শরীর আর মনের এক তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। বাইরে তারস্বরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে কুৎসিততম কন্ঠের অধিকারী কাকপাখি। জানালার গ্রীলে বসেই কি ও চেঁচাচ্ছে!! কিছুক্ষন আগেই দূরের কোন মসজিদে আযান হয়ে গেল। আরেকটি দিনের সূচনা। শরীর চাচ্ছেনা বিছানা ছাড়তে। অথচ ঘুম ভেঙ্গে গেছে সেই কখন। অলস শরীর তারপরেও চোখ বন্ধ করে ঘুমের তপস্যা করে যাচ্ছে। এ যুগে তপস্যার কোন দাম আছে!! অদৃশ্য মন তার পরোক্ষ জোড়ে শরীরকে টেনে তোলে বিছানা থেকে। বারান্দায় যাওয়ার কোন তাড়না অনুভব করেনা মন। কি হবে ভোর দেখে!….ফিরে আসেনা সেই সোনালী সকাল।
না মন খারাপ, না নিঃসঙ্গতা, না অস্থিরতা, না রাগ………কিছুই হচ্ছেনা যেন। নাকি সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! গতরাতে এনাম বলেই দিলো “এই সংসার থাকবেনা। তোমার সঙ্গে আমি কাগজপত্রে সেপারেশনে যাবো।“ আমি জানতাম ও বলবেই। আমিও কি অপেক্ষাতেই ছিলামনা?! তিল তিল করে সাজানো এই সংসার; আড়ং থেকে কেনা ডোরবেল-এর টুংটাং; মাটির গ্লাস; দেয়ালে ঝুলানো ছোট্র একতারা…সবকিছুর জন্য মন কেমন করা। গতরাতে পূর্নিমা ছিলো। অস্থির মন কোননা কোনভাবে স্থির হতে চায়। তাই বলেই হয়তো সবার সাথেই গত সপ্তাহ জুড়ে পূর্নিমা পূর্নিমা করে চ্যাঁচানো। কিন্তু গতরাতে আকাশ জুড়ে থাকা চাঁদ কতটা আলো ছড়াতে পেরেছিলো ! কি বিষন্ন ছিলো চাঁদের বুড়িটা! কেউ বোঝেনি। বিষন্নতাকে কেউ বোঝেনা !
গত বিকেল …. মুখরিত সন্ধ্যা …. নির্ভেজাল হাসাহাসিতে মাতোয়ারা বাড়ি ফেরার রাস্তা….পুরোটা সময়ই কি মনটা এনাম-কেই ভাবছিলোনা! ভেতরে ভেতরে কি বার্তা চলে গেছিলো এনাম-এর !! গত সাতটা বছর ধরে যে সংসার সকাল বিকাল ভেঙ্গেছে….তার চিরতরে ভেঙ্গে যাবার বার্তা !!
মাথাটা ঝিমঝিম করে। নিচে অদূরে চাপকল-এর ঘটাং ঘটাং শব্দ; অতদূরে থেকেও স্পষ্ট কারো মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দেবার শব্দ; ফিকে হয়ে আসা জ্যোস্নার আলোঘেরা বারান্দায় চড়ুই শালিকের কিচিরমিচির; শব্দেরা যেন প্রতিযোগীতায় নেমেছে প্রকৃতির নির্দেশে। যেন কিছুতেই কানে পৌঁছতে দেবেনা মাথার উপর ছাদের পলেস্তারা খসে পড়বার শব্দ; যেন কিছুতেই অনুভূত হতে দেবেনা বুকের ভেতর ইট-পাথরের ঝুপঝুপ হুড়োহুড়ি। প্রকৃতির কি ক্ষমতা আছে আমাকে বধির করে দেয় ! আমার বুকের ভেতর অবিরম ঝনঝন শব্দ … ঠিক যেমন করে সিরামিকের বাসন-কোসন হাত ফসকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে শব্দ তোলে … ঠিক যেমন করে আকাশ ভেঙ্গে বর্ষা নামে …. ঠিক যেমন করে সমুদ্র উত্তাল হয় …বুকের ভেতর ভাঙ্গচূড় চলতেই থাকে অবিরাম !!
১৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় সবাগতম
লেখা পড়ে মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো ।
কিছু সময়ে আমরা বোধশুন্য হয়ে যাই । কোন কিছু স্পর্শ করেনা আর ।
আবার চেষ্টা করে ভাংচুড় ঠেকানোও যায় না । তারপরেও বেচে থাকতে হয় , সামনে আগাতে হয় ।
শুভকামনা ।
রিমঝিম বর্ষা
সেইই। বেঁচে থাকার লড়াই থামিয়ে দেয়া মানেই হার মেনে নেয়া। সেই বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না।
ধন্যবাদ দাদাভাই।
লীলাবতী
গতরাতে পূর্নিমা ছিলো। অস্থির মন কোননা কোনভাবে স্থির হতে চায়। তাই বলেই হয়তো সবার সাথেই গত সপ্তাহ জুড়ে পূর্নিমা পূর্নিমা করে চ্যাঁচানো। কিন্তু গতরাতে আকাশ জুড়ে থাকা চাঁদ কতটা আলো ছড়াতে পেরেছিলো ! কি বিষন্ন ছিলো চাঁদের বুড়িটা! কেউ বোঝেনি। বিষন্নতাকে কেউ বোঝেনা ! * – কষ্টকর অনুভুতি । ভালো লিখতে পারেন আপনি । লিখুন নিয়মিত আপি ।
রিমঝিম বর্ষা
ভালো লিখতে পারিনা আমি। ভালোবেসে বলেছেন…কৃতজ্ঞতা জানবেন। লিখতে না পারলেও কষ্টের অনুভূতি হয়তো দিতে পারবো প্রায়ই। 🙂
আমার মন
অভিব্যক্তিরা ছুটে বেড়াক, বড় হোক, হোচট খাক কোন সমস্যা নেই। তবুও ভাল থাকুক মন। -{@
রিমঝিম বর্ষা
মন ছুটে চলে তার নিজস্ব গতিতেই। কখনও শব্দের গতিকেও হার মানিয়ে। আমাদের সাধ্য কি তার সাথে তাল মিলাই!! তাইতো শুভ কামনা মন-গুলোর জন্য সদাসর্বদা। 🙂
প্রজন্ম ৭১
লেখায় এত কষ্ট থাকবে কেনো ? জীবন হাসুক সবার ।
রিমঝিম বর্ষা
লেখা শুরু করলেই কষ্টরা হুড়মুড় করে হাজির হয়। আমার কিছুই করার থাকেনা।
আমিও চাই………জীবন হাসুক সবার।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই একরাশ সতেজ অভিনন্দন আপনাকে ,
হ্যাঁ, আপনাকেই , এখানে লেখার জন্য ।
লেখার বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদেরও ।
নতজানু না হয়েও চড়াই পেরিয়ে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাব এ আশাবাদ রাখছি ।
রিমঝিম বর্ষা
নতজানু না হয়েও চড়াই পেরিয়ে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাব ……….
অভিনন্দনের সতেজতা ঘিরে রাখুক সারাবেলা।
মা মাটি দেশ
হেভী হয়েছে আপু সঙ্গে থাকবেনতো সব সময় -{@ (y)
রিমঝিম বর্ষা
হেভী??!! হাহাহাহা।
আশা রাখি সঙ্গে থাকার…
ভোরের শিশির নীতেশ
বুকের ভাংচূড় কবে যে চোখে বর্ষা হয়ে চারপয়াশ ভিজিয়ে দিয়েছে ঠেরই পেলাম না। যখন ঠের পেলাম বুঝলাম সমুদ্রের সেই উত্তাল ঢেউ আর নেই… বলা ভালো সমুদ্রে এক ফোঁটাও নীল নেই আর… সেখানে এখন ধূধূ করা রঙচটা বালির আঁচড়…
ফেসবুকেই দেখেছিলাম প্রথম… লেখাটা আরো এগিয়ে নিয়ে গেলে খুশী হব 🙂 শুভ কামনা… -{@
রিমঝিম বর্ষা
ভেঙ্গে যাওয়া কোনকিছুকে আসলে জোড়া লাগাতে নেই। তাকেই টেনে নিতে গেলে তার অমসৃনতায় আঁচড় পড়ে আরো অনেককিছুতে। তাই থাকুক এই লেখাটা এতটুকুতেই। উৎসাহ চাই আরো একটি ভোর নিয়ে আসার…..বা একটি স্নিগ্ধ মায়াময় গোধূলীবেলা।
ভোরের শিশির নীতেশ
আমি বলতে চেয়েছিলাম, আপনার লেখা ‘শেষ হয়েও হলনা শেষ’এর মত। আরো যেন কিছু আছে বলার… তাই বলেছি 🙂 শুভেচ্ছা
রিমঝিম বর্ষা
🙂
শুন্য শুন্যালয়
ভেতরের ভাংচুর থেকেই যায়…তবু এগিয়ে যাওয়া চাই…
জীবনটা অনেক বেশি মুল্যবান…
ভালো থাকুন…আর সোনেলায় আপনাকে স্বাগতম -{@
রিমঝিম বর্ষা
জীবনের চাইতেও জীবনে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো অনেক বেশি মূল্যবান। তাদের জন্যই এগিয়ে যেতেই হয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।