বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, পত্রিকা, টিভির খবরের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে ঈদে ঘরমুখী মানুষের প্রচন্ড চাপে প্রশাসন অসহায় হয়ে শিমুলিয়া ফেরী চলাচল বন্ধ করার পরেও আবার খুলে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে নাড়ির টানে মানুষ সমস্ত বাঁধা উপেক্ষা করে মরিয়া হয়ে বাড়ি ফিরছে। উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারতে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির পরে আমাদের বাংলাদেশে এই যে জনস্রোত তা যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে তা অনুমান করে শিউরে উঠতে হয়।

কেন এই জনস্রোত?
ভারতীয় উপমহাদেশের জনগন ধর্মীয় আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়। সব কিছুর উর্ধ্বে এদের ধর্ম। আর পারিবারিক ভাবে এরা গৃহী। বলা হয়ে থাকে নাড়ির টানে এরা ঘরে ফিরবেই। বাংলাদেশের ধর্ম ব্যবসায়ীরা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যে ‘ আল্লাহ্‌ আমাদের মৃত্যু নির্ধারিত করে দিয়েছেন, আল্লাহর উপর ভরসা থাকলে করোনা কিছুই করতে পারবে না।’ যে কারনে কোনো মাদ্রাসার ছাত্ররা মাস্ক ব্যবহার করে না। আর বর্তমানের করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার যে লক ডাউন দিয়েছেন তা অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করছেন না। অন্যদের মত সরকারের রাজনৈতিক দলের অনেক কর্মীও বিশ্বাস করেন যে হেফাজত ইসলাম কে দমন করার জন্য এই লক ডাউন দেয়া হয়েছে।

জনগন এটিই বিশ্বাস করে ফেলেছে। অন্য অনেক বিষয়ের মত করোনা নিয়ে সরকারের উপর অনাস্থা তৈরী হয়েছে মানুষের মনে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে যেভাবে জনতাকে সচেতন করা উচিৎ ছিলো তা সরকার করতে পারেনি। ফেসবুকে লীগ এবং এর অংগ সংগঠন সমূহের কর্মীদের প্রফাইল দেখলেই তা বুঝতে পারা যাবে। অধিকাংশ কর্মীদের প্রফাইলে দেখা যাবে নেতা নেত্রীদের সাথে এদের ছবি পোষ্ট, বা অন্য কিছু পোষ্ট। অর্থাৎ করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে এদের কোন চিন্তা ভাবনা নেই।

এই আস্থাহীনতার কারনেই জনগন গাদাগাদি করে বাজারে ভীর করেন। রাস্তায় মাস্ক পরিধান তেমন করেন না। উপরের ছবিটি একটি বাজারে জনগনের ভীড় দেখলেই তা বুঝা যায়।

সরকারের যা করা উচিৎ ছিলোঃ
বাংলাদেশের মানুষ ঈদে বাড়ি যাবেই, এটি সরকার অনুধাবন করতে ব্যার্থ হয়েছেন। যে কারণে দূর পাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদি বন্ধ করে দিয়েছেন।সীমাহীন কস্টের মধ্য দিয়ে জনতা ছুটছে তাদের বাড়ীতে। ঢাকা হতে একশত টাকায় এরা শিমুলিয়া ফেরী ঘাটে যেতে পারতো। সব কিছু বন্ধ থাকায় এরা একহাজার টাকা খরচ করে শিমুলিয়া যাচ্ছে। পাগলের মত ধাক্কাধাক্কি, যুদ্ধ, দড়িতে ঝুলে ফেরীতে উঠছে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে, করোনা ভীতিকে উপেক্ষা করে বাড়ীতে ফিরছে।

এই অবস্থা অনুধাবন করে সরকারের উচিৎ ছিলো বাস, লঞ্চ, ট্রেন সব চালু রাখা। স্বাস্থ্য বিধি যথাযত মেনে চলে জন পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করা যেতো।

এতে ভীড়ের চাপে ফেরীতে মৃত্যুকে এড়ানো যেতো।

করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে সনাক্ত হয়েছে। ভারতে মৃত্যু এত বেশী হচ্ছে যে শ্মশানে দাহ করার মত অবস্থা নেই আর। করোনায় মৃতদেহ নদীতে ভাসতে দেখা যাচ্ছে ভারতে। বাংলাদেশের এই অসচেতন জনতার কারণে দেশে কত বড় বিপর্যয় বয়ে আনবে তা দেখার অপেক্ষা ব্যতীত এই মূহুর্তে আমাদের আর কিছুই করার নেই।

সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সুস্থ্য থাকুন।
শুভ কামনা।

**
ছবি গুগল হতে নেয়া।

১১৫১জন ১০০৭জন
0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ