নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন একটি ছোট গ্রামের নাম মাহাতাবপুর।মাহাতাবপুর গ্রামটি হলো নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে। সেই গ্রামের এক হিন্দু পরিবারে আমার জন্ম। আমার জন্ম ৮ই জুন, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। আমার বাবার বাপদাদার আমলটা নিজের চোখে না দেখলেও, তাঁদের সময়টা খুবই ভালো ছিল বলে মনে হয়। কারণ, মাহাতাবপুর গ্রামে আর কারোর বাড়িতে দালান ঘর ছিল না। দালান ঘর শুধু পুরো গ্রামের মধ্যে আমাদের বাড়িতেই ছিল। তাও আবার ঘরগুলো ছিল চাটগাঁর(চট্টগ্রামের) পাহাড়ি মাটির দিয়ে তৈরি। ঘরগুলো দেখতে হুবহু গুদামঘরের মতনই দেখা যেতো। যার কারণে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় আমাদের বাড়ির নাম ছিল মাইডগা গুদাময়ালা বাড়ি। আমার দাদার নাম ছিল পঞ্চনন্দ পাল। বাবার নাম শচিন্দ্র চন্দ্র পাল। আমার বাবার আরও দুই ভাই ছিল। মেজো কাকা যতিন্দ্র চন্দ্র পাল। ছোট কাকার নাম ছিল, শান্তিরঞ্জন পাল। আমরা ছিলাম চার বোন, দুই ভাই। নিমাই চন্দ্র পাল, রাধা (রাধু) রাণী পাল, মায়া রানী পাল’ জ্যোৎস্না রানী পাল, মিলন রানী পাল ও আমি নিতাই চন্দ্র পাল ছিলাম সবার ছোট।
মায়ের মুখে শুনেছিলাম আমার ঠাকুরদা’র কথা। আমার ঠাকুর’দা ছিলেন তখনকার সময়ে ছোটখাটো ব্যবসায়ী। তিনি চাটগাঁ (চট্টগ্রাম) থেকে বিভিন্ন মালামাল পাইকারি এনে নোয়াখালী চৌমুহনী বাজারে বিক্রি করতেন। ঠাকুরদা’র চৌমুহনী বাজারে দোকানও ছিল। মাল রাখার গোডাউনও ছিল। ঠাকুরদা মাসের মধ্যে অন্তত ৬/৭ দিন চট্টগ্রামে থাকতেন। আমাদের বাড়ির দালান ঘরগুলো যেই মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছিল, সেই মাটি তখনকার সময় আমার ঠাকুরদা নৌকা যোগে চট্টগ্রাম থেকেই এনেছিলেন। ঘর তৈরির কারিকরও ছিল চট্টগ্রামের। ঘরের দেয়াল ছিল দুইহাত পাশ। ঘরের ভেতরে প্রয়োজন মতো কোঠাও ছিল। বর্ষাকালে বন্যা থেকে রেহাই পেতে ঘরগুলো ছিল বাড়ির উঠোন থেকে অনেক উঁচু। আমার ঠাকুরদা’র দেখাদেখি আমার বাবার কাকা জেঠারাও চাটগাঁ থেকে মাটি এনে একই পদ্ধতিতে তাঁদের সীমানায় মাটির ঘর তৈরি করেছিল।
আমার ঠাকুর’দা চাটগাঁ থেকে মাটি এনে ঘর তৈরি করার একটা কারণ ছিল। কারণ হলো, তখনকার সময়ে রড সিমেন্টের খুবই অভাব ছিল। যা ছিল, তা কেবলমাত্র বিদেশে, আর এদেশে যাঁদের তেমন অর্থকড়ি ছিল তাঁদের জন্য ছিল। তবুও বিদেশের মত এই বঙ্গদেশে তখন ঘরের আনাচে-কানাচে সিমেন্ট পাওয়া যেতো না। যাঁদের অট্টালিকা তৈরি করার সামর্থ্য ছিল, তাঁরা দেশীয় তৈরি ছোট আকারের ইট পেক-মাটি দিয়ে অট্টালিকা বা ইটের দালানঘর নির্মাণ করতো। তা আগেকার সময়ের তৈরি পুরানো স্থাপনাগুলো দেখলেই বোঝা যায়। আগেকার দিনের পুরানো দালান ঘরগুলোতে দেখা যায়, দোতলা ঘর তৈরি করা হয়েছে লোহা বা কাঠের মাচার উপর। দেওয়াল বা প্রাচীর বা বাউন্ডারির ওয়াল করা হয়েছে সিমেন্টের পরিবর্তে মাটি দিয়ে। তখনকার সময়ে যদি সিমেন্ট পাওয়া যেতো, তাহলে আমার ঠাকুর দাদাও ইট-সিমেন্টের সমন্বয়ে বাড়ির ঘরগুলো তৈরি করতো। সিমেন্টের অভাবের কারণেই আমার ঠাকুরদা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতো বাড়ির ঘরগুলো তৈরি করেছে চাটগাঁইয়া মাটি দিয়ে। এই মাটির ঘর আমাদের বাড়ি ছাড়া গ্রামের আর কারোর বাড়িতে ছিল না বলেই, আমাদের বাড়ির ডাকনাম হয়েছিল মাইডগা গুদামওয়ালা বাড়ি। আমি সেই মাইডগা গুদামওয়ালা বাড়ির ছেলে। সেই বাড়িতেই আমার জন্ম! পাঁচ বছর বয়সে সেখানেই আমার লেখাপড়ার হাতেখড়ি।
আমি ছোট থেকে একটু বড় হয়ে দেখেছি, আমার বাবার জেঠাতো ভাই’রা স্বচ্ছল স্বাবলম্বী থাকলেও; একই বাড়িতে আমাদেরই ছিল অভাব অনটনের সংসার। আমার বাবার দুই ভাই শান্তি রঞ্জন পাল ও যতিন্দ্র পাল। তাঁদের মধ্যে শান্তি কাকা একসময় আমার বাবার সাথে নারায়ণগঞ্জই চাকরি করতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি তিনি পার্বত্যচট্টগ্রাম রামগড় গুঁইমারা বাজার নামক স্থানে সপরিবারে বসবাস করছে। যতিন্দ্র কাকা মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকে চাঁদপুর থাকতেন। চাঁদপুরেই তিনি বিয়ে-সাদী করে সেখানেই ছিল তাঁর স্থায়ী বসবাস। যদিও খুব ছোটকালে যতিন্দ্র কাকা আমাকে দেখেছিল, কিন্তু আমি বুঝের হয়ে যতিন্দ্র কাকাকে একবারও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। শুধু জানতাম যতিন্দ্র নামে আমার আরেকজন কাকা আছে। আমি বুঝের হয়েও আমার ঠাকুরমাকে দেখেছি। ঠাকুরমার আদর পেয়েছি। কিন্তু আমার ঠাকুরদা’কে কখনো দেখিনি। আমার ঠাকুরমা মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে দেশ স্বাধীন হবার কয়েকমাস পরেই পরপারে পাড়ি দিয়ে স্বর্গীয় হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ যখন স্বাধীন হয়, আমি তখন সাত/আট বছরের নাবালক এক শিশু। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সময়কার স্মৃতিগুলো এখনো আমার স্পষ্ট মনে আছে। সে সময়কার কথা আমার মৃত্যুর আগপর্যন্তই মনে থাকবে বলে মনে হয়। মনে পড়ে সে সময়ের কথা। তখন আমাদের সংসারে খুবই অভাব অনটন ছিল। এর আগে থেকেই ছিল আমাদের সংসারে অভাব। তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ! আমাদের গ্রামে আমাদের মতো এতো অভাব অনটন আর কারোর সংসারে ছিল না। পুরো মাহাতাবপুর গ্রামে সবকটা পরিবারে মধ্যে আমাদের পরিবারই ছিল সবসময়ের জন্য অভাবগ্রস্থ। কারণ বাড়ির একটা মাটির ঘর ছাড়া আমাদের আর কোনও জায়গা-জমি ছিল না, তাই। আমাদের সংসার চলতে বাবা এবং আমার বড়দা’র চাকরির বেতনের উপর নির্ভর করে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে বাবা ও বড়দা’র টাকা পাঠানো একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়াতে আমাদের সংসারে থাকা সবাই দিনের পর দিন বেশিরভাগ সময় না খেয়েই থাকতে হতো। সময়তে সকালের খাবার রাতে মিলতো। আবার দুপুরবেলায় জুটলেও রাতে জুটতো না।
মুক্তিযুদ্ধের আগে গ্রামের অন্যসব গৃহস্থের জমিতে ধান কাটার সময় আমরা ভাইবোন মিলে ধান কুড়াতাম। সেই কুড়ানো ধানের কিছু চাল দিয়ে পূজাপার্বণে চিড়ামুড়ির চাহিদা মেটাতাম। বাকি চালগুলো নিজেদের সংসারে কয়েকদিনের খোরাকও হয়ে যেতো। এছাড়াও সময় সময় আমিও বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে কচুর লতি, আর সুপারিগাছ থেকে ঝরে পরা সুপারি কুড়িয়ে বড় জেঠার সাথে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। যা পেতাম, তা মায়ের কাছে অথবা বড়দি’র কাছে বুঝিয়ে দিতাম। সেই পয়সা থেকে মা আমাকে পহেলা বৈশাখের আগে চৈত্র-সংক্রান্তির মেলায় কিছু পয়সা দিতেন। আর কিছু দিতে দুর্গাপূজা শেষে লক্ষ্মীপূজার সময়। আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যা দু’চার পয়সা থাকতো, তা আমার মা সংসারেই খরচ করতো। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গ্রামের কোনো গৃহস্থেরা জমিতে চাষাবাদ করেনি। আর আমিও আগের মতো কিচুর লতি, সুপারি কুড়িয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারিনি। তাই সেসময় আমাদের সংসারে ছিল দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা। অবশ্য এই অবস্থা ছিল, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে বাবা বাড়িতে না আসা পর্যন্ত।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে বাবা খালি হাতে বাড়ি ফিরল। তখন মায়ের শেষ সম্বল একজোড়া কানের দুল বন্ধক রেখে কিছু টাকা সংগ্রহ করা হয়। সেই টাকা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাবা মড়ি বিক্রি শুরু করেন। এই মুড়ির ব্যবসা করেই সেই সময়টা কোনওরকমে টেনেটুনে পাড় হয়েছিল। একসময় দেশ হানাদার মুক্ত হয়ে স্বাধীন হলো। বাবার চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরে যায়। ছোট কাকা সপরিবার নিয়ে চলে যায় পার্বত্যচট্টগ্রামের রামগড় গুঁইমারা বাজার। বড়দাদাও শরনার্থী জীবন ত্যাগ করে ভারত থেকে দেশে ফিরে এসে আবার নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
এর ছয়মাস পরই আমার চার বোনের মধ্যে দ্বিতীয় বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বিয়ে ঠিক হয়েছে নারায়ণগঞ্জই। ছেলে (জামাই) নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিমপাড় লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের শ্রমিক ছিল। ছেলে লোকমুখে আমার এই বোনের গুনগান শুনেই বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। যৌতুক বা অন্যকোনো লেনা-দেনার আবদার ছিল না তাঁর। শুধু বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন করে দিতে পারলেই হলো। আমার বাবা ও বড়দাদা তাতেই রাজি হয়ে বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি করে ফেললো। বিবাহের কার্যসম্পাদন হবে নারায়ণগঞ্জই। এই বোনের বড় রাধারাণী নামে যেই বোন ছিল, ওঁর বিয়ে আরও অনেক আগেই হয়েছিল। রাধু দিদির যখন বিয়ে হয়, তখান আমার বয়স হয়েছিল মাত্র দেড়বছর। সে বোনের বিয়ের কাহিনি শুনেছি মায়ের মুখে। কিন্তু আমার বিন্দুমাত্র মনে নেই, স্মরণেও নেই।
তবে এই মেজো বোনের বিবাহ অনুষ্ঠানে আমি আমার মায়ের সাথে নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিলাম। মেজো বোনের বিয়ের চার-পাঁচ দিন আগে আমার বড়দাদা নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে এসে মেজো বোন-সহ মায়ের সাথে আমাকেও নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গিয়েছিল। দেখেছি এবং মনেও আছে। বোনের বিয়েতে গিয়ে মায়ের সাথে নারায়ণগঞ্জ মাসেক খানেক থেকে, আমাদের গ্রাম ও বাড়ি দেখানোর জন্য বোন-সহ জামাইবাবুকে সাথে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। তখন দেশের অবস্থা বেশি ভালো নেই! তখন চোর ডাকাতের উপদ্রবে সারা দেশের গ্রাম শহরের মানুষ একরকম অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। আমার মেজো বোনের জামাই(জামাইবাবু) বাড়িতে থাকাকালীন সময়েও একবার ডাকাতদল আমাদের বাড়িতে হানা দিয়েছিল। সেই ভয়ে আমার জামাইবাবু মেজো বোনকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমাদের গ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ চলে যায়।
সেসময় চোর ডাকাতদের উপদ্রবে আমরা আর গ্রামের বাড়িতে বেশিদিন টিকে থাকতে পারিনি। আমাদের গ্রামে আরও অন্যান্য বাড়ির মধ্যে আমাদের বাড়িতেই ডাকাতদের হানা ছিল বেশি। এর কারণ হলো, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাতদুপুর পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীদের আড্ডা ছিল। এতে আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনেকেই মনে করতো যে, আমাদের বাড়িতেই মুক্তিবাহিনীরা ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের বাড়িতেই ডাকাতদের হানা ছিল সবচেয়ে বেশি। ডাকাতদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় আমরা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সপরিবারে চলে এলাম নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন লক্ষ্মণ খোলা গ্রাম সংলগ্ন আদর্শ কটন মিল অভ্যন্তরে। থাকতাম মিলের শ্রমিক ফ্যামিলি কোয়ার্টারে। সময়টা তখন হতে পারে ১৯৭৩ সালের নভেম্বর নাহয় ডিসেম্বর মাস।
চলবে…
২৯টি মন্তব্য
প্রদীপ চক্রবর্তী
জীবনের প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে কঠোর সংগ্রাম করে। তারমধ্য অভাব অনটনের সংসার।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদেরও পূর্বপুরুষকে কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়।
ডাকাতদলের উপদ্রব অনেককিছু লুটপাট করে নিয়েছে। এসব যদি সম্পদ থাকতো তাহলে অনেক মানুষ আজ পথে নামতো না।
.
জীবনের গল্প এক কঠিন পরিস্থিতির সাথে খাপ খেয়ে উঠেছেন আপনি। আমার দাদু ও বাবারও তেমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন।
.
শুভকামনা দাদা।
নিতাই বাবু
মুক্তিযুদ্ধের মতো আমার জীবনটাও একরকম যুদ্ধ, দাদা। জন্ম থেকেই যুদ্ধ করে চলছি। এখনও জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারিনি। মনে হয় অবশিষ্ট জীবনে আর জয়ী হবার হতে পারবোও না। আমি এখনও যুদ্ধের ময়দানে আছি। এই যুদ্ধ শেষ হতে আরও অনেক বাকি।
আপনার যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি ভালো থাকবেন।
নীরা সাদীয়া
যুদ্ধের সাক্ষী আপনি। চলতে থাকুক গল্পটা।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, দিদি। আমি আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চাক্ষুষ সাক্ষী হয়ে এখনো বেঁচে আছি। আমার জীবনযুদ্ধের আরও বিস্তারিত জানতে সাথে থাকুক। আশা করি এই সময়ে সপরিবারে ভালো থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর ও সুনিপুণভাবে জিবনকাহিনী তুলে ধরেছেন।
মুক্তিজুদ্ধে অনেক ফ্যামিলিই মুক্তিযুদ্ধাদের থাকা এবং খাওয়া ব্যাবস্থা করার জন্য পরবর্তি সময়ে নাজেহাল হয়েছে। সরকার তা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা দিতে পারেনি।
আপনার জিবন নির্ভর কাহিনী মুগ্ধ হয়েই পাঠ করলাম।
♥🇧🇩💚❤💜
নিতাই বাবু
আপনি তো আরও আগে থেকেই আমার জীবনযুদ্ধের ঘটনাবলী জানেন, দাদা। তবুও এই লেখায় সাথে আছেন বলে আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। আশা ভালো থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা জানি দাদাভাই, তবুও আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে, পড়িও তাই।
পরেরে পির্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
নিতাই বাবু
আগামী পর্ব নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হাজির হচ্ছি, শ্রদ্ধেয় দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা আপনার জীবনের কথা গুলো যত শুনছি ততো অবাক হচ্ছি। মানুষের জীবনেই চড়াই উৎরাই থাকে। জীবনের সত্য ঘটনা গুলো সুন্দর তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী আপনি ভাবতেই ভালো লাগছে। অফুরন্ত শুভ কামনা রইলো
নিতাই বাবু
হ্যাঁ শ্রদ্ধেয় দিদি। আমি মুক্তিযুদ্ধের চাক্ষুষ সাক্ষী হয়ে আজও মরার মতো বেঁচে আছি। তবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ কিন্তু শেষ হয়েছে, সেই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। আমার জীবনযুদ্ধ কিন্তু এখানে শেষ হয়ে যায়নি। যুদ্ধ চলছে। আমি এখনো জীবন যুদ্ধের ময়দানেই আছি। যুদ্ধ শেষ হতে আরও অনেক বাকি। আশা করি সাথে থাকবেন। আর জেনে নিন, জীবন কাকে বলে।
সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দুঃখজনক স্মৃতি —- সেসময় চোর ডাকাতদের উপদ্রবে আমরা আর গ্রামের বাড়িতে বেশিদিন টিকে থাকতে পারিনি। আমাদের গ্রামে আরও অন্যান্য বাড়ির মধ্যে আমাদের বাড়িতেই ডাকাতদের হানা ছিল বেশি। এর কারণ হলো, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাতদুপুর পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীদের আড্ডা ছিল। এতে আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনেকেই মনে করতো যে, আমাদের বাড়িতেই মুক্তিবাহিনীরা ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের বাড়িতেই ডাকাতদের হানা ছিল সবচেয়ে বেশি। ডাকাতদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় আমরা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সপরিবারে চলে এলাম নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন লক্ষ্মণ খোলা গ্রাম সংলগ্ন আদর্শ কটন মিল অভ্যন্তরে। থাকতাম মিলের শ্রমিক ফ্যামিলি কোয়ার্টারে। সময়টা তখন হতে পারে ১৯৭৩ সালের নভেম্বর নাহয় ডিসেম্বর মাস।
আপনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। আমিও দেখেছি। আমিও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। শিশুর চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু লেখা শুরু করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত তা ডিলিট হয়ে যায়। আপনার লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমিও লেখা শুরু করবো। ভালো থাকবনে দাদা।
নিতাই বাবু
অবশ্যই লিখবেন, দাদা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চাক্ষুষ কিছু ঘটনা আপনার লেখা থেকেও আমাদের জানা দরকার আছে বলে আমি মনে করি। আশা করি খুব সম্ভবত তাড়াতাড়ি পড়তে পারবো, জানতেও পারবো।
আপনার জন্য অফুরন্ত শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদা ।
খাদিজাতুল কুবরা
দাদা আপনার জীবনযুদ্ধের সাথে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও জানতে পারবো সুন্দর লেখনীতে।
অনেক শুভকামনা রইল।
আমার বাড়ি নোয়াখালী সেনবাগ।
আমরা একই জেলার মানুষ জেনে খুব ভালো লাগলো।
নিতাই বাবু
আপনি আমার জন্মভূমি নোয়াখালী সেনবাগের জেনে আনন্দিত হলাম দিদি। তাহলে ভালোই তো হলো! সোনেলায় একসাথেই দাবিয়ে বেড়াতে পারবো বলে আশা করি। আপনার জন্য অফুরন্ত শুভকামনা থাকলো।
খাদিজাতুল কুবরা
নিশ্চয়ই দাদা।
ইনশাআল্লাহ আমরা সোনেলার সাথে সুন্দর আনন্দময় সময় কাটাবো।
আলমগীর সরকার লিটন
জীবনস্মৃতি চমৎকার কবি নিতাই দা
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, শ্রদ্ধেয় কবি লিটন দাদা। আমার জীবনযুদ্ধটা খুবই ভয়ানক। এই যুদ্ধ কবে যে শেষ হবে, তা আমার জানা নেই! আমি এখনও জীবন যুদ্ধের ময়দানে আছি। আগামী পর্বে আরও কিছু স্মৃতি নিয়ে হাজির হচ্ছি। আশা করি সাথে থাকবেন। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি লিটন দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
লিখুন লিখুন, অমূল্য ইতিহাস হয়ে থাকবে,
জীবনের নানা পরতে পরতে কিছুই না লুকিয়ে থাকে সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, শ্রদ্ধেয় কবি মহারাজ। সোনেলা ব্লগেই জীবনের গল্পের ইতি টানছি। লিখবো জীবনের এই পর্যন্ত বিস্তারিত সবকিছু। আশা করি সাথে থাকবেন।
তৌহিদ
সোনেলায় আপনার জীবনের গল্প স্মৃতি হয়ে থাকবে। আর আমরাও অনেক কিছু জানতে পারবো। লিখুন দাদা।
শুভকামনা রইলো।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, শ্রদ্ধেয় তৌহিদ দাদা। সোনেলা ব্লগেই জীবনের গল্পের ইতি টানছি। লিখবো জীবনের এই পর্যন্ত বিস্তারিত সবকিছু। আশা করি সাথে থাকবেন। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
তৌহিদ
পাশে আছি দাদা
সুরাইয়া পারভীন
কেবল প্রথম পর্ব পড়লাম
এতে মনে হচ্ছে বেশ সংগ্রাম করে টিকতে হয়েছে
বাকী গুলো পড়ে নিচ্ছি
নিতাই বাবু
আপনার মতো একজন গুনী ব্লগা/লেখক/কবি যদি আমার এই কষ্টের জীবনকাহিনী না পড়েন, তো আমার কষ্ট থেকেই যাবে, দিদি। তাই আশা করি অবশ্যই পড়বেন।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
দালান জাহান
সত্যিই জীবনের কথা কিছু দুঃখ কিছু স্মৃতি বিজারিত অভিজ্ঞতা। খারাপ লেগেছে কয়েক জায়গায় বাস্তবতার কালো দাগ। পরের পর্ব গুলোও পড়ব আমি।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দাদা, আমার জীবনের বাস্তব কাহিনী। জীবনভর কষ্টই করেছি, কিন্তু লোভ করিনি। শুধু পেট ভরে দুমুঠো ভাত খেতে ছেয়েছি। পড়বেন দাদা, অবশ্যই পড়বেন। শুভকামনা থাকলো।
আকবর হোসেন রবিন
জীবনী পড়তে ভালো লাগে। লেখার মাধ্যমে একটা মানুষের জীবনের অনেকটা ফুটে উঠে। একটা মানুষকে অনেক জানা যায়। ভালো লাগলো পড়ে। পরের পর্ব গুলো ধাপে ধাপে পড়ব।
নিতাই বাবু
বাকি থাকা পোস্টগুলো অবশ্যই পড়বেন, দাদা। তাহলেই আমার জীবনের গল্পটা স্বার্থক হবে। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।