ঘুম ভাঙল কেমন যেন এক বিষন্নতা নিয়ে। কিসের যেন এক দু:খ বোধ কাজ করছে বুকের ভেতরে। একটা শূন্যতা,হাহাকারের মত। কেন এমন কষ্ট কষ্ট অনুভূতি নিয়ে ঘুম ভাঙল। শোয়া থেকে উঠে বসল বিছানায়। পায়ে হাত রাখতেই কাটা জায়গাটায় হাত পড়ল। কি সুক্ষ্ম একটা দাগ! আপনা থেকেই চলচিত্রের মত ভেসে উঠল কিছু ছবি।
কয়েকটি বাচ্চা খুব দৌড়া দৌড়ি করে খেলছে। শুধু তাদের হাসি আর দৌড় চোখে ভাসছে। সময়টা ঠিক দুপুর নয়, সকাল ও নয়। হয়ত ১১টা বাজে বা তার কাছাকাছি। বাবা বাড়িতে আছে। বাবা বাড়িতে মানে দাড়োয়ান মালি দুজনের ত্রাহিত্রাহি অবস্থা।
বাগানের একপাশে কলাবতী ফুলগাছের ঝোপ হয়ে গেছে। গাঢ় মেরুন রং এর গাছ। কি সুন্দর কমলা,হলুদ,লাল,সাদা,আবার ফুটকি ফুটকি বিভিন্ন রং এর ফুল।মা বোধ হয় নিষেধ করেছিল গাছগুলি কাটতে। কিন্তু বর্ষা শেষ হয়েছে গাছে এই সময় কোন ফুল নেই। বাগান আর পরিষ্কার করা হয়নি।
বাবা চুড়ান্ত রাগ প্রকাশ করছে মালি কাকুর উপর। মশার অত্যাচার বেড়ে গেছে শুধু এই কলাবতী গাছের জন্য। মালি কাকু দা নিয়ে এসে মাথা নিচু করে বকা খাচ্ছে। সাহস পাচ্ছে না গাছে কোপ দেবার। তাতে বাবার মেজাজ আরও বাড়ছে। রাগ করে বাবাই হাতে নিলেন দা। বসালেন এক কোপ কলাবতী র ঝোপে।
বাচ্চগুলির খেলা বদলে গেল ।তারা সিদ্ধান্ত নিল বারান্দা থেকে দে ছুট। যে আগে যেয়ে একটা কাটা গাছ ছোঁবে সেই জিতবে।
যা ভাবা সেই কাজ। সারা জীবন দৌড়ে আমি অপরাজেয়। সবার আগে আমি। এই আর একটু। আমাদের দিকে পিছন ফিরে বাবা।
বাবার দা ধরা উদ্ধত হাত রাগে উন্মত্ত মুখ নেমে আসছে নিচে। আমি ছুটে আসছি দুর্দান্ত গতিতে। নিচু হলাম গাছের পাতা ছোব। প্রচন্ড চিতকার আর সেই সঙে আর্তনাদ। কে যেন আমার পিঠে অসম্ভব জোড়ে ধাক্কা দিল আর সেই সাথে পায়ে লাগল কিসের যেন আঘাত। উড়ে যেয়ে পরলাম ঝোপের মধ্যে।
কে সেই নরাধম আমাকে ধাক্কা দিল তাকে দেখে নেবার রাগে, হেরে যাবার কষ্টে, পায়ের ব্যাথার দু:খে , হাত -কপাল-বুকের চাপ সহ্য সীমা অতিক্রম করল ভ্যা করে কেঁদে। কিন্তু তা কি এক সেকেন্ডও স্থায়ী হল। বাবা হাউমাউ করে কি যেন বলছে মালি কাকু বাবাকে জড়িয়ে ধরে কি বুঝাচ্ছে। দাড়োয়ান আর অন্য বাচ্চাদের চিতকারে মা বাইরে চলে এসেছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ঠোট হাত কপাল ছিলে গেছে। পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। মা এসে কোলে নিল। পা টা অনেক কেটেছে। বাবা এতক্ষনে দেখল আমি ভাল আছি। লাফিয়ে এলেন কাছে। জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না বাচ্চাদের মত। কিছু না বুঝে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম।
এরপর কম্পাউন্ডার কাকুর তিনটা সেলাই আমার পায়ে। দুপু রের খাবার পর বাবার পাশে বিছানায় শুয়ে ক্ষত স্থানের ব্যাথায় কাতরাচ্ছি। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর কেঁপে কেঁপে উঠছিল। একবার শুধু বলল —–কোন দিন আর এমন করবে না, কোনদিন না। কি করেছি না বুঝেই বললাম —করব না। মনে মনে ভাবলাম —–আর কোনদিন পাতা ছোঁয়া ছুয়ি খেলব না।
বড় হবার পর ঘটনা শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে। এখন বুঝি কি মারাত্বক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। মালি কাকু ধাক্কা দিয়েছে, বাবাও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।কিন্তু পারেনি, পায়ে কিছুটা লেগেছে। আমার শুধু মনে আছে আমি দৌড়াছি, গাছের পাতা ছোব কিন্তু উড়ে গেলাম, আর সেই সাথে হইচই বাবার পাগলের মত কান্না।
বাবা আজ আমি কাঁদছি , তুমি কি এসে বলবে না —-আমার মা কাঁদছে কেন? কার এত সাহস আমার মাকে কষ্ট দেয়।
৩৯টি মন্তব্য
স্বপ্ন নীলা
সুন্দর লেখনী
বাবা মা ভাল থাক
সব কান্না মুছে যাক——-
খসড়া
হ্যা ভাল থাকুন তারা যেখানেই থাকুন খুব ভাল থাকুন।
নীতেশ বড়ুয়া
‘মেঘদল’ ব্যান্ডের একটি গানের টাইটেল হচ্ছে ‘কিছু বিষাদ হোক পাখী’ খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ‘কিছু কান্না হোক সুখস্মৃতি’।
এমন আরো অনেক ঘটনা জানতে চাই…
খসড়া
চলছে সম্পাদনা
ভোরের শিশির
শেষ হলে জানতে পারবো এই অপেক্ষায় রইলাম। শুভেচ্ছা। -{@
বনলতা সেন
এতদিন পরে এসে আমাদেরও আপনার যন্ত্রণার ভাগ দিলেন দেখে ভাল লাগল।
এ ভাবে আমাদের ভুলে থাকেন কী করে কে জানে। তবুও আপনি ভাল থাকুন।
খসড়া
সবাই ভাল থাকুন এই কামনা নিরন্তন।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
Shundor likhechen, valolaga roilo
মেহেরী তাজ
কিছু দুর্ঘটনা কাঁদায় আমাদের।আপনার লেখাটি অত্যন্ত আবেগে পরিপুর্ন।খুবই ভালো লেগেছে লেখাটি।
খসড়া
ধন্যনাদ।
শুন্য শুন্যালয়
হাসি, কান্নার এমন ভাগ আমরা মিস করি। মিস করি আপনাকে।
আমি কিন্তু বুঝতে পারেনি বাবার এমন রেগে যাবার কারন।
খসড়া
বাবা প্রচন্ড হতাশ ও ভয় পেয়ে ক্ষেপেছিলেন সম্ভবত। এটা তার ভয়ের প্রকাশ।
খসড়া
শূন্য শূন্যালয় বাবা রেগে ছিলেন মালীর (কাজের লোকজনের) উপর, খুব সম্ভবত। গল্পটা আমি শুনেছি।
খসড়া
মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা
খেয়ালী মেয়ে
ছোট্টবেলার স্মৃতি হোক না তা কষ্টের কিংবা সুখের, এতোটা বছর পরে এসে এখন সেই ছোট্টবেলার কথা ভাবতে ভালোই লাগে 🙂
খসড়া
এটাই সত্যি স্মৃতি মধুর বা কষ্টের সবই বেদনার।
জিসান শা ইকরাম
স্মৃতির ঘটনা জেন দেখলাম এমন ভাবে লিখলেন।
কিছু দাগ জীবনের অবিচ্ছেদ্দ অংশ হয়ে যায়
এবং মাঝে মাঝে কাঁদায়।
অনেক দিন পরে আপনাকে দেখলাম
মিস করি আপনার উপস্থিথি
সোনেলাকে গড়ে তুলেছেন সন্তানের মত
সন্তান থেকে দূরে থাকেন কিভাবে ?
শুভ কামনা প্রিয় ব্লগার।
খসড়া
শুভকামনা, ব্লগার বন্ধুরা।
ব্লগার সজীব
ছোট বেলার স্মৃতি কখনো হারিয়ে যায় না।আবেগ দিয়ে জড়ানো লেখাটি ভালো লাগলো খুব।আমাদের কি একটুও মনে পরে না ? 🙁
খসড়া
ধন্যবাদ
ছাইরাছ হেলাল
আপনার সাথে ঝগড়া করতে পারলে ভাল হত।
লীলাবতী
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম।একেবারে শেষ লাইনে এসে মনটা কেমন করে উঠলো।কেমন এক শুন্যতা।
আপনার অভাব ফিল করি।
খসড়া
শ্বপ্ননীলা ভাল থাক সব সময়।
খসড়া
গানটা একদিন শুনব। পড়েছেন এজন্য ধন্যবাদ।
খসড়া
বনলতা আপনার লেখা বরাবরই আমার প্রিয়।
খসড়া
ধন্যবাদ স্মৃতির নদী গুলো এলোমেলো।
খসড়া
মেহেরিতাজ ভাল থাকুন সবসময়।
খসড়া
খেয়ালি মন আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। ধন্যবাদ।
খসড়া
জিসান ভাই খুব লজ্জা পাচ্ছি আপনার মন্তব্য পড়ে। আসলে এখন কিছু লিখতে ক্লান্ত লাগে, তবে আমি আছি আপনাদের সাথে। চেষ্টা করব ব্লগে রেগুলার হতে। আসলে খুব আড্ডাবাজ হয়েছি। খালি আড্ডা দিয়ে সময় পার।
খসড়া
ব্লগার সজীব মনে পড়েছে দেখেই তো সুজোগ পেয়েইঢুকে পরেছি। ফাকিবাজ হয়েছি খুব।
খসড়া
হেলাল ভাই এক হাতে ককটেল অন্য হাতে পেট্রল বোমা নিয়া দাঁড়াইলাম। ঝগড়া করবেন আসেন দেখি। আমি রেডি। :p
ছাইরাছ হেলাল
ভাই সন্ধির প্রস্তাব দিচ্ছি।
খসড়া
লীলাবতী তোমার কথার আর কি উত্তর দেব ক্ষমা করে দেওন যায় না প্লিজ লাগে।
নীলাঞ্জনা নীলা
বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা।স্পর্শ করি পায়ের কাটা দাগ।কিছু দাগ থেকে যায়,থেকে যায় স্মৃতি।খুব সুন্দর করে লিখেছেন আপু।
খসড়া
ধন্যবাদ ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
মা বাবার আদর শাসন সবই অতীত ভূলবার নয়।প্রত্যেকের মা জন্য রইল ভাল থাকার প্রত্যয়।বেশ আবেগী লেখা অজান্তেই মন কেদে যায়। -{@
খসড়া
ভাল লাগল আপনার মন্তব্য।
স্বপ্ন
অত্যন্ত আবেগ দিয়ে লেখা শেষ লাইনটি মনে গেঁথে থাকবে অনেকদিন।
খসড়া
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।