বানান নিয়ে যতকথা – ১ (শব্দ)

নীহারিকা ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ০৩:৫৩:২৩অপরাহ্ন সাহিত্য ১৯ মন্তব্য

page-header-phito

বাংলা বানান নিয়ে আমাদের অনেকেরই কম বেশি কিছু সমস্যা আছে। সবাই আমরা ছাত্র জীবনে বাংলা ব্যাকরণ পড়ে এসেছি। আবার অনেক কিছু ভুলেও গিয়েছি। এই ভুলে যাবার কারণে অথবা সেই একাডেমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর অলসতা বা কর্মজীবনে ব্যাস্ততাত কারণে অনেকে আর বাংলা ব্যাকরণের পথ মাড়াইনি। যার ফলাফল, বাংলা লিখনে প্রচুর ভুল। বানান বা শব্দ চয়নের ভুলের কারণে একটি লেখার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আজ থেকে আমি পাঠক/লেখকদের সুবিধার্থে ভাগে ভাগে বাংলা ব্যাকরণের কিছু কিছু অংশ আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো যা আমরা আমাদের ছাত্র জীবনেই পড়ে এসেছি। আশাকরি এতে লেখকদের বাংলা বানান বা শব্দ চয়নের ভুলগুলো আস্তে আস্তে কেটে গিয়ে শুদ্ধ বানান বা শব্দ চয়নে পারদর্শী হয়ে উঠবেন।

শব্দের শ্রেণীবিন্যাসঃ শব্দ‌কে উৎস, গঠন ও অর্থ অনুসা‌রে বি‌ভিন্ন ভাগে ভাগ করা হ‌য়ে থা‌কে।

উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ: বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো : তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ।

১. তৎসম শব্দঃ সংস্কৃত ভাষার যে-সব শব্দ পরিবর্তিত না হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসমতৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য।

২. অর্ধ-তৎসম শব্দ: যে -সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত।

৩. তদ্ভব শব্দঃ বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। যেমন- সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার।

৪. দেশি শব্দঃ বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। মেমন, কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)-তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা।

৫. বিদেশি শব্দঃ বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।

          আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস,

হারাম, হালাল আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ,

বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায ৷

          ফারসি শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা,কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর,

দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস,

রফতানি, হাঙ্গামা ৷

           ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল

 

পরিবর্তিত মিশ্র শব্দ: এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন- রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি) হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি) হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি) হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) খ্রিস্টাব্দ(ইংরেজি+তৎসম) ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি) পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা)

 

উচ্চারণে– আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospital), বোতল (bottle)

সুত্রঃ উইকিপিডিয়া https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6_(%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3)

৮২৯জন ৮২৯জন
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ