বিজয়ের মাস চলছে । লাল সবুজের এই পতাকার জন্য ১৯৭১ সনে এক সাগর রক্ত দিতে হয়েছিল আমাদের। শুধু মাত্র দেশ মাতাকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল এই দেশের দামাল ছেলেরা। বাবা মা ভাই বোন স্ত্রীর ভালোবাসার টানকে উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পরেছিল যুদ্ধে।রণাঙ্গন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চিঠি দিয়েছেন তাঁদের প্রিয় জনকে। চিঠিতে যুদ্ধের অবস্থা , মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের প্রতি ভালবাসা স্পর্শ করে যায় আমাদের ।
মুক্তিযোদ্ধাদের এমন চিঠি প্রকাশ করেছে প্রথম আলোর প্রকাশনী প্রথমা । সুন্দর এই ঐতিহাসিক বইটির মুল্য ৩০০ টাকা।
টেকেরহাট থেকে,
তারিখ: ৩০/০৭/১৯৭১ইং
প্রিয় আব্বাজান,
আমার সালম নিবেন। আশা করি খোদার কৃপায় ভালোই আছেন। বাড়ির সকলের কাছে আমার শ্রেণীমতো সালাম ও স্নেহ রইল। বর্তমানে যুদ্ধে আছি আলী রাজা, রওশন, সাত্তার, রেনু, ইব্রাহিম, ফুল মিয়া। সকলেই একত্রে আছি। দেশের জন্য আমরা সকলেই জান কোরবান করেছি। আমাদের জন্য ও দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য দোয়া করবেন। আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে করি। কারণ দেশ স্বাধীন না হলে জীবনের কোনো মূল্য থাকবে না। তাই যুদ্ধকেই জীবনের পাথেয় হিসেবে নিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে মাকে কষ্ট দিলে আমি আপনাদেরকে ক্ষমা করব না। পাগলের সব জ্বালা সহ্য করতে হবে। চাচা- মামাদের ও বড় ভাইদের নিকট আমার সালম। বড় ভাইকে চাকুরীতে যোগ দিতে নিষেধ করবেন। জীবনের চেয়ে চাকুরি বড় নয়। দাদুকে দোয়া করতে বলবেন। মৃত্যুর মুখে আছি। যেকোনো সময় মৃত্যু হতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত। দোয়া করবেন মৃত্যু হলেও যেন দেশ স্বাধীন হয়। তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে বাংলার বুকে পুত্রহারাকে বাবা বলে ডাকবে। এই ডাকের অপেক্ষায় থাকুন।
আর আমার জন্য চিন্তার কোনো কারণ নাই। আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের মতো শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। তবেই আপনার সকল সাধ মিটে যাবে। দেশবাসী, স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া করো, মীরজাফরী করো না। কারণ মুক্তিফৌজ তোমাদের ক্ষমা করবে না এবং বাংলায় তোমাদের জায়গা দেবে না।
সালাম, দেশবাসী সালাম।
ইতি
মো: সিরাজুল ইসলাম
১৯৭১ সালের ৮ আগষ্ট ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাবসেক্টরের সাচনা জামালগঞ্জে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। বীর যোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম একটিমাত্র প্লাটুন নিয়ে পাকবাহিনীর সুরক্ষিত ঘাঁটি সাচনা আক্রমন করেন। সুসংগঠিত পাকবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধাদের টিথে থাকাই ছিল অসম্ভব। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ছিল সীমিত অস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে সাহসী কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম সহযোদ্ধাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে নিজে গ্রেনেড নিয়ে ক্রলিং করে শত্রু বাংকারের দিকে এগিয়ে যান। শত্রুর দুটি বাংকারে গ্রেনেড চার্জ করে তছনছ করে দেন। এক পর্যায়ে শত্রপক্ষের এলএমজির বুলেট বিদীর্ণ করে দেয় তাঁর দেহ। তিনি শহীদ হওয়ার কিছুদিন আগে ৩০ জুলাই টেকেরহাট থেকে বাবার কাছে এই পত্রটি লিখেছেন।
সংগ্রহ: মেজর (অব.) কামরুল হাসান ভুঁইয়া ও ড. সুকুমার বিশ্বাসের কাছ থেকে।
তারিখ: ০১/০৮/১৯৭১ইং
মাগো,
তুমি আমায় ডাকছিলে? আমার মনে হলো তুমি আমার শিয়রে বসে কেবলই আমার নাম ধরে ডাকছো, তোমার অশ্র“জলে আমার বক্ষ ভেসে যাচ্ছে, তুমি এত কাঁদছো? আমি তোমার ডাকে সাড়া দিতে পারলাম না। তাই আমায় ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেল।
স্বপ্নে একবার তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি আমার বড় আবদারের, ছেলের আবদার রক্ষা করতে এসেছিলে। কিন্তু মা, আমি তোমার সঙ্গে একটি কথাও বললাম না। দুচোখ মেলে কেবল তোমার অশ্র“জলই দেখলাম। তোমার চোখের জল মুছতে একটুকু চেষ্টা করলাম না। মা, তুমি আমায় ক্ষমা করো- তোমায় বড় ব্যাথা দিয়ে গেলাম। তোমাকে এতটুকু ব্যথা দিতেও তো চিরদিন আমার বুকে বেজেছে। তোমাকে দুঃখ দেওয়া আমার ইচ্ছা নয়। আমি স্বদেশ জননীর চোখের জল মুছাবার জন্য বুকের রক্ত দিতে এসেছি। তুমি আমায় আশীর্বাদ করো, নইলে আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে না। একটিবার তোমাকে দেখে যেতে পারলাম না। সে জন্য আমার হৃদয়কে ভুল বুঝো না তুমি। তোমার কথা আমি এক মুহুর্তের জন্য ভুলিনি, মা। প্রতিনিয়তই তোমার আশীর্বাদ প্রার্থনা করি।
আমার অভাব যে তোমাকে পাগল করে তুলেছে তা আমি জানি। মাগো, আমি শুনেছি, তুমি ঘরের দরজায় এসে সবাইকে ডেকে ডেকে বলছ-“ওগো, তোমরা আমার ‘ইসহাক’- শূন্য রাজ্য দেখে যাও”। তোমার সেই ছবি আমার চোখের ওপর দিনরাত ভাসছে। তোমার এই কথাগুলি আমার হৃদয়ের প্রতি তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে সুর তোলে। মাগো, তুমি অমন করে আর কেঁদো না। আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনাতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন। দেশবাসী যে বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত। দেশমৃতৃকা যে শৃঙ্খলাভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা? তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?
আর কেঁদো না মা। যাবার আগে আর একবার তুমি আমায় স্বপ্নে দেখা দিয়ো। আমি তোমার কাছে জানু পেতে ক্ষমা চাইব। আমি যে তোমার মনে বড় ব্যাথা দিয়ে এসেছি মা। ইচ্ছা করে ছুটে গিয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। তুমি আদর করে আমাকে বুকে টেনে নিতে চাইছ, আমি তোমার হাত ছিনিয়ে চলে এসেছি। খাবারের থালা নিয়ে আমায় কত সাধাসাধিই না করেছ, আমি পেছন ফিরে চলে এসেছি।
না, আর পারছি না। ক্ষমা চাওয়া ভিন্ন আর আমার উপায় নেই। আমি তোমাকে দুদিন ধরে সমানে কাঁদিয়েছি। তোমার কাতর ক্রন্দন আমাকে এতটুকু টলাতে পারেনি।
কী আশ্চর্য মা, তোমার ইসহাক নিষ্ঠুর হতে পারল কী করে! ক্ষমা করো মা, আমায় তুমি ক্ষমা করো।
ইতি
ইসহাক
চিঠি লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান। ঠিকানা: ৪৭৬ উইলসন রোড, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ। তিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভৈরব খাদ্য গুদাম, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।
চিঠি প্রাপক: মা, ফয়জনের নেসা। গ্রাম ও পো: অটোমার কচুয়া, চাঁদপুর (ইসহাক খান এক সহযোদ্ধার মাধ্যমে তাঁর মার কাছে এই চিঠিটি পাঠান)।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন: লেখক নিজেই।
তারিখ: ০১/০৮/১৯৭১
যে কথা লিখার জন্য কলম ধরেছি তা থেকে হয়তো এ লেখাটুকু একটু আলাদা ধরনের হলো সে জন্য সত্যিকারেই মর্মাহত। কত দিন বেঁচে থাকি জানি না, তবে আজ পর্যন্ত যে বেঁচে আছি সেটাই ভাগ্য বলে মেনে নিতে হবে। আজ মনে পড়ছে কতগুলো বন্ধু- বান্ধবদের কথা। তারা হলো আকবর, জীবন, খয়ের ভাই, এনায়েত ভাই, আকরাম ভাই, সাইফুল, মকবুল, আনছার, কবির, কুদ্দুছ, ছত্তার, বারী, রঙ্গু, মোসারেফ ভাই, মন্নান ভাই, আলমুজাহিদ ভাই, খালেক ( পানের দোকানদার), খোন্দকার ভাই (দারোয়ান), খালেক ( দারোয়ান), আজিজ, লতিফ, ফারুক, মালেক, সেকেন্দার, কাদের ভাই ( রেস্টুরেন্টওয়ালা), মামু, লালু, শিলু, নাসরীন, নাসরীনের মা-বাবা, রানু, ওর মা বাবা, মিতা, হাই, হাই, ইদ্রিস, মোসারেফ ভাই, কত জনার কথা আর লেখা যায়? এরা ছিলাম এক সূত্রে গাঁথা। কে কে বেঁচে আছেন, আর কার কার সঙ্গে দেখা হবে। মামুন, আজিম, বকুল, ওরাও স্মৃতির পট থেকে বাদ যায়নি। তৈয়ব নানা নানু, রুবী খালা, ওরাও কোথায় আছে তাও জানা নেই। কোনোদিন দেখা করতে পারি কি না সন্দেহ। কালের ভয়াল গ্রাসে কে কোথায় আছে খোদাতায়ালাই জানেন। অনেক বন্ধু নিহত হওয়ার কথাও শুনেছি, কজনারই বা হিসাব দেব। স্মৃতিপটে সবই ভেসে ওঠে।
বাবলু
চিঠি লেখক: শহীদ আবুল কালামা (বাবলু), তাঁর পিতার নাম: শহীদ আবু বকর মিয়া, গ্রাম-পিজগলুয়া, ডাকঘর- জীবনদাসকাঠী, উপজেলা- রাজাপুর, ডিজলা- ঝালকাঠি। ৩ অক্টোবর রাজাপুর থানার আঙ্গারিয়া নামক স্থানে পাক সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি অস্ত্রসহ ধরা পড়েন। অমানুষিক নির্যাতনের পর ১১ অক্টোবর রাতে রাজাপুর থানায় তাঁকে হত্যা করা হয়। কয়েক দিন পর তাঁর পিতাকেও পাক সেনা ও রাজাকার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে।
চিঠি প্রাপক: জানা সম্ভব হয়নি।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন: আবুল কাইয়ুম হারিচ, কালাম মনজিল, নবগ্রাম রোড, বরিশাল।
তারিখ: ০৩/০৮/১৯৭১ইং
মা,
আমার সালাম নিয়ো। অনেক পাহাড় পর্বত, নদী প্রান্তর পেরিয়ে, সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তোমার ছেলে তার অনেক আকাঙ্খার শেষ ঠিকানা আজ খুঁজে পেয়েছে। হ্যাঁ মা, আমি পৌঁছে গেছি আমার ইচ্ছার কেন্দ্রবিন্দুতে। নিজেকে এবার প্রস্তুত করব প্রতিশোধ নেওয়ার এক বিশাল শক্তি হিসেবে। আমার প্রতিশ্র“তি আমি কখনও ভুলব না। ওদের উপযুক্ত জবাব আমাদের দিতেই হবে। মা, তুমি এই মুহুর্তে আমাকে দেখলে চিনতে পারবে না। বিশাল বাবড়ি চুল, মুখভর্তি দাড়ি গোঁফ। যদিও আমি নিজের চেহারাটা বহুদিন দেখি না কারণ এখানে কোনো আয়না নেই। মিহির বলে, আমাকে নাকি আফ্রিকার জংলিদের মতো লাগে। মিহির ঠিকই বলে, কারণ, এখন আমি নিজেই বুঝি আমার মাঝে একটি জংলি ভাব এসে গেছে। সেই আগের আমি আর নেই। তোমার মনে আছে মা, মুরগি জবাই করা আমি দেখতে পারতাম না। আর সেই আমি আজ রক্তের নদীতে সাঁতার কাটি। খাওয়া দাওয়ার কথা বলে লাভ নেই, দু:খ পাবে। তবে বেঁচে আছি ও খুব ভালো আছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা আর সেই দিনটি থেকে খুব দূরে নাই, যখন আমরা আবার মুখোমুখি হব। দোয়া করো মা, যেন সেই দিনটি পর্যন্ত বেঁচে থাকি। মনি ভাই আমাদের অফিসার করেনি কারণ ওনার অন্য কাজের জন্য আমাদের প্রয়োজন পড়বে। এখানে আমার অনেক পুরান বন্ধুর দেখা পেলাম। আমার আগের চিঠিটা হয়তো এত দিনে পেয়ে গেছ। সেলিম তোমার সাথে দেখা করে এসেছে, বলল। তোমরা ভালো আছ জেনে খুশি হলাম। আমার জন্য কোনো চিন্তা কোরো না। মায়ের দোয়া আমার সাথে আছে, আমার ভয় কী? অনেক লেখার ইচ্ছা করছে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। কত ঘটনা মনে জমা হয়ে আছে তোমাদের বলার জন্য! হয়তো অনেক বছর লেগে যাবে শেষ করতে। মন্টু চিঠি নিয়ে যাচ্ছে। পারলে ওকে একটু ভালো কিছু খাবারদাবার দিয়ো। অনেক দিন ও ভালো কিছু খায়নি। আজ তাহলে- ৮০, সবাইকে সালাম ও দোয়া দিও।
তোমার স্নেহের ফেরদৌস
চিঠি লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস উদ্দীন মাহমুদ। তাঁর বর্তমান ঠিকানা: ফ্ল্যাট-৫০০, কনকর্ড কটেজ, প্লট-৮ আই, রোড-৮১, গুলশান-২, ঢাকা।
চিঠি প্রাপক: মা, হাসিনা মাহমুদ। তাঁর তখনকার ঠিকানা: ৮৩ লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন: লেখক নিজেই।
বি আহাম্মদ
বড়গ্রাম
০৩/০৮/১৯৭১
শ্রদ্ধেয় শহীদুল্লাহ ভাই,
সালাম নেবেন। আপনার সঙ্গে দেখা করব করব করেও সম্ভব হয়ে উঠছে না। আপনার বড়গ্রাম অপারেশন ক্যাম্প নিয়ে বড় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আপনি নিজেও একবার এলেন না। আশা করি আগামীতে একবার এসে ক্যাম্প পরিদর্শন করে যাবেন। তা ছাড়া অপারেশন বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আছে। অর্থাৎ (গোদাগাড়ী) ক্যাম্প উঠিয়ে দিতে হলে আপনার সঙ্গে মিলিতভাবে একটা প্ল্যান করা দরকার। যা হোক একটু দোয়া রাখবেন, যেন অবিলম্বে আমরা একটা বড় রকমের অপারেশন করতে পারি। আর সে কাজে কিছু অটোমেটিক হাতিয়ার দরকার। অনেক চেষ্টা করেও উদ্ধার বা সংগ্রহ করা গেল না। বর্তমানে কাটলা ইয়ুথ ক্যাম্পে নাকি দু-এক খগএ রাইফেল আছে। যদি দয়া করে সেগুলো আপনাদের বড়গ্রাম ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন তো যারপরনাই উপকার হবে এবং আশা করি আপনি তার ত্র“টি করবেন না।
ইতি আপনার মাস্টার ভাই
বেশারউদ্দীন আহম্মদ
চিঠি লেখক: মুক্তিযোদ্ধা বেশারউদ্দীন আহমদ। বড়গ্রাম অপারেশন ক্যাম্পে ছিলেন।
চিঠি প্রাপক: মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ, কাটলা যুব ক্যাম্প।
সংগ্রহ: মে.জ.(অব) ফজলুর রহমানের কাছ থেকে।
হরিণা যুব প্রশিক্ষণ শিবির
০৩/০৮/১৯৭১
স্নেহের ছোট ভাই বাবুল
লিখার শুরুতেই আমার স্নেহশিস দোয়া নিয়ো। আব্বাকে আমার সালাম ও কদমবুছি বলিয়ো। আমি তোমাদেরকে না বলিয়া ভারত চলিয়া আসিয়াছি। হরিণা ক্যাম্পে আছি, আমার জন্য কোনো চিন্তা করিয়ো না। আমি স্বপন চৌধুরীর অধীনে আছি। রুপেন চৌধুরী হরিণা ক্যাম্পের যুব প্রশিক্ষণ শিবিরের দায়িত্বে আছে। আমাকে বেশ স্নেহ করে। আমার কাজ শুধু ক্যাম্পের ভিতর। আমার জন্য কোনো চিন্তা করিয়ো না। এইখানে আসিয়া বহু বড় বড় ছাত্রনেতার সহিত পরিচয় হইয়াছে। রব ভাই, রাজ্জাক ভাই, তোফায়েল ভাই, মাখন ভাই, ইনু ভাই ও আমাদের দক্ষিণ পাড়ার মনির আহামদ, এ সবাইয়ের সহিত আমার দেখা হইয়াছে, সবাই ভালো আছে। যুদ্ধ যখন শুরু হইয়াছে খুব সাবধানে থাকিবা, না হয় তোমরা নানার বাড়িতে চলিয়া যাও। না হয় রামগড় দিয়া ভারতে চলিয়া আসো। দেশ স্বাধীন করার জন্য দেশের বহু লোকজন এ দেশে আসিয়াছে, যুদ্ধ করিতেছে, তোমরা শুধু দোয়া করিবে দেশ যেন তাড়াতাড়ি স্বাধীন হয়। মৌলানা আবদুল্লাহ মোজাহিদ বাহিনীর প্রধান হইয়াছে। সেই আমাদের গরু নিয়া গিয়াছে বলিয়া শুনিয়াছি, চিন্তা করিয়ো না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেন পরাজয় বরণ করে। রাজাকাররা ধান লইয়া গিয়াছে তাহাও শুনিয়াছি, আদিনাথ কাকা সব ঘটনা বলিয়াছে। শুনিয়া আমার খুবই খারাপ লাগিতেছে। আমার জন্য তোমরা কোনো চিন্তা করিয়ো না। জানিতে পারিলাম মামা আবদুর রাজ্জাক সাহেব পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুদ্ধে শহীদ হইয়াছে। মাকে এই কথা বলিয়ো না। যদি দেশ স্বাধীন হয় তাহা হলে তোমাদের সাথে দেখা হইবে। যুদ্ধে যদি আমি মারাও যাই, কোনো চিন্তা করিয়ো না। যদি আমার রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়, দেশের মানুষ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পায়, তাহা হইলে আমার অত্মা শান্তি পাইবে। আমার জন্য সবাই দোয়া করিবা।
খোদা হাফেজ
তোমার বড় ভাই
মোহা. আইয়ুব খান
মুক্তিবাহিনীর সদস্য
হরিণা যুব প্রশিক্ষণ শিবির, হরিণা, ভারত।
চিঠি লেখক: মো: আইয়ুব খান।
চিঠি প্রাপক: বাবুল।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন: জনাব বাবুল। পো: ডেমশা, থানা: সাতকানিয়া, চট্রগ্রাম।
৭টি মন্তব্য
জবরুল আলম সুমন
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই গুরুত্বপূর্ণ এই পোষ্টের জন্য…
প্রজন্ম ৭১
ধন্যবাদ সুমন ভাই। এটি আমার কর্তব্য ও দায়িত্ব মনে করি।
জিসান শা ইকরাম
অনেক ধন্যবাদ ধারাবাহিক ভাবে পোস্ট দেয়ার জন্য।
প্রজন্ম ৭১
ধন্যবাদ আপনাকে।
নীহারিকা
আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে
প্রজন্ম ৭১
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
লীলাবতী
একেকটি চিঠি একেকটি ইতিহাস ।