রূপকথার জিরাফ

শুন্য শুন্যালয় ১০ অক্টোবর ২০১৫, শনিবার, ০৬:৩৫:৩১পূর্বাহ্ন রম্য ৯২ মন্তব্য

শুনেছো? সেই যে পানি খেতে গেলে এক হাতীছানার ভোঁতা নাক কামড়ে ধরেছিল এক কুমির। কিছুতেই আর ছাড়েনা। এরপর হাতির পালের সারি ছুটে এলো, চললো হাতী আর কুমিরের টানাটানি, আর দেখতে দেখতেই বেড়ে হাতীছানার ভোঁতানাক হয়ে গেলো বিশাল শুঁড়। এরপর জন্মঅনিয়ন্ত্রনের ফলে লম্বা নাকের শুঁড় পেলো হাতী জন্মের পর জন্ম। তো কি ভাবছো?  শুধু হাতীর নাকেই গল্প আছে? উহু, চলো আজ দেখি জিরাফের গলা লম্বা কি করে হলো।
এক দেশে ছিল এক রূপকথার জিরাফ (গল্প রূপকথা তা কিন্তু কইনাই, পরে আমারে দোষ দেয়া যাবেনা, হুম্মম্মম)।
ঠাঁটবাটে মাটিতে তো নয়ই জঙ্গলের ঘাস এঁদো পথে পা পড়তো না তার। বেজায় অহংকারী জিরাফ ২৫ এর বনসাই হয়ে (কি জানি কোন অমরত্বের অমৃতবটিকা সেবন করেছে) একা একা ঘুরে বেড়ায় জঙ্গলময় আর দুঃখু করে ভাবে, “অহংকার” এই শব্দটি কি করে আমার হলো? ইয়া লম্বু উচ্চতা সে ভগবানের দান হলেও, ভগবান যত্রতত্র দান করেন না, একালে নয় আর সেই সে কালে! (সেকালের মানুষের ঈশ্বর কানেকশন একালে কেন কাজে লাগেনা কে জানে! যাক, পৃথিবী আগাচ্ছে, পেছনে ফিরে লাভ কি) তো ঈশ্বর তুষ্টি প্রথাটি আমাদের রূপকথার জিরাফ সেই পাথরে পাথর ঠুকে আগুন বানাবার কাল থেকেই জেনে গিয়েছিলেন নাকি চুপ চুপ চুপ অনামিকা চুপ, কথা বলোনা? কথা যখন রূপ, তখন রূপের কথা না বলে ভেজালের মধ্যে আরো ভেজাল দিয়া কাম কি? গোল গোল রংবেরং আর তেরঙ্গা বাহারেও সন্তুষ্টি মেলেনি তার, তাই তার চক্ষু বরাবরই আসমানের অই রংধনু। যেখানেই রঙ সেখানেই ধনুকের মতো গোল্লা গোল্লা বক্র চাহনীতো ছিলই, তবে অই রংধনু ছুঁতে চাওয়ার প্রচেষ্টাতেই ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো তার কন্ঠনালী। উপর থেকে উঁকিঝুঁকি দেয়া বেজায় অন্যায় হলেও অভাবে নয় বরং স্বভাবেই ভাব নষ্ট হতে হতে গলার অবস্থা পর্যন্ত বেগতিক হয়ে গেলো। ওদিকে ইট পাত্থরে ঘষামাজা করে কথার সব রূপের বারোটা বাজিয়ে এমন অবস্থা হলো তার নামটা পর্যন্ত বদ হতে চললো, মানে বদনাম আর কি।
উপায়ন্তর না দেখে সে শেষ পর্যন্ত গলাবাজি শুরু করে দিল, না না এ গলা বাজি সেই হেড়ে গলায় ফাঁটা বাশের সুর বাজানো নয়, অই যে বলেনা জীবন বাজি রাখা, সেরকম প্রিয় গলাটাকেই সে বাজি রেখে ফেললো। লড়েঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে, লেখা চলছেই, চলবেই।
অদ্যাবধি জানতে পেরেছি, জিরাফ এখন ইউক্যালিপটাস বৃক্ষ পর্যন্ত পৌঁছেছে, আসমান এতো দূর কিলা? (জিরাফ মনে মনে ভাবে)
না, জিরাফ রহস্য এখনো শেষ হয়ে যায়নি। মাত্র চার আনা। বাকি বারো আনা নীতেশ দা আর আমার পিচ্চি ভূত মেহেরী তাজের কাছ থেকে শুনুন…
****************************
নীতেশ দাঃ
জিরাফ একদিন ভগবানের কাছে বর চেয়েছিলোঃ হে ভগবান! তুমি কত কি বলো, কিন্তু আমার এই খাটো কানে কিছুই যে পাই না শুনতে! বর দাও যেনো শুনি তোমায় কান ভরে!
ভগবান বলিলেনঃ ওহে প্রাণ! থাকিতে যদি প্রাণ শুনিতে যদি চায় তোমারো কান তবে কান পাতিয়া শুনো- বলি, দিলাম তোমায় কি তবে সে বর!
জিরাফ তৎক্ষণাৎ কান পাতে ভগবানের দ্বারে, ভগবানের দেওয়া বরের খোঁজে!। কিন্তু হায়! আছে কোন উপায়? ভগবান থাকে তো ঐ কোন একখানে! ইতি চায়, উতি চায় তবু জিরাফের কানে কিছুই না শুনতে পায়। জিরাফ আবার ভগবানের কাছে ডাক পাড়েঃ ওহে ভগবান, বলো কি উপায়, তোমাকে খুঁজিতে খুঁজিতে যে ঘাড় খুলিয়া যায়!
ভগবান বলিলোঃ হে, দিলাম তোমায় দ্বিতীয় বর, যদি চাও শুনিতে প্রথম বর তবে ঘাড় আগাইয়া কান পাতিয়া শুনো আমি বলি কি তোমায়!, ঘাড় ধরিবে কান, রহিবে মস্তক অটুট, যাইবে না খুলিয়া, শুনিতে থাকো প্রস্তুত!
সেই যে জিরাফ তার ‘ঘাড় আগাইয়া’ কান পেতে প্রথম বর শোনার আশায় আগ বাড়িলো কানে, তো বাড়ছেই এখনো ঘাড়ে…
আর ভগবান! সে মিটিমিটি হাসে আর অঙ্গুলি হেলনে ‘কাল’ক্ষেপণ করে।
*****************************
মেহেরী তাজঃ
প্রশ্ন : জিরাফের গলা লম্বা কেনো?
উত্তর : বিজ্ঞানী ল্যামার্কের মতে জিরাফ এক সময় ছাগলের মত গলা বিশিষ্ট ছিলো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রকৃতির বিপর্যয়ের ফলে মাটি সংলগ্ন সকল গাছাপালা শেষ হয়ে যায়। তার ফলে বাঁচার তাগিদে জিরাফ উপরের দিকের বড় বড় গাছের পাতা খাওয়া শুরু করে। এর ফলে জিরাফের গলা কাল ক্রমে লম্বা হয়েছে।
*****************************
কিছু বোঝা গেলো? সব রুপকথা, রূপকথা নয় 😛

৭০৫জন ৭০২জন
0 Shares

৯২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ