অন্ধকার রাত্রি । সময় প্রায় আড়াইটা । গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ঢাকার উদ্দেশ্য ছুটছে আমাদের বাস । অন্ধকার ভেদ করে তীব্র গতিতে। সামনের দুটি আসনে বসে আছেন বাবা আর অসুস্থ মা ।মায়ের মাথায় টিউমার । কুমিল্লার চিকিৎসকরা বলেছেন ,অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণই হলে ও করতে হবেই । না করলে মৃত্যু নিশ্চিত । করলে বাঁচা মরার সম্ভবনা ফিফটি ফিফটি । ডাক্তারের কথা শোনার পর থেকে আমাদের পরিবারে মেঘে ঢেকে যায় ।আর যেন রোদের দেখা মেলে না । মাকে নিয়ে যাচ্ছি দেশের সেরা বিশেষজ্ঞের কাছে ।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তার সিরিয়াল নিয়েছেন বড় মামা ।বাবা তার সামর্থ্যের সবটুকু
দিয়ে সহধর্মিণীকে সুস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । মাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন বাবা ।সংসারে টানাপোড়নের মধ্যে ও কখন ও তাদের ভালোবাসায় এতটুকু ঘাটতি দেখিনি ।কখন ও মাকে সামান্য একটা ধমক দিতে পর্যন্ত দেখিনি আমার বাবাকে । বাবা মাকে দেখে বুঝেছি ভালবাসা কতটা পবিত্র হতে পারে । মা এখন ঘুমাচ্ছেন । মাথাটা বাবার কাঁদে এলিয়ে দিয়ে ।এই কাঁধ ভর করেই তো মা কাটিয়েছেন জীবনের ৩২ টি বছর ।এবার কি সেই বাঁধন ছিন্ন হওয়ার সময় এসেছে ? ভাবতেই যেন শিউরে উঠি ।মায়ের নিষ্পাপ স্নিগ্ধ আর নিশ্চিন্ত ঘুম দেখে মনে হয় তার কিছুই হয়নি । নির্ভার হয় মাথাটা বাবার কাঁধে ফেলে রেখেছেন । কারণ মা খুব ভালো করেই জানেন এই কাঁধটি ই তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান । হঠাৎ ঝুম
বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে মধ্যরাতের নিঃসঙ্গ চরাচর ।বাসের জানালা দিয়ে আসা বৃষ্টিতে মায়ের মুখটা ভিজে ওঠে । আহ ! কি পবিত্র সেই মুখ !বাবা জানালা বন্ধ করতেই ঘুম ভেঙে যায় মায়ের ।ঘুম ঘুম চোখে একবার জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখার চেষ্টা করেন ।ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে একটুখানি পানি খেলেন ।তারপর বোতল টা রেখে দেন যথাস্থানে । যেন মায়ের কিছুই হয়নি ।সব স্বাভাবিক। বাবা ফের মায়ের মাথাটা টেনে এনে তার কাঁধে চেপে ধরেন । আবার ও ঘুমাতে চেষ্টা করেন মা । বৃষ্টি বাড়তেই থাকে ।প্রবল বৃষ্টি যেন মাটির সবটুকু উত্তাপ নিঃশেষ করে দিতে চায় ।বৃষ্টির দিকে তাকাতেই আমার চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে ওঠে ।বৃষ্টির জল আর আমার চোখের জল মিশেমিশে একাকার ।মায়ের যদি কিছু হয়ে যায় আমাদের পৃথিবীটা যে একেবারে শূন্য
হয়ে যাবে ।
১০টি মন্তব্য
মশাই
মায়ের প্রতি সেই সত্য সন্তানের যে ভালবাসা থাকা দরকার তা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। আমরা সকলে এই মায়ের কাছে ঋণী আর এই ঋণ পরিশোধ করার মত নয় কোনদিন। আপনার সাবলীল উপস্থাপনায় মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
থার্ড পার্সন পুরাল
ধন্যবাদ মশাই ।মায়ের ঋণ সত্যি পরিশোধ দেবার ক্ষমতা কারো নাই ।
সঞ্জয় কুমার
ঘটনা টা খুব চেনা মনে হচ্ছে । আমার জীবনেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল । মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিল আমার মা । উনার জন্য শুভ কামনা ।
মশাই
আর একটা কথা, আপনার মা আমাদের সবার মা হয়েই বেঁচে থাকুক আজীবন সেই প্রার্থনা করি।
স্বপ্ন
মা এর জন্য এমন উতলা হই আমরা সবাই। লেখাটি গল্প তাইনা ? ঈদ মোবারক ।
শুন্য শুন্যালয়
এটি গল্পই যেন হয়। মা-বাবার সুন্দর এক সম্পর্কের কথা পড়তে ভালো লাগলো।
সব বাবা-মা আর এমন সন্তানের জন্য শুভকামনা থাকবে।
জিসান শা ইকরাম
ভালো লিখেছেন।
লাইন গুলো এমন আসলো কেনো ?
কোথাও থেকে কপি করে এখানে পেষ্ট করার আগে এইচটিএমএল এ ক্লিক করে পেষ্ট করতে হবে।
থার্ড পার্সন পুরাল
বুঝিনাই ঠিকমতো আপনার কথা আংকেল ।লেখাটা আরো ১ মাস আগের । আংকেল ফেবুতে কয়েকটা পেজ এ ও লেখা পোস্ট হয়েছিলো ।
ছাইরাছ হেলাল
এখানে যখন কোন লেখা পেস্ট করবেন তখন ডান পাশে উপরে এইচ টি এম এল এ ক্লিক করে
আপনার লেখাটি পেস্ট করবেন । তাহলে আর দেখতে এলো মেলো লাগবে না ।
থার্ড পার্সন পুরাল
ওকে ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂 ।