বাংলা বানান নিয়ে আমাদের অনেকেরই কম বেশি কিছু সমস্যা আছে। সবাই আমরা ছাত্র জীবনে বাংলা ব্যাকরণ পড়ে এসেছি। আবার অনেক কিছু ভুলেও গিয়েছি। এই ভুলে যাবার কারণে অথবা সেই একাডেমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর অলসতা বা কর্মজীবনে ব্যাস্ততাত কারণে অনেকে আর বাংলা ব্যাকরণের পথ মাড়াইনি। যার ফলাফল, বাংলা লিখনে প্রচুর ভুল। বানান বা শব্দ চয়নের ভুলের কারণে একটি লেখার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আজ থেকে আমি পাঠক/লেখকদের সুবিধার্থে ভাগে ভাগে বাংলা ব্যাকরণের কিছু কিছু অংশ আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো যা আমরা আমাদের ছাত্র জীবনেই পড়ে এসেছি। আশাকরি এতে লেখকদের বাংলা বানান বা শব্দ চয়নের ভুলগুলো আস্তে আস্তে কেটে গিয়ে শুদ্ধ বানান বা শব্দ চয়নে পারদর্শী হয়ে উঠবেন।
শব্দের শ্রেণীবিন্যাসঃ শব্দকে উৎস, গঠন ও অর্থ অনুসারে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ: বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো : তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ।
১. তৎসম শব্দঃ সংস্কৃত ভাষার যে-সব শব্দ পরিবর্তিত না হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসমতৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ: যে -সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত।
৩. তদ্ভব শব্দঃ বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। যেমন- সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার।
৪. দেশি শব্দঃ বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। মেমন, কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)-তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা।
৫. বিদেশি শব্দঃ বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।
আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস,
হারাম, হালাল আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ,
বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায ৷
ফারসি শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা,কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর,
দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস,
রফতানি, হাঙ্গামা ৷
ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল
পরিবর্তিত মিশ্র শব্দ: এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন- রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি) হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি) হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি) হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) খ্রিস্টাব্দ(ইংরেজি+তৎসম) ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি) পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা)
উচ্চারণে– আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospital), বোতল (bottle)
সুত্রঃ উইকিপিডিয়া https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6_(%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3)
১৯টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
অনেক পড়লাম সেই ক্লাশের পড়া নতুন করে জানলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
নিহারীকা জান্নাত
অনেক ধন্যবাদ ভাই। আবার সব মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। শুভকামনা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এক সময় এ অনেক বার পড়েছি কিছু মনে আছে কিছু নেই।এ লেখা আমাকে পনের বিশ বছর স্মৃতিতে নিয়ে গেল।লিখতে থাকুন। -{@
নিহারীকা জান্নাত
সবকিছুই মাঝে মাঝে ঝালাই করে নিতে হয়। তা সে সম্পর্কই হোক বা জ্ঞ্যান। নাহলে ভুলে যেতে হয়। সবাইকে সেসব মনে করানোর ক্ষুদ্র চেষ্টা করছি ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ।
আবু খায়ের আনিছ
আবার সেই ব্যাকরণ। আমার জন্য উপকারী, সামনে এক কঠিন পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি, কাজে দিবে এই সিরিজের পোষ্ট। আগাম ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
নিহারীকা জান্নাত
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
নীরা সাদীয়া
আমার র/ড় এ দুটোর মাঝে খুব সমস্যা হয়। কখন লিখব পড়ি আর কখন পরি এটা ভুল হয়ে যায়। এর কোন সহজে মনে রাখার মত সমাধান আছে কি?
নিহারীকা জান্নাত
পরিধান করা, মানে জামা পরা, বই পড়া, পাহাড়ে চড়া-আরোহন, গাছে চড়া-আরোহন, কিন্ত গরু চরানো-গরু চরে খায়। পড়ে যাওয়া, বাড়ি, গাড়ি, বেড়ানো …………… এছাড়াও অনেক উদাহরণ আছে পরে সময় করে লিখবো। আপনাকে ধন্যবাদ। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
খুবই প্রয়োজনীয় একটি পোষ্ট। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যার বানান ভুল হয়না। আমার নিজের হয় বলেই আমি পাশে অভিধান রাখি। যে কোনো শব্দের বানান নিয়ে যদি অল্প দ্বিধা-দ্বন্দ্বও থাকে তা কাটিয়ে নেয়া সহজ হয়। বাক্যকে সুসংহত রাখতে এবং লেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বানানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোষ্টের জন্য।
নিহারীকা জান্নাত
সহমত আপা। আমারও কোথাও ভুল হলে নি:সংকোচে বলবেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
যদি কখনো আমার কোনো লেখাতেও ভুল বানান দেখেন ধরিয়ে দেবেন।
খুশী হবো।
ভালো থাকুন নিহারীকা। 🙂
মৌনতা রিতু
ছেলেকে ক্যাডেটে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ঘাটতে হয়েছে। আবারো সেই নাইন টেনের ব্যাকরন বই পড়তে হয়েছে।
ভাই, আমার অনিচ্ছা অনেক বানান ভুল হয়😝। মাফ কইরা দিও। একটু ঠিক কইরা পইড়া লইও।
আসলে একবার লেখার পরে আর ঠিক করতে পারি না। দেখতেছি ভুল হইছে। কিন্তু ঠিক করতে পারি না। নীরার মতো আমারো র/ড় নিয়ে সমস্যা হয়। তবে আমি পড়ি ঠিক মতো। পরি মানে আমার মতে পরিধান করা অর্থে আর পড়ি মানে বই পড়ছি এমন।
আবার বেড়িয়ে মানে বেড়ানো বক ঘোরা অর্থে। বেরিয়ে মানে বের হলাম অর্থে। এখন মাথা এলোমেলো হবে ^:^ তবে অনেক ভাল একটা পোষ্ট কিন্তু।
নিহারীকা জান্নাত
অনেক ধন্যবাদ আপা।
মিষ্টি জিন
বাংলা বানানের যে কত নিয়ম তা বাংলা নিয়ে পড়ার সময় বুঝতে পেরেছি। প্রায় বিশ বছর বাংলা লেখা , পড়া খেকে দূরে ছিলাম। তাই আমার ও বানান ভুল হয়। বেশ লজ্জা লাগে।বিশেষ করে ি আর ী কার মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলি। এর একমাত্র কারন বই কম পড়া । তার উপর অটোটাইপিং এর সমস্যা তো আছেই।
কথায় যদি আন্জলিক টান থাকে লেখায় তার প্রভাব কিছুটা পড়েই। শুদ্ধ বানান ,শুদ্ধ শব্দ গঠন করার জন্য প্রচুর বই পড়তে হবে।
অনেক উপকারি একটা পোষ্ট।
নিহারীকা জান্নাত
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন “বই পড়া”। লেখক হবার প্রথম শর্ত প্রচুর পড়াশোনা করা। এতে বানানের সমস্যা অনেক কমে যায়। শব্দ বিন্যাস, শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন এসবের মান বাড়ে। আজকাল আমরা এত ব্যাস্ত জীবনযাপন করি যে, পড়ার ইচ্ছে থাকলেও তা অনেকের পক্ষে করা হয়ে ওঠে না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপা।
ছাইরাছ হেলাল
আমার খুবই কাজে আসবে আপনার এই লেখাগুলো।
নিয়ম করে দিতে থাকুন।
নিহারীকা জান্নাত
ভাই, আপনি নিজেই একজন বানান ও শব্দ বিশারদ। আপনার লেখা বেশীরভাগ শব্দ বুঝতে আমি অক্ষম।
ধারাবাহিকভাবে কিছু কিছু কমন ব্যাপার সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
র, ড় , ঢ় নিয়ে কবে লিখবেন মাস্টারাইন?
এ নিয়ে মহা বিপদে আছি, উদ্ধার করুন 🙂
নিহারীকা জান্নাত
মাস্টারনির আধুনিক শব্দ কি মাস্টারাইন? নাকি হুজুরাইনের সাথে মিল রেখে মস্টারাইন? মাথাতো আউলায়া গেলো 🙂 যাই হোক, আগে ১, ২ পর্ব মুখস্ত হইছে কি না পরীক্ষা নেই, তারপর বাকি পর্ব।
না থাক ভয় দেখাবো না। ‘র’ আর ‘ড়’ নিয়ে পর্ব সাজাচ্ছি। কিছুটা বাকি আছে। খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবেন। 🙂
অনেক ধন্যবাদ।