ভিডিও কলে “বাপি”, ” বাপি” দু’বার ডাকতেই চোখ মেললো বড়ো বড়ো করে। আমি ভাবলাম বাপি ঠিক হয়ে গেছে। দেখি চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো, তারপর চোখের পাতা বুজে গেলো। তখনও ভাবিনি বাপি আর নেই। বাপিকে বলতাম, একটুও ভেবোনা আমার কোলেই তোমার মৃত্যু হবে। আমার কোলে মৃত্যু হয়নি বাপির। কিন্তু চোখের সামনেই বাপির চলে যাওয়া দেখলাম। সবাই ফোন রাখতে বলছিলো, আমি রাখিনি। ডাক্তার এলো, বললো, জানলাম, তারপর… নাহ আমি একটুকুও কাঁদিনি।
একমাস আগেও বাপি বলেছিলো, “তুই আয়। তুই আইলেই আমি সুস্থ হই যাইমু।” আমি আসিনি, আসতে পারিনি। সেই এলাম, বাপি নেই। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে, তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা হয় তখন, যখন মামনির শূন্য সিঁথি দেখি। এ জীবনে এমন একটি দৃশ্য চোখের সামনে আসবে, ভাবিনি। বাপি ছাড়া জীবন, সেও কি ভেবেছি? এই শমশেরনগর তো বাপিকে দিয়েই। টানটা যেনো কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। বাসায় ঢুকে বিছানাটার দিকে চাইনি একবারও সেদিন। শ্মশানে গিয়ে দেখি বাপি শুয়ে আছে। আমায় দেখে হাসেনি, কাঁদেওনি। নীলা বলে ডাকেওনি। আমি এগিয়ে গেলাম, আগের মতোই কপালে, গালে চুমু দিলাম। কতোকাল পর বুকে মাথা রাখলাম। বাপির তবুও ঘুম ভাঙেনি। এতো গভীর ঘুম! মনে মনে ডাকলাম, বাপি, ও বাপি ওঠো। এই দেখো আমি এসেছি। পায়ে ধরে আদরও দিলাম। নাহ বাপি আর উঠলো না।
নিজের হাতে পুড়িয়েছি বাপিকে। জানতাম বাপি বেশিদিন আর থাকবে না। তবুও কেন জানি মানতে পারিনা। একমাস একদিন হয়ে গেলো, তাও মেনে নিতে পারছিনা বাপি আর নেই। মামনিকে কখনো সিঁদুর আর শাঁখা ছাড়া দেখিনি। শূন্য ওই সিঁথিটা দেখে বুক মুচড়ে ওঠে। এ যে কতোটা যন্ত্রণার! ওহ ভগবান এ কী করলে তুমি! জীবনে প্রথম শ্মশানে যাওয়া, এভাবে, উফ! মুখাগ্নি মেয়েরা করেনা, আমি করেছি। মামনিকে রঙিন শাড়ী পরতে বাধ্য করেছি। কপালের লাল টিপটাও খুলতে দেইনি। মামনি-বাপি কোনোদিন ছেলে-মেয়ে ভাগ করেনি। সমাজের নিয়মকে তাই মানিনি। এখন শুধু প্রার্থনা আমার মামনি বেঁচে থাক। বৃক্ষের একটা ডাল থাকুক, আশ্রয়হীন যেনো না হই। আমার মামনির জন্য সবাই প্রার্থনা করবেন যেনো বেঁচে থাকে অনন্তকাল আমার জন্য।
সিংড়াউলি, শমশেরনগর
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ইং।
★জানিনা কবে নিয়মিত হতে পারবো ব্লগে। অনুভূতিটা শেয়ার করে একটু হাল্কা হবার জন্যই লিখলাম। সবাই ভালো থাকুন।
২৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
মন কাঁদলো, আমি কাঁদলাম।
আপু আপনার সাথে আমি সমব্য, কারণ আমি পুরাই এতিম এরপরেও জীবন থেমে থাকেনা, সামনে এগিয়ে যেতে হবে, মামনিকে সামলিয়ে নিন, আশা করি আপনাকে পেয়ে মামনি একটু হলেও সব ভুলে থাকতে পারবে, মনে রাখবেন আপনারাই মামনির সব, আপনারাই উনার আকাশ।
বাপির জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি, সৃষ্টিকর্তা যেন উনাকে সবসময় ভালো রাখেন ওপারে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া মামনির দিকে চাইতে পারিনা আমি। শাঁখা-সিঁদুর ছাড়া এই মানুষটাকে কখনো দেখিনি। এ যে কতো যন্ত্রণার!
ইঞ্জা
আপু, আমিও দেখেছি আমার মাকে, তাই বুঝতে পারি আপনার মনের অবস্থা, দোয়া করি বাপির জন্য যেন উনার স্বর্গ প্রাপ্তি হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া মামনি যেনো বেঁচে থাকে।
ভালো থাকুন।
মাহমুদ আল মেহেদী
লেখাটা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না আপু ।বাবা জিনিসটা এমন কেন হারানোর পর আমাদের বুঝায় যে আমি ছিলাম । কেন ?
নীলাঞ্জনা নীলা
বেঁচে যখন ছিলো বাপি, আমার কাছে বাপিই যে সবসময়ের বন্ধু। যাঁকে ছাড়া কখনোই ভাবতে পারতাম না।
সাবিনা ইয়াসমিন
যেদিন শুনেছিলাম সেদিন হতেই মন খারাপ হয়েছিলো । তিনি আমাদের কেউ ছিলেন না, তবুও তাকে আমরা চিনেছি, জেনেছি আপনার কাছথেকেই। তিনি আপনার প্রিয়জন ছিলেন ,আপনি আমাদের। তার বিচ্ছেদে কতখানি শোকাতুর হয়ে আছেন জানি আপু । বিদেহী আত্মা শান্তিতে থাকুক দোয়া করি।
আপনার মামনি যা হারিয়েছেন তা কেউ এনে দিতে পারবেন না, তার বাকি জীবন যেনো আপনাদের নিয়ে ভালো কাটে সেই কামনা করি।
ফিরেছেন, কষ্ট গুলোর ভাগ দিয়েছেন এতেই ভালোবাসা আপু। প্রতিকূলতা শেষে নিয়মিত ব্লগে দেখতে পাবো , অপেক্ষায় রইলাম।
ভালোবাসা ❤❤
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু বাপিকে যারা দেখেছে, তারা জানে বাপি কেমন! নিজের বাবা বলে বলছি না, মানুষটা একেবারে আলাদা ছিলো।
আর আমার মামনি এই মানুষটাকে কেউ অপছন্দের খাতায় রাখেনি। মামনিকে শাঁখা-সিঁদুর ছাড়া কী যে অসম্পূর্ণ লাগে!
প্রার্থনায় রাখবেন আমার মামনিকে। যেনো আমার এই একটা ডাল, যার ছায়া পাচ্ছি, বেঁচে যেনো থাকে আজন্ম। আমার জন্য।
ভালো থাকবেন আপু।
জিসান শা ইকরাম
এমন লেখায় কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারিনা।
তোর কস্ট আমাদেরও কস্ট।
দ্রুত সামলে নে নিজকে,
মা মনিকে ছায়া দে।
দোয়া করি বাপির আত্মা শান্তি পাক,
মা মনিকে আল্লাহ শক্তি দিক, স্বাভাবিক হয়ে উঠুন তিনি।
আগে স্বাভাবিক হ তুই, এরপর আসিস ব্লগে।
তুই তো আমাদেরই।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা আর কি স্বাভাবিক হওয়া যায়, বলো!
ভালো থেকো।
জিসান শা ইকরাম
নিয়মিত লেখ এখানে,
এখানে সবাই তোর আপন,
আত্মার আত্মীয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তাই তো লিখে যাচ্ছি যা আসে মাথায়।
পাশে থেকো।
ছাইরাছ হেলাল
আসলে এ লেখায় সান্তনা-মন্তব্যের কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
শুধু বলব তিনি ভাল থাকুক, যেথায় যেমন-ই থাকুন।
আপনিও এ শোকাবহতা কাটিয়ে উঠুন নিজ গুনে, এবং আপনি তা পারবেন-ও।
ফিরে আসুন/আসবেন শান্ত/রিষ্ট চিত্তে, আমরা অপেক্ষা করতে জানি।
আপনার মঙ্গল কামনা করছি, যেমন করি সারাক্ষণ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার মামনি যেনো না হারায়। এই প্রার্থনা করবেন।
ভালো থাকুন।
ছাইরাছ হেলাল
সে প্রার্থনা তো করতেই হবে!!
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো থাকুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বলার ভাষা নেই।যা হারিয়েছে তা বলে ফেরত আনা যাবে না।এটাই জীবনের নিয়ম মেনে নিতেই হয়।এখন শুধু প্রার্থনা ওপারে বাপি যেন ভাল থাকে,শান্তিতে থাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
প্রার্থনায় রাখবেন মনির ভাই।
ভালো থাকুন।
রিতু জাহান
আপু, কিছু বলার ভাষা নেই। তবু তোমার সাথে কয়েকবার কথা বলে তোমার কন্ঠে তা টের পেয়েছি।
জীবনের বাস্তবতা বড় কঠিন আপু। এ যে চিরসত্য। মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করো। যতোটা পারো আনন্দে থেকো আপু।
ভালবাসা নিও আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু দেখা হলো না। হুম তুমি কিছুটা টের পেয়েছো।
মামনির জন্য প্রার্থনা করো, যেনো বেঁচে থাকে মানুষটা।
ভালো থেকো।
বন্যা লিপি
কি লিখবো? কিছু লেখা উচিৎ অবশ্যই! কিন্তু কি লিখবো? শোক সংবাদটা পাবার পরে লিখেছিলাম, ভুক্তভূগিরাই বোঝে এ শোক কেমন শোক? আজ কিছুই লিখতে পারছিনা। আপনার প্রতি ভালোবাসা রেখে গেলাম। স্রস্টা আপনাকে শক্তি দিন আরো বেশি শোক কাটিয়ে উঠবার। মা’র প্রতি শ্রদ্ধা, বাপি’র প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, আত্মার শান্তি কামনা করছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার মায়ের জন্য প্রার্থনা করবেন, যেনো মানুষটা আজন্ম আমায় ছায়া দিতে পারেন।
ভালো থাকুন।
মোঃ মজিবর রহমান
পড়ে মনে কি লিখব , বুঝতে পারছিনা দিদিভাই। ঐপারে স্রিস্টকরতা ঐপারের সকল বাবাকে স্বরগদান করুন।
আর আপনার মামনির উপর ইহকালে আপনারাই শক্তি আপনারাই বল। ব্যাবহারে, আন্তরিকতায় আপনারাই তাঁকে রেখে রাখুন।
আর কাজে থাকুন। ভাল থাকুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
“দিদিভাই” এই ডাকটা আমার বড়ো প্রিয়।
প্রার্থনা করবেন যেনো আমার মামনি বেঁচে থাকে অনন্তকাল। নিঃস্ব হতে চাইনা আর।
ভালো থাকুন মজিবর ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা মহান সৃষ্টিকর্তা আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই অনেক ভালো থাকুন।