরাত্রিতে, বিকট আওয়াজের তীব্রতায় হৃদস্পন্দনের বাড়তি ধরাশ ধরাশ করা ঘুম ভাঙা চোখের আতঙ্কিত ছোট্ট কিশোরী মনের প্রশ্ন…. “কি হলো? “পরক্ষনেই মনে পড়ে… আজ তো ২৬শে মার্চ!! স্বাধীনতা দিবস। ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শহীদদের স্মরন করা। বাকিরাতটুকু আবাবরো হয়তো কোনো এলোমেলো স্বপ্ন দেখে ভোরের অপেক্ষা। সেই সকালেও উচ্চমাত্রার ড্রামের আওয়াজে একছুটে বিছানা ছেড়ে সদর গেটের সামনে। শহরের সব স্কুল থেকে সারিবদ্ধ লাইন ছাত্র/ছাত্রীদের লাইন যাচ্ছে একমাত্র স্টেডিয়ামের পথে। কুজকাওয়াজ হবে,হবে ডিসপ্লে, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামান্য কাল্পনিক দৃশ্যের চিত্রায়ন করবে ছোট ছোট স্কুলের শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ চাঞ্চল্যতায় পেয়ে বসে কিশোরী মনটা।আমিওতো যাবো ওই মাঠে!! বন্ধুরা সব কই? তড়িঘড়ি তৈরী হওয়া। সব জড়ো হওয়া স্টেডিয়াম মাঠে। মাথার ওপরে তীব্র রোদের অহংকারী দাপটের তোয়াক্কা নেই।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকা চাইই সেখানে। আমার স্কুল(উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিদ্যালয়ের নাম রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর) থেকে শুরু করে, সব স্কুলের শিক্ষার্থীবৃন্দ যেমন আছে, তেমন আছে প্রশাসনিক সর্বস্তরের প্যারেড।আমার স্কুলের ছেলেদের কাছে তখন প্রথম এলো ড্রাম বাদ্য। পরবর্তিতে প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠলো ব্যান্ডের তালে তালে শরীর চর্চীয় কসরৎ প্রদর্শন।
সন্ধ্যায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সাংস্কৃতিক আয়োজন।যার তত্বাবধানে সবসময় আমার আব্বা মোঃ শামসুল ইসলাম চাঁদ।কিছু সময়ের ব্যাবধানে, সে আয়োজনের আংশিক অংশিদারে অংশগ্রহন করা হতো আমার নিজেরো। বিকেলে হতো মহিলা সংস্থার আয়োজনে মহিলাদের ক্রীড়ানুষ্ঠান। সেখানেও আম্মা,চাচি’দের অংশগ্রহন হেতু আমারো উপস্থিতী’র হাজিরা।কত কত সময় পার হয়ে গ্যাছে। কালের কড়ালে স্টেডিয়াম বেহাত হয়ে গিয়েছিলো ক্ষমতাধর স্বার্থান্বেষী মহলের কালো থাবায়। বর্তমান জেলাপ্রশাসকের হস্তক্ষেপে ফিরে পেয়েছে হৃত হারানো মহিমা পুরোনো ঐতিহ্যের স্টেডিয়াম। বহুবছর পরে এবার আবার অনুষ্ঠিত হলো আবারো সেই পুরোনো দিনের কুজকাওয়াজ, মার্চপাস্ট,স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ‘দের ডিসপ্লে।
আমার এক বন্ধু আছে উদয় শঙ্কর! আমার ইনবক্সে ছবি গুলো পাঠিয়ে ছোট্ট একটা মেসেজে লিখলো “” আমাদের সেই সব দিনের স্মৃতী” আমি উত্তরে শুধু লিখেছিলাম, আহা,সেই যে মোদের নানা রঙের দিন গুলি……..!!! এখন ভাবি….. তখন কি সত্যি স্বাধীনতার মানে বুঝতাম? নাকি আজো বুঝতে পারি স্বাধীনতার মানে?? “তোমার জন্য, হে স্বাধীনতা, আর কত বইবে রক্তগঙ্গা?????
২৫টি মন্তব্য
রিতু জাহান
স্বাধীনতার মানে আমি আজও বুঝিনি। শুধু জানি অনেক বেদনায় পাওয়া এ স্বাধীনতা।
আমার স্কুল জীবনের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।
শুভকামনা রইলো।
বন্যা লিপি
স্বাধীনতার মানে বদলে গেছে সর্বত্র। সর্বস্তরের আসন থেকে। শুভ কামনা, ভালোবাসা সতত।
ছাইরাছ হেলাল
কী বুঝেছি কী বুঝিনি এর মাঝেই বয়ে যাচ্ছে সময়, সময়ের নিয়ম মেনে।
বন্যা লিপি
সময়ের মনে সময়,সময়ের মতোই সরে যায়….. দিন আনি, দিন খাই। ঘুমাই। শোকে কাঁদি, আনন্দে উদ্ভাসিত হই। নিয়মের মধ্যে নিয়মের মতো সময় চলে যায়। শুভ কামনা নিরন্তর।
তৌহিদ
আমার স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেলো। শুধু এতটুকু বুঝি স্বাধীনতা দিবস পালন করার চেয়ে সেটার মর্যাদা ধরে রাখা কঠিন।
ভালো লাগলো পড়ে আপু।
বন্যা লিপি
মর্যাদা তো অনেক বড় ব্যাপার!! প্রশ্ন বিদ্ধ আজ স্বাধীনতা শব্দটাই।
শুভ কামনা, শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
ধন্যবাদ
নীরা সাদীয়া
আজকাল আর এসব তোপধ্বনি শুনতে পাইনা। কেন পাই না, তা জানি না। প্যারেড ও দেখি না। আগে সত্যিই একটা উৎসব উৎসব ব্যপার ছিলো।
বন্যা লিপি
আজকাল অনেককিছুই বদলে গ্যাছে। বদলে গেছি আমরাই, শুভেচ্ছা সতত।
মোঃ মজিবর রহমান
স্বাধীনতা অমুল্য ধন,
পেয়েছি অতি তুচ্ছে
বুঝিনি তাঁর মুল্যধন।
পেলাম
নিলাম
না বুঝলাম।
যার কস্ট তা আজ পথভ্রস্ট
যার মুল্য তারাই বুঝেনি
কিভাবে বুঝবে নতুন প্রজন্ম।
বন্যা লিপি
পুরোনো বটবৃক্ষের কাছে জানতে চাওয়া, তোমার কোনো শৈশব ছিলো?
দুর ছাই
সেসব কি আজ আর
মনে আছে নাকি?
নাকি
সেসব শুনতে আছে?
দেখছো যে জল
যাচ্ছে গড়িয়ে
ভাসিয়ে দাও
হোথা
তোমাদের বানানো কাগজের নৌকো।
মোঃ মজিবর রহমান
আপু আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার দেখা পেয়েছি, সে মুক্তিযোদ্ধার নামে কোন ভাতা বা টাকা নেন না। সেটা না নিয়ে ত্রিপ্তে আছে । তাকে হাজার হাজার শোদ্ধা।
মোঃ মজিবর রহমান
মুখে উজাড় মুখভরতি শব্দ
কাজে ঠন ঠন মনে মিঊ মিউ শব্দ
বাস্তবে শধুই লম্পঝম্প।
বন্যা লিপি
বাস্তবতাটাই আজ সবার কাছের চিরন্তন সত্য ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
জি আপু।
শুন্য শুন্যালয়
এদেশের এনজ্যাক ডেতে আমি আমাদের দেশের মতো সুন্দর কুচকাওয়াজ দেখিনি। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে যতো সুন্দর সব ডিসপ্লে করে আমাদের বাচ্চারা, এসব এখানে দেখিনি। ঐসব স্মৃতিগুলো আসলে মলিন হয়না কখনো। আপনাদের বিদ্যালয়ের অনেক ছবি দেখেছি আমি, শুনেছিও এই স্কুলের নামডাক। ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে থাকুক সুন্দর ইতিহাসগুলো। স্বাধীনতা খুব জটিল শব্দ, এর মানে জানবার শেষ হয়না।
সুন্দর স্মৃতিচারণ মূলক লেখা। ভালো থাকুন।
বন্যা লিপি
এ দেশের মতো প্রতি জাতীয় দিবস গুলোর মতো, অন্য কোনো দেশে এতটা উৎসব মুখর হয় কিনা বা হতো কিনা আমার সঠিক মতো জানা নেই। প্রজন্মকে জানাতে আগ্রহী বা জাতির নৈতিকতার আলোকে করা হতো সব প্রোগ্রাম গুলো। বর্তমানে যা হচ্ছে!!!
কেবলই সর্বত্র টানাটানির রাজনিতী।
আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন আমার আব্বা।বর্তমানে গর্ভনিং বোর্ডের সভাপতি সোনেলা ব্লগে আছেন। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা শুভেচ্ছা 🌷🌹🌹
অপার্থিব
এটা কোন জেলায়? শৈশবের স্মৃতি আসলেই অমলীন, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস এগুলোর উদযাপনের প্রধান মাধ্যম বলতে গেলে এখন শুধু স্কুল কলেজ গুলোই।
বন্যা লিপি
এটা ঝালকাঠি জেলা।এখনকার সময়ের স্কুল কলেজ ভিত্তিক যে প্রোগ্রাম গুলো হয়…. তাও কিছুটা বাধ্যতামূলক এদেশে।যা মোটেও কাম্য নয়। চেতনায় যদি হুকুম তামিলের বিষয়টা থাকে তবে তা কেমন হয়? স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহনের ব্যাপারগুলোই ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।কৃতজ্ঞতা রইলো।
অপার্থিব
তাহলে এটা ঝালকাঠি! একবার গেছিলাম ঝালকাঠি, কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি।
বন্যা লিপি
জী, এটা ঝালকাঠি সদর। কীর্তি পাশা আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম। ওখানে ও আমার শৈশব কিশোরী বেলার কিছু মধুর স্মৃতী আছে।
জিসান শা ইকরাম
ছোট বেলায় অবশ্যই স্বাধীনতা বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে যেতামই।
শেষ কবে গিয়েছি এই কুচকাওয়াজ দেখতে মনে নেই,
এ নিয়ে অনেক স্মৃতি এসে জমা হলো মনে।
এমন স্মৃতি কথা মুলক লেখা দিও ব্লগে,
কেবল মাত্র কবিতায় পাঠকের কিছুটা একঘেয়েমী আসতে পারে,
আমার আসে।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
একবারে একটা স্মৃতী আপনারও আছে বলে শুনেছিলাম এরকম স্বাধীনতা /বিজয় দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে,স্কুলে পড়াকালীন সময়ে। কখনো কোথাও প্রকাশ করেছেন? না করে থাকলে, করে ফেলবেন। জানবে সবাই মজার কাহিনীটুকু। ব্লগার জিশান কি পারতো? যথাসাধ্য চেষ্টা করবো কবিতার বাইরেও গল্প/অনুভূতি’র প্রকাশ করতে। লিখতে চাই নিজের মতো করে এখানে। অনুপ্রেরনা আর সাহসের জন্য সবসময় পাশে চাই ।শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
চমৎকার স্মৃতিচারণ।
বন্যা লিপি
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা মমি ভাই। শুভেচ্ছা জানবেন 💐💐