মুড়ি খাননি এমন লোক কি বাংলাদেশে আছে? কত ভাবে যে এই মুড়ি খাওয়া যায় তার তালিকা শেষ হবেনা। শুধু মুড়ি, চা এর সাথে মুড়ি, মুড়ি চানাচুর, সরিষার তেল দিয়ে মাখানো মুড়ি, চিনি দিয়ে একসাথে মুড়ি ভাজা, ইফতারিতে ছোলা, বু্ট, পিঁয়াজু, চপ, ডাবলি ইত্যাদির সাথে মুড়ি, চানাচুর, তেল, পিয়াজ, ডাবলি, ধনিয়া পাতা সহযোগে মুড়ি; আরো যে কত ভাবে এই মুড়ি খাওয়া যায়, তার হিসেব করা যাবেনা আসলে। এমন অন্য কোনো খাবার নেই যা মুড়ির মত এত বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়।
প্রবাসে থাকা আমার এক অত্যন্ত প্রিয় বন্ধুর সাথে প্রায়ই সন্ধ্যায় কথা হয়, কি করো প্রশ্ন করলেই মাঝে মাঝে বলি- চা মুড়ি খাই, বা মুড়ি চানাচুর, মুড়ি ছোলা বুট খাই- চা খাবো এরপর। খুব কষ্ট হয় তার একথা শুনে। মুড়ি চানাচুরের কথা বললেই বলে ‘তুমি আমারে আর মুড়ি চানাচুরের কথা বলবা না’। তাঁর গলার আদ্রতা ঠিকই অনুভব করি আমি। কথায় কথায় একদিন জানলাম যে তাঁর মা তাদেরকে মুড়ি খাবার খাওয়ার একটা ভাল অভ্যাসই করে দিয়েছিলেন। উপরে যত ধরনের মুড়ির কথা বলেছি তা তো আছেই, আরো আছে মুড়ি সবজির সাথে, মুড়ি দুধের সাথে, মুড়ি রান্না করা তরকারির সাথে। প্রবাস জীবনে তাঁর একটি বড় আক্ষেপ, ইচ্ছে করলেই সে মুড়ি চানাচুর খেতে পারেনা। ঘন্টা খানেক গাড়ি ড্রাইভ করে বাংলাদেশী এক দোকান থেকে মুড়ি চানাচুর এনে খেতে হয়।
আমি তো টাস্কিত এবং উৎসাহিত হলাম। পাগলকে সাঁকো নাড়াবার মত আর কি? আমাকে আর পায় কে? আরম্ভ করলাম মুড়ি আর কত ভাবে খাওয়া যায় তা দেখার জন্য। করলা ভাজি সহ বাসায় যত ধরনের ভাজি হয়- সব কিছুর সাথে মুড়ি, সমস্ত রান্না করা সবজির সাথে মুড়ি, গরুর গোস্ত, চিকেন, ডাল, ডাল চচ্চরি, দই, মিষ্টি, পায়েস, সেমাই………… থাক আর লিখলাম না। আমার প্রিয় বন্ধুকে আমার মুড়ি খাবার স্টাইল সম্পর্কে বলায়, সে তো হাসতে হাসতে আমাকে ওস্তাদই বলে ফেললো।
মুড়ি খাচ্ছি তাই এর গুনা গুন না বললে অন্যায় হবে।
* মুড়ি এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
* মুড়িতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। তাই এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
* পেট ভরে থাকে দীর্ঘক্ষণ।
* পেটের গোলমেলে অবস্থায় শুঁকনো মুড়ি কিংবা ভেজা মুড়ি খেলে তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়।
* মুড়িতে ভিটামিন বি ও প্রচুর পরিমাণে মিনারেল থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
* মুড়ির পুষ্টিগুণ :
১৪ গ্রাম মুড়িতে রয়েছে ৫৬ ক্যালরি। কার্বোহাইড্রেটস ১২.৬ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ০.১ গ্রাম, ফাইবার ০.২ গ্রাম, পটাসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪.৪৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৪ মিলিগ্রাম, থিয়ামাইন ০.৩৬ মিলিগ্রাম এবং নিয়াসিন ৪.৯৪ মিলিগ্রাম।
সবাই মুড়ি খান আর ভালো থাকুন।
২০টি মন্তব্য
ইঞ্জা
ভাইজান, আজকাল যাদের কিছুই করার থাকেনা, অবুঝদের, বেয়াক্কেলদেরও বলা হয় “মুড়িখা”। :প
লেখাটা পড়ছি আর হাসছি। :D)
জিসান শা ইকরাম
শিরোনাম দেব ভেবেছিলাম ‘ মুড়ি খা ‘, পরে চিন্তা বাদ দিয়েছি।
ইঞ্জা
:D)
রিমি রুম্মান
ভাইজান, ভাবীর হাতের মুড়িভাজা খেয়ে আমি তো রীতিমত মুগ্ধ। আবারও মনে পড়ে গেলো লেখাটি পড়ে।
জিসান শা ইকরাম
তোমারে তো কিছুই খাওয়াতে পারিনি দিদি ভাই,
পরবর্তি বারে খাওয়াবো।
মুড়ি আমাদের বাসায় খুব চলে, বরিশাল থেকে হাতে ভাজা মুড়ি কিনে নিয়ে যাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার যখন খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ না থাকে তখন মুড়ি খাই।আবার যখন কাজের ব্যাস্ততা বেড়ে যায় তখন সময়োভাবে দ্রুত পেট ভরার জন্য মুড়ি খাই।তেল -মুড়ি,নারকেল- মুড়ি,গুড়- মুড়ি,চা- মুড়ি ,যত পদের করে খাওয়া যায় আর কি।তবে মুড়ি খাওয়ার উপকার জানার পর এখন থেকে এক্সট্রা মুড়িও খাবো বলে ঠিক করেছি।জয় মুড়ি,,জয় মুড়িওয়ালার।😂😂
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা, আপিনিও মুড়ি খোর? ভালই হলো।
জয় মুড়ি, জয় মুড়িখাওনেওয়ালারা 🙂
ছাইরাছ হেলাল
অবশেষে জাতি একখানা মুড়ি বিশেষজ্ঞ পেলে।
দেখবেন কেউ যেন আবার বলে না বসে ‘যান মুড়ি খান’!!
যেভাবে কা কা ধ্বনিত হচ্ছে তাতে বলা যায় না, কখন কী হয়!!
জিসান শা ইকরাম
ঠিক ঠিক, বলা যায়না কখন কি হয়ে যায়।
মোঃ মজিবর রহমান
মুড়ি খাবো। পেট পুজা করব মুড়ি দিয়া। দারুন মুড়ি।
জিসান শা ইকরাম
একটা আড্ডায় মুড়ি ভোজ করব ভাবছি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হয়ে যাক আসছে বই মেলায় মুড়িভোজঁ 🙂 🙂 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
আলাদা হলেই ভাল আমি তো রাজি ছিলাম কিন্তু সময় বেটা সময় দেইনা। এই যা। মুড়ির প্রতি-{@ জমায়িত থাকল।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ফেবুকে ওপেন করে আগেই পড়েছি….সবিই জানা তবে মুড়ির গুণাগুণ গুলো অজানা ছিল।ভাল লেগেছে মুড়ির হরেক রকম গদ্য -{@
মাহমুদ আল মেহেদী
প্রিয় একটা খাবার প্রিয় একটা মানুষের লেখায় পড়লাম।
মায়াবতী
পরানের বান্ধব রে মুড়ি খেয়ে খেয়ে বুড়ি হলাম তোর কারণে….. জয় মুড়ি শুধু মুড়ির জয়….
ছাইরাছ হেলাল
ইউরিয়া সারের আর কারখানা লাগবে না,
আপনার কাছ থেকেই সবাই হোল ছেলে নিতে পারবে।
রিতু জাহান
আমি মুড়ি খাই। তবে এতো সুন্দর করে খাই না। মুড়ি তোর কত্তো গুনরে!
জুলফি এজন্যই এতো মুড়ি খায়। প্রতিদিন বিকালে তার মুড়ি লাগবে।
মুড়ির জয় হোক।
পথহারা পাখি
আমার বাবা প্রায় সময়ই “কিছু খাবো না” বলে মুড়ির ডিব্বা নিয়ে মুঠি ভরে ভরে মুড়ি খেতে থাকেন। তার ধারণা, মুড়ি খাওয়া আর বাতাস খাওয়া সমান কথা। 🤐
যাই হোক, আসল কথা হল, যে কোন কিছুই বেশি খাওয়া ক্ষতিকর, সেটা মুড়ি হোক কিংবা ভাত! 🤕
নীলাঞ্জনা নীলা
মুড়ি মাখা, উফ! কত্তোদিন খাইনা!
আমাদের বাড়ীতে আগে মুড়ি ভাজা হতো। এখন কিনে খাওয়া হয়। এখনও মামনির রোজ মুড়ি চাই। মুড়ির সাথে চা দিয়ে সকালের খাবার খায় মামনি। আর আমি বিকেলে মুড়ি মেখে খেতাম।
জয় মুড়ি! \|/