(১)
মিসেস জেনিফার একজন প্রকোশলী। মিসিগান রাজ্যের প্রভাবশালী এবং নামকরা প্রকোশলীদের একজন। তার প্রথম স্বামী স্টিফেন একজন মহাকাশ গবেষক।এই দম্পত্তির ছাড়াছাড়ি হয়েছে বেশ কয়েক বছর হলো। দ্বিতীয়বার ঘর বেঁধেছেন নিজেরই একজন সিনিয়র কলিগের সাথে।নাম গঞ্জালেস ফিফার। যিনি কিনা সিনিয়র তড়িৎ প্রকোশলীদের মধ্যে একাধারে একজন গবেষক এবং কয়েকটি গবেষণাগারের প্রধান সমন্বায়ক। প্রথম ঘরের সন্তান জ্যাককে নিজের সাথেই রেখেছেন মিসেস জেনিফার।
জ্যাককে প্রথম বাবার চেয়েও বড় একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী বানাবেন বলেই পণ করেছেন মিসেস জেনিফার। তাই নিজের কাজের বাইরের অতিরিক্ত সময় বরাদ্ধ রেখেছেন সন্তান জ্যাকের জন্য।
জ্যাক একটি সায়েন্স ফিকশন মুভি দেখছিলো মায়ের পাশে বসে। হঠাৎ খেয়াল করলো তার মা মিসেস জেনিফার খুব মনযোগ দিয়ে একটি চুল্লির নকশা আঁকছেন। বেশ কৌতুহল হলো তার।
– মম কি করছো?
– আমি আমাদের পরবর্তি প্রজেক্টের প্লান করছি সোনা।
– কিসের প্রজেক্ট মম?
– এটা একটা সৌরচুল্লীর নকশা। আমরা মিসিগানে একটি পারমানবিক সৌরচুল্লী স্থাপন করবো।
– কিন্তু মম, এই প্রজেক্টের বিরুদ্ধে তো সারাবিশ্ব এক হয়েছে। তবুও এটা তোমরা করবে?
– জ্যাক সোনা, তুমি এটা বুঝবে না। এতটুকুই জানো যে এই চুল্লীটি আর দশটা সৌরচুল্লী থেকে আলাদা। আর এই জন্যই চীন,রাশিয়া, ভারত কখনই চাইবে না আমরা এটা বাস্তবায়ন করে ফেলি।
– ওদের কথা বাদ দাও মম। আমাদের দেশের অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীওতো এই কাজের বিপক্ষে। গতকালও অনলাইনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে এটার বিরুদ্ধে। পরিবেশের ক্ষতি হবে নাকি এই চুল্লী স্থাপন করলে।
– পরিবেশের ক্ষতি হবে এটা ঠিক। কিন্তু তাতে আমাদের দেশের ক্ষতি হবে না এটা জেনে রাখো।
– এই চুল্লীর পাওয়ার সোর্স নিশ্চয়ই সূর্য? তাইনা?
– খাতা কলমে সেটাই।
– তাহলে পরিবেশের ক্ষতি হবে কেনো?
– যদিও পাওয়ার সোর্স সূর্য বলা হচ্ছে। কিন্তু শতভাগ পাওয়ার এনার্জি সূর্য নয় এটা বাকি বিশ্ব বুঝে ফেলেছে।
– শতভাগ নয়? তবে বাকি এনার্জিটুকু কোথায় পাবে?
– আসলে কার্বনকেই অধিকাংশ সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বলতে পারো দুই-তৃতীয়াংশ।
– ওহ মাই গড !!! বলো কি?
– এতো হতাশার কিছু নেই সোনা? বললাম না এটা আমাদের দেশের কোন ক্ষতি করবে না।
– কিন্তু মম কার্বনতো পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ?
– হ্যাঁ। ঠিক ধরেছো। কিন্তু আমরা সমগ্র ওয়েষ্ট প্রোডাক্ট দূর মহাসাগরে ফেলে আসবো।
– আর ধোঁয়া রোধ করবে কিভাবে?
– এগুলোকে রিজেনারেট করে লিকুইড করা হবে। তারপর একইভাবে কোন এক মহাসাগরে ফেলে দেওয়া হবে।
– কিন্তু মম এতে না হয় আমরা বেঁচে যাবো। কিন্তু ঐ অঞ্চলের মানুষগুলোর কি হবে?
– এতকিছু ভেবে বড় কিছু করা সম্ভব নয় সোনা। আর একটা কথা মাথায় রেখো যাদের তিনবেলা খাবার জোটানোই কষ্টের ব্যাপার, তাদের কথা ভেবে আমরা কেনো পিছিয়ে পড়বো? আর এতকিছু নিয়ে তোমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
জ্যাক আর কথা বাড়ালো না।টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে অন্য নিউজ চ্যানেলগুলো দেখতে লাগলো। মমের কথায় হয়তো ঠিক। যাদের দুইবেলা খাবার জোটে না তাদের কথা ভেবে আমরা কেনো পিছিয়ে পড়বো?
জ্যাক তার প্রথম বাবাকে খুব মিস করে। কি দারুণ মনের মানুষটাই না ছিলেন তিনি। অথচ দ্বিতীয় বাবা একজন কাটখোট্টা গোছের মানুষ। জ্যাক যেনো তার চোখে বিষের মতো। মন থেকে এই লোকটা জ্যাকের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেনা এটা ছোট্ট জ্যাক বুঝে গিয়েছে। তাই পারলে বাবাকে সে এড়িয়ে চলে। ঈশ্বরের কাছে সবসময় তার একটাই প্রার্থনা যেনো তার প্রথম বাবা তাকে এসে নিয়ে যায়। মায়ের ভালোবাসাও এখন তার কাছে কৃত্রিম লাগে। মায়ের কাছে নিজেকে সে একটা পাইলট প্রজেক্টের মতোই!!
(চলবে…)
২৩টি মন্তব্য
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আরম্ভটা বেশ আকর্ষণীয়
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ প্রিয় আপু। 🙂
মা মাটি দেশ
শুরুটা বেশ আরো ভাল লাগত যদি নামগুলো এবং কাহিনী বাঙ্গালীর ছোয়া থাকত।সবইতো কাল্পনিক ক্ষতি ছিল সাইন্স ফিকসন গল্পটা বাঙ্গালীয়ানা হত।তার পরও বলব বেশ জমবে কারন এ যে আমাদের সবার প্রিয় নীলের সিরিজ।সাথে আছি এগিয়ে যান নতুনত্ত্ব নিয়ে। (y)
নীলকন্ঠ জয়
ভাইয়া গল্পে যে বাঙ্গালীয়ানা থাকবে না শেষের আগে কি করে বুঝলেন? থাকতেও পারে। -{@
শুন্য শুন্যালয়
দারুণ শুরু …নেক্সট প্লিজ .. 🙂
নীলকন্ঠ জয়
হুম নেক্সট আসছে… 🙂
ছাইরাছ হেলাল
শুরুটা অবশ্যই চমৎকার ।
পর্ব করে লেখা যেমন ভাল তেমনি অন্য দিকটা হল বেশি পর্বের লেখায়
খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভবনা থাকে ব্লগ পাঠকদের ।
চলুক ।
নীলকন্ঠ জয়
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। কিন্তু স্থান সংকুলানের অভাবে একসাথে এতবড় একটা উপন্যাস/গল্প দেওয়াও সম্ভব নয়।
পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। -{@
জিসান শা ইকরাম
সাবজেক্ট কিন্তু কঠিন ছোট ভাই
তবে জানি তুমি ভালোভাবেই লিখতে পারবে 🙂
চমৎকার সূচনা —
নীলকন্ঠ জয়
পুরো লেখাটাই কমপ্লিট করা আছে। এখন শুধু পোষ্ট দিবো পর্ব করে করে।
শুভেচ্ছা ভাইয়াকে। -{@
ছন্নছাড়া
প্রতীবাদ রোমাঞ্চ সব আছে …………।
টক ঝাল মিষ্টি ……।।
জমেগা ……… কবি ভাই
নীলকন্ঠ জয়
হুম … পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইলো ছন্নছাড়াকে। -{@
তন্দ্রা
জমিয়ে যখন ফেলেছ তখন কিন্তু তাদের উচিত জবাব দেয়া চাই ই চাই,
চালিয়ে যাও ভাই।
নীলকন্ঠ জয়
অবশ্যয়ই। গল্পের সাথেই থাকুন।। -{@
হলুদ পরী সাদা নাকফুল
অনেক সুন্দর……………………… -{@
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন। -{@
বনলতা সেন
আচ্ছা এটাকি গল্প না উপন্যাস ।
আমি আবার পর্ব করে লেখার পক্ষে , অপেক্ষা করে থাকা বা অপেক্ষা করিয়ে রাখা
আমার পছন্দ ।
লেখায় ফাঁকি দিলে ধরে ফেলব কিন্তু ।
এ পর্যন্ত ঠিক আছে বলেই মনে করছি । যদিও আমি ভাল পাঠক না ।
নীলকন্ঠ জয়
বলতে লজ্জ্বা নেই। আমি বড় গল্প আর উপন্যাসের পার্থক্য বুঝিনা। উপন্যাসই বলেছি এটাকে। ফাকি দিবো না। কারণ এটা আগেই শেষ করা আছে। তাই প্রতিদিনই পর্ব আকারে দিয়ে দিবো।
শুভেচ্ছা।
লীলাবতী
দারুন শুরু । অপেক্ষায় আছি পরের পর্বের ।
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ। পরের পর্ব আসছে। 🙂
খসড়া
শুরুটা চমকপ্রদ। অপেক্ষায় রইলাম।
নীলকন্ঠ জয়
ধন্যবাদ ভাইয়া। পরের পর্ব শিঘ্রই আসছে। -{@