উৎসর্গ- শূন্য শূন্যালয়কে , যার শেষ লেখাটি আমাকে অভিভূত করেছে।
আত্মহত্যার কয়েকদিন আগের ঘটনা । বলা নেই কওয়া নেই নাছরিন উপস্থিত ,’চল তোদের বাড়ীতে যাব ‘ । বেশ অবাক না হলেও একটু কেমন কেমন যেন লাগল । ঝিম ধরা ভাব । যা একান্তই স্বভাব বিরুদ্ধ ওর।কথাবার্তা খুবই কম। হা হা হি হি হই হই রই রই কিচ্ছুটি নেই।সাথে নেই এক গাট্টি গ্যাজেট। কত যে এক্সেসরিজ , দেখতে বিদ্ঘুটে নানা রকম তার-ফার,সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। সাথে নেই পোষাক পরিচ্ছেদের বিরাট লটবহর। নানান রকম জুতা-স্যান্ডেল সবই অনুপস্থিত।বই পত্রের কথা বাদই দিলাম।মনের গভীরে কু ডাক দিচ্ছে।একটি গুমোট অস্বস্তি নিয়ে বাড়ীতে দিয়ে পৌঁছালাম সন্ধ্যা নাগাদ।সংক্ষিপ্ততম কাথাবার্তায় সময় কেটে গেলে কোন রকম সামান্য কিছু খেয়ে আমারা ঘুমুতে গেলাম।
আর কত মটকা মেরে এপাশ-ওপাশ করা যায় । লতা কে ঘুম থেকে তুললাম , একটু গাই-গুই করে উঠে চোখে পানি দিয়ে এলে ছোট্ট কাগজ বের করে পড়ে শোনালাম।
মেঠো পথ ধরে একাকী হেঁটে যেতে যেতে
বিনম্র মুগ্ধতায় গাছের ছায়ায় বুক ভরা নিবিড় নিশ্বাসে ,
গাছের গন্ধ মেখে গাঢ় ঘুমের অতলে ।
কী জানি ! কতক্ষণের এ স্তব্ধতা !
জেগে উঠি গাছের ডাকে , ফুলের গন্ধে ,সবুজ পাতাদের ছোঁয়ায় ।
”কেমন আছ বন্ধু আমার ? এ-যে অনেক কাল পরে ,এ-দেখা ।”
আমি ঠিকানাহীন এ-গাছটির খোঁজ নিতে চাই , আমার জন্য সে অপেক্ষা করছে । লতাকে শক্ত করে জানিয়ে দিলাম ,
এবং এ জন্যই আমি এসেছি এবারে এখানে।
নাছরিনকে এখন ঘুমুতে বললাম সকালে খুঁজতে বের হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে । এবারে আমার মটকা মেরে পড়ে থাকার পালা সকাল পর্যন্ত ।
শুভেচ্ছা নূতন বছরের সবাইকে ।
১৪টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
বনলতা দি, সাদা শাড়ি লাল পাড়ের দুঃখ ভুলে গেলাম, নববর্ষে এমন উপহার পেলে আর কি চাই?
প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কি পেরেছিলেন, এমন গাছের খোঁজ যে আমার ও পেতে ইচ্ছে করছে…
লেখাটায় স্পষ্ট স্তব্ধতা, কেমন থমথমে ভাব… আমি লেখক হলে নাছরিন কে মরে যেতে দিতাম না… 🙁
বনলতা সেন
প্রথম মন্তব্য আপনি করেছেন দেখে ভাল লাগল ।
নাছরিন অনুভব নির্বাধায় নিরাবরণে প্রকাশ করেছি মাত্র ।
ভাল থাকুন অনেক ।
ছাইরাছ হেলাল
সারা বছর জুড়ে সবার এমন লেখা পড়ার সৌভাগ্য যেন হয়
বছর শুরুতে এই-ই কামনা করি ।
নাছরিনকে শ্রীকান্তের ইন্দ্র মনে হয় ।
প্লিজ আরও লিখুন ।
বনলতা সেন
এমন করে লিখতে পারলে ভালই হত , সব সময় হয়ত তা সম্ভব নয় ।
ইন্দ্র মনে হতেই পারে , দারুণ উদাহরণ দিয়েছেন ।
ভাল থাকবেন ।
প্রজন্ম ৭১
বনলতা সেনকে এতদিন যেভাবে দেখেছি, এ যেন সেই বনলতা নয়। লেখাগুলো লুকিয়ে রাখা খনিতে রেখেছিলেন মনে হচ্ছে। অসাধারন, মুগ্ধ।
বনলতা সেন
বেশ সুন্দর করে বলেছেন ।
দেখি আরও কিছু বের করতে পারি কী না ।
ভাল থাকুন ।
জিসান শা ইকরাম
এমন লেখা আরো চাই।
নাছরিনের প্রেমে পরে যাচ্ছি –
শুভ নববর্ষ ।
বনলতা সেন
চেষ্টা থাকবে আরও কয়েকটি পর্ব লেখার ।
নাছরিন আপনার ঘাড় মটকে দিতে পারে কিন্তু ।
শুভ নববর্ষ জানালাম আপনাকেও ।
অপরাজিতা সারাহ
আপনার লেখাগুলো পড়ি মন্ত্রমুগ্ধের মত।যদিও সময়ের অভাবে ঠিকসময়মত হয়ত পড়তে পাইনে,তবে কথায় বলে,বেটার লেট দ্যান নেভার।আমার রাত জাগা পুষিয়ে দিলেন আজ।খুব ভালো লাগল। আত্মহত্যার কারন এবং তার আগ মুহূর্তের সব ঘটনাগুলো জানতে চাই একে একে।আশায় বসে থাকলাম। 🙂
বনলতা সেন
আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন দেখে অনেক ভাল লাগছে । আত্মহত্যার কারণ [বই মেলা (ম্যালা)]
লেখাটিতে বলা আছে । আর এ নিয়ে আরও কিছু লেখা লিখব , সময় পেলে পড়ে দেখবেন ।
লেখক না হয়েও আপনাদের উৎসাহে লিখছি । কেমন লিখছি তা নিয়ে ভাবতে আমি রাজি নই ।
আমি আমার মত করে আমার কথা বলি , আপনি সহ যারা পড়েন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ সব সময় ।
আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা ।
শিশির কনা
এ আমি কোন বনলতা সেনকে দেখছি? দিদি আপনার মাঝে এমন লেখা লুকিয়ে রেখেছেন, তা প্রথম দিকে বুঝতেই দেননি। আপনার প্রতি অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
বনলতা সেন
আমি আপনাদের ই সেই এক জনা ।
আপনাকে আমি খুব মিস করি । যতই ব্যস্ত থাকুন আমি এই জাতিস্মর নিয়ে আরও
লেখার চেষ্টা করব, আপনাকে সাথে চাই ।
কিছুই নাই ভাই , কী আর লুকোব ?
অনেক ভালোলাগা আপনার জন্য ।
হতভাগ্য কবি
অদ্ভুত অদ্ভুত অদ্ভুত , নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
বনলতা সেন
অবশ্যই আপনাকেও শুভেচ্ছা নূতন বছরের ।
শুধু অদ্ভুত বললে হবে না । আর একটু বেশি বলতে হবে ।