বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বড় ভাই খাটে বসা। মেঝেতে বসে ছন্দা ভাইয়ের হাটুতে মাথা রেখে কাঁদছে চিৎকার করে— ভাইয়া ওরা আমার বিচার বসিয়েছিল। ভাইয়া ওরা আমার বিচার বসিয়েছিল। ভাইয়া ছন্দার মাথায় হাত রেখে বলল– আবিদ কোথায় ছিল?
— আম পরে ওকে ডেকে এনেছি, ও আসার সাথে সাথে ওরা সুর পালটিয়ে ফেলেছে।
— তোমাকে একা পেয়ে অপমান করার চেষ্টা করেছে কারন ওরা তোমায় হিংসা করে।
অবাক হয়ে ছন্দা ওর বড় ভাইয়ের কথা শুনলো। ওর ভাই ওর কান্না দেখে নিজেও কাঁদছে। এই ভাই ওর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ভাই। যে ভাইকে দেকভাল করে ছন্দা আজ ছন্দার বড় আশ্রয় হয়ে তার মাথায় হাত রেখেছে।
ত্রিশবছর আগে ছন্দার বিয়ে হয় যখন ছন্দা ছিল আর্কিটেকচারের ফাইনাল ইয়ারে। ওর নিজের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই বিলিন হয়ে গিয়েছিল। পেয়েছেও অনেক ভালবাসা আদর। কখনওই নিজেকে অসম্মানিত মনে করেনি। কিন্তু এতদিন পর যে আঘাত ছন্দা পেলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত সে ছিলনা।
অনেকদিন পর গ্রামের বাড়িতে সপরিবারে সবগুলি ননদ,দেবর,ভাসুর সহ ছন্দারাও এসেছে। বাড়ির বউ হিসেবে এখানে ছন্দাই গৃহকর্ত্রী। এই বাড়ি দেকভালের জন্য একটি পরিবার বাস করে। ছন্দারা এলে ওরাই কাজ করে অন্যান্য কাজের লোক সহ। বাড়ির কোথায় কি আছে না আছে সব ওরাই জানে।
কাজের মহিলাটিকে ডেকে ছন্দা বিভিন্ন জিনিস চাইতে লাগলো,– এই দিয়াশলাই কই?
— তুমি আনো নাই? না আনলে আমি কোত্থেকে দেব?
— কি বাজে কথা বলছো জানো যে আমরা আসলে গ্যাসে চুলা জ্বালাবো এগুলি আনার কথাতো ফোনে বলে দিয়েছি।
— আচ্ছা যাও রশুন আনো।
— রশুন নাই?
কেন?
আমি কি জানি তোমার চাচা আনে নাই?
গরম্মশল্লা আছে নাকি তাও নাই??
এই সময় চাচার খুব উত্তেজিত স্বর, এই কি হয়েছে রে? এত মেজাজ নিয়ে আসছো কেন? আমরা তোমার মেজাজ দেখবো নাকি? কোন লাটবাহাদুর আসছে মেজাজ দেখাতে? জীবনটাই আমরা নষ্ট করে ফেললাম এবাড়িতে থাকিতে থাকতে। কি পেলাম? আবার মেজাজ দেখায়?
— এই তোমার বরের কি হইছে? এই চাচা দাড়াও, কি হইছে? কি বলছ? দাড়াও!!
চাচা হনহন করে ঘর থেকে বেড় হয়ে গেল উঠানে ,ওখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে গালাগালি করলো কিছুক্ষন। ছন্দা ঘর থেকে বেড় হবার সময় চাচী বলল— চাকুটা দাও পটল ছিলবো?
রাগে লজ্জায় ছন্দা বলল— লাগবে না, তুমি চলে যাও এক্ষুনি এ বাড়ি থেকে।
— রাগ করো না ও এমন করেইতো কথা বলে তুমি যানো।
ছন্দা ঘর থেকে বাইরে বারান্দায় বসতেই তরকারি কুটতে থাকা এক মহিলা জিজ্ঞাসা করলো –কি হয়েছে চাচার?
ছন্দা জবাব দিল– মনে হয় থাকবে না আর তাই ছুতা খুঁজছে।
— সাথে সাথে চাচার তীব্র চিৎকার ও গালাগালি আবার শুরু হল। চিৎকার চেঁচামেচি করে চাচীকে নিয়ে বেড় হয়ে গেল বাড়ি থেকে। চাচা চলে যাবার পর ছন্দা বলল– এত্ত সাহস, আর না, এ এবাড়িতে আর থাকতে পারবে না। একটু পরেই একাই এলো চাচীকে বাড়িতে রেখে। ছন্দা জিজ্ঞাসা করলো– কি চাচা, চাচী আসবে না?
— আসবে না কেন আসবে, একটু পরে আসবে?
কাজের লোকের সাথে কাজ না করার জন্য ছন্দা কৈফিয়ত চেয়েছে । তাতে রূঢ় স্বরে রুক্ষ আচরণ করেছে কাজের লোক। এতগুলি ননদ ওখানে বসে সব শুনলো কিন্তু ওকে কিছুই বলল না।
===== চলবে
৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
সংসার জীবন, নিজের মানুষও পর হয়ে যায়। 🙁
ইঞ্জা
সংসার জীবন, নিজের মানুষও পর হয়ে যায়। 🙁 🙁
জিসান শা ইকরাম
কাজের লোকের সাথে কৈফিয়ত চেয়েছে আর তাতে ছন্দাকে আজেবাজে কথা শুনতে হলো!
ননদরা কিছুই বললো না এতে !!
আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা সম্পুর্নই নারীর বিরুদ্ধে, এটি থেকে উত্তরনের কোনো পথ আছে বলে আমার মনে হয় না।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় চাপ।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
নীরা সাদীয়া
ননদরা যদি সবাই মিলে এগিয়ে আসতো, তাহলে ঐ লোক এত সাহস পেত না। এটার জন্য মেয়েদেরকে সামাজীকীকরনের শিক্ষা দিতে হবে। যেয়ে দেখেন,ঐরূপ ননদরাও কিন্তু তাদের শশুড়বাড়িতে এমনি কোণঠাসা। তাদের পাশেও তাদের ননদরা দাঁড়ায় না। সত্যি কথা বলতে, মেয়েরা কেন যেন আরেকটা মেয়েকে আপন করে নিতে পারে না।
এই যেমন ধরুন, আমার রিসেন্ট অভিজ্ঞতার আলোকে বলি, আমরা ৬/৭ জন ছেলেমেয়ে মিলে একটা গ্রুপ এ স্টাডি করি। এখানে মাত্র তিনটে মেয়ে। তার মাঝে একটা মেয়ে আমার বিভাগের (ইংরেজি) আরেকটা মেয়ে রসায়নের। ইং এর মেয়েটাতো আমার বান্ধবীই। কিন্তু রসায়নের যে মেয়েটা তাকেও আমি বেশ আপন ভাবতে লাগলাম। তার হয়ে কথা বলি, তাকে কেউ খোঁচালে আমি জবাব দিয়ে দেই। অবশ্য ন্যায় সঙ্গত কথা হলেই বলি। কিন্তু, আমি যখন সমস্যায় পরি, তখন সে তার ছেলে বন্ধুটির মানে তার রসায়নের চিরচেনা বন্ধুটির পক্ষ নেয়, ন্যায় সঙ্গত না হলেও তারই পক্ষ নেয়। অথবা চুপ থাকে। খুব আজব লাগে তখন।
এত বড় রচনা লিখলাম এজন্যই যে, আমাদের দেশের মেয়েদেরকে এসব হিংসাত্নক মানসিকতা থেকে বের করে আনতে হবে। শপিং,সৌন্দর্য চর্চা আর কার কত গয়না,শাড়ি, কত দামী জামাই (!) এসবের বাহিরে এনে পৃথিবীটাকে দেখাতে হবে। সমাজ,রাষ্ট্র, বহির্বিশ্ব সম্পর্কে ভাবতে শেখাতে হবে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্টের জন্য।
তৌহিদ ইসলাম
প্রত্যেকের সংসারেই এসব সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিচ্ছে। সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
“মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু,” প্রবাদটাকে ব্যবহার করতে দিচ্ছি আমরা মেয়েরাই আসলে।
পরের পর্বের অপেক্ষা করছি আপু।
ছাইরাছ হেলাল
বাস্তবতা এমনই কঠিন।